Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পঞ্চম সর্গ — মেঘনাদবধ কাব্য || Meghnadbadh-5 by Michael Madhusudan Dutta

পঞ্চম সর্গ — মেঘনাদবধ কাব্য || Meghnadbadh-5 by Michael Madhusudan Dutta

কুসুম-শয়নে যথা সুবর্ণ-মন্দিরে
বিরাজে বীরেন্দ্র বলী ইন্দ্রজিত,তথা
পশিল কূজন-ধ্বনি সে সুখ-সদনে।
জাগিলা বীর-কুন্জর কুন্জবন-গীতে।
প্রমীলার করপদ্ম করপদ্মে ধরি
রথীন্দ্র, মধুর স্বরে, হায় রে, যেমতি
নলিনীর কানে অলি কহে গুন্জরিয়া
প্রেমের রহস্য কথা, কহিলা (আদরে
চুম্বি নিমীলিত আঁখি )—“ডাকিছে কূজনে,
হৈমবতী ঊষা তুমি,রূপসি, তোমারে
পাখী-কুল; মিল, প্রিয়ে, কমল লোচন
উঠ, চিরানন্দ মোর; সূর্য্যকান্তমণি-
সম এ পরাণ,কান্তে, তুমি রবিচ্ছবি;—-
তেজোহীন আমি তুমি মুদিলে নয়ন;
ভাগ্য-বৃক্ষে ফলোত্তম তুমি হে জগতে
আমার; নয়ন-তারা; মহার্হ রতন;
উঠি দেখ,শশিমুখি,কেমনে ফুটিছে,
চুরি করি কান্তি তব মন্জু কুন্জবনে
কুসুম ;” চমকি রামা উঠিলা সত্বরে;—
গোপিনী কামিনী যথা বেনুর সুরবে

আবরিলা অবয়ব সুচারু-হাসিনী
শরমে। কহিলা পুনঃ কুমার আদরে;—
“পোহাইল এতক্ষনে তিমির-শর্বরী;
তা না হলে ফুটিতে কি তুমি, কমলিনি,
জুড়াতে এ চক্ষুর্দ্বয়? চল, প্রিয়ে, এবে
বিদায় হইব নমি জননীর পদে;
পরে যথাবিধি পূজি দেব বৈশ্বানরে,
ভীষণ-অশনি-সম শর-বরিষণে
রামের সংগ্রাম-সাধ মিটাব সংগ্রামে।”

সাজিলা রাবণ-বধূ, রাবণ-নন্দন,
অতুল জগতে দোঁহে; বামাকুলোত্তমা
প্রমীলা, পুরুষোত্তম মেঘনাদ বলী ;
শয়ন-মন্দির হতে বাহিরিলা দোঁহে—
প্রভাতের তারা যথা অরুনের সাথে;
বাজিল রাক্ষস-বাদ্য ; নমিল রক্ষক ;
জয় মেঘনাদ উঠিল গগনে ;
রতন-শিবিকাসনে বসিলা হরষে
দম্পতী। বহিলা যান যানবাহ- দলে
মন্দোদরী মহিষীর সুবর্ন-মন্দিরে।

প্রবেশিলা অরিন্দম, ইন্দু-নিভাননা
প্রমীলা সুন্দরী সহ,সে স্বর্ণ-মন্দিরে।
ত্রিজটা নামে রাক্ষসী আইল ধাইয়া।
কহিল বীর-কেশরী; “শুন লো ত্রিজটে,
নিকুম্ভিলা-যজ্ঞ সাঙ্গ করি আমি আজি
যুঝিব রামের সঙ্গে পিতার আদেশে,
নাশিব রাক্ষস-রিপু; তেঁই ইচ্ছা করি
পূজিতে জননী পদ। যাও বার্তা লয়ে ;
কহ,পুত্র, পুত্রবধু দাঁড়ায়ে দুয়ারে
তোমার,হে লঙ্কেশ্বরী ;” সাষ্টাঙ্গে প্রণমি,
কহিলা শূরে ত্রিজটা, ( বিকটা রাক্ষসী)—
“শিবের মন্দিরে এবে রাণী মন্দোদরী,
যুবরাজ; তোমার মঙ্গল-হেতু তিনি
অনিদ্রায়, অনাহারে পূজেন উমেশে ;
তব সম পুত্র, শূর,কার এ জগতে ?
কার বা এ হেন মাতা ?”—এতেক কহিয়া
সৌদামিনী-গতি দূতী ধাইল সত্বরে।
বাহিরিলা লঙ্কেশ্বরী শিবালয় হতে
প্রণমে দম্পতী পদে। হরষে দুজনে
কোলে করি, শিরঃ চুম্বি, কাঁদিলা মহিষী।
কহিলা বীরেন্দ্র; ” দেবি আশীষ দাসেরে।
নিকুম্ভিলা-যজ্ঞ সাঙ্গ করি যথাবিধি,
পশিব সমরে আজি, নাশিব রাঘবে;
শিশু ভাই বীরবাহু; বধিয়াছে তারে
পামর। দেখিব মোরে নিবারে কি বলে ?
দেহ পদ-ধূলি, মাতঃ ;তোমার প্রসাদে
নির্ব্বিঘ্ন করিব আজি তীক্ষ্ন শর-জালে
লঙ্কা; বাঁধি দিব আনি তাত বিভীষণে
রাজদ্রোহী ; খেদাইব সুগ্রীব অঙ্গদে
সাগর অতল জলে;” উত্তরিলা রাণী,
মুছিয়া নয়ন-জল রতন-আঁচলে;—

“কেমনে বিদায় তোরে করি রে বাছনি ;
আঁধারি হৃদয়াকাশ,তুই পূর্ণ শশী
আমার। দুরন্ত রণে সীতাকান্ত বলী;
দুরন্ত লক্ষণ শূর; কাল-সর্প-সম
দয়া-শূন্য বিভীষণ; মত্ত লোভ-মদে,
স্ববন্ধু-বান্ধবে মূঢ় নাশে অনায়াসে,
ক্ষুধায় কাতর ব্যাঘ্র গ্রাসয়ে যেমতি
স্বশিশু; কুক্ষনে,বাছা, নিকষা শাশুড়ী
ধরেছিলা গর্ভে দুষ্টে, কহিনু রে তোরে;
এ কনক-লঙ্কা মোর মজালে দুর্ম্মতি;”

হাসিয়া মায়ের পদে উত্তরিলা রথী;—
কেন, মা ডরাও তুমি রাঘবে লক্ষণে,
রক্ষোবৈরী ? দুইবার পিতার আদেশে
তুমুল সংগ্রামে আমি বিমুখিনু দোঁহে
অগ্নিময় শর-জালে ; ও পদ-প্রসাদে
চির-জয়ী দেব-দৈত্য-নরের সমরে
এ দাস ; জানেন তাত বিভীষণ, দেবি,
তব পুত্র-পরাক্রম ; দম্ভোলি-নিক্ষেপী
সহস্রাক্ষ সহ যত দেব-কুল-রথী ;
পাতালে নাগেন্দ্র, মর্ত্তে নগেন্দ্র ; কি হেতু
সভয় হইলা আজি,কহ, মা, আমারে ?
কি ছার সে রাম, তারে ডরাও আপনি ?

মুছিয়া নয়ন-জল রতন-আঁচলে,
উত্তরিলা লঙ্কেশ্বরী; ” যাইবি রে যদি;—
রাক্ষস-কুল-রক্ষণ বিরূপাক্ষ তোরে
রক্ষুন এ কাল-রণে ; এই ভিক্ষা করি
তার পদ যুগে আমি। কি আর কহিব ?
নয়নের তারা হারা করি রে থুইলি
আমায় এ ঘরে তুই;” কাঁদিয়া মহিষী
কহিলা,চাহিয়া তবে প্রমীলার পানে ;—
“থাক,মা,আমার সঙ্গে তুমি; জুড়াইব,
ও বিধুবদন হেরি এ পোড়া পরাণ ;
বহুলে তারার করে উজ্জ্বল ধরণী।”

বন্দি জননীর পদ বিদায় হইলা
 ভীমবাহু কাঁদি রাণী, পুত্র-বধূ সহ,
প্রবেশিলা পুনঃ গৃহে। শিবিকা ত্যজিয়া,
পদ-ব্রজে যুবরাজ চলিলা কাননে—
ধীরে ধীরে রথীবর চলিলা একাকী,
কুসুম-বিব্রিত পথে যজ্ঞশালা মুখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *