Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

শালা প্ৰায় সঙ্গে সঙ্গেই এসে হাজির হলেন!! কপালের ঘাম মুছতে দেখে মনে হল ভদ্রলোক একটু নাভার্স বোধ করছেন।

আপনার নাম তো চন্দ্রনাথ; পদবি কী? ভদ্রলোক বসার পর ফেলুদা প্রশ্ন করল।

বোস।

আপনি এখানে রয়েছেন পনেরো বছর, তাই তো?

হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কী করে?

আমি ডাঃ মুনসীর ডায়রিটা পড়েছি। আপনার বিষয় অনেক কিছু জানি, তবু আপনার মুখ থেকে কনফার্মেশনের জন্য কতকগুলো প্রশ্ন করছি।

চন্দ্রনাথ বোস আবার ঘাম মুছলেন।

ডাঃ মুনসী আপনাকে এ বাড়িতে থাকতে বলেন?

না! আমার বোন ডাঃ মুনসীকে অনুরোধ করেন।

উনি এক কথায় রাজি হয়ে যান?

না।

তা হলে? আমার বোন, পীড়াপীড়ি করলে পর…রাজি হন।

আপনি তো কোনও চাকরি-টাকরি করি করেন না।

না।

হাত খরচা পান মাসে মাসে?

হ্যাঁ।

কত?

পাঁচশো।

তাতে চলে যায়? চন্দ্রনাথবাবু উত্তর না দিয়ে মাথা হেঁট করলেন। বুঝলাম হাতখরচটা যথেষ্ট নয়।

আপনি তো ইন্টারমিডিয়েট অবধি পড়েছেন?

হ্যাঁ।

ছাত্র হিসেবে কীরকম ছিলেন?

সাধারণ।

নাকি তার চেয়েও নীচে?

চন্দ্ৰনাথবাবু চুপ। প্ৰথমবার আইএ-তে ফেল করেননি? সেই কারণেই তো আপনার কোনও চাকরি জোটেনি, তাই নয় কি?

দৃষ্টি নত করে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন চন্দ্রনাথবাবু।

এ বাড়ির কোনও কাজে আপনি করেন। কি?

হ্যাঁ! কী? বাজার করি। ওষুধপত্ৰ আনি…

বুঝেছি। …আপনার শোবার ঘর দোতলায়?

হ্যাঁ।

কোনখানে? ডা. মুনসীর ঘর থেকে কতদূরে?

একেবারে পাশে?

লাগালাগি?

ই-ইয়েস।

রাত্রে ঘুমোনি কখন?

দশটা সাড়ে দশটা।

আর ওঠেন?

ছ-টা।

এই খুন সম্বন্ধে আপনার কিছু বলার আছে?

নো-নো স্যার। নাথিং।

ঠিক আছে! আপনি এবার অনুগ্রহ করে রাধাকান্ত মল্লিককে একটু পাঠিয়ে দিন।

রাধাকান্ত মল্লিক এসে সোফায় বসেই এক সঙ্গে হাত আর মাথা নেড়ে বললেন, আমি খুন সম্বন্ধে কিছু জানি না, কিছু না…

আমি বলেছি আপনি জানেন?

বলেননি, কিন্তু বলবেন। আই নো ইউ ডিটেকটিভস। এসব জেরা-টেরা আমার ভাল লাগে। না। যা বলার আমি বলে যাচ্ছি। আপনি শুনুন। আমি যে ব্যারাম নিয়ে এখানে আসি তার নাম আমি জানতাম না। মুনসী বলেন। পার্সিকিউশন ম্যানিয়া। তার লক্ষণ হল, চারপাশের সব লোককে হঠাৎ শত্ৰু বলে মনে হওয়া। বাবা, দাদা, পড়শি, আপিসের কোলিগ কেউ বাদ নেই। সবাই যেন ওত পেতে বসে আছে। সুযোগ পেলেই ঝাপিয়ে পড়বে। আগে এটা ছিল না; ঠিক কখন যে শুরু হল তাও বলতে পারি না। শুধু এটা বলতে পারি যে শেষ দিকে এমন হয়েছিল যে রাত্তিরে ঘুমোতে পারতাম না, পাছে ঘুমেলে কেউ এসে বুকে ছুরি মারে!

ডাঃ মুনসীর ওষুধে কাজ দেয়?

দিচ্ছিল, তবে সময় লাগছিল। কথা ছিল আর দুহপ্তা পরে ছুটি পাব। কিন্তু তার আগেই…ছুটি হয়ে গেল…

আপনি কি এখন বাড়ি ফিরে যাবেন?

পুলিশ যেতে দিলেই যাব।

আপনার চাকরি তো একটা আছে নিশ্চয়ই।

পপুলার ইনশিওরেন্স।

ঠিক আছে। আপনি এবার আসতে পারেন।

রাধাকান্ত চলে যাবার পর ফেলুদা একবার খুনের জায়গা আর লাশটা দেখে এল। যে জিনিসটা দিয়ে বাড়ি মেরে খুন করা হয়েছে সেটা এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে পুলিশের ডাক্তার এসে দেখে বলে গেছে খুনটা হয়েছে ভোর চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে। পাণ্ডুলিপিটা এখনও পাওয়া যায়নি। ইনস্পেক্টর সোম বলেছেন সেটা বেরোলেই ফেলুদাকে জানিয়ে দেবেন।

মিসেস মুনসীর সঙ্গে কি এখন কথা বলা যাবে? ফেলুদা জিজ্ঞেস করল সোমকে।

তা যাবে। উনি দেখলাম মোটামুটি শক্তই আছেন।

আমরা তিনজন মিসেস মুনসীর ঘরে গেলাম। ভদ্রমহিলা জানালার দিকে মুখ করে খাটে বসে আছেন। ফেলুদা দরজায় টাক মারতে আমাদের দিকে ফিরলেন।

আমি চমকে উঠলাম। ইনি হুবহু এর ভাইয়ের মতো দেখতে! যমজ নাকি?

নমস্কারের পর ফেলুদা বলল, আমার নাম প্রদোষ মিত্র। আমি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ। আপনার স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারে তদন্ত করতে এসেছি।

আপনি কিছু জিজ্ঞেস করবেন কি?

দেখে অবাক হলাম যে ভদ্রমহিলার কথায় বিন্দুমাত্র কান্নার রেশ নেই।

ফেলুদা বলল, সামান্য দু-একটা প্রশ্ন।

ভদ্রমহিলা আবার জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন, করুন।

এই হত্যা সম্বন্ধে আপনার কিছু বলার আছে কি?

ওঁর ডায়রিই হল ওঁর কাল। আমি ওঁকে কতবার বলেছি, তুমি লিখছ লেখ, কিন্তু এ জিনিস ছাপিও না। আমাদের দেশের লোকেরা এত সত্যি কথা গ্ৰহণ করতে পারবে না। অনেকে ব্যথা পাবে, অনেকে অসন্তুষ্ট হবে, আর আজ…

আমি কিন্তু ডায়রিটা পড়েছি। আমার মনে হয় না এটা পড়লে মনে কেউ ব্যথা পেত।

শুনে খুশি হলাম।

আপনি আর চন্দ্রনাথবাবু যমজ ভাইবোন?

হ্যাঁ।

আপনি যখন ডাঃ মুনসীকে প্রস্তাব করেন আপনার ভাইকে এ বাড়িতে এনে রাখা হাক, তখন উনি কী বলেন?

অনিচ্ছাসত্ত্বেও মত দেন।

অনিচ্ছা কেন?

আমার ভাই কোনও চাকরি করে না সেটা উনি মেনে নিতে পারছিলেন না। উনি নিজে ছিলেন কাজ-পাগল মানুষ। কাজ ছাড়া আর কিছুই জানতেন না।

অনেক ধন্যবাদ, মিসেস মুনসী। আমার আর কিছু জানার নেই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress