Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ডাঃ মুনসীর হাতের লেখা বেশ পরিষ্কার হলেও, তিনশো পচাত্তর পাতার পাণ্ডুলিপিটা পড়তে ফেলুদার লাগল। তিন দিন! এত সময় লাগার একটা কারণ অবিশ্যি এই যে ফেলুদা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে অনেক কিছু নিজের খাতায় নোট করে নিচ্ছিল।

তিন দিনের পরের দিন রবিবার সকালে যথারীতি জটায়ু এসে হাজির। প্ৰথম প্রশ্নই হল,কী স্যার, হল?

হয়েছে।

আপনি কী সিদ্ধান্তে এলেন শুনি! এ ডায়রি নির্ভয়ে ছাপার যোগ্য?

সম্পূর্ণ। তবে তাতে হুমকি বন্ধ করা যায় না। এই তিনজনের একজনও যদি ধরে বসে থাকে যে নামের আদ্যক্ষর থেকেই লোকে বুঝে ফেলবে কার কথা বলা হচ্ছে তা হলে সে এ বই ছাপা বন্ধ করার জন্য কী যে না করতে পারে তার ঠিক নেই!

ইভ্‌ন মার্ডার?

তা তো বটেই। একজনের কথাই ধরা যাক। এ। অরুণ সেনগুপ্ত। পূর্ববঙ্গের এক জমিদার বংশের ছেলে। যুবা বয়সে ছিলেন এক ব্যাঙ্কের মধ্যপদস্থ কর্মচারী। কিন্তু রক্তের মধ্যে ছিল চূড়ান্ত শৌখিনতা। ফলে প্রতি মাসেই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। শেষে কাবুলিওয়ালার শরণাপন্ন হওয়া।

এই ফাঁকে বলে রাখি, ফেলুদা একবার বলেছিল যে আজকাল আর দেখা যায় না বটে। কিন্তু বছর কুড়ি আগেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যেত লাঠি হাতে কাবুলিওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। এদের ব্যবসা ছিল মোটা সুদে টাকা ধার দেওয়া।

ফেলুদা বলে চলল, একটা সময় আসে যখন দেনার অঙ্কটা এমন ফুলে ফেপে ওঠে যে মরিয়া হয়ে অরুণ সেনগুপ্তকে ব্যাঙ্কের তহবিল থেকে চল্লিশ হাজার টাকা চুরি করতে হয়। কিন্তু সেটা সে এমন কৌশলে করে যে দোষটা গিয়ে পড়ে একজন নির্দোষ কর্মচারীর উপর। ফলে সে বেচারিকে জেল খাটতে হয়।

বুঝেছি, বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বললেন জটায়ু তারপর অনুশোচনা, তারপর মাথার ব্যারাম, তারপর মনোবিজ্ঞানী। ..কিন্তু ভদ্রলোক যে এখন একেবারে সমাজের উপর তলায় বাস করছেন। তার মানে মুনসীর চিকিৎসায় কাজ দিয়েছিল?

তা তো বটেই। সে কথা মুনসী তাঁর ডায়রিতে লিখেওছেন—যদিও তারপরে আর কিছু লেখেননি। কিন্তু আমরা বেশ অনুমান করতে পারি যে এই ঘটনার পর সেনগুপ্ত নিশ্চয়ই তার জীবনের ধারা পালটে ফেলে ত্রিশ বছর ধরে ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে উপরে উঠে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছেন। বুঝতেই পারেন। সেখান থেকে আবার পিছলে পড়ার আশঙ্কা যদি দেখা দেয়, যতই অমূলক হাক, তা হলে সেনগুপ্ত সাহেব মাথা ঠিক রাখেন কী করে?

বুঝলাম, বললেন জটায়ু, আর অন্য দুজন?

আর ব্যক্তি সম্বন্ধে চিন্তার কোনও কারণ নেই সে তো সেদিন মুনসীর মুখেই শুনলেন। এর আসল নামটা উনি বলেননি, তাই আমিও বলতে পারছি না। ইনি এককালে একটা লোককে গাড়ি চাপা দিয়ে মারেন, তারপর এদিকে ওদিকে মোটা ঘুষ দিয়ে আইনের হাত থেকে নিজেকে বাঁচান। ইনিও ডাঃ মুনসীর হাতে নিজেকে সমৰ্পণ করে বিবেকযন্ত্রণা থেকে রেহাই পান!..ইন্টারেস্টিং হল জি-র ঘটনা।

কী রকম?

ইনি যে ফিরিঙ্গি সে তো জানেন। আর এর ব্যবসার কথাও জানেন। নব্ববুই নম্বর রিপন স্ট্রিটে একটা বড় দোতলা বাড়িতে থাকতেন জর্জ হিগিন্‌স। ১৯৬০-এ এক সুইডিশ ফিল্ম পরিচালক কলকাতায় আসেন ভারতবর্ষের ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা ছবি করবেন বলে। তাঁর গল্পের জন্য একটা লেপার্ডের প্রয়োজন ছিল। ইনি হিগিনসের খবর পেয়ে তার সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন। হিগিনসের একটা লেপার্ড ছিল বটে, কিন্তু সেটা রপ্তানির জন্য নয়; সেটা তার পোষা! অনেক টাকা দিয়ে সুইডিশ পরিচালক একমাসের জন্য লেপার্ডটাকে ভাড়া করেন। কথা ছিল একমাস পরে তিনি অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেবেন! আসলে ফিল্ম পরিচালক মিথ্যা কথা বলেন, কারণ তাঁর গল্পে ছিল গ্রামবাসীরা সবাই মিলে লেপাড়ীটাকে মেরে ফেলে। এক মাস পরে পরিচালক এসে হিগিন্‌সকে আসল ঘটনা বলে। হিগিন্‌স প্রচণ্ড রেগে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে তখনই পরিচালকের টুটি টিপে তাকে মেরে ফেলে। পরমুহূর্তে রাগ চলে গিয়ে তার জায়গায় আসে আতঙ্ক! কিন্তু সেই অবস্থাতেও পুলিশের চোখে ধুলো দেবার ফন্দি হিগিন বার করে। সে প্রথমে ছুরি দিয়ে মৃত পরিচালকের সর্বাঙ্গ ক্ষতচিহ্নে ভরিয়ে দেয়। তারপর তার কালেকশনের একটা হিংস্র। বনবেড়ালকে খাঁচার দরজা খুলে বার করে সেটাকে গুলি করে মারে। ফলে ব্যাপারটা দাঁড়ায়, খাঁচা ছাড়া বনবেড়াল পরিচালককে হত্যা করে এবং বনবেড়ালকে হত্যা করে হিগিন্‌স। ফিকিরাটা কাজে দেয়, হিগিন্‌স, আইনের হাত থেকে বঁচে। কিন্তু তারপর একমাস ধরে ক্রমাগত স্বপ্নে নিজেকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে দেখে অগত্যা মুনসীর চেম্বারে গিয়ে হাজির হয়।

হুঁ.. বললেন জটায়ু। তা হলে এখন কিং কর্তব্য?

দুটো কর্তব্য, বলল ফেলুদা। এক হল পাণ্ডুলিপিটা আপনাকে দেওয়া, আর দুই—এ-কে একটা টেলিফোন করা।

জটায়ু হাসিমুখে ফেলুদার হাত থেকে পাণ্ডুলিপি ভরা মোটা খামটা নিয়ে বললেন, ফোন করবেন কি অ্যাপায়েন্টমেন্ট করার জন্য?

ন্যাচারেলি, বলল ফেলুদা। আর দেরি করার কোনও মানে হয় না। তোপ্‌সে-এ, সেনগুপ্ত, ১১ রোল্যান্ড রোড, নম্বরটা বার করা তো।

আমি ডাইরেক্টরিটা হাতে নিতেই ফোনটা বেজে উঠল। আমিই ধরলাম। ডাঃ মুনসী। ফেলুদাকে বলতেই ও আমার হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিল।

ব্যাপার আর কিছুই নয়-সেনগুপ্ত আরেকটা হুমকি চিঠি দিয়েছেন। তাতে কী বলা হয়েছে। সেটা ফেলুদা তার খাতায় লিখে নিল। তারপর ফেলুদা তার শেষ কথাটা বলে ফোনটা রেখে দিল।

সেনগুপ্তর দ্বিতীয় হুমকিটা হচ্ছে এই—সাতদিন সময়। তার মধ্যে কলকাতার প্রত্যেক বাংলা ও ইংরিজি কাগজে বিজ্ঞপ্তি দেখতে চাই যে অনিবাৰ্য কারণে ডায়ারি ছাপা সম্ভব হচ্ছে না। সাতদিন। তারপরে আর হুমকি নয়–কাজ, এবং কাজটা আপনার পক্ষে প্রীতিকর হবে না বলাই বাহুল্য!

আমি সেনগুপ্তর ফোন নম্বর বার করে ডায়াল করে একবারেই লাইন পেয়ে গেলাম। ফেলুদার হাতে ফোনটা চালান দিয়ে আমি আর জটায়ু কেবল ফেলুদার কথাটাই শুনলুম। সেটা শুনে যা দাঁড়াল তা এই—

হ্যালো-মিঃ সেনগুপ্তর সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি কি। –অরুণ সেনগুপ্ত?

মিঃ সেনগুপ্ত? আমার নাম প্রদোষ মিত্র।

হ্যাঁ, ঠিকই রেছেন। ইয়ে-আমায় একদিন পাঁচ মিনিট সময় দিতে পারেন?

তাই বুঝি? আশ্চর্য তো! কী ব্যাপার?

তা পারি বইকী। কটায় গেলে আপনার সুবিধে?

ঠিক আছে। তাই কথা রইল।

ভাবতে পারিস? ফোনটা রেখে বলল ফেলুদা, ভদ্রলোক নাকি আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই

কেন, কেন? প্রশ্ন করলেন জটায়ু।

সেটা ফোনে বললেন না, সামনে বলবেন।

কখন অ্যাপায়ন্টমেন্ট?

আধা ঘণ্টা বাদে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress