কদম্বেরই কানন ঘেরি আষাঢ়মেঘের ছায়া খেলে,পিয়ালগুলি নাটের ঠাটে হাওয়ায় হেলে॥বরষনের

দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল-আলোকতবে তাই হোক।মৃত্যু যদি কাছে

কার হাতে এই মালা তোমার পাঠালেআজ ফাগুন দিনের সকালে।তার বর্ণে

আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে।সকল অহংকার

যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়েজানি নাই তো তুমি এলে

আনন্দগান উঠুক তবে বাজিএবার আমার ব্যথার বাঁশিতে।অশ্রুজলের ঢেউয়ের ‘পরে আজিপারের

হে চিরনূতন, আজি এ দিনের প্রথম গানেজীবন আমার উঠুক বিকাশি

আজ খেলা ভাঙার খেলা খেলবি আয়।সুখের বাসা ভেঙে ফেলবি আয়।মিলনমালার

বেদনা কী ভাষায় রেমর্মে মর্মরি গুঞ্জরি বাজে॥সে বেদনা সমীরে সমীরে

মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরেএকেলা রয়েছ নীরব শয়ন’পরে—প্রিয়তম হে, জাগো

পূর্বগগনভাগেদীপ্ত হইল সুপ্রভাততরুণারুণরাগে।শুভ্র শুভ মুহূর্ত আজি সার্থক কর’ রে,অমৃতে ভর’

আজি কোন্‌ ধন হতে বিশ্বে আমারেকোন্‌ জনে করে বঞ্চিত–তব চরণ-কমল-রতন-রেণুকাঅন্তরে

তোমার এই মাধুরী ছাপিয়ে আকাশ ঝরবে,আমার প্রাণে নইলে সে কি

পেয়েছি সন্ধান তব অন্তর্যামী, অন্তরে দেখেছি তোমারে॥চকিতে চপল আলোকে, হৃদয়শতদলমাঝে,হেরিনু

গানের ঝরনাতলায় তুমি সাঁঝের বেলায় এলে।দাও আমারে সোনার-বরন সুরের ধারা

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?কেন মেঘ

জয় তব বিচিত্র আনন্দ, হে কবি,জয় তোমার করুণা।জয় তব ভীষণ

তোমার আনন্দ ওই এল দ্বারে, এল এল এল গো। ওগো

তোর ভিতরে জাগিয়া কে যে,তারে বাঁধনে রাখিলি বাঁধি।হায় আলোর পিয়াসি

লহো লহো, তুলে লহো নীরব বীণাখানি ।তোমার নন্দননিকুঞ্জ হতে সুর

তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না, করে শুধু মিছে

অমল কমল সহজে জলের কোলে আনন্দে রহে ফুটিয়া,ফিরে না সে

বৈশাখ হে, মৌনী তাপস, কোন্‌ অতলের বাণীএমন কোথায় খুঁজে পেলে।তপ্ত

বসন্ত, তোর শেষ করে দে, শেষ করে দে, শেষ করে

তুমি জাগিছ কে?তব আঁখিজ্যোতি ভেদ করে সঘন গহনতিমিররাতি ॥চাহিছ হৃদয়ে

এস’ এস’ বসন্ত, ধরাতলে–আন’ মুহু মুহু নব তান, আন’ নব

শুষ্কতাপের দৈত্যপুরে দ্বার ভাঙবে ব’লে,রাজপুত্র, কোথা হতে হঠাৎ এলে চলে॥সাত-সমুদ্র-পারের

ফেলে রাখলেই কি পড়ে রবে ও অবোধ।যে তার দাম জানে

হৃদিমন্দিরদ্বারে বাজে সমুঙ্গল শঙ্খ ॥শত মঙ্গলশিখা করে ভবন আলো,উঠে নির্মল

ফাগুনের নবীন আনন্দেগানখানি গাঁথিলাম ছন্দে॥দিল তারে বনবীথি কোকিলের কলগীতি,ভরি দিল

প্রেমে প্রাণে গানে গন্ধে আলোকে পুলকেপ্লাবিত করিয়া নিখিল দ্যুলোক-ভূলোকেতোমার অমল

হৃদয়ে মন্দ্রিল ডমরু গুরু গুরু,ঘন মেঘের ভুরু কুটিল কুঞ্চিত,হল রোমাঞ্চিত

এ আবরণ ক্ষয় হবে গো ক্ষয় হবে,এ দেহমন ভূমানন্দময় হবে

আজি মেঘ কেটে গেছে সকালবেলায় ,এসো এসো এসো তোমার হাসিমুখে–এসো

গাও বীণা– বীণা, গাও রে।অমৃতমধুর তাঁর প্রেমগান মানব-সবে শুনাও রে।মধুর

ডাকিছ শুনি জাগিনু প্রভু, আসিনু তার পাশে।আঁখি ফুটিল, চাহি উঠিল

শ্রাবণমেঘের আধেক দুয়ার ওই খোলা,আড়াল থেকে দেয় দেখা কোন্‌ পথ-ভোলা

আমার মাঝে তোমারি মায়া জাগালে তুমি কবি।আপন-মনে আমারি পটে আঁকো

বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে,ছেড়ে যাব তীর মাভৈ-রবে ॥যাঁহার হাতের বিজয়মালারুদ্রদাহের

স্বপ্নে আমার মনে হল কখন ঘা দিলে আমার দ্বারে, হায়।আমি

এই-যে তোমার প্রেম, ওগো হৃদয়হরণ,এই-যে পাতায় আলো নাচে সোনার বরন॥এই-যে

হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা–হিমের ঘন ঘোমটাখানি ধুমল রঙে

তিমিরদুয়ার খোলো– এসো, এসো নীরবচরণে।জননী আমার, দাঁড়াও এই নবীন অরুণকিরণে

শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে।কুঞ্জপথে, সখি, কৈসে যাওব অবলা কামিনী

শান্তি করো বরিষন নীরব ধারে, নাথ, চিত্তমাঝেসুখে দুখে সব কাজে,

নয়ন ছেড়ে গেলে চলে, এলে সকল-মাঝে–তোমায় আমি হারাই যদি তুমি

শুধু কি তার বেঁধেই তোর কাজ ফুরাবেগুণী মোর, ও গুণী!বাঁধা

হার মানালে গো, ভাঙিলে অভিমান হায় হায়।ক্ষীণ হাতে জ্বালা ম্লান

সুরের গুরু, দাও গো সুরের দীক্ষা —মোরা সুরের কাঙাল, এই

আমার যে আসে কাছে, যে যায় চলে দূরে,কভু পাই বা

গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটেরুদ্ধবাণীর অন্ধকারে কাঁদন জেগে উঠে

তোমার সুর শুনায়ে যে ঘুম ভাঙাও সে ঘুম আমার রমণীয়–জাগরণের

আজি যত তারা তব আকাশেসবে মোর প্রাণ ভরি প্রকাশে॥নিখিল তোমার

পথ চেয়ে যে কেটে গেল কত দিনে রাতে,আজ তোমায় আমায়

ওহে জীবনবল্লভ, ওহে সাধনদুর্লভ,আমি মর্মের কথা অন্তরব্যথা কিছুই নাহি কব–শুধু

সেই তো বসন্ত ফিরে এল, হৃদয়ের বসন্ত ফুরায় হায় রে।সব

যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি।ঝড় এসেছে, ওরে, এবার

এ মোহ-আবরণ খুলে দাও, দাও হে ॥সুন্দর মুখ তব দেখি

অন্ধজনে দেহো আলো, মৃতজনে দেহো প্রাণ–তুমি করুণামৃতসিন্ধু করো করুণাকণা দান

দেখো দেখো, দেখো, শুকতারা আঁখি মেলি চায়প্রভাতের কিনারায়।ডাক দিয়েছে রে

আঁধার কুঁড়ির বাঁধন টুটে চাঁদের ফুল উঠেছে ফুটে॥তার গন্ধ কোথায়,