ওই শুনি যেন চরণধ্বনি রে,শুনি আপন-মনে।বুঝি আমার মনোহরণ আসে গোপনে

আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন–আমার ব্যথার

ধীরে বন্ধু ধীরে ধীরে চলো তোমার বিজন মন্দিরে।জানি নে পথ,

শিউলি ফুল, শিউলি ফুল, কেমন ভুল, এমন ভুল॥রাতের বায় কোন্‌

রহি রহি আনন্দতরঙ্গ জাগে–রহি রহি, প্রভু, তব পরশমাধুরীহৃদয়মাঝে আসি লাগে।রহি

ওই পোহাইল তিমিররাতি।পূর্বগগনে দেখা দিল নব প্রভাতছটা,জীবনে-যৌবনে হৃদয়ে-বাহিরেপ্রকাশিল অতি অপরূপ

বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি, সেকি সহজ গান!সেই সুরেতে জাগব আমি,

সেই তো তোমার পথের বঁধু সেই তো।দূর কুসুমের গন্ধ এনে

তোমার আসন পাতব কোথায় হে অতিথি ।ছেয়ে গেছে শুকনো পাতায়

সফল করো হে প্রভু আজি সভা, এ রজনী হোক মহোৎসবা

নীল আকাশের কোণে কোণে ওই বুঝি আজ শিহর লাগে আহা।শাল-পিয়ালের

পোহালো পোহালো বিভাবরী,পূর্বতোরণে শুনি বাঁশরি॥নাচে তরঙ্গ, তরী অতি চঞ্চল, কম্পিত

বিমল আনন্দে জাগো রে।মগন হও সুধাসাগরে ॥হৃদয়-উদয়াচলে দেখো রে চাহিপ্রথম

যদি ঝড়ের মেঘের মতো আমি ধাই চঞ্চল-অন্তরতবে দয়া কোরো হে,

জয় হোক, জয় হোক নব অরুণোদয় ।পূর্বদিগঞ্চল হোক জ্যোতির্ময়॥এসো অপরাজিত

প্রখর তপনতাপে আকাশ তৃষায় কাঁপে,বায়ু করে হাহাকার।দীর্ঘপথের শেষে ডাকি মন্দিরে

সেই তো বসন্ত ফিরে এল, হৃদয়ের বসন্ত ফুরায় হায় রে।সব

এই কথাটাই ছিলেম ভুলে–মিলব আবার সবার সাথে ফাল্গুনের এই ফুলে

যেতে দাও যেতে দাও গেল যারা ।তুমি যেয়ো না, তুমি

প্রভু, আজি তোমার দক্ষিণ হাত রেখো না ঢাকি।এসেছি তোমারে, হে

আমাদের খেপিয়ে বেড়ায় যে কোথায় লুকিয়ে থাকে রে ?।ছুটল বেগে

মোরে বারে বারে ফিরালে।পূজাফুল না ফুটিল দুখনিশা না ছুটিল,না টুটিল

রজনীর শেষ তারা, গোপনে আঁধারে আধো-ঘুমেবাণী তব রেখে যাও প্রভাতের

চলি গো, চলি গো, যাই গো চলে।পথের প্রদীপ জ্বলে গো

এত আলো জ্বালিয়েছ এই গগনেকী উৎসবের লগনে॥সব আলোটি কেমন ক’রে

ওরে পথিক, ওরে প্রেমিক,বিচ্ছেদে তোর খণ্ড মিলন পূর্ণ হবে।আয় রে

তোমায় আমায় মিলন হবে ব’লে আলোয় আকাশ ভরা।তোমায় আমায় মিলন

মম মন-উপবনে চলে অভিসারে আঁধার রাতে বিরহিণী।রক্তে তারি নূপুর বাজে

আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন !তারি

একটি নমস্কারে, প্রভু, একটি নমস্কারেসকল দেহ লুটিয়ে পড়ুক তোমার এ

ভোর হল যেই শ্রাবণশর্বরীতোমার বেড়ায় উঠল ফুটে হেনার মঞ্জরী॥গন্ধ তারি

এবার নীরব করে দাও হে তোমার মুখর কবিরে।তার হৃদয়-বাঁশি আপনি

ও অকূলের কূল, ও অগতির গতি,ও অনাথের নাথ, ও পতিতের

পথ দিয়ে কে যায় গো চলেডাক দিয়ে সে যায়।আমার ঘরে

পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে, আ য় আ

লক্ষ্মী যখন আসবে তখন কোথায় তারে দিবি রে ঠাঁই?দেখ্‌ রে

এবার বিদায়বেলার সুর ধরো ধরো, ও চাঁপা, ও করবী!তোমার শেষ

সকল ভয়ের ভয় যে তারে কোন্‌ বিপদে কাড়বে।প্রাণের সঙ্গে যে

শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আম্‌লকির এই ডালে ডালে।পাতাগুলি শির্‌শিরিয়ে ঝরিয়ে

তপের তাপের বাঁধন কাটুক রসের বর্ষণে ।হৃদয় আমার, শ্যামল-বঁধুর করুণ

তার অন্ত নাই গো যে আনন্দে গড়া আমার অঙ্গ।তার অণু-পরমাণু

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা–আন্‌মনা যেন দিক্‌বালিকার

তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে, তুমি ধন্য ধন্য হে।আমার প্রাণ তোমারি

লহো লহো তুলি লও হে ভূমিতল হতে ধূলিম্লান এ পরান–রাখো

তুমি ডাক দিয়েছ কোন্‌ সকালে কেউ তা জানে না,আমার মন

শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু, হে প্রিয়,মাঝে মাঝে

এস’ এস’ বসন্ত, ধরাতলে–আন’ মুহু মুহু নব তান, আন’ নব

জগতে তুমি রাজা, অসীম প্রতাপ–হৃদয়ে তুমি হৃদয়নাথ হৃদয়হরণরূপে ॥নীলাম্বর জ্যোতিখচিত

আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা।নীল

কোলাহল তো বারণ হল, এবার কথা কানে কানে।এখন হবে প্রাণের

তুমি কোন্‌ পথে যে এলে পথিক আমি দেখি নাই তোমারে।হঠাৎ

আমার মন, যখন জাগলি না রেও তোর মনের মানুষ এল

হৃদয় আমার, ওই বুঝি তোর বৈশাখী ঝড় আসে।বেড়া-ভাঙার মাতন নামে

সকল জনম ভরে ও মোর দরদিয়া,কাঁদি কাঁদাই তোরে ও মোর

আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে তোমারি নাম সকল তারার মাঝে

দেবতা জেনে দূরে রই দাঁড়ায়ে,আপন জেনে আদর করি নে।পিতা বলে

ওরে, কে রে এমন জাগায় তোকে?ঘুম কেন নেই তোরই চোখে?চেয়ে

আমার গোধূলিলগন এল বুঝি কাছে গোধূলিলগন রে।বিবাহের রঙে রাঙা হয়ে

ওই বুঝি কালবৈশাখীসন্ধ্যা-আকাশ দেয় ঢাকি॥ভয় কী রে তোর ভয় কারে,

আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে,আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে॥এই পুরাতন

তুমি এ-পার ও-পার কর কে গো ওগো খেয়ার নেয়ে?আমি ঘরের

কে রে ওই ডাকিছে,স্নেহের রব উঠিছে জগতে জগতে–তোরা আয় আয়

চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে, নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে–জীবন

তোমার এই মাধুরী ছাপিয়ে আকাশ ঝরবে,আমার প্রাণে নইলে সে কি

হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল আজি মম পূর্ণ হল, শুন সবে জগতজনে