আমার এই পথ-চাওয়াতেই আনন্দ।খেলে যায় রৌদ্র ছায়া, বর্ষা আসে বসন্ত॥কারা

ঝরা পাতা গো, আমি তোমারি দলে ।অনেক হাসি অনেক অশ্রুজলেফাগুন

ফল ফলাবার আশা আমি মনে রাখি নি রে ।আজ আমি

নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এল প্রাণে ।জগতজনহৃদয়ধন, চাহি তব পানে॥হরষরস বরষি

আনন্দধারা বহিছে ভুবনে,দিনরজনী কত অমৃতরস উথলি যায় অনন্ত গগনে ॥পান

একি করুণা করুণাময়!হৃদয়শতদল উঠিল ফুটি অমল কিরণে তব পদতলে ॥অন্তরে

শ্রাবণ তুমি বাতাসে কার আভাস পেলে —পথে তারি সকল বারি

জানি নাই গো সাধন তোমার বলে কারে।আমি ধুলায় বসে খেলেছি

ওগো দখিন হাওয়া, ও পথিক হাওয়া, দোদুল দোলায় দাও দুলিয়ে।নূতন-পাতার-পুলক-ছাওয়া

শ্রান্ত কেন ওহে পান্থ, পথপ্রান্তে বসে একি খেলা!আজি বহে অমৃতসমীরণ,

পিপাসা হায় নাহি মিটিল, নাহি মিটিল ॥গরলরসপানে জরজরপরানেমিনতি করি হে

সারা জীবন দিল আলো সূর্য গ্রহ চাঁদতোমার আশীর্বাদ, হে প্রভু,

সকলকলুষতামসহর, জয় হোক তব জয় —অমৃতবারি সিঞ্চন কর’ নিখিলভুবনময়–মহাশান্তি, মহাক্ষেম,

হৃদয় আমার প্রকাশ হল অনন্ত আকাশে ।বেদন-বাঁশি উঠল বেজে বাতাসে

অন্তরে জাগিছ অন্তরযামী।তবু সদা দূরে ভ্রমিতেছি আমি ॥সংসার সুখ করেছি

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।হৃদয় তোমারে পায়

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা–আন্‌মনা যেন দিক্‌বালিকার

শান্তিসমুদ্র তুমি গভীর,অতি অগাধ আনন্দরাশি।তোমাতে সব দুঃখ জ্বালাকরি নির্বাণ ভুলিব

(মরি লো) কার বাঁশি নিশিভোরে বাজিল মোর প্রাণেফুটে দিগন্তে অরুণকিরণকলিকা

হে তাপস, তব শুষ্ক কঠোর রূপের গভীর রসেমন আজি মোর

সারা নিশি ছিলেম শুয়ে বিজন ভুঁয়েআমার মেঠো ফুলের পাশাপাশি,তখন শুনেছিলেম

প্রাণে গান নাই, মিছে তাই ফিরিনু যেবাঁশিতে সে গান খুঁজে।প্রেমেরে

আছ অন্তরে চিরদিন, তবু কেন কাঁদি।তবু কেন হেরি না তোমার

আমার মিলন লাগি তুমি আসছ কবে থেকে!তোমার চন্দ্র সূর্য তোমায়

আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর ॥মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে,বিশ্বজগত মণিভূষণ বেষ্টিত

বাদল-মেঘে মাদল বাজে গুরুগুরু গগন-মাঝে॥তারি গভীর রোলে আমার হৃদয় দোলে,আপন

সেই তো বসন্ত ফিরে এল, হৃদয়ের বসন্ত ফুরায় হায় রে।সব

আজ কিছুতেই যায় না মনের ভার,দিনের আকাশ মেঘে অন্ধকার– হায়

আমি আছি তোমার সভার দুয়ার-দেশে,সময় হলেই বিদায় নেব কেঁদে হেসে॥মালায়

তুমি যে আমারে চাও আমি সে জানি।কেন যে মোরে কাঁদাও

ওই অমল হাতে রজনী প্রাতে আপনি জ্বালোএই তো আলো– এই

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারিশুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়াইয়েঊর্ধ্বমুখে নরনারী ॥না

ফাগুনের শুরু হতেই শুকনো পাতা ঝরল যততারা আজ কেঁদে শুধায়,

পূর্ণচাঁদের মায়ায় আজি ভাবনা আমার পথ ভোলে,যেন সিন্ধুপারের পাখি তারা,

গাব তোমার সুরে দাও সে বীণাযন্ত্র,শুনব তোমার বাণী দাও সে

পথিক মেঘের দল জোটে ওই শ্রাবণগগন-অঙ্গনে।শোন্‌ শোন্‌ রে, মন রে

শীতল তব পদছায়া, তাপহরণ তব সুধা,অগাধ গভীর তোমার শান্তি,অভয় অশোক

স্বামী, তুমি এসো আজ অন্ধকার হৃদয়মাঝে–পাপে ম্লান পাই লাজ, ডাকি

আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া,বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া

কোথা হতে বাজে প্রেমবেদনা রে!ধীরে ধীরে বুঝি অন্ধকারঘনহৃদয়-অঙ্গনে আসে সখা

আমারে যদি জাগালে আজি নাথ,ফিরো না তবে ফিরো না, করো

তোমারি সেবক করো হে আজি হতে আমারে।চিত্ত-মাঝে দিবারাত আদেশ তব

ওগো সুন্দর, একদা কী জানি কোন্‌ পুণ্যের ফলেআমি বনফুল তোমার

অরূপ, তোমার বাণীঅঙ্গে আমার চিত্তে আমার মুক্তি দিক্‌ সে আনি

আর নাই যে দেরি, নাই যে দেরি।সামনে সবার পড়ল ধরা

আমার মন, যখন জাগলি না রেও তোর মনের মানুষ এল

তোমার বীণা আমার মনোমাঝেকখনো শুনি, কখনো ভুলি, কখনো শুনি না

পেয়েছি সন্ধান তব অন্তর্যামী, অন্তরে দেখেছি তোমারে॥চকিতে চপল আলোকে, হৃদয়শতদলমাঝে,হেরিনু

তোমা-হীন কাটে দিবস হে প্রভু,হায় তোমা-হীন মোর স্বপন জাগরণ–কবে আসিবে

মেঘ বলেছে ‘যাব যাব’, রাত বলেছে ‘যাই’,সাগর বলে ‘কূল মিলেছে–আমি

ছাড়্‌ গো তোরা ছাড়্‌ গো,আমি চলব সাগর-পার গো॥বিদায়-বেলায় একি হাসি,

বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি, সেকি সহজ গান!সেই সুরেতে জাগব আমি,

কার মিলন চাও বিরহী–তাঁহারে কোথা খুঁজিছ ভব-অরণ্যেকুটিল জটিল গহনে শান্তিসুখহীন

নব কুন্দধবলদলসুশীতলা,অতি সুনির্মলা, সুখসমুজ্জ্বলা,শুভ সুবর্ণ-আসনে অচঞ্চলা ॥স্মিত-উদয়ারুণ-কিরণ-বিলাসিনী,পূর্ণসিতাংশুবিভাসবিকাশিনী,নন্দনলক্ষ্ণীসুমঙ্গলা ॥

আরো আঘাত সইবে আমার, সইবে আমারো।আরো কঠিন সুরে জীবন-তারে ঝঙ্কারো

কেন পান্থ, এ চঞ্চলতা।কোন্‌ শূন্য হতে এল কার বারতা ॥নয়ন

আরো আরো প্রভু, আরো আরো।এমনি করে আমায় মারো।লুকিয়ে থাকি আমি

এবার দুঃখ আমার অসীম পাথার পার হল যে, পার হল।তোমার

ডাকিছ শুনি জাগিনু প্রভু, আসিনু তার পাশে।আঁখি ফুটিল, চাহি উঠিল

মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝেআমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে ॥তুমি

জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে,বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে॥এ মোর হৃদয়ের বিজন

আমার না-বলা বাণীর ঘন যামিনীর মাঝেতোমার ভাবনা তারার মতন বাজে

একি সুগন্ধহিল্লোল বহিলআজি প্রভাতে, জগত মাতিল তায়॥হৃদয়মধুকর ধাইছে দিশি দিশি

বাণী তব ধায় অনন্ত গগনে লোকে লোকে,তব বাণী গ্রহ চন্দ্র

নিবিড় ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা।মন রে মোর, পাথারে হোস নে