আমাদের ছাত্রাবাস (Amader Hostel)
আমাদের ছাত্রাবাসে কিছু ছাত্র ছিল ভাই,
দুঃখ কষ্ট তাদের ছুঁতে পারত না কদাই।
ছিল না ভাবনা চিন্তা, জগৎ সংসার নিয়ে,
হাসি আর ঠাট্টাতেই দিন যেত তাদের বয়ে !!
ছিল এক অকাল পক্ক, নিতো না কারো পক্ষ,
সবার পিছনে খোঁচা মারাই ছিল তার ধর্ম!!
ক্রিকেট খেলার বেলায় শুধু নিজের ডিক্কি দেখাতো,
সভাপতি মাঙ্গলিক ভারতী নাম তার যে ছিল !!
ছিল মাইকি নামে এক ছেলে,
ঘুম, ক্রিকেট আর আড্ডা এতেই দিন যেত তার কেটে।
হোস্টেলে নতুন মুভির সে ছিল supplier
খেলার জন্য সূচী তৈরী আর দল গঠনে, তাকেই ছিল আমাদের দরকার,
কারণ সে ছিল আমাদের ছাত্রাবাসের স্পোর্টস মিনিস্টার !!
ছিল ফাইন্যান্স মিনিস্টার শুভ,
সে সারাদিন থাকতো ব্যস্ত, Facebook -এ অন্যদের করতে তুষ্ট!
পিঁপড়ের প্রতি তার ছিল অগাধ শত্রুতা,
কারণ তার মুখ থেকে সব সময় ঝরে পরতো মিষ্টতা !!
ছিল দিপু আর সাবু আমাদের দুই মামা,
ছাত্রাবাসে কোনদিন পরেনি তারা জামা !!
কালু মামা দিপু ছিল খুব রাগী!
কিন্তু হোস্টেলে চিকেনের দিন খাবার জন্যে সবার আগে হয়ে যেত তৈরী,
কারণ সে ছিল খুব ভোজন রসী !!
ছিল আমাদের বিরোধী নেতা গৌরাঙ্গ সুন্দর দত্ত,
সে কথায় কথায় দিতো শুধু শর্ত!
সিরিয়াল দেখাই সারাদিন থাকতো মত্ত !!
ছিল পাখি ভাই, শান্তনু নামে এক ভন্ড,
ছিল না তার কোনও কাজকর্ম,
গ্যাস দেওয়ায় তার একমাত্র ধর্ম !!
কিন্তু সে ছিল খুব পরিশ্রমী,
পড়াশুনার পাশাপাশি সে করতো চাকুরী !!
ছিল সাম্রাট (সম্রাট) আর শঙ্কারা, “This Size” নিয়ে তারা মাতে,
একে অপরের প্যান্ট খোলা ছিল তাদের হাতে।
অন্য কোনো কাজ যেন তাদের ছিল না জানা,
এই নিয়েই থাকতো তারা দিবা-নিশি মাখা !!
ছিল এক রণচণ্ডী “I Feel Up”
ইয়ার্কি করতে তার ছিল না কোন পরিমাপ।
রাত্রিবেলা সবাইকে সে ভই পাইয়ে, দিত ঠাপ !!
রিমন আর তুষার বলতাম তাদের দাদা আর বৌদি,
সংসারের কাজে তাদের দিন যেত নিরবধি।
নিজেদের ছোট জগৎ নিয়ে থাকতো তারা,
ছাত্রাবাসের কোলাহল থেকে যেন একটু ছাড়া !!
পুষ্পক সাহা ভাবতো প্লেন ক্র্যাশ হলে কিভাবে সবাইকে বাঁচাবে,
এই চিন্তাই যেন ছিল তার রাতের সঙ্গী নীরবে !
যদিও দিনের বেলায় তার মনে থাকতো তো কিছু,
কারণ রাতের বেলায় তো সঙ্গী থাকতো অন্য কিছু !!
ছিল আমাদের ফায়াজ ভাই ,
তার নাওয়া খাওয়া ছিল শুধু IGI,
রাত হলেই সে দিতো হাততালি,
কারণ খৈনি বানানো তে সে ছিল বড়োই পারদর্শী !!
তাপস, বলতো শুধু গুরু,
ও জানতো না কোথা থেকে করতে হবে কোন কিছুর শুরু।
কিন্তু পার্কের কাজে সে ছিল মহাগুরু !!
সিঁড়ি দিয়ে থপ থপ করে যখন হেঁটে যেত নিলয়
তখন সমগ্র ছাত্রাবাসে যেন শুরু হয়ে যেত প্রলয়!
থম্পা নামেও ডাকতো সবাই তারে,
গান গেয়ে পটানোতে ছিল সে সবার উপরে !!
ছিল কৃষ্ণেন্দু নামে এর একজন Tech জ্ঞানী
সে করতো সব কিছু নিয়ে পাগলামী,
কিন্তু তার রুম এর লাইট অন হলেই পুরো হোস্টেলের হয়ে যেত এলার্জি !!
তার অধীনেই ছিল ছাত্রাবাসের মিনিস্ট্রি অফ টেকনোলজি !!
সবার ছিল এক টাইম বাঁধা,
কারণ সবাই কে যে দেখতে হবে ছাত্রাবাসের চারপাশের ভয়ানক নগ্নতা !!
শুভেন্দু ছিল হেলথ মিনিস্টার বটে,
মেডিকেলে জ্ঞান কিন্তু ছিল না তার মোটে।
তবুও সে ছিল সবার স্বাস্থ্য রক্ষার ভারে,
যেন এক হাস্যকর দায়িত্ব ছিল তার কপালে !!
ছিল আমাদের “জান” শামিক সরকার
কোন কিছু ভাঙার কাজে প্রধানত তাকেই ছিল আমাদের দরকার!
ছিল রসিক জয়ন্ত রয়
“Quotation” দিয়ে আমাদের মন করতো জয় !!
ওকে রাস্তায় ফেলে করো, উত্তেজিত বালক – এসব তারই সৃষ্টি,
সকালবেলা বুম্বার মুখে ঘষে, করতো মন তুষ্টি !!
ছিল আমাদের “নাগরী” ধীরাজ
ছাত্রাবাসের সমস্ত ঘরে করতো সে বিরাজ!
কিন্তু স্নান করতে সে ছিল একবারে নারাজ !!
ছিল এক রাগী সিং জী
Chatting-এ থাকতো সে সারাদিন Busy
দুহাত দিয়ে খেত সে. Parmindar তার নাম,
মাথার চুল খুললেই, গন্ধে আমরা বলতাম রাম রাম !!
ছিল হিরেন দেবশর্মা, বলতো তাকে সবাই খুচুমাচা
কিন্তু Chinese-এ সে ছিল খুবই কাচা।
দিনে বাংলা, দুপুরে হিন্দী আর রাতে ইংরাজী,
“ম্যাম ম্যাম আমার হোস্টেল ফী টা কমাই দিবা” – এটাই তার বিখ্যাত উক্তি!!
ছিল আমাদের সৌভিক মোটুরী বিশ্বাস,
গালাগালি, মুখখিস্তি ছিল তার শ্বাস-প্রশ্বাস!
ফুটু, চুস আর পকাইত, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে শুধু এই তিনটে শব্দেই ছিল তার বিশ্বাস !!
ছোট ভাই শম্ভূ যেত কাকার চায়ের দোকানে,
লম্বু খেত সে একা বসে, অন্য কিছু নাহি মানে।
চা আর লম্বুতেই যেন তার জগৎ সীমাবদ্ধ,
ছাত্রাবাসের কোলাহল থেকে সে থাকত একটু স্তব্ধ !!
ছিল আমাদের প্রিয় ভাই অরুপ পওল,
ওর কথা শুনে আমারা সবাই বলতাম LOL !!
সেই সময় বাবু কাকা এসে আমাদের বলতো” তু সোকোল চল”!
এই শুনে বড়দা ঘুমের মধ্যে আবার বলে উঠতো “তু সোকোল চল চল চল” !!
ছিল আমাদের রমেশ আর গোরা
দুজনে মিলে সারাদিন ছাত্রাবাসে করে তামাসা !!
ছিল আমাদের সবার প্রিয় নরহরি কাকা,
রান্নাতে শুধু তার, চিকেনটাই রয়ে যেত কাচা !!
Master Chef কেশব কাকা ভাবত সে সবই জানে,
কিন্তু তার রান্না খেয়ে চোখে জল আসতো নেমে।
মনে হত কবে যাব মায়ের হাতের রান্না খেতে,
হোস্টেলের খাবার যেন আর রুচতো না কোনো মতে !!
ছিল হোস্টেলের এর কেয়ার টেকার সুব্রত কাকা,
কোনো কিছুতে সে খুশি হলেই মুখ থেকে তার বেরিয়ে আসতো এক বিশ্রী ভাষা …..মা**আ!!
সব শেষে বলি কথা একের, নাম তার তন্ময় গলু,
মুখ দেখে সবাই ভাবতো তারে ভলু!
সবসময় থাকতো তার অ্যান্টেনা খাড়া।
তাই ছাত্রাবাসের সবাই মারতো তার ডগাই টোকা!!
বলার মতো আছে আরও অনেক কথা ,
কিন্তু সময় আজ শেষ, তাই রইলো এইটুকুই বলা,
কলেজ শেষে একে একে সবাই গেছি ছাড়ি,
ভেঙে গেছে সব সেই কয়েক বছরের বাঁধন নাড়ি।
আজ শুধু পড়ে আছে কবিতার ছেঁড়া পাতা,
স্মৃতির পাতায় লেখা সেই সব রঙিন গাথা !!
এইবার তবে করলাম কবিতার ইতি,
শুধু সকলের কাছে অনুরোধ, ভুলো না সেই স্মৃতি।
ছাত্রাবাসের দিনগুলো যেন থাকে অমলিন,
হৃদয়ের গভীরে গাঁথা সেই মধুর দিন।
বি দ্র : – কবিতাটি শুধুমাত্র একটি হোস্টেলের কয়েকটি ছেলের স্মৃতিচারণ মাত্র। এক একটা হোস্টেলের এক একটা কাহিনী থাকে। এই কবিতা টির মাধ্যমে এরকমই একটা হোস্টেলের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
Writer : Tanmoy & Sourav
Specal Thanks : bumba