Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আনন্দে যাপন || Sankar Brahma

আনন্দে যাপন || Sankar Brahma

আজ সকালে সুন্দর ঝলমলে সোনালি রোদ উঠেছে। পেঁজা তুলো মেঘগুলি নৌকার মতো যেন নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। পুজোর আর বেশি দেরি নেই।
মার মুখে শুনেছে, মায়েদের গ্রামের জমিদার বাড়িতে নাকি পুজোর আগে একটা নীলকন্ঠ পাখি এসে বসতো।
– কেন মা, নীলকন্ঠ পাখি এসে বসতো?
– উম মা আসছেন, বাবা মহাদেবের এই বার্তা নিয়ে কৈলাশ থেকে নীলকন্ঠ পাখিটা আসতো বলে জমিদার বাড়ির লোকের কাছে শুনেছি।

পাখিটা অনেকক্ষণ ধরেই ডাকছে কোথায় যেন। সেই ডাক শুনে, বুবাই আজ পড়ায় মন বসাতে পারছে না কিছুতেই । মনটা বারবার চলে যাচ্ছে পাখিটার ডাক শুনে তার কাছে।
বাবা বলেছেন, পড়াশুনা সবসময় সময় মন দিয়ে করতে হয় , না হলে সে সময় অন্য কোনদিকে মন থাকলে, সেই পড়া মনে থাকে না।
পড়ায় সে মন দেবে কী করে ! মনটা যে কেড়ে নিচ্ছে পাখিটার ওই মিষ্টি সুরের শিস।
‘ টি – ই – উ টি – ই – উ টি – ই – উ করে একটানা কিছুক্ষণ ডেকে, একটু থামছে। আবার কিছুক্ষণ পর ডাকতে শুরু করছে।
বুবাই সুরটা নকল করে নিয়ে নিজে কয়েকবার সে রকম শিস দেওয়ার চেষ্টা করেও পারলো না। ব্যর্থ হওয়ার কারণে মন কিছুটা হলেও খারাপ হয়ে গেলো তার।
সে এবার জানলার কাছে গিয়ে পাখিটাকে খুঁজে দেখবার চেষ্টা করলো। জানলার সামনে একটা বড় তেঁতুল গাছ আছে। তারই পাতার আড়েলে কোথায়ও বসে ডাকছ পাখিটা। বুবাই তাকে খুঁজতে লাগলো। এটাই কি তাহলে সেই নীলকন্ঠ পাখি ? নীলকন্ঠ পাখি কি এমন সুরে ডাকে? বুবাই জানে না। মা জানলেও জানতে পারে। মা রান্না ঘরে রান্নার কাজে খুব ব্যস্ত এখন। না হলে বাবা অফিস যাওয়ার আগে তাকে সময় মতো খাবার দিতে পারবেন না। তাই এ সময় তাকে ডেকে কথাটা জানতে চাওয়া মোটেই সমীচীন হবে না , ভাবলো বুবাই।
এমন সময় বাবা এসে ঘরে ঢুকলেন। দেখলেন, বই ছেড়ে উঠে বুবাই জানলায় কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাই দেখে তিনি বললেন, পড়শুনা ছেড়ে জানলায় দাঁড়িয়ে কী করছো বুবাই?
– বাবা তুমি শুনতে পাচ্ছো, কেমন মিষ্টি সুরে একটা পাখি ডাকছে?
– না তো, পাচ্ছি না তো শুনতে
– তুমি একটু ভাল করে কান পেতে শোন
– আমার কাছে এতো সময নেই বাবা, তুমি পড়া ছেড়ে এসব করছো দেখলে মা কিন্তু রাগ করে, খুব বকবে তোমায়। বলে বাবা নিজের কাজ সেরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
মা যে বকবে, বুবাই কী তা আর জানে না? খুব জানে। তাই সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও, জানলা ছেড়ে আবার পড়ার টেবিলে এসে বসলো। কিন্তু মনটা পড়ে রইলো ওই পাখিটার কাছে।

বই খুলে বুবাই ভাবতে লাগলো,বড়োরা সব কেমন যেন। সব সময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তারা। এসব ব্যাপারে তাদের কোন কৌতূহল নেই। বুবাই আরও ভাবলো, পাখির জীবনটা কেমন আনন্দের। তাদের বাবা মার কোন কথা শুনে চলতে হয না। পড়াশুনার কোন বালাই নেই। খাও-দাও, যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াও। কী মজা ! কী মজা !

এর কয়েকদিন পর, সেদিন স্কুলে অংকের স্যার না আসায়, বুবাইদের ক্লাসে হেডস্যার এসেছিলেন। তিনি অংক করতে না দিয়ে, বললেন – তোমরা, কে কি হতে চাও, এবং কেন তা হতে চাও, সবাই খাতায় লিখে জমা দাও টেবিলে। সকলেই লিখে খাতা জমা দিলো। বুবাইও লিখে জমা দিলো।
সকলে খাতা জমা দেবার পর। হেডস্যার এক এক করে খাতা দেখে নাম ধরে ডেকে বললেন, স্বপন এখানে এসো, কি লিখেছো পড়ো এবার।
এরপর যার যার নাম ধরে ডাকলেন, সবাই এক এক করে সেখানে গিয়ে পড়তে শুরু করলো।
কেউ লিখছে, সে ডাক্তার হতে চায়। ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। কেউ আবার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে, দেশে বড় বড় সেতু অট্টালিকা গড়ে দেশের উন্নতি করতে চায়। কেউবা লেখক হয়ে সমাজের কথা লিখতে চায়। কেউ আবার মন্ত্রী হয়ে দেশের লোকের উন্নতি করতে চায়।
এরপর পড়ার জন্য যখন বুবায়ের ডাক পড়লো। বুবাই স্যারের টেবিলের কাছে গিয়ে, টেবিল থেকে খাতাটা তুলে নিয়ে যখন পড়তে শুরু করলো, সকলে তা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো। ক্লাসে যেন হাসির ফোয়ারা ছড়িয়ে পড়লো । বুবায়ের লেখা শুনে হ্যাডস্যার কিন্তু মোটেও হাসলেন না। বরং বুবাইকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, বড় হয়ে তোমার মনটা যেন এরকমই থাকে বুবাই।
বুবাই লিখেছিল, সম্ভব হলে আমি পাখি হয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াবো। এক জায়গার ফল ফুলের বীজ ঠোঁটে করে এনে অন্য জাযগায় ছড়িয়ে দেবো, যেখানে সে সব গাছপালা নেই। যখন যেখানে খুশি থাকবো। সেখানে যা পাবো তাই খুশি মনে খাব। এভাবেই আনন্দে কাটাবো আমার সারাটা জীবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *