মহেশ পাউদাল
১৯৮২ সালে নেপালে জন্মগ্রহণ করেন মহেশ পাউদাল। তিনি একজন নেপালি কবি, গল্পকার, সমালোচক এবং অনুবাদক। নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক (lecturer) হিসাবে বর্তমানে কর্মরত। মহেশ পাউদাল শিশুসাহিত্য এবং বড়দের জন্য বহু লেখা লিখেছেন। নেপালি ভাষা থেকে পঁচিশটিরও বেশি বই ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন।
তার প্রধান রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে:-
১). Tadi Kinarko Geet (উপন্যাস),
২). Tyaspachhi Phulena Godavari (গল্প),
৩). Of Walls and Pigeons (গল্প),
৪). Sunya Praharko Sakshi (কবিতা)
৫). Notes of Silent Times (কবিতা)
তার অনুবাদগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য:-
১). Dancing Soul of Mount Everest (প্রতিনিধিত্বশীল আধুনিক নেপালি কবিতা)
২). Radha
(কৃষ্ণ ধারাবাসীর পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাস)
৩). Silver Cascades
(প্রতিনিধিত্বশীল নেপালি ছোটগল্প সংকলন)
এ”ছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” এবং “কারাগারের রোজনামচা” বইদু’টি নেপালি ভাষায় অনুবাদ করেছেন।
(তার প্রাপ্ত সম্মাননা)
১). নেপালের বিধিভূষণ স্বর্ণপদক,
২). নরেন্দ্রমণি দীক্ষিত স্বর্ণপদক,
৩). বিমল গুরুং স্মৃতি পুরস্কার,
৪). সুদীশ নিরৌলা স্মৃতি এবং
৫). প্রসিদ্ধা কান্দেল স্মৃতি পুরস্কার
বহু আন্তর্জাতিক সাহিত্য সেমিনারে তিনি নেপালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
মহেশ পাউদালের সাতটি কবিতা
——————————————————
১).
সত্যের জন্য যুদ্ধ
আপনি যদি সত্যের যুদ্ধের জন্য এগিয়ে আসেন
আমি যদি আসামি হিসেবে আপনার সামনে দাঁড়াই
আপনি আমাকে মেরে ফেলতে পারেন।
দয়া করে! শুধু একটি কথা মনে রাখবেন,
আমার বুকে গুলি করবেন না।
এই ঘরটি আপনার জন্য অটুট ভালবাসায় ভরা হৃদয়কে ধরে রেখেছে
এবং যদি তা ভেঙে পড়ে এবং আপনার প্রগতিশীল পায়ের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে
তাতে আপনি আকাশ পরিমাণ ব্যথা পেতে পারেন
আর আমি—যে ক্রমান্বয়ে পৃথিবীতে পরিণত হয়েছি।
২).
বিপ্লব
বিপ্লবের জন্য যাচ্ছ, এতে কোনো সন্দেহ নেই!
আঘাত করো; ভাঙো!
তবে মাটির মতো ভাঙো, নরম মাখনের মতো
একটি শক্ত খোলসের পিচফলের বীজ লাগাও
বিপ্লবের স্নিগ্ধ হাতের পরম যত্নে
এবং দেখো বীজ আলতো করে ভেঙে যায়
কোমল চারাতে প্রথম জোড়া পাতা গজাতে
পূর্ণ জীবন আর ভবিষ্যতের জন্য।
৩).
বিজয়ী
জমি আর জল দখলের পর
বিজয়ের আনন্দে তরোয়াল নিয়ে
বিজয়ী সমুদ্রের তীরে দাঁড়ালেন
এবং উচ্চ স্বরে নিজের প্রশংসা করলেন।
ধীর ঢেউয়ের সমুদ্রে
জেলেরা, খুব কাছেই কাজে ব্যস্ত
তাদের কর্মক্ষেত্র সমুদ্র সীমার আধ মাইলের বেশি না
অথচ তারা বিজয়ীর আনন্দ গর্জন শুনতে পেল না।
৪).
বর্ডার
ওয়াঘা সীমান্তের কাছে দাঁড়িয়ে
আমি একজন বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলাম যে সেখানে পাতার জঞ্জাল পোড়াচ্ছিলেন:
‘বাবা, ভারত-পাক সীমান্ত কোথায়?’
তিনি আমার দিকে ঘুরেই কবরস্থান হাজির করলেন,
তার ডান হাতের তর্জনি
আমার বুকে ঠেকিয়ে বললেন, ‘এই।’
সে তার দুটো পা নিয়েই ছাইয়ের স্তূপে দাঁড়িয়ে ছিল।
৫).
আকাশ
সমস্ত ধোঁয়া পৃথিবী থেকে উঠে
আকাশের দিকে যায়
তবে আকাশকে কখনোই ধোঁয়ার দেশ
বলা হয় না
সবসময়ই আকাশকে বলা হয়
চাঁদ আর তারাদের দেশ
৬).
দূরত্ব
আমি জানি, তুমি অনেক অনেক দূরে
কিন্তু, হে আমার ভালবাসা, আমার কোনো ক্ষোভ নেই
আমি জানি, যদিও আমাদের দূরত্ব অনেক বেশি
চেয়ে দেখ পৃথিবীর প্রত্যেকে
দূরের সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে
এবং যুগ যুগ বেঁচে আছে।
৭).
সেই মুহূর্ত
যা আপনারই হবে, আমার নয়
যে সত্যিকারের মৃত্যুর মুখোমুখি হবে।
(কবিতাগুলি বাংলা রূপান্তর করেছেন – মাসুদুল হক)
—————————————————————-
[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত ]