চোরাই ধন – প্রথম অংক
পুরুষ চরিত্র–অজিতকুমার ভট্টাচার্য , শৈলেন, জামাতা(নাম বিহীন, তার বয়ানে , উত্তম পুরুষে লিখিত গল্প) ধরে নেওয়া যাক তার নাম– সুধীর
মহিলা চরিত্র– সুনেত্রা, বিভাবতী
প্রথম অংক (সুধীর,সুনেত্রা)
সুধীর—ও সুনি, আঃ চা এনেছ, বেশ বেশ একটু বসো।
সুনেত্রা– এখন সকাল ৯টা- আমার কি এখন খোশগল্প করবার সময়?
সুধীর– আ হা হা। ঐ দেখো খোশ গল্প নয়, আরে একটি কথা তোমায় বলতেই হবে।
সুনেত্রা– কি ব্যাপার বলত, আজ একুশ বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে,… অথচ কদিন ধরেই দেখছি — একুশ বছর আগের কিন্ত কিন্ত করে একটা কথা বলবার চেষ্টা করেই যাচ্ছো ?
সুধীর– মহাভারতের যুগে,বুঝলে, স্ত্রীকে পেতে হতো পৌরুষের জোরে, লাভ হতো রমণীরত্ন। আর আমি লাভ করেছি কাপুরুষতা দিয়ে সুনেত্রা দেবীকে ।
সুনেত্রা– কাপুরুষতা? হু বুঝলাম, তো তুমি কি মহাভারতের যুগে বিবাহ করেছিলে আমায়? না কলি যুগে?
সুধীর— না না। কলি যুগ কলি যুগ, ঘোর কলিতে।
সুনেত্রা– তবে ত ঠিকই আছে। ওসব কলি , দ্বাপর না ভেবে বরং নিজের মেয়ের বিয়ের কথা ভাবো দিকিন।
সুধীর– হু, সে ত জানি। পাত্র ত হাতের কাছেই আছে, আর সেজন্যই ত একটি কথা তোমায় বলবার চেষ্টা করছি।
সুনেত্রা– মানে? হাতের কাছে? কে ঐ শৈলেন?
সুধীর– তবে? আমার ত বেশ পছন্দ।
সুনেত্রা– বাঃ , চমৎকার, তিনি একা ঠিক করে রেখেছেন, আর আমার পছন্দ, মেয়ে অরুণার পছন্দ এসব বুঝি কিছু ভাববার নেই?
সুধীর– আচ্ছা, সুনি, একটা কথা বলতো এই যে এখন খদ্দর পড়বার চল,নিজেও পড়ো না অথচ আমায়ও দাও না পড়তে? অবশ্য তুমি বললেও, আমি পড়তাম কিনা সন্দেহ।
সুনেত্রা– এ আবার আর এক কথা…কেন ? আমি দেশী শান্তিপুরী সাদা তাঁতের শাড়ি পড়ি– নিজের দেশের লোকের হাতে বোনা।
সুধীর–হু,চওড়া রঙিন পাড়ের সাদা শাড়ি। তবে সাদা কেন? অবশ্য সাদা মানেই সব রঙের মিশ্রণ।
সুনেত্রা– তোমার অনেক সময়, থাকো ঐ বিজ্ঞান ভাবনা নিয়ে।তবে একটা কথা বলি, শৈলেন ছেলেটিকে বেশি এগোতে দিয়ো না।
সুধীর– ব্যস্ হুকুম হয়ে
গেলো, কেন ছেলেটি খারাপ কিসে ? …
(স্বগত –কি করে যে কথাটি বলি…..)
যাই উঠি, ব্যাঙ্কে যেতে হবে। আমার বাবা ছিলেন নামজাদা ব্যাঙ্কের অন্যতম অধিনায়ক, তারই অংশীদার আমি বলে কথা।
সুনেত্রা– হু ঘুমিয়ে পড়া অংশীদার ।
সুধীর– মোটেই না, আষ্টে পৃষ্ঠে লাগাম দিয়ে জুড়ে দিয়েছিলেন বাবা আমায় আপিসের কাজে,আর বলে কিনা আমি ঘুমিয়ে পড়া অংশীদার।
হা হা হা…
সুনেত্রা– উঃ, আষ্টে পৃষ্ঠে লাগাম দিয়ে জুড়ে দিয়েছেন….
সুধীর–কিন্ত জানই ত, আমার শরীর ও মনের সাথে তখন ঐ কাজটা একটুকুও মনে ধরে নি, ইচ্ছে ছিল.. ফরেস্ট বিভাগে পরিদর্শনের পদ দখল করে বসি– দৌড়ঝাপ, শিকারের সখ, আরও কত কি…
সুনেত্রা — হ্যাঁ। আর আমার নির্জন নিঃসঙ্গ জীবন হতো… ঘরের দেয়ালে টাঙ্গান থাকত বন্য পশুর ছাল চামড়া , মুন্ডু …. কিন্তু বিধি বাম….
সুধীর– আরে তুমি ত তখনও আসৌ নি। বাবা বলেছিলেন, যে কাজটা পাচ্ছ, সেটা সহজে জোটে না বাঙালির ভাগ্যে। অগত্যা…
সুনেত্রা– কিন্তু গ্রহের ফেরে আমিই ত তোমার স্ত্রী হতাম, ঠিক…
সুধীর– এই রে— আরে শোনো শোনো, সুনি ,আজ একটা কথা তোমায় বলতেই হবে। একুশ বছর ধরে যা বলে উঠতে পারি নি।
সুনেত্রা– ও,তাই। একুশ বছর ধরে যখন বলতেই পারো নি, আজ আর তা না বললেও হবে।
সুধীর— (স্বগত)…উহু , তাহলে শৈলেনের কি হবে ! মেয়েও ত শৈলেন কে পছন্দ করে বলে মনে হয়…..
সুনেত্রা– কি হলো, কি বিড় বিড় করছ, যাও স্নানে যাও।
সুধীর — আচ্ছা,সুনি , তুমি ত গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব মানতে।
সুনেত্রা– এখনও মানি, হঠাৎই এমন প্রশ্ন?
সুধীর– না, এমনি, আচ্ছা,অরুণার বিয়ের ব্যাপারেও সে নিয়ম মানবে।
সুনেত্রা– না মানবার ত প্রশ্ন নেই। এসব না ভেবে এবারে গাত্রোত্থান করো। আমি যাই।
সুধীর– হু, এই যাই…. (স্বগত)
যাক, সুনেত্রা চলে গেছে।
উঃ আমার শ্বশুরমশাই অজিতকুমার ভট্টাচার্য যদি জানতেন…. আর তার বিদুষী কন্যা…. এতদিনে যদি বলি, সুনি যে কি মনে ভাববে , জানি না…নাঃ তাও বলতেই হবে। সেই একুশ বছর আগের এক চুরির কথা…. থাক নাইবা বললাম …..
[গান– এমনি করে যায় যদি দিন, যাক না…..]