কালোবাজার
রজনী স্খলিত পায়ে মই বেয়ে উঠছিল। সিদ্ধিলাভের পর অবিচলিত থাকা সকলের পক্ষে সহজ নয়। তখন পদে পদেই পতনের সম্ভাবনা। বড়ো বড়ো সাধকেরও।
সিদ্ধির মাত্রাটা একটু বেশিই হয়ে গেছে বুঝি। ভারতের স্বাধীনতা আর পাকিস্তান লাভের পর এই প্রথম বিজয়া-ইদ সম্মিলনী। বিজয়ীদের শুভ সংঘটন! নতুন নেশনের নতুন নেশা—তাই আর সব কিছুর মতো এদিকটাতেও একটু মাত্রা ছাড়াবে বিচিত্র না!
কিন্তু বাঁশের সিঁড়ি ধরে ওঠা সহজ নয়। এমনকী, পনেরোই আগস্টের পরেও কাজটা সহজ হয়নি। স্বাধীনতা পাবার পর দেশের যত কিছুই অদলবদল হয়ে থাক, বঁাশ এবং বংশধারার বিশেষ কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
পড়তে পড়তে বার কয়েক টাল সামলাতে হয়েছে রজনীকে। ধীরে, রজনী, ধীরে! অধোগতির পথে সুরুত করে নামা গেলেও উন্নতির সোপান— জীবনের যেকোনো দিকেই, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমান টলায়মান।
রাত হয়েছে বেশ। শহরতলির পথ এমনিতেই একটু নিরালা, তার ওপর এদিকটা আবার নিরালোও মনে হয়। লক্ষ্মী পূজা পেরিয়ে, কালী পূজার কাছ ঘেঁষেই ওদের বৈঠকটা বসেছিল, তাই অমায়িক রজনীকে এই মুহূর্তে অমারজনীর হাত ধরে এগুতে হয়েছে। নির্জ্যোৎস্না রাত্রি, দূরে দূরে এক-একটা গ্যাসবাতি জ্বলছে—মাঝের গুলো হয় জ্বালা হয়নি নয়তো কেউ দয়া করে নিবিয়ে দিয়েছেন। এই আলো-আঁধারের আবছায়া পথে একলা চলতে চলতে হঠাৎ সেএই সিঁড়ির সামনে এসে হাজির। কাছেই একটা গ্যাসবাতি জ্বলছিল কাজেই জিনিসটা তার নজরে ঠেকল। একখানা অনেক ফ্ল্যাটওয়ালা বাড়ির দোতলার একধারের এখানে এক অলিন্দের সঙ্গে লাগানো বঁাশের মইটা একটু অদ্ভুত দৃশ্যই মনে হয়।
থমকে দাঁড়াতে হল রজনীকে।
কলকাতা এবং শহরতলির সব লোকচরিত্র তার নখদর্পণে নয় তা সত্যি, কিন্তু তা হলেও যদ্দূর তার ধারণা, এধারের নাগরিকদের গৃহপ্রবেশের ধরনটা ঠিক এরকম নয়। ইঞ্জিনিয়াররা সাধ্যমতো বাড়ির যত সর্বনাশই করুক, পারতপক্ষে সিঁড়ির একটা ব্যবস্থা রাখেই। নিশ্চয়ই তার বাসিন্দাদের সপরিবারে বঁাশের সিঁড়ি বেয়ে যাতায়াত করতে হয় না।
রজনী গভীর। রজনী মাত্রই যেমন হয়ে থাকে। আমাদের রজনীও তার ব্যতিক্রম নয়। কাজেই এই গভীর রজনীতে, গভীর ভাবে তলিয়ে এটাকে কোনো বদলোকের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই তার মনে হয় না। দেশটা বিলেত এবং সিঁড়িটা দড়ির হলে ব্যাপারটাকে ইলোপমেন্ট বলেই সেঠাওরাতে পারত; এবং ঠাউরে খুশি হতে পারত; কিন্তু এদেশে এই বিদঘুটে বংশপরম্পরার সামনে খাড়া হয়ে খুনখারাপি ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারা যায় না। হয়তো-বা চুরিচামারিও হতে পারে।
রজনী নিজের মহল্লার পিস কমিটির একজন। অশান্তির গন্ধ পেলে সেদাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। নিশপিশ করতে থাকে। রজনী বঁাশের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল।
সিঁড়িটা অলিন্দের গায়ে-পড়া। অলিন্দ দোতলার সঙ্গে লাগানো। অলিন্দ ও ঘরের মাঝে কালো রঙের পর্দা ঝুলছে। বারান্দা উতরে রজনী পর্দার কাছে পৌঁছুল। ঘরের ভেতরটা অন্ধকার। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। একটু সংকুচিত হয়েই ঘরের মধ্যে পা বাড়াল সে। হিমশীতল শবদেহটা কোনখানে পড়ে আছে কে জানে! প্রতি পদক্ষেপেই তার স্পর্শলাভের প্রত্যাশা করছিল সে। কিন্তু বেশ কয়েক পা এগিয়েও তেমন কিছুর ওপর তাকে হুমড়ি খেয়ে পড়তে হল না দেখে শেষপর্যন্ত হয়তো সেএকটু হতাশই হল যেন।
হঠাৎ টিক করে আওয়াজ—আলো জ্বলে উঠেছে! একটি রূপময়ী যুবতী বিপর্যস্ত বেশে আরও অপরূপ হয়ে বিছানার ওপরে বসে—সে-ই বেডসুইচ টিপে বাতি জ্বালিয়েছে। সবেমাত্র তার ঘুম ভাঙল দেখলেই বোঝা যায়। ভীতিবিহ্বল দৃষ্টিতে সেরজনীর দিকে তাকিয়ে।
রজনীর অবশ্যি প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের অভাব ছিল না। তা ছাড়া, ভাং খাবার পর উক্ত মতিগতি আরও বেশিমাত্রায় উৎপন্ন হতে থাকে। তখন লোকে ভাঙে তো মচকায় না।
রজনী মেয়েটিকে চকিত দৃষ্টিতে দেখে নিয়েছে। আর বলেছে, ‘নমস্কার। বিজয়ার প্রীতি নমস্কার! আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়ে ভারি খুশি হলাম। কিছু মনে করবেন না।’
বলতে বলতে সেপর্দা বরাবর পিছিয়ে গেছে। সেখানে গিয়ে আর একবার সেভালো করে আরেক নজর মেয়েটিকে তাকিয়ে দ্যাখে। অপূর্ব রূপসী—বেশহীনতার মধ্যে আরও বেশ, এত চমৎকার যে মাথা ঘুরে যাবার মতোই। পর্দার সাহায্যে নিজেকে সামলে নিয়ে কোনোরকমে সেদাঁড়াতে পারে।
‘কে আপনি? আমার ঘরে কী করছেন?’ রমণীর কন্ঠস্বর মোটেই রমণীয় নয় ‘এত রাত্রে?…আর পর্দা ধরে—অমন করে ঝুলবেন না। দামি পর্দা, ছিঁড়ে যাবে।’
রজনী পর্দানশিন হয়েছিল আগেই বলেছি। এইবার পর্দার আসক্তি ত্যাগ করে সরে দাঁড়াল। আমতা আমতা করে তার আরম্ভ হয়—‘…আমি ভাবলাম…’ বলতে গিয়ে রজনী ঢোঁক গেলে। উপর্যুপরি গিলতে থাকে। ‘…ভাবলাম কী…’
মেয়েটি নিজের বেশবাস গুছিয়ে নিল। বুঝতে পারল তার অর্ধাবৃত দেহসুষমার জন্যেই আগন্তুক কথ্য ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। গরম চাদরটা নিজের চারদিকে জড়িয়ে নিয়ে সেজিজ্ঞেস করল—‘হ্যাঁ, কী ভাবলেন শুনি…?’
‘আমি ভাবলাম যে চোরছ্যাঁচোর কেউ ঢুকে—এরকম তো ঘটতেই আছে আকচার…কেউ ঢুকে হয়তো আপনার…’
তারপর ফের রজনীর আটকে যায়, কী বলবে ভেবে পায় না। মেয়েটির ধনরত্ন—তার চেয়েও মূল্যবান প্রাণরত্ন—ততোধিক মহার্ঘ অন্যান্য রত্নাদি অপহরণের কথা সবিস্তারে তার মুখের উপর উল্লেখ করা উচিত হবে কি না ভাবতে থাকে। আদালতের বিচিত্র খবরে যেসব বার্তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপেই বলা হয়, একটি ভদ্রমহিলার মুখোমুখি সেগুলির উচ্চারণে একজন ভদ্রলোকের স্বভাবতই বাধবার কথা।
‘আপনার তো ভারি বুকের পাটা!’ মেয়েটি এবার ফেটে পড়ে। ‘এত রাত্রে আপনি পরের ঘরে—’ সেও ঠিক ভাষা খুঁজে পায় না।
‘সিঁড়িটা দেখলাম কিনা! আপনার বারান্দার সঙ্গে লাগোয়া বঁাশের মইটা দেখলাম যে। তাই আমার মনে হল…’
‘যে সুবর্ণ সুযোগ? ওইটা ধরে একজন নিদ্রিত ভদ্রমহিলার শোবার ঘরে নিশুতি রাতে সেঁধিয়ে পড়ি? কেমন এইতো?’
‘ঠিক বলেছেন! আপনা থেকেই রজনীর সব কেমন গুলিয়ে যায়—‘ওই—ওই সিঁড়ি! ওই সিঁড়িটাই এজন্যে দায়ী। বঁাশের মই দেখলেই আমার পা সুড়সুড় করে। ভারি মজার ওঠা-নামা। যখন ছোট্ট ছিলাম তখন এন্তার উঠেছি। মই দেখলেই উঠতাম।’
‘তুমি একটা পাগল!’ মেয়েটি না বলে আর পারে না।
‘শীলাও ঠিক ওই কথাই বলে থাকে।’
‘বুঝেছি।’ মেয়েটি ফোঁস করে উঠল—‘শীলার ওখানেও বুঝি এমনি আনকোরা পথেই যাতায়াত করা হয়?’
‘না না। সে আমার বউ।’
‘চমৎকার!…তাহলে এইবার আমি পুলিশ ডাকি?’
এই বলে মেয়েটি আলোয়ানে ভালো করে নিজেকে মুড়ে নিয়ে শয্যা ত্যাগ করে। ‘রসিক নাগর! বদমাইশ কোথাকার!…শীলা যদি টের পায় যে এইভাবে তুমি মেয়েদের শোবার ঘরে এসে লীলা কর তাহলে সেকী বলে জানতে আমার ইচ্ছা করে।’
‘রাত একটা…। না না, নিশ্চয়ই এত রাত হয়নি…’
‘হয়নি! দেয়ালঘড়ির দিকে দেখেছ?’
কথাটা মিথ্যে নয়। রজনীর অতদূর দৃষ্টি আচ্ছন্ন করার পক্ষে একটি মেয়েই এত বেশি যথেষ্ট যে তা ছাড়িয়ে দেয়ালের দিকে তার চোখ পড়ার সুযোগ হবার কথা নয়। এতক্ষণে তাকিয়ে দেখল রজনীর মতো ঘড়িটারও তেরোটা বেজেছে। সত্যিই!
‘ঠিকই তো। তাহলে এখন আমার যাওয়াই উচিত।’ রজনী পর্দা ফাঁক করে যাবার উদ্যোগ করে। এক-পা তোলে।
কিন্তু হায়, রজনী তখনও বাকি। অন্তত রজনীর তো বটেই।
‘খবরদার! নড়েছ কি, অমনি আমি ডাক ছেড়ে বাড়ির লোক জড়ো করব।’ তারপরে টিপয়ের টেলিফোনটার দিকেও সেওর দৃষ্টি আকর্ষণ করে—‘দাঁড়াও, এখুনি আমি থানায় জানাচ্ছি।’
‘সর্বনাশ!’ হেমন্ত-রজনী বৈশাখের রাত্রির মতো ঘামতে থাকে।
‘আপনার বাড়ির ফোন নম্বর কত? শীলাকেও কথাটা আমি জানাতে চাই। সেকী বলে শুনি একবার।’
‘সর্বনাশ! তাহলে কিছু না বলে সোজা সেবাপের বাড়ি চলে যাবে…’ রজনীর গলা যেন রজনীর গলা নয়।
‘তাহলে আজকের রাত্রের মতো থানাতেই যাও। পুলিশই ডাকি…’ মেয়েটি পর্দা সরিয়ে অলিন্দের ধারে দাঁড়ায়। ‘কী ভাগ্যি! গ্যাসবাতিটার কাছে এক পুলিশের লোক দাঁড়িয়ে না? সার্জেন্ট কিংবা সাবইন্সপেক্টর গোছের কেউ—তাই যেন মনে হচ্ছে।’
সন্ত্রস্ত চোখে তাকিয়ে রজনীরও ঠিক সেই কথাই মনে হয়।
‘আমাদের বরাত ভালো! নইলে এমন সময়ে একজন পুলিশের লোক এই নিশুতি পাড়ায় ল্যাম্পপোস্টের কাছে দাঁড়িয়ে! লোকটা সিগারেট টানছে—তাই না?’
‘হ্যাঁ…’ রজনী কম্পিত কন্ঠে সায় দেয়। পুলিশ কর্মচারীর চুরোটের মতো নিজেও যেন সেপ্রতিমুহূর্তে নি:শেষিত হতে থাকে। চোখের সামনে ধোঁয়া ছাড়া আর কিছুই যেন দেখা যায় না। এমনকী, অমন সুন্দর মেয়েটিও কেমন ধোঁয়াটে।
‘ডাকি তাহলে? নারীর শ্লীলতাহানি করার মজাটা কী—তোমার মতো লোকের সেটা শিক্ষা হওয়া দরকার।’
‘না না। আমি সমস্ত খোলসা করে বলছি। বললেই তুমি বুঝতে পারবে। কোনো কথা আমি গোপন করব না।’
‘তোমার কৈফিয়ত শোনার আগ্রহ আমার চেয়ে ওই লোকটারই বেশি হবে বলে মনে হয়। ওর জন্যেই ওগুলো জমা রাখো-না!’
‘এই ব্যাপার যদি জানাজানি হয়ে যায় তাহলে বেজায় কেলেঙ্কারি হবে।’ রজনী আর্তনাদ করে ওঠে।
‘এরকম বাজে কেলেঙ্কারি তো রয়েছেই।’
‘আর শীলাকে তাহলে আমি চিরদিনের মতো হারাব।’
‘সেতো আরও ভালো—আরও সুখের কথা।’
‘আমার চাকরিবাকরি সব যাবে। আমি পথে বসব।’ রজনী আর বেশি বলতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ সেইখানেই বসে পড়বার উদ্যম করে। তার গাল বেয়ে জল গড়াতে থাকে।
কাঁদলে কেবল মেয়েদেরই নয়, এক-এক সময় এক-একটা পুরুষকেও মন্দ দেখায় না। মেয়েটি তার অশ্রুবর্ষণ লক্ষ করে। যেন ভিজতে থাকে মনে হয়।
‘আমি একটা কথা বলব?…’ কাঁদতে কাঁদতে রজনী আবেদন জানায়—‘তুমি যে ওই বললে—তোমার শ্লীলতাহানি না কি—তার জন্য কী খেসারত দিতে হবে বলো আমায়। শাড়ি-ব্লাউস—গয়নাগাঁটি—মণিমুক্তো—হিরে-জহরত—চুনি-পান্না—যা চাও বলো—কেবল দোহাই তোমার, ওই পুলিশকে ডেকো না।’
মেয়েটির মেজাজে একটু যেন পরিবর্তন দেখা যায়। এমনকী, তার দেহাবরণের খানিকটা ফের খসে পড়তেও সেবাধা দেয় না।
‘বটে? কী আছে তোমার কাছে—দেখি।’
রজনী এ পকেট ও-পকেট হাতড়ে কয়েকটা দস্তার টাকা আর কিছু খুচরো রেজকি বার করে। সেই সঙ্গে একটা চুলের কাঁটাও।
‘এই তোমার সম্বল!’ মেয়েটি হাসে। ‘এই খুচরো কারবার?’
‘ভেতর পকেটে আমার চেক বই আছে। কখন কী হয় তাই সব সময়ে কাছে রাখি। ভাগ্যিস, আজ আমি নিয়ে বেরিয়েছিলাম।’
‘কত টাকা আছে তোমার ব্যাঙ্কে, শুনি?’
‘হাজার দশেক। আমার এতদিনের জমানো।’
‘আচ্ছা, তোমার নিজের মতো কিছু রেখে ন-হাজার টাকা আমার নামে লিখে দাও। নগদ হলেই ভালো হত, কিন্তু তা আর কী করে হচ্ছে? চেকই সই!’
‘ন-হাজার?’ রজনীর মন নানাকার করে। হাহাকারের মতোই!
‘তোমার একটু আগে দিলদরিয়া দাক্ষিণ্যর কথা ভাবলে অনেক কমিয়ে-সমিয়েই বলেছি—নয় কি? আজকালকার বাজারে মণি-মুক্তো হিরে-জহরতের জড়োয়া গয়না লাখ টাকার কমে হয় না। কিন্তু তোমার অত নেই তো, কী করবে! ওই ন-হাজারই দাও।’
চেকটা হাত বদলাল। অবশেষে মেয়েটি সদয় হয়ে বললে, ‘তোমাকে আর এই বিপদের মুখে মই বেয়ে নামতে দিতে পারি না। পুলিশের লোকটা এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে। দেখতে পাবে। চলো, তোমাকে সদরপথে বার করে দিয়ে আসি।’
বাড়ি থেকে বেরিয়ে গ্যাসবাতিটার পাশ দিয়ে যাবার সময়ে পুলিশের লোকটা কটমট করে তাকায়। কী বিচ্ছিরি তার গোঁফজোড়া—দেখলেই প্রাণ শিউরে উঠে। তার চাউনির মতেই ভয়াবহ।
‘বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেছলাম…’ জড়িত কৈফিয়তের সুরে অকারণে আপনা থেকেই সেজানায়। জানিয়েই এগুতে থাকে। জবাবে পুলিশের কিঞ্চিৎ বক্র হাসি ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না।
পরদিন সাড়ে দশটায় ঘুম থেকে উঠে দিনের আলোয় আগের রাত্রের ব্যাপারটা সমস্তই কেমন যেন তার বেখাপ্পা লাগে। তার মনটা করকর করে। তার অতদিনের সঞ্চয়—করকরে অতগুলো টাকা, শীলা—এমনকী, তক্ষশীলার খাতিরেও জলাঞ্জলি দেয়া যায় না। যা হয় হোক—যে করেই হোক—এই টাকা সেএকটা সর্বনেশে মেয়ের খপ্পরে যেতে দেবে না—না, কিছুতেই না। বউ যদি বাপের বাড়ি যায় সেওভি আচ্ছা! সেই দন্ডেই সেট্যাক্সি হাঁকিয়ে ব্যাঙ্কে যায়। গিয়ে শোনে, আধঘণ্টা আগে তারা এসে চেক ভাঙিয়ে নিয়ে চলে গেছে। বেয়ারার চেক—ক-মিনিটের আর মামলা!
‘তারা!…তারা মানে…?’ রজনী চেঁচিয়ে ওঠে—‘মেয়েটির সঙ্গে কোনো পুরুষ ছিল নাকি?’
‘ছিল বই কী। পুরুষটার আবার যা বদখত গোঁফ।’ ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার মুখবিকৃত করেই কথাটা জানায়।