Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রূপকুমারের রূপকথা || Subhra Saha Shelley

রূপকুমারের রূপকথা || Subhra Saha Shelley

রূপকুমারের রূপকথা

বহুদিনে আগে কনকপুরের দুধপুকুর পাড়ে এক দুঃখিনী মায়ের বাস ছিলো। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে ছিলো তার সংসার — সুখে দুঃখে বেশ ভালই চলছিলো।

হঠাৎ করে যমপুরী থেকে পেয়াদা এসে একদিন তার স্বামীকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে চলে গেল ।সেই যে গেলো আর এলো না।

তখন থেকেই দুঃখিনী মা নিজের নাম ভুলে গেলেন আর তার নাম হয়ে গেল দুঃখিনী মা।

তার শত দুঃখের মধ্যেও সুখ ছিলো একটাই ——তার সন্তানরা।

সন্তানদের আদর করে নাম রেখেছিলেন রূপকুমার আর ফুলকুমারী।

রূপকুমার ছোট থেকেই একটু গম্ভীর স্বভাবের। বাবা মারা যাবার পরে যেন সেটা আরো বেড়ে গেলো।

রাতের বেলায় দুঃখিনী মা যখন সন্তানদের ভবিষৎ নিয়ে চিন্তা করে চোখের জল ফেলতেন তখন রূপকুমার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে “ভয় কি মা। তোমার তো আমি আছি। তোমাকে আর বোনকে আমি কোন কষ্ট পেতে দেব না।”

কিশোর রূপকুমারের মুখের কথায় দুঃখিনী মায়ের চিন্তায় ছেদ না পড়লেও খুশিতে চোখে জল এসে যেতো।

রূপকুমারের কপালে চুমু খেয়ে বলে “তাই তো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমার রাজকুমার এখন বীরপুরুষ হয়ে গেছে। “

দাদাকে আদর করতে দেখে মায়ের আঁচলের তলায় এসে ফুলকুমারী “দাদা বড় বলে কি তুমি শুধু দাদাকেই আদর করবে। আমি বুঝি কেউ না”।

দুঃখিনী মা ফুলকুমারীকে কাছে টেনে নিয়ে বলে “কে বলেছে তুমি আমার কেউ নয়। তোমরা দুজনে আমার দু চোখের মণি। তোমাদের ছাড়া আমি যে অন্ধ বাছা।”

ঘরের ফুঁটো চাল দিয়ে জোৎস্নার আলো এসে পড়ে দুঃখিনী মায়ের ঘরে। আর সেই আলোতেই দুঃখিনী মায়ের সমস্ত দুঃখ ক্ষণিকের তরে উবে যায়।

এমনি করেই দিন কাটতে থাকে দুঃখিনী মায়ের।

রূপকুমারও বাবার সমস্ত গুণ নিয়ে বড় হয়ে উঠেছে।

যে বয়সে ছেলেদের খেলাধূলায় মত্ত থাকার কথা সেইবয়স থেকেই রূপকুমার সারাদিন রং, তুলি, কাদামাটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে ছবি আঁকাতে, মূর্তি বানাতে।

রূপকুমারের হাতে আঁকা ছবি আর বানানো মূর্তি দেখে দুঃখিনী মায়ের মনে পড়ে ওদের বাবার কথা। ঠিক যেন বাবার মতো।

রূপকুমার মাকে স্বান্ত্বনা দিয়ে বলে “দেখো মা, আমি যখন আরো বড় হবো তখন রাজার দরবারের শিল্পী হবো। আমার আঁকা ছবি, বানানো মূর্তি রাজদরবারে থাকবে। রাজামশাই টাকা দিয়ে সেগুলো কিনে নেবেন। তখন দেখো তোমার কোন দুঃখই থাকবে না “।

চোখের জল সামলে ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে ছেলের কথায় সায় দিতেন।

এমনি করে দুধপুকুরের পাড়ে ছোট্ট কুটিরে চলতে থাকে স্বপ্নের জাল বোনা।

“শোন. শোন, শোন —জরুরী ঘোষনা –রাজামশাই স্বর্ণকুমার তার রাজসভায় অভিনব শিল্পকলা প্রতিষ্ঠার জন্য একজন শিল্পীর অন্বেষণ করছেনননননননন—-যদি কেউ মহারাজকে খুশি করে তার মনমতো নমুনা প্রদর্শন করতে সক্ষম হন, তবে রাজামশাই তাকে রাজদরবারে রাজশিল্পীর পদে বহাল করবেন আর মাহিনা বাবদ প্রতিমাসে দশ স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করিবেননননন”।

এই ঘোষণা শোনামাত্র রূপকুমার মাকে বলে “আমি রাজবাড়ী যাবো।”

প্রাণভ্রমরা কিশোর রূপকুমারকে সুদূর রাজবাড়ী পাঠাতে মায়ের মন চায় না।

এমন সময় দুঃখিনী মায়ের প্রাণের সখী কাকাতুয়া ল্যাজ নাড়িয়ে বলে “সখী ওকে যেতে দাও, ওর সময় এসেছে “।

এই কাকাতুয়াই সুখে, দুঃখে দুঃখিনী মায়ের পরামর্শদাতা।

তাই সেই ভরসাতেই পরদিন সকালে রূপকুমারকে সাজিয়ে গুছিয়ে পুটুলিতে চিঁড়ে গুড় বেঁধে দিয়ে জলভরা চোখে বিদায় দেয়।

যাবার সময় কাকাতুয়া রূপকুমারকে বলে পথে যদি কখনো কোন বিপদে পড়ো তবে “কাকাতুয়া ,কাকাতুয়া রূপকুমারের বড় বড় বিপদ— পূর্বদিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে এটা তিনবার বলবে। তাহলেই আমি তোমাকে উদ্ধার করবো”।ঘাড়কাত করে সম্মতি জানায় রূপকুমার।

মাকে প্রণাম করে বোনকে আদর করে রওনা হয় রূপকুমার রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে।

মাইলের পর মাইল হেঁটে ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত রূপকুমার একটা গাছেরতলায় বিশ্রাম নেয়। মায়ের দেওয়া খাবার খেয়ে একটু ঝিমুনি আসতেই কানে আসে “আমাকে উদ্ধার করো “হঠাৎ এমন আওয়াজ হতেই রূপকুমারের ঝুমুনি কেটে যায়।

আশেপাশে কোন মানুষজনকে না দেখতে পেয়ে রূপকুমার বোঝার চেষ্টা করে আওয়াজটা কোথা থেকে আসছে। এদিক ওদিক ভালো করে নজর করতেই দেখতে পায় গাছের তলায় একটা নারকোল পড়ে আছে আর আওয়াজটাও সেখান থেকেই আসছে। ভালো করে বোঝার জন্য নারকোলটাকে হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতেই চারদিক ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আর বিকট একটা আওয়াজ— “কেঁরে আঁমার কঁমপিউটারের মাঁউসটা ধঁরে উঁল্টোপাল্টা টাঁনে? “

একটু থতমত খেলেও নিজেকে সামলে “আমি রূপকুমার। এটা কমপিউটারের মাউস কোথায়? এটা তো একটা নারকোল “।

“ওঁরে ছোঁকরা তোঁর তোঁ দেঁখি বঁড় সাঁহস। আঁমার সাঁথে এঁমন কঁরে কঁথা কঁইছিস। জাঁনিস আঁমি কেঁ?”

“না — তাতো জানি না—তুমি কে ?”

একটা বিকট অট্টহাসির সাথে “আঁমার নাঁম কঁমপিউটার ভূত “।

“আমি কমপিউটারও জানি , মাউসও জানি —আমার বন্ধুর ইস্কুলে আছে ও একদিন আমাকে চুপিচুপি ইস্কুলে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছে। কিন্তু সেটা মোটেই নারকোল নয়”।

“হুঁহুঁ বাঁবা এঁটা এঁখন নাঁরকোল নয়। এঁটাই আঁমার মাঁউস আঁমি ওঁকে যেঁমন চাঁলাবো ওঁ তেঁমনিই চঁলবে বুঁঝেছিস ছোঁকড়া “।

” তুমি যে কেমন কম্পিউটার ভূত বোঝা গেছে। তুমি এই নারকোলকে বন্দী করে রেখেছো। এতো ভারি অন্যায়।কাউকে বন্দী করে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এমন করাতে পারো না। তোমার যদি ক্ষমতা থাকে তবে তুমি তোমার প্রয়োজন মতো মাউস বানিয়ে নাও। আর ওকে মুক্তি দাও”।

“এঁইটুকু ছোঁকড়া আঁমায় চ্যাঁলেঞ্জ জানাচ্ছে? আঁমার ক্ষঁমতা নিঁয়ে? ঠিঁক আঁছে এঁই এঁখুনি আঁমি এঁকটা মাঁউস বাঁনিয়ে দেঁখাচ্ছি আঁর এঁই নেঁ নাঁরকোলকেও মুঁক্তি দিঁলাম “বলেই অদৃশ্য হয়ে যায় কম্পিউটার ভূত।

নারকোল এসে ঢিপ করে রূপকুমারকে প্রনাম করে বলে “প্রভু তুমি আমার জীবনদাতা ।আমি মন্ত্রপূত নারকোল। আমি এখন থেকে তোমার সঙ্গী হয়ে থাকতে চাই। তোমার সকল ভালোকাজে আমি তোমাকে সাহায্য করবো”।

সেদিনটা সেইগাছের নীচে কাটিয়ে পরদিন সকালে নারকোলের পিঠে চেপে সহজেই রূপকুমার পৌঁছে যায় রাজবাড়ীর ফটকে।

কিন্তু এতটুকু কিশোরকে শিল্পী বলে মানতেই চায় না পেয়াদারা। —অন্দরমহলে প্রবেশের অনুমতি দেয় না।

এতদূর এসে রাজসভায় যেতে না পেরে রূপকুমারের মনভার হয়ে যায়।

মন্ত্রঃপূত নারকোল ফিসফিস করে বলে “মন খারাপ করো না— আমার খোলায় ভেতর ঝটপট ঢুকে পড়ো দেখি”

নারকোল তার খোলার মধ্যে রূপকুমারকে ঢুকিয়ে নিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পৌঁছে যায় রাজসভায়।

তখনও রাজসভায় কেউ এসে পৌঁছায় নি। নারকোলের খোলা থেকে বেড়িয়ে রূপকুমার নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে নেয়।

কিছুক্ষণের মধ্যে নামীদামী শিল্পীরা এসে ভীড় জমাতে থাকেন রাজসভায়।

রাজসভা শুরু হলে রাজামশাইয়ের আদেশ মতো সব শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্ম দেখাতে থাকেন।

একে একে সকল শিল্পীর হাতের কাজই রাজামশাই দেখে নেন। কিন্তু কোনটাই তার মনমত হয় না।

তখন কিশোর রূপকুমার নিজেকে শিল্পী বলে পরিচয় দিয়ে মহারাজের সামনেই তৈরী করে নানান মূর্তি যা দেখে মহারাজ মহা খুশি। মহারাজ রূপকুমারকে রাজ শিল্পী হিসেবে রাজসভায় নিয়োগের আদেশ দেন।

রূপকুমার “মহারাজ আমার একটা শর্ত আছে এই কাজে নিযুক্ত হবার আগে “

“বেশ তো বল কি শর্ত “।

“আমার পরিবার মা, বোন, কাকাতুয়া আর নারকোল —এদের সবাইকে রাজপ্রাসাদে থাকতে দিলে তবেই আমি —“

“ব্যস এতটুকুই —“

রাজামশাই পেয়াদা পাঠিয়ে দুধপুকুরের পাড়ের কুটির থেকে দুঃখিনী মা ,ফুলকুমারী, কাকাতুয়াকে আনবার হুকুম দিলেন।

রূপকুমারের আর্জিমতো পরিবারের সকলে এসে হাজির হয় রাজসভায়।

ফুলকুমারীর রূপে মুগ্ধ হয়ে মহারাজ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন দুঃখিনী মায়ের কাছে।

মহাধূমধাম করে বিয়ে হবার পরে মহারাজ দুঃখিনী মা ও রূপকুমারকে সসম্মমানে রাজমাতা ও রাজভ্রাতা করে রাজবাড়ীতে রাখলেন।

দুঃখিনী মায়ের সমস্ত দুঃখ লোপ পেল এবার গল্পের নটে গাছটি মুড়োলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress