জীবনের গল্প
স্থান বর্ধমান স্টেশন এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম শেষ কিনারা।
প্রতিদিনের মত অফিস যেতে আটটা চব্বিশের শিয়ালদা গুয়াহাটি কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস ধরতে শর্ট রুটে ডিরেক্ট প্লাটফর্মে উঠেছি সেদিন।পৌঁছে বুঝলাম আজ আমার ট্রেন লেট ততক্ষনে দিল্লি গামী পূর্বা এক্সপ্রেস প্লাটফর্মে ঢুকছে।
শেষের দিকে জেনারেল কামরা হওয়ার জন্য প্রচুর গরীব হতদরিদ্র মানুষের ও পাশে পার্সেল কামরা তাই রেল কর্মীদেরও ভিড়।উইদাউট টিকিটের যাত্রী ধরতে হাজির হয়েছে দু-দুটো টিটি ,তাদের চোখ খুঁজে নিচ্ছে দৃষ্টি এড়িয়ে চলা মানুষ।এদের লক্ষ্য থাকে প্রতিদিন জেনারেল কামরা,কারণ ধরেই নেয় গরীব মানুষরা টিকিট কাটলেও তাদের চমকানো সোজা,আদায় করা যায় অতিরিক্ত ফাইন।
দুজন খুব বয়স্ক মাসিমা,হতদরিদ্র পোষাকে টিটিদের কাছে তাদের জেনারেল টিকিটটা নিয়ে জানতে গিয়েছিল কোন কামরায় উঠবে ।যাত্রীদের হাতে টিকিট থাকলে বিগড়ে যায় কিছু টিটিদের মন ।তাই বেচারাদের কপালে অহেতুক জুটলো এক ধমক,আরে হটো ইধার সে।অমন ধমক খেয়ে গুটিয়ে পড়লো দুঃস্থ যাত্রী দুজন।আমি হঠাৎ দেখি অদূরে বসে চুপ করে কাঁদছে। মনটা খুব খারাপ হলো।কাছে গিয়ে বললাম “কি গো ট্রেন চাপবে না,ওঠো ওঠো আর ট্রেন কিন্তু নেই দিল্লির।
কি যেন বলতে গিয়ে জড়িয়ে গেলো ওদের কথা, আমি হাত টা বাড়িয়ে দুজন কে জেনারেল কামড়ায় চাপিয়ে দিলাম।ট্রেন ছাড়লো,তখনো ওরা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে।আসলে এই অভাবী মানুষ গুলো খুব সরল ও সৎ,একটু সাহায্য পেলে কৃতার্থ হয়। এরা যে টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছে,এদের কাছে এটা সত্যিই গর্বের,অথচ টিকিট না থাকলে ফাইন করতে এদের দিকেই ছুটতো টিটি দ্বয়।মনটা ভালো হলো ওদের জন্য কিছু করতে পেরে। নজর গেলো হঠাৎ ট্রেনটা ছেড়ে দিয়েছে আর মুখে কৃতজ্ঞতা মাখা ওই দুই অভাবী যাত্রী আমার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে টাটা বলছে।