স্পোর্টস পৃষ্ঠার রহস্য
মাসে একবার ধাঁধা ক্লাবের মিটিং বসে। ক্লাবের নামটি কিন্তু বিদঘুঁটে। ব্ল্যাক উইডোয়ার্স ক্লাব–অর্থাৎ কালো বিপত্নীকদের আড্ডাখানা!
মিটিং মানে খানাপিনা। তারিয়ে-তারিয়ে ভালো-ভালো খাবার গেলা হয়, চু চু করে দামি দামি পানীয়তে চুমুক মারা হয়–এবং একজন অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয়। মাননীয় এই অতিথি মহাশয় কিন্তু খানাপিনার মধ্যেই একটা জবর রহস্য হাজির করেন–প্রতি মাসেই একটি করে ধাঁধার জট খুলতে হয় আড্ডাধারীদের।
যত জটিল প্রহেলিকাই হোক না কেন–সমাধান ঘটে আশ্চর্যভাবে–স্রেফ বুদ্ধির খেলায়। প্রতিবারই সাহায্য করে যায় যে মানুষটি–সে কিন্তু ক্লাবের একজন ওয়েটার নাম, হেনরী। ধাপে ধাপে জট খুলে চমক সৃষ্টি করতে তার জুড়ি নেই।
আড্ডাখানায় গোয়েন্দাগিরির অভিনব এই পরিকল্পনার স্রষ্টা প্রখ্যাত কল্পবিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান লেখক আইজাক আসিমভ। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে এলারী কুঈ মিস্ত্রি ম্যাগাজিনে পেটুক কালো বিপত্নীকদের একটা গোয়েন্দা গল্প লিখেছিলেন। তার পরেও লিখতে হয়েছে তিন ডজন গল্প। কোনও গল্পেই মারপিট নেই, সেক্স নেই, ক্রাইমও খুব একটা নেই–আছে শুধু আলসেমি আর যুক্তিতর্কের প্যাঁচ। বড়লোকি খেয়াল বললেও চলে।
আসিমভ সাহেব নিজেই বলেছেন–এসব গল্পে সব কিছুই পাঠকের সামনে মেলে ধরি– তারপরেও পাঠককে ধরাশায়ী হতে হয় হেনরীর যুক্তির মুষ্ট্যাঘাতে। কথাবার্তায় বুদ্ধির ধার রাখি– কারণ, আমার নিজেরই তা ভালো লাগে। খানাপিনার কথাও বেশ থাকে–পাঠকদের খুশি করার জন্যে ।
তিন ডজন ধাঁধা থেকে একটি ধাঁধা হাজির করা হল এই সংখ্যায়। ওয়েটার হেনরী সমস্যার সমাধান করে ফেলার আগেই পাঠক যদি তা করতে পারেন তাহলে কিন্তু তিনি নিজেকে অনায়াসেই ক্ষুরধার ডিটেকটিভ হিসেবে জাহির করতে পারেন…
এই পেশায় নেমেও পড়তে পারেন।
মাসিক ভোজসভায় বসেছেন কালো বিপত্নীকরা।
ম্যারিও গোনজালো জিগ্যেস করলেন–Blain কি একটা ইংরেজি শব্দ?
Blain? খড়াং করে চেয়ারটাকে টেবিলের সামনে টেনে বললেন জেমস্ ড্রেক। উনি এখন তাকিয়ে আছেন রকমারি রুটি আর রোলের দিকে। ভাবছেন কোনটার দিকে হাত বাড়াবেন।
Blain, তীক্ষ্ণ জবাব দিলেন গোনজালো।
বানানটা কী? দু-পিস রাইসর্ষের রুটি তুলে নিয়ে মাখন মাখাতে-মাখাতে শুধোলেন রোজার হ্যাঁলস্টেড।
বিরক্ত হলেন গোনজালো, বানানে কী এসে যায়। বলে খুব যত্নের সঙ্গে ন্যাপকিনটা রাখলেন নিজের ডোরাকাটা গোলাপি ট্রাউজার্সের ওপর।–যেভাবে খুশি বানান করতে পারেন। শব্দটা ইংরেজি কিনা তাই বলুন।
টমাস ট্রামবুল আজকের ভোজসভার স্বাগতিক অর্থাৎ হোস্ট। সবাইকে তিনিই নেমন্তন্ন করে এনেছেন। ভদ্রলোকের কপালখানা দেখলে মনে হয় যেন খাঁটি ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি। কপাল কুঁচকোলেই মনে হয় চাষের মাঠে লাঙল পড়েছে লম্বা-লম্বা খাঁজ জেগে ওঠে। এই মুহূর্তে সেইরকম খানকয়েক খাঁজ সৃষ্টি করেছেন ব্রোঞ্জ ললাটে। বলছেন–ড্যাম ইট, ম্যারিও। বেশ তো সময়টা কাটছিল। হঠাৎ এই Blain নিয়ে উৎপাত শুরু করলেন কেন?
প্রশ্ন করেছি–তার বেশি তো নয়। জবাবটা দিচ্ছেন না কেন?
অল রাইট। Blain ইংরেজি শব্দ নয়।
টেবিলে যারা বসেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের মুখের দিকে চাইলেন গোনজালো সবাই তাহলে মেনে নিচ্ছেন, Blain ইংরেজি শব্দ নয়।
কিঞ্চিৎ দ্বিধার সঙ্গে হলেও একে-একে সবাই সায় দিলেন। সবশেষে বিড়বিড় করে ইমানুয়েল রুবিন বললেন কক্ষনো না। ভদ্রলোকের চশমার লেন্স এত মোটা যে কাঁচের মধ্যে দিয়ে অস্বাভাবিক বৃহৎ দেখাচ্ছে চক্ষু যুগলকে। দাড়ির দৈর্ঘ্যও কম নয়–তবে আজকে তা সামান্য খাটো–যেন অন্যমনস্কভাবে কেটে ছোট করে ফেলেছেন।
লরেন্স পেনটিলি এতক্ষণ চুপচাপ বসেছিলেন। আজকের ভোজসভায় তিনিই প্রধান অতিথি। প্রৌঢ়। পাতলা সাদা চুল। জুলপি দুটো মাটনচপ আকারে লম্বা হয়ে নেমে এসেছে নিচের দিকে এবং যেন আরও নামবার ফিকিরে আছে। সবার বক্তব্য শেষ হয়ে গেলে ইনি মৃদু হাসলেন এবং বললেন–জীবনে শুনিনি এই শব্দ।
একদম কথা বললেন না একজনই। জিওফ্রে অ্যাভালোন। শিরদাঁড়া সিধে করে বসে থাকা এঁর একটা বাতিক। এখনও বসে রইলনে সেইভাবে। ভুরু দুটো শুধু একটু কুঁচকে রইল। মাঝের আঙুল দিয়ে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে নাড়তে লাগলেন সিরাজির বরফ। এই তাঁর দ্বিতীয় গেলাস।
অলরাইট, অলরাইট, বললেন গোনজালো শব্দটা যে ইংরেজি শব্দ নয়–তা মেনে নিতে কারও দ্বিধা নেই। চক্ষের নিমেষেই তা দেখা যায়। কিন্তু দেখা যায় কী করে, প্রশ্নটা সেইখানেই। ইংরেজি শব্দ যতগুলো জানা আছে তার ফিরিস্তিতে কি চোখ বুলোতে হচ্ছে? চোখ বুলোনোর পরই কী বলছেন–না, Blain শব্দটা ইংরেজিতে নেই? নাকি, শব্দটার আওয়াজটা চেনাচেনা লাগছে না বলেই আন্দাজে ঢিল ছুড়ছেন? আপনারা যদি মনে–
নরম গলায় বাধা দিলেন হ্যাঁলস্টেড।
বললেন–মানুষের স্মৃতি কাজ করে কীভাবে, কেউ যখন তা জানে না–তখন প্রশ্নটা তুলছেন কেন। স্মৃতির কলকবজা চালু রয়েছে কীভাবে, এ সম্পর্কে যাঁরা তত্ত্বের পর তত্ত্ব আউড়ে যান তারাও জানেন না কীভাবে তথ্যকে বের করে আনতে হয় মাথার মধ্যে একবার তা ঢুকিয়ে দেওয়ার পর। এই যে এতগুলো শব্দ বলে গেলাম–এদেরকে টেনে আনতে হচ্ছে আমারই শব্দের ভান্ডার থেকে–যখন যেটাকে দরকার, ঠিক তখনি পেয়ে যাচ্ছি সেই শব্দটাকেই। এ রহস্যের কিনারা কি আজও হয়েছে?
ট্রামবুল বললেনভায়া, এমন অনেক সময় আসে যখন মাথার চুল ছিঁড়ে ফেললেও যে শব্দটি যখন দরকার, তখন তাকে পাওয়া যায় না।
ঠিক এই সময়ে ক্লাবের অতুলনীয় ওয়েটার হেনরী এক বাটি কাছিমের সুরুয়া এনে রাখল হ্যাঁলস্টেডের সামনে। দেখেই চিত্ত তৃপ্ত হয়েছে হ্যাঁলস্টেড সাহেবের। লোভনীয় আহার্যর দিকে মন ধাবিত হয়েছে তুরঙ্গ বেগে। এহেন পরিবেশে কথার কচকচি মানেই মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। হ্যাঁলস্টেড সাহেব আবার মানসিক চাপ একদম সইতে পারেন না। তোতলাতে থাকেন।
এ ক্ষেত্রেও তো-তো করে তিনি বললেন–বিলকুল ঠিক। ঠিক এই সময়ে ঠিক শব্দ মনে করতে না পারলেই মেজাজ আপনার খিঁচড়ে যায়। শুধু আপনার নয়, বেশির ভাগ লোকেরই তাই হয়। ভাবে বুঝি সাংঘাতিক একটা কিছু গোলমাল ঘটে গেছে সহজভাবে নিতে পারে না কিছুতেই। যেমন আমি। মনের মতো শব্দ মনে করতে না পারলেই তোতলাতে থাকি।
অ্যাভালোন-এর ভারী পুরুষালি কণ্ঠস্বর গমগমিয়ে উঠল এই সময়ে। টেবিল মাত করে দিলেন একাই।
সবুর! সবুর! Blain বলে একটা শব্দ আছে বইকি। সেকেলে হলেও ইংরেজি শব্দ। মানে, ফোঁড়া।
রাইট, হৃষ্ট কণ্ঠে বললেন গোনজালো–বাইবেলের শব্দ। বুক অফ এক্সোডাস-এ আছে। মিশরে প্লেগ মহামারীর কথা লেখার সময়ে ব্যবহার করা হয়েছে। জানতাম, কেউ না কেউ ঠিকই ধরতে পারবেন। আমি তো ভেবেছিলাম ম্যানি-র মাথায় এসে যাবে।
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, রুবিন–আমি কিন্তু ভেবেছিলাম, একেলে ইংরেজির কথা হচ্ছে।
আমি কিন্তু তা বলিনি, বললেন গোনজালো–তাছাড়া, Blain শব্দটা Chilblain শব্দেরই অংশ এবং Chilblain একটি আধুনিক ইংরেজি শব্দ। মানেটা কারও অজানা নয়–ঠান্ডায় হাতে পায়ে ফোঁড়া হলে বলা হয় Chilblain।
কে বলেছে Chilblain একেলে ইংরেজি শব্দ? গরম হয়ে গেলেন রুবিন–তাছাড়া…
উচ্চকণ্ঠে ধমক দিলেন ট্রামবুল-ম্যানি, আত্মরক্ষার চেষ্টা করবেন না। ম্যারিও এসব কথা জানলেন কী করে, সেটা জানা আগে দরকার। ভালো কথা। আমারই বিশেষ অনুরোধে আজ সামুদ্রিক কড মাছ ফিন্যান হ্যাঁডি রান্না করা হয়েছে। যদি কারও খেতে রুচি না হয়–হেনরীকে বলে দিন অন্য পদ দিতে।–ম্যারিও, বলুন কোত্থেকে জানলেন এত ব্যাপার?
সাইকোলজির বই পড়তে গিয়ে জেনে ফেলেছি, বললেন ম্যারিও গোনজালো সবকিছু জেনেই জন্মেছি–এমন ধারণা আমার মাথায় নেই, আছে ম্যানি-র মাথায়। চোখ আর কান খোলা রেখে শিখে যাই এবং সেই জ্ঞানকে দরকার মতো কাজে লাগাই। যেমন লাগালাম এক্ষুনি। মনে রাখাটাও তো বিপজ্জনক ব্যাপার।
সে বিপদের মধ্যে আপনি অন্তত কখনও পড়বেন না, স্বগতোক্তি করলেন রুবিন।
পড়লেও বয়ে গেছে। মনে রাখার ঝকমারি তো দেখতেই পেলাম। জিগ্যেস করলাম, Blain শব্দটা ইংরেজিতে আছে কিনা–জিওফ ছাড়া ঝটপট জবাব দিয়ে গেলেন প্রত্যেকেই। জিওফ দ্বিধায় পড়লেন, কেন? কেন না, উনি বেশি মনে রাখেন। বাইবেলে এই শব্দের ব্যবহার তার মনে আছে। সেই সঙ্গে মনে আছে আরও অনেক কিছু। এত মনে রাখার ফলেই সিদ্ধান্ত নিতে তার দ্বিধা জেগেছে।
হক্ কথা, বললেন ড্রেক। এই মুহূর্তে তিনি কাঁটা চামচের ওপর একটু ফিন্যান হ্যাঁডি নিয়ে জিভে রেখেছেন। চোখ মুখ চিন্তায় আবিল হয়ে উঠেছে। পরমুহূর্তেই খুশির রোশনাই ছড়িয়ে গেল সারামুখে।
গোনজালো বললেন–এই দ্বিধাটাই খুব খারাপ। ঝটপট সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কাজে নেমে পড়া–এই হল গিয়ে সফলতার চাবিকাঠি। দ্বিধায় পড়ার চাইতে ঝটপট বাজে সিদ্ধান্ত নেওয়াও অনেক ভালো। অনেক ক্ষেত্রে ভালো। মানুষকে এই কারণেই ক্ষীণ স্মৃতি দেওয়া হয়েছে টিকে থাকার জন্যে।
হেসে সায় দিলেন অ্যাভালোন–খুব একটা মন্দ অভিমত নয়, ম্যারিও। কণ্ঠস্বরে প্রকাশ পেল অর্বাচীনকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুর-তর্কবিতর্কের মধ্যেও ক্রমবিবর্তনের সুফল সম্পর্কে আমার একটা থিওরি আছে। বলেছি কী? শিকারি সমাজে..
দু-হাত ওপরে তুললেন গোলজালো–এখনও শেষ করিনি, জিওফ। ঠিক এই কারণেই হেনরী বহুবার বহু জটিল সমস্যার সমাধন করে দিয়েছে চোখের পলক ফেলবার আগেই। আমরা যখন তলিয়ে ভাবি–
আমরা মানে আমাদের সব্বাই নয়। বাধা দিলেন রুবিন–আপনি সেই দলে থাকতে পারেন।
হেনরি তখন তা করে না রুবিনের মন্তব্য যেন শুনতেই পেলেন না গোনজালো– অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে মস্তিষ্ককে ভারাক্রান্ত করে না হেনরী। তাই দেখতে পায় পরিষ্কার।
খানকয়েক বাড়তি ডিস ধুতে-ধুতে হেনরী বললে মৃদু স্বরে কথার মাঝে কথা বলার জন্যে ক্ষমা করবেন, মিঃ গোনজালো। যাই করি না কেন, তা কখনওই করতে পারতাম না যদি না আপনারাই বাড়তি ব্যাপারগুলোকে বাদসাদ দিয়ে না দিতেন। আমার মাথা গুলিয়ে যায় না আপনাদের বুদ্ধিপূর্ণ আলোচনার দৌলতেই।
বিনয় বচন শেষ করে ডিস নামিয়ে রাখল হেনরী। গেলাসে গেলাসে ঢেলে গেল আর এক দফা শ্বেত মদিরা। অবিচল দক্ষতা ফুটে উঠেছে তার ষাট বছরের বলিরেখা আঁকা মুখের পরতে পরতে।
ট্রামবুল বললেন–ম্যারিও, তোমার বস্তাপচা সস্তা থিওরি নেহাতই অচল। আর হেনরী, অত বৈষ্ণব বিনয় ভালো নয়। তোমার ব্রেন আমাদের ব্রেনের চাইতে যে অনেক ধারালো–তাতে নেই কোনও সন্দেহ। তুমি নিজেও তা জানো।
স্যার, মোটেই না, হেনরীর কণ্ঠে সেই বিনয়–সবার প্রতি সশ্রদ্ধ সম্মান জানিয়ে শুধু এইটুকুই বলতে চাই–অবিসম্বাদিতকে দেখবার ক্ষমতা আমার আছে। তার কারণ একটাই–বললেন গোনজালো–আমাদের অনেকেই যা করেন–তুমি তা করো না। ঘোলানির মধ্যে দিয়েও অবিসম্বাদিতকে দেখবার সময়ে নিজের বিচার বুদ্ধিকে ঘোলাটে করে তোলো না।
বাতাসে মাথা ঠুকে নীরব সম্মতি জানিয়ে চুপ মেরে গেল হেনরী এবং অনেকটা স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠল ক্ষুব্ধ রুবিন অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতেই। লেখকের বিবিধ জ্ঞান অনেক সুফল ফলায়; সেই জ্ঞানকে বিশ্লেষণ করলে কত আশ্চর্য কাণ্ড ঘটে যায়; সাধারণ বুদ্ধিমত্তা মানে তো তাই মনের খাতায় তথ্যকে জমিয়ে রাখা, দরকার মতো সেই তথ্যকে কাজের মধ্যে টেনে আনা, তাকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা এবং প্রয়োজন হলে রকমারি স্মৃতির সংশ্লেষণ ঘটিয়ে চমকপ্রদ বিস্ময়কে সৃষ্টি করা, ইত্যাদি…
সুদীর্ঘ এবং জ্ঞানগর্ভ এই আলোচনায় কিন্তু তিলমাত্র আগ্রহ দেখালেন না প্রধান অতিথি পেনটিলি। চিন্তাঘন নিমেষহীন দৃষ্টি ফিরতে লাগল হেনরীর পেছন-পেছন…
.
প্রধান ভোজপর্ব শেষ হল। ফল মিষ্টি আহার সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে গেলেন ট্রামবুল। কয়েক কাপ কফিও নেমে গেল বেশ কয়েকটা উদরে। কফির কাপ যখন ফের ভরতি করা হচ্ছে, তখন মুখ খুললেন ট্রামবুল। চামচে দিয়ে টং-টং করে কঁচের গেলাস বাজিয়ে ঘোষণা করলেন, এবার শুরু হোক সমস্যা সমাধান ওরফে বঁঝরিতে ঝলসানোর পালা।
বললেন গুরু গুরু গলায়–যেহেতু আমি হোস্ট, সুতরাং সমস্যা সমাধানের কষ্ট দিতে চাই মাননীয় প্রধান অতিথিকে। ম্যারিও, সুরুয়ার শুরু থেকে যন্ত্রণা দিতে শুরু করেছেন আপনি। প্রধান অতিথিকে কষ্ট দেওয়ার ভারটাও আপনি নিন।
সানন্দে নিলাম, সশব্দে কেশে গলা সাফ করলেন ম্যারিওমিঃ পেনটিলি, আপনি যে এখনও। টিকে আছেন–এটাই একটা রহস্য। কিন্তু টিকে থাকাটা ন্যায়সঙ্গত হয়েছে কিনা–তা বলুন পুত্থানুপুঙ্খভাবে।
কান এঁটো করা হাসি হাসলেন পেনটিলি। এমনই হাসি যে দুই গালের দুই উঁচু হনুর ওপর নৃত্য করে উঠল দু-দলা মাংসপিণ্ড। তখন তাকে মনে হল বড়দিনের বুড়ো সান্তাক্লজের মতো– যে সান্তাক্লজের গালে নেই সাদা দাড়ির স্রোত কিন্তু পরনে আছে আধুনিক ধড়াচূড়া।
বললেন–থ্যাঙ্ক হেভেন। আর কি তার দরকার আছে? রিটায়ার করেছি এবং তোফা আছি। যতদিন কাজে ছিলাম টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে গেছি হয়তো ব্যর্থ হয়েছি।
কীভাবে সেই চেষ্টা চালিয়েছেন?
নিশ্বেস নিয়ে। টিকে থাকা যায় একমাত্র সেইভাবেই। কিন্তু আপনার প্রশ্ন তা নয়। আপনি জানতে চাইছেন, রুটি রোজগার করতাম কীভাবে–তাই তো?দেখুন মশায়, টম যেভাবে আঙ্কল স্যাম-এর সেবা করেছেন, আমিও প্রায় সেইভাবে পেটের ভাত জুটিয়েছি।
গুপ্ত সঙ্কেত-এর বিশেষজ্ঞ ছিলেন?
না না। তবে গুপ্ত সংস্থায় থাকতে হয়েছে।
টিকে থাকার পক্ষে সেটা কি ন্যায়সঙ্গত পন্থা? বলে উঠলেন রুবিন।
সবিনয় জবাবটা দিলেন পেনটিলি–তাই নিয়ে বিতর্কে প্রবেশ করতে চান?
একদম না, ঝটিতি বললেন ট্রামবুল–কোন জীবিকা ন্যায়সঙ্গত আর কোনটা নয়–এ বিষয়ে বার পঞ্চাশেক বিতর্ক হয়ে গেছে। ম্যারিও, চালিয়ে যান।
ঝুঁকে বসলেন ম্যারিও–গত ভোজসভায় প্রধান অতিথি একটা প্রহেলিকা পেশ করেছিলেন। আপনার কোনও প্রহেলিকা আছে?
এই মুহূর্তে নেই। তাই আমি মোটামুটি সুখী। টম এবং আরও অনেকে সমাধান করে দেন আমার জীবনের সমস্ত সমস্যা। আমি শুধু দেখে যাই–পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া আর কোনও বাতিক আমার এখন নেই। তবে একটা প্রশ্ন কুরে কুরে খাচ্ছে আমার এই মনকে। যদি অনুমতি করেন– পেশ করতে পারি উপযুক্ত জবাবের প্রত্যাশায়।
বলুন।
হেনরী আমাদের ওয়েটার?
এই ক্লাবের সবচেয়ে দামি সদস্য এবং সব সেরা সদস্য, বললেন ট্রামবুল।
বেশ। শুনে মনে হল, হেনরী হেঁয়ালির জট খুলতে পোক্ত। কী ধরনের হেঁয়ালি?
অস্বস্তির ছায়া ভেসে গেল হেনরীর মুখাবয়বের ওপর দিয়ে ক্ষণেকের জন্যে। বললে–খেতে বসে মাঝেমধ্যেই নানারকম সমস্যা এসে যায় কথাবার্তার মধ্যে। মাননীয় সদস্যরাই সে সবের সুরাহা করে দেন।
সুরাহা তুমিই করো। প্রবল উৎসাহে বললেন ম্যারিও গোনজালো।
হাত তুললেন অ্যাভালন–প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিষয়টাকে আলোচনায় মধ্যে আনা সঙ্গত হচ্ছে । এখানে যা কিছু ঘটে তার সবই গোপনীয়। আগের আলোচনা সভার একটা বর্ণও এই আলোচনা সভায় উপস্থিত করা হবে না।
নিশ্চয় না, নিশ্চয় না, সবেগে মস্তক আন্দোলন করতে করতে বললেন পেনটিলিগোপন কথাবার্তার তিলমাত্র জানবার আগ্রহ আমার নেই। প্রশ্নটার জবাব যাজ্ঞা করা সমীচীন হবে কিনা– এইটাই শুধু জানতে চেয়েছি। যদি হয়, তাহলে হেনরীকে বলব জবাব জুগিয়ে দিতে।
গোনজালো বললেন–আপনি কিন্তু একটু আগেই বলেছেন রিটায়ার করে তোফা আছেন। প্রশ্নের বিড়ম্বনা মাথার মধ্যে নিয়ে কেউ তোফা থাকতে পারে না।
প্রশ্নটা আজকের নয়–অনেক বছর আগেকার, দুই চোখে কৌতুক নাচিয়ে বললেন পেনটিলি–প্রশ্নের সমাধান তখন মোটেই সন্তোষজনক মনে হয়নি–অন্তত আমার কাছে। আজ আর তার গুরুত্ব নেই। তবে কৌতূহলকে বড় খুঁচিয়ে যায় আজও।
আচমকা আগ্রহ দেখালেন ট্রামবুল ব্যাপারটা কী, ল্যারি?
টম, ডিপার্টমেন্টে সদ্য ঢুকেছিলাম সেই সময়ে। আপনারা কেউই জড়িত ছিলেন না সে ব্যাপারে–শুধু আমি ছাড়া।
শুনতে পারি ব্যাপারটা? গোনজালোর প্রশ্ন।
আগেই বলেছি, এ ব্যাপারের এখন আর কোনও গুরুত্ব নেই। এ নিয়ে কথাবার্তারও কোনও মানে হয় না। কিন্তু যেহেতু হেনরীকে পাচ্ছি হাতের কাছে–
মৃদুস্বরে বললে হেনরী স্যার, মিঃ গোনজালো সহৃদয় বলেই আমাকে হেঁয়ালির সমাধানকারী মনে করেন। আসলে সে যোগ্যতা আমার নেই। তবে মাঝে-মাঝে আমার কথা কাজে লেগে গেছে– সেটাও সম্ভব হয়েছে মাননীয় সদস্যরা বুদ্ধি দিয়ে জট ছাড়িয়ে এনেছিলেন বলেই অপ্রাসঙ্গিক এবং অদরকারী তথ্যগুলোকে নিজেরাই বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন বলে। তখন যে খেই-টা পড়ে থাকে– আমার কাজ শুধু তাকে তুলে নেওয়া। এর বেশি ক্ষমতা আমার নেই।
রক্তিম হয়ে ওঠে পেনটিলির মুখ–বেশ, বেশ, সেক্ষেত্রে প্রশ্নটা হাজির করা যাক সমাগত সুধী সদস্যদের কাছে।
কানখাড়া করলাম, বললেন অ্যাভালন।
.
ব্র্যান্ডির গেলাস এক চুমুকে শেষ করে দিলেন পেনটিলি। হেনরী এগিয়ে এসেছিল বোতল হাতে গেলাসে ফের ঢালবার জন্যে নিতে রাজি হলেন না পেনটিলি।
বললেন–জেন্টলমেন, ১৯৬১-র দিনগুলোয় মনকে নিয়ে যান। জন এফ কেনেডির শোচনীয়ভাবে সংক্ষিপ্ত শাসনকালের প্রথম কমাসে কিউবা আক্রমণের প্ল্যান আঁটছে কিউবা থেকে নির্বাসিতরা। কেনেডির মাথাতেও ঢুকছে না এই প্ল্যান। হানাদারদের আমেরিকান বিমানবাহিনী মদত জোগানোর পর যে প্রতিক্রিয়া ঘটবে–তার সুযোগও নিলেন না। গুপ্তসংস্থা তাকে আশ্বস্ত করেছিল বিশেষ একটা গোপন খবর দিয়ে। হানাদাররা যখন চড়াও হবে–তখন তাদের সমর্থন জোগাবে কিউবার জনগণই–এক কথায় অভ্যুত্থানটা ঘটবে ভেতর থেকে। ঝটপট স্বাধীন কিউবাব সরকার গঠিত হবে এবং তাদের অনুরোধ পেলেই যুক্তরাষ্ট্র অগ্রসর হবে।
সৈন্যসামন্ত আর দেশের ওপর ক্যাস্ট্রোর প্রচণ্ড প্রভাবের কোনও খবরই আমরা রাখিনি। অথচ আশার কুয়াশার মধ্যে দিয়ে দেখেছিজয় আমাদের হবেই। কী হয়েছিল আপনারা সব্বাই জানেন। শূকর উপসাগরে হানাদাররা নামতে-না-নামতেই ক্যাস্ট্রোর সুসংগঠিত লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বেচারাদের ওপর। কিউবার লোকজনের মধ্যে বিন্দুমাত্র অভ্যুত্থান ঘটেনি। বিমানবাহিনীর সাহায্য না পেয়ে হানাদাররা দলে-দলে ধরা পড়েছে, কাতারে কাতারে খতম হয়েছে। প্রচণ্ড বিড়ম্বনায় পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমস্ত দায়িত্ব মাথা পেতে নিয়েছিলেন কেনেডি। বলেছিলেন, জেতার আনন্দ হাজার জনে নেয়, পরাজয়ের নিরানন্দ নিতে হয় একজনকেই।
কফির কাপের দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে থাকতে থাকতে আচমকা বলে উঠলেন রুবিন–উদ্ধৃতি পুস্তকে আছে কেনেডির এই বাক্য।
কেশে গলা সাফ করে বললেন অ্যাভালোন হারলেও দমেননি কেনেডি। পরের বছরেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্রর ব্যাপারে সোভিয়েতদের মুখ চুন করে দিয়েছিলেন–ঠান্ডা লড়াইয়ে বিশাল বিজয়ের অধিকারী করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রকে।
সবেগে বললেন রুবিনবিজয় কক্ষনো নিঃসঙ্গ থাকে না। পূর্বসূরীর কীর্তির সঙ্গে টেক্কা মেরেছিলেন প্রেসিডেন্ট জনসন। একটু-একটু করে গড়ে তুলেছিলেন ভিয়েতনামের কর্দম পঙ্ক– শেষকালে–
হে মূর্খগণ, সজোরে বললেন ট্রামবুল–এটা ইতিহাসের ক্লাস নয়। ল্যারি পেনটিলিকে কথা বলতে দিন।
সঙ্গে-সঙ্গে নেমে এল সূচিভেদ্য স্তব্ধতা। পেনটিলির সারা মুখে এখন বিষাদের ছায়া। বললেন–শূকর উপসাগরের বিপর্যয়ের মুলে পয়লা নম্বর শয়তানটা আসলে গুপ্তচর সংস্থা–তারাই ভুল খবর দিয়ে আমাদের মুখে চুনকালি দিয়েছে। কিউবার সত্যিকারের পরিস্থিতি যদি জানা থাকত, কেনেডি হানাদারদের এগিয়ে যাওয়া রুখে দিতেন–অথবা বিমানবাহিনীকে পাঠিয়ে আকাশ থেকে তাদের সাহায্য করতেন। তাহলেই ফ্লোরিডা থেকে নব্বই মাইল তফাতে মিজাইল ঘাঁটি বসিয়ে বহাল তবিয়তে কেটে পড়ার ভুল ধারণাটা সরে যেত ক্যাস্ট্রো অথবা ক্রুশ্চেভের মাথা থেকে আর রুবিনের সাইকোহিসটোরিক্যাল ব্যাখ্যা মেনে যদি নিই–তাহলে ভিয়েতনাম সমস্যাও আর তৈরি হত না।
আমি বলব একটাই কথা–খবরটাও ভুল হওয়ার দরকার ছিল না। কিউবাতে আমাদের একজন গুপ্তচর ছিলেন। শূকর উপসাগরে হামলা শুরু হওয়ার ছমাস আগে তিনি চলে আসেন ওয়াশিংটনে। রেডিওতে যে-খবর পাঠাতে পারেননি সঙ্গে এনেছিলেন সেই গোপন সংবাদ..
কেন পাঠাতে পারেননি? ঝটিতি শুধোন গোনজালো।
অত্যন্ত কঠিন একটা ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন বলে–বেশি ঝুঁকি নিতে সাহস হয়নি। ভদ্রলোক ছিলেন সোভিয়েত স্পাই। সোভিয়েতরাই তাঁকে গোটা যুক্তরাষ্ট্র চষে বেড়াতে দিয়েছে নিজেদের
স্বার্থে–উনিও পরমানন্দে সোভিয়েতের সমস্ত খবর পৌঁছে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র।
এক মুখ সিগারেট-ধোঁয়া ছেড়ে বললেন ড্রেক–ডবল এজেন্টের কোন মুখে সত্যি কথা বেরোয়–তা বলা কিন্তু মুশকিল।
দুমুখেই বেরোতে পারে, হ্যাঁলস্টেডের মন্তব্য।
তা হতে পারে, সায় দিলেন পেনটিলি–আমরা যে খবর পাচার করাতে চেয়েছি সোভিয়েত দেশে–শুধু সেই খবরটা তিনি জানিয়েছিলেন স্বদেশে। কিন্তু সোভিয়েত সম্পর্কে আমরা জেনেছি ভুরিভুরি সংবাদ ভদ্রলোকের মারফত–এমনই খবর যা কোনওদিনই সোভিয়েতরা আমাদের জানতে দিতে চায়নি।
বিদ্রূপতরল কণ্ঠে বললেন রুবিন–ঠিক এই কথাটা হয়তো সোভিয়েতরাও ভেবেছিল এবং একইভাবে তাঁকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপনতম সংবাদ সংগ্রহ করে গেছে।
তাই যদি হত, তাহলে শেষকালে সোভিয়েতরাই বিশেষ এই গুপ্তচরকে যমালয়ে পাঠিয়ে দিত না, বললেন পেনটিলি–ভদ্রলোককে আমরা কিন্তু খতম করিনিমূল প্রশ্নটা আসছে এই রহস্য থেকেই। কীভাবে যে ভদ্রলোকের ডবল গুপ্তচরগিরি ফাস হয়ে গেছিল সোভিয়েতদের কাছে তা জানতে পারিনি কোনওদিনই।
মূলত তিনি যে সোভিয়েতের স্পাই নন–আমাদের স্পাই–এটা তারা জানবার পরেই খাড়া নামিয়ে আনে ভদ্রলোকের ওপর। বিশ্বাসঘাতকের সাজা এইভাবেই হয়। আমাদের বিশ্বাসঘাতকদেরও আমলারা কোতল করি ঠিক এইভাবে।
অ্যাভালোন বললেন–দেখুন মশায়, বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বাস করাটাই তো বোকামি, যে লোক একবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে–সে যে আবার তা করবে না, তার কি কোনও গ্যারান্টি আছে?
তা ঠিক, তা ঠিক, সায় দিয়ে গেলেন পেনটিলি–সেই জন্যেই তো ভদ্রলোককে ঠিক সেইটুকুই জানতে দেওয়া হয়েছে যে-টুকু জানলে আমরা থাকব নিরাপদে নিরাপদে থাকবেন তিনি নিজেও। আমি কিন্তু বিশ্বাস করতাম ভদ্রলোককে, কারণও ছিল। আমেরিকান আদর্শে বিশ্বাসী বলেই ভদ্রলোক কাজ করে গেছেন আমাদের হয়ে–এই ধারণা নিয়েই বিশ্বাস করতাম ভদ্রলোককে তিন বছর কাজ করে গেছেন আমাদের হয়ে–একবারও দুশ্চিন্তার কারণ সৃষ্টি করেননি।
ভদ্রলোকের নাম স্টিপান। কাজ করতেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে হাসি ঠাট্টা জিনিসটা একেবারেই ছিল না ভেতরে। এক কথায় বলা যায়–গুপ্তচরগিরি অন্যের কাছে পাপ কাজ হতে পারে–তাঁর কাছে পুণ্যের কাজ–তাই নিজেকে ঢেলে দিয়েছিলেন এই কাজে। ইংরেজি ভাষার বৈশিষ্ট্য যে-সব ইডিয়ম-এর মধ্যে, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে সব শিখতেন এবং মোটামুটি আমেরিকান উচ্চারণে কথা বলে যেতেন। রেডিওর খবর শুনতেন খবর জানবার জন্যে নয়–খাঁটি আমেরিকান উচ্চারণ শেখবার জন্যে। শব্দসম্ভার বৃদ্ধির জন্যে শব্দ ছক নিয়ে মেতে থাকতেন। আর একটা খেলা খেলতেন নিজের মনে। নাম তার স্ক্র্যাবল। সেটাও শব্দের খেলা।
অ্যাভালন বললেন স্ক্র্যাবল? ছোট-ছোট কাঠের টালিতে অক্ষর লেখা থাকে? বোর্ডে সেই টালি বসিয়ে শব্দ তৈরি করতে হয়?
অত সোজা খেলা নয়, বললেন রুবিন–মাথা খারাপ করে দেয়–
পেনটিলি পাত্তা দিলেন না রুবিনকে–ঠিকই ধরেছেন মিঃ অ্যাভালন। আজকের এই প্রহেলিকায় এই খেলার একটা ভূমিকা আছে। যত চেষ্টাই করুন না কেন স্টিপান, ইংরেজিটাকে মুঠোয় আনতে পারেননি কোনওদিনই শব্দসম্ভার বাড়ানোর চেষ্টাতেও ত্রুটি রাখেননি। সোভিয়েতরা ওঁর এই খেলাখেলির ব্যাপারটায় বিলক্ষণ মদত দিয়েছে শুধু একটাই কারণে–ভবিষ্যতে যেন আরও দক্ষ গুপ্তচর হতে পারেন স্টিপান।
ঠিকই করেছিল, শুষ্ক কণ্ঠে বললেন রুবিন।
কিন্তু শেষকালে ওঁকে খুনও করেছিল এই সোভিয়েতরা। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে কিউবা থেকে এসে পৌঁছন স্টিপান। কিউবাতে থাকার সময়ে সরাসরি ওঁর গতিবিধির বিশেষ খবর না রাখলেও আমরা অন্যপথে জেনেছিলাম মোক্ষম খবর জোগাড় করেছেন স্টিপান। গুরুত্বপূর্ণ সেই খবর পাচার করতে না পেরে নিজেই ওয়াশিংটনে চলে এসেছেন। ওকে ফাঁসিয়ে না দিয়ে গোপনে খবরটা জানবার জন্যে উঠে পড়ে লাগলাম তখন থেকেই।
ঘুরিয়ে নাক দেখানোর মতোই আমরা ঠিক করলাম স্টিপানের সঙ্গে দেখা করব একটা হোটেলের ঘরে। সোভিয়েতরা যে ওঁর দুমুখো চরিত্র জেনে ফেলেছে–আমরা তা কল্পনা করতে পারিনি স্টিপান নিজেও তা জানতেন না। আমাদের লোক হোটেলের ঘরে পৌঁছনোর আগেই সোভিয়েত জল্লাদ হাজির হয়েছিল সেখানে। ছুরি মেরে উড়িয়ে দিয়ে গেছিল গুপ্তচরের প্রাণপাখি। যা বলতে এসেছিলেন–তা বলবার সুযোগও পেলেন না।
অ্যাভালনের কফির কাপ শূন্য হয়ে গেছিল অনেক আগেই। খালি পেয়ালার কিনারায় আঙুল বুলোতে-বুলোতে বললেন চিন্তাঘন ললাটে–সোভিয়েতরাই যে খুন করেছিল স্টিপানকে–তার কী প্রমাণ পেয়েছেন? মারদাঙ্গা এই সমাজে রোজই মানুষ খুন হয়ে চলেছে নানা কারণে।
লম্বা নিশ্বেস ফেলে বললেন পেনটিলি–খবরটা পাচার করার ঠিক আগেই স্টিপান খুন হয়েছিলেন–সুতরাং অন্য ঘাতককে এক্ষেত্রে ধর্তব্যের মধ্যে আনা যায় না।
ওয়াশিংটনের পুলিশও এ খুনকে মামুলি খুনের পর্যায়ে ফেলতে চেয়েছে–আমরাও তাতে মদত দিয়েছি কারণ নিহত ব্যক্তি সোভিয়েত দেশের নাগরিক। স্টিপানের প্রাইভেট লাইফ হাতড়েও উল্লেখযোগ্য কিছু জানা যায়নি। সাধারণ অপরাধী খুন-টুন করে কিছু না কিছু সূত্র ফেলে যায়– এক্ষেত্রে কোনও সূত্রই পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয়ত স্টিপানের মৃত্যুতে লাভ হয়েছে সোভিয়েতের–খবর বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকেনি। তৃতীয়ত, স্টিপান জীবিত থাকলে আমাদের যে সুবিধেগুলো ছিল–তা তিরোহিত হয়েছিল ওঁর মৃত্যুর সঙ্গে-সঙ্গে। মিঃ অ্যাভালন, এতগুলো যুক্তি শোনবার পর নিশ্চয় বলবেন না, অন্যের হাতে খুন হয়েছিলেন স্টিপান। না, না, না। গুপ্তচর যেভাবে পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হয়–স্টিপানকেও পরলোকে যেতে হয়েছে ঠিক সেইভাবে।
আচমকা হুঁশ হল গোনজালোর, একগাদা খাবারের গুঁড়ো লেগে রয়েছে কোটের হাতায়। ঝেড়ে সাফ করতে করতে বললেন–এতদিন পরে স্টিপানের খুন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন কেন বুঝলাম না। হেঁয়ালিটাই তো শোনা হল না এখনও। খুনি কে, এইটাই কি আপনার প্রহেলিকা?
না। খুন হলেন কেন স্টিপান–প্রহেলিকা সেইটাই।
অর্থাৎ–
মিঃ গোনজালো, স্টিপান একটা জবর খবর দেওয়ার জন্যেই ছুটে এসেছিলেন কিউবা থেকে। কিন্তু দিতে পারেননি। যদি জানতে পারতাম সেই খবর–এই দেশের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হত। স্টিপানের খুনের পরেও খবরটার ধরন জানা উচিত ছিল আমাদের। এই নিয়েই ভেবেছি রিটায়ার করার আগে–ভাবি এখনও।
মিঃ পেনটিলি, বললেন হ্যাঁলস্টেড স্টিপানের খুনের পর কি আপনাকে জোর করে রিটায়ার করানো হয়েছে? কিছু মনে করবেন না আপনাকে বিড়ম্বনায় ফেলছি বলে।
না। খুনের সঙ্গে আমার অবসর নেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও দুর্নাম কুড়োতে হয়নি। রিটায়ার করেছি এই তো বছর কয়েক আগে সসম্মানে–পুরস্কার নিয়েছি প্রেসিডেন্ট নিক্সনের হাত থেকে। খুনের পর একা আমিই ওপরতলাকে পইপই করে বলেছিলাম কিছু একটা জানাতে চেয়েছিলেন স্টিপান প্রাণ-প্রদীপ নিভে যাওয়ার ঠিক আগে কানে তুলো এঁটেছিল ওপরতলাপাত্তাই দেয়নি আমার মতামতে। বিপদটা ঘটেছিল তখনি। মুখে চাবি দিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম বটে কিন্তু মন থেকে তাড়াতে পারিনি। রিটায়ার করার পর সেই রহস্যই বড্ড বেশি পীড়া দিয়ে চলেছে আমাকে।
জবর খবরটা কীভাবে দিতে চেয়েছিল স্টিপান? গোনজালোর প্রশ্ন।
ওঁর কাছে লিখিত কিছু ছিল না–সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম মৃতদেহ দেখবার সঙ্গে-সঙ্গে। অত কঁচা কাজ করতেন না স্টিপান। লেখালেখির মধ্যে যেতেন না। হোটেল রুমে টুরিস্টের কাছে যা থাকে তার বেশি কিছু রাখেননি সঙ্গে, একটামাত্র সুটকেশ, তার মধ্যে জামাকাপড়, মাজন, বুরুশ, চিরুনি ইত্যাদি। খুব পাকা হাতে নাড়াচাড়া হয়েছে সবকিছুই কিন্তু খুনি কিছু নিয়ে গেছে–তা মনে হয়নি।
খটকা লেগেছিল শুধু দুটো জিনিস দেখে। একটা হল শব্দছকের হেঁয়ালি পুস্তক অর্ধেক হেঁয়ালি নিজের হাতে লিখে সমাধান করেছেন অথবা করবার চেষ্টা করেছেন স্টিপান–আর একটা স্ক্র্যাবল সেট যা উনি হরবখৎ রাখতেন সঙ্গে…
বাধা দিলেন রুবিন–যাতে কেউ দেখা করতে এলেই তার সঙ্গে এক হাত খেলতে পারে?
আজ্ঞে না। একা থাকলেই চার হাতের খেলা নিজে নিজে খেলতেন স্টিপান–পকেট ডিক্সনারির সাহায্য নিয়ে খেলে যেতেন নিজের মনে। শব্দসম্ভার বাড়ানোর জন্যে ওঁর প্রচেষ্টায় কঁকি ছিল না তিল মাত্র–আগেই বলেছি সেকথা। ডিক্সনারিটাও পেয়েছি ওঁর কোটের পকেটে আলমারিতে ঝোলানো ছিল কোট।
ও, বলে চুপ করে গেলেন রুবিন।
দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই ছুরি খেয়েছিলেন বলেই সঙ্গে-সঙ্গে মারা যাননি স্টিপান নিখুঁত এই অপরাধে এইটাই একমাত্র খুঁত বলতে পারেন। খুন করার পর খুনি অথবা একাধিক খুনি তড়িঘড়ি চম্পট দিয়েছিল বলেই তারপরেও ধড়ে প্রাণ নিয়ে বেঁচেছিলেন স্টিপান। টেবিলের পাশেই আছড়ে পড়েছিলেন–ঘর ফাঁকা হয়ে যেতেই উঠে দাঁড়িয়েছিলেন টেবিল ধরে। টেবিলে তখন ছিল একটা খবরের কাগজ-ওয়াশিংটন পোস্ট–আর স্ক্র্যাবল সেট।
টেনে খুলেছিলেন টেবিলের সব চাইতে ওপরের ড্রয়ার কলম বের করে লিখতে গিয়ে দেখেছিলেন কালি নেই। হোটেলের কলমের দশা এই রকমই হয়। কলম ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন মেঝেতে। নিজের পেন ছিল কোটের পকেটে–ঘরের আর একদিকে। অতদূর যেতে পারবেন না বুঝেছিলেন বলেই সে চেষ্টা করেননি–আয়ু ছিল মোটে মিনিট ছয়েকের মতো। তাই কাজে লাগাতে হয়েছে নাগালের মধ্যেকার জিনিসকে।
ছুরি খাওয়ার সময়ে কাগজটা ছিল ভাঁজ করা অবস্থায়–ঘণ্টাখানেক আগে সেই অবস্থাতেই কাগজ এনে রেখেছিলেন টেবিলে–
এত ব্যাপার জানলেন কী করে? হ্যাঁলস্টেডের প্রশ্ন।
পারিপার্শ্বিকের বিবেচনায়। এ ব্যাপারে অন্তত দক্ষতা আমাদের তুলনাবিহীন বলতে পারেন। টেবিলের ড্রয়ার টেনে খোলা, খটখটে শুকনো কলম গড়াগড়ি যাচ্ছে মেঝেতে। সবচেয়ে বড় কথা, ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল স্টিপানের শরীর থেকে বিশেষ করে ডান হাত থেকে ছুরির মার আটকাতে গেছিলেন ডান হাত দিয়েই। রক্তাক্ত হাত আর শরীর যেখানে যেখানে ঠেকেছে রক্তের চিহ্ন লেগেছে সেই-সেই জায়গায়।
যা বলছিলাম, স্পোর্টস্ পৃষ্ঠায় কাগজটা খুলেছিলেন স্টিপান। তারপর হাতে নিয়েছিলেন ক্র্যাবল খেলার বাক্স, টেনে সরিয়েছিলেন কাঠের ঢাকনি, টেনে বের করেছিলেন পাঁচটি হরফ, পর-পর সাজিয়েছিলেন হোল্ডারে। মারা গেছিলেন ঠিক তখুনি। হরফগুলো এই ওe, p, o, c আর k।
সাজিয়েছিল কি এইভাবেই? শুধোন ড্রেক।
হ্যাঁ। বাঁ-দিক থেকে ডানদিকে।
ইতিহাসের কোনও এক সময়কে বলা হয় epock–বললেন গোনজালো।
মুখিয়ে উঠলেন রুবিন–সেটা হল epock–শেষে k নেই। তার মানে, ইতিহাসের বিশেষ একটা সময় যখন উল্লেখযোগ্য কোনও ঘটনা ঘটেছে। রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
মৃত্যুকালীন ভ্রান্তি ধর্তব্যের মধ্যে নয়, সবেগে আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেন গোনজালো– মরবার সময়ে দৃষ্টি নিশ্চয় ঝাপসা হয়ে গেছিল–তাই দেখতে পায়নি সঠিক বানানের হরফ সাজানো হচ্ছে কিনা। k-কে মনে হয়েছে h। সবচাইতে বড় কথা স্টিপান জাতে রাশিয়ান ইংরেজি ভাষাজ্ঞান আপনার মতো হবে–আশা করা যায় না।
অধীর কণ্ঠে বলে উঠলেন পেনটিলি–মোদ্দা ব্যাপার কিন্তু তা নয়। k অথবা h কী এসে যায় তাতে?
ঠিক বলেছেন, বললেন অ্যাভালোন–এই তো একজন সাংকেতিক শব্দ-বিশেষজ্ঞ রয়েছেন আমাদের মধ্যে। টম–
দুধ কঁকিয়ে ট্রামবুল বললেন–যাঞ্চলে! নিজের মাথাটা খাটালেই তো হয়! আমি যখন বুঝব কথা বলব।
অ্যাভালন বললেন মিঃ পেনটিলি, সাংকেতিক শব্দের কোনও বই কি তখন ছিল আপনাদের কাছে? এমন একখানা বই যার মধ্যে epock আছে, যার মানে বিশেষ একটা শব্দমালা অথবা কথা? সরকারি সাংকেতিক শব্দ কী?
না, না, না। epock অথবা epock–কোনওটারই সাংকেতিক মানে অন্তত স্টিপানের জানা ছিল না। হেঁয়ালির জবাব খোঁজা উচিত ছিল স্পোর্টসের পৃষ্ঠায়।
কেন বলছেন? হ্যাঁলস্টেডের প্রশ্ন।
হেনরী, একটু ব্র্যান্ডি দেবে? শুনছ তো সব? বললেন পেনটিলি।
ইয়েস স্যার, হেনরীর জবাব।
গুড! এমার্জেন্সির মুহূর্তে স্টিপানের উচিত এমন একটা সংখ্যা পাচার করে দেওয়া যার মধ্যে গোপন বার্তা-টা থাকবে ঘনীভূত অবস্থায়। মানে, রীতিমতো নিরেট অবস্থায় থাকবে খবরটা– নড়ানো চড়ানো যাবে না শব্দমালার শব্দগুলোকে। মৃত্যু যার দোরগোড়ায়, এ ছাড়া আর কোনও পথ তার কাছে থাকে না। স্টিপানের ক্ষেত্রে সেই অবস্থা এসে গেছিল। তাই খুলেছিলেন স্পোর্টস পৃষ্ঠা–যে পৃষ্ঠায় সংখ্যার ছড়াছড়ি এবং যে সংখ্যাদের একটা সংখ্যা রীতিমতো প্রনিধানযোগ্য।
লেখবার জন্যে হয়তো কাগজের দরকার ছিল তার বেশি নয়, বললেন হ্যাঁলস্টেড।
যা দিয়ে লেখা যায়–সে রকম তো কিছু ছিল না হাতে। রক্ত ছিল–নিজের রক্ত।
হয়তো তাই, মুখ বেঁকিয়ে বললেন পেনটিলি–কিন্তু তা নয়। কেন না, শুধু লেখবার জন্যে কাগজ যে তুলবে, সে কাগজের পাতা খুলতে যাবে কেন? ওপরের পৃষ্ঠাতেই লেখবার চেষ্টা করলেই পারত। তা ছাড়া আর একবার মুখ মচকালেন পেনটিলি–যার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে, সে তখন খেয়াল করে কি গা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে কিনা?
জেদি গলায় বলে গেলেন হ্যাঁলস্টেড ঝটকান দিয়ে খুলেছিল কাগজ–স্পোর্টস পৃষ্ঠাই যে খুলতে গেছিল, একথা ভাবছেন কেন? টান মেরে খুলতে গিয়ে স্পোর্টস পৃষ্ঠা খুলে গেছে। মৃত্যুর সময় অমন খিচুনি অসম্ভব কি?
মি হ্যাঁলস্টেড, চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন পেনটিলি–স্টিপানের মতো পাকা গুপ্তচরের কাছে ব্যাপারটা খুবই অসম্ভব। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষে তাঁকে বেঁচে থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন– প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে গুরুত্বপূর্ণ খবরটা পাচার করবার শেষ চেষ্টাই তিনি করেছেন– কারণ, তিনি প্রফেশন্যাল স্পাই, অ্যামেচার নন।
ধমকে উঠলেন ট্রামবুল–রোজার, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে খামোকা জেদ কেন?
টম, বললেন পেনটিলি–ঠিক এইরকম ধারণা ছিল কিন্তু দপ্তরেও। যা-যা বলে গেলাম, তার মধ্যে নাকি হেঁয়ালি নেই একটুও, মরবার সময়ে কোনও গোপন খবর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করেননি স্টিপান, অথবা যা করাতে গেছিলেন–শেষপর্যন্ত তা আর করতে পারেননি। একা আমি, শুধু আমিই, স্টিপানের শেষ চেষ্টার অর্থ খুঁজে বের করবার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছি কিন্তু গোপন খবরের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারিনি।
মুশকিলটা হয়েছিল ওর স্পোর্টস পৃষ্ঠা খোলা নিয়েই। টাকাকড়ি আর ব্যবসা বাণিজ্যের খবর যে পৃষ্ঠায় ছাপা হয়, সে পৃষ্ঠায় যেমন সংখ্যার ছড়াছড়ি থাকে ঠিক সেই রকমই থাকে স্পোর্টস পৃষ্ঠায়। বলুন দিকি, এত সংখ্যার মধ্যে থেকে কী করে বেছে নেওয়া যায়, ঠিক সেই সংখ্যাটিকে যা তিনি জানাতে চেয়েছেন, আয়ুর শেষ মুহূর্তে পাঁচটি মাত্র হরফ সাজিয়ে?
তাই যদি হয়, বললেন অ্যালোন–তাৎপর্যপূর্ণ একটি সংখ্যাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্যেই যদি স্পোর্টস্ পৃষ্ঠা মেলে ধরে থাকে স্টিপান–তাহলে তো বলতে হয় এত সংখ্যার মধ্যে থেকেও সে সংখ্যা খুবই চোখে পড়ার মতো সংখ্যা! যেমন, স্পোর্টস পৃষ্ঠার সংখ্যা।
প্রথম সমাধান প্রচেষ্টায় জন্যে সাধুবাদ জানাই। স্পোর্টস পৃষ্ঠার সংখ্যা ছিল ৩২। সাংকেতিক শব্দের বই অনুসারে ৩২ মানে, আগের খবর বাতিল করুন। আগে কোনও খবরই পাঠাননি স্টিপান।
স্পোর্টস্ পৃষ্ঠায় কী ছিল বলতে পারেন? শুধোলেন অ্যাভালন।
এত বছর পরে তা মনে করা সম্ভব নয়। জেরক্স কপিও করে রাখিনি যে আপনাদের দেখাব। তবে প্রায় পুরো পৃষ্ঠা জুড়েই ছিল বেসবলের খবর। আগের কয়েক হপ্তায় গেছিল বেসবলের মরশুম। বিশেষ বিশেষ খেলার স্কোরগুলো ছিল বক্সের মধ্যে ছিল এন্তার স্ট্যাটিসটিক্স।
বেসবলের খবরাখবর রাখত স্টিপান?
একটু-একটু। পেশাগতভাবে আমেরিকান ওপর আগ্রহ ছিল বইকি। গোগ্রাসে গিলতেন আমেরিকান ইতিহাস। আমেরিকান জাতীয় খেলাতেও আগ্রহ ছিল সেই কারণে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান স্পাইয়ের বোকামির ঘটনা নিশ্চয় মনে আছে। গত বছরের ওয়ার্ল্ড সিরিজ কী ছিল–তা জানত না। সেই ফাঁদে পা দিতে চাননি স্টিপান। তবে হ্যাঁ, তুখোড় বিশেষজ্ঞ ছিলেন বেসবলের ব্যাপারে–তাও বলা যায় না।
নীরস গলায় বললেন অ্যাভালন–বেসবলে আগ্রহ না থাকাটা যদি স্পাইয়ের পক্ষে মৃত্যুর সামিল হয় তাহলে আমারও মরণ আসন্ন। কারণ বেসবল আমার দু-চক্ষের বিষ।
আবারও প্রবলবেগে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন ড্রেক।
আরে, গেল যা। তেড়ে উঠলেন গোনজালো কাগজ পড়লে, টিভি দেখলে, পাঁচজনের সঙ্গে মেলামেশা করলে বেসবল সম্বন্ধে কিছু না কিছু খবর রাখতেই হয়। আপনারা যে পয়লা নম্বরের নাক উঁচুসেটা অত জোর গলায় জাহির না করলেও চলবে। আসল সমস্যায় আসুন না কেন! সংখ্যাটা কী হওয়া উচিত ছিল–সেটা কেন মাথায় আসছে না? মিঃ পেনটিলি, কত বড় সংখ্যা বলে মনে হয়?
দুই অথবা তিন-এর অঙ্ক–তার বেশি নয়।
বেশ, বেশ। বেসবল এক্সপার্ট যদি নাও হয় স্টিপান–ক্রিকেটের খবর-টবর নিশ্চয় রাখত। গড় রান সংখ্যা সাধারণত তিন অঙ্কেই হয়। হেডলাইনে এই রকম খবর বেরিয়েছিল কি?
মাথা নেড়ে বললেন পেনটিলি–হেডলাইনে কোনও অঙ্কই ছিল না। চোখে পড়ার মতো কোনও সংখ্যা বা অঙ্ক ছিল না পৃষ্ঠার কোথাও–অথচ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, স্পোর্টস্ পৃষ্ঠা খুলে ধরেই ইঙ্গিতটাকে চোখের সামনে এনে দিয়ে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন গ্রেগরি স্টিপান।
স্ক্র্যাবল হরফগুলোর কথাই কি বলছেন? Epock? বললেন রুবিন।
হ্যাঁ, তাই বলছি।
এর মধ্যে আদৌ কোনও ইঙ্গিত আছে বলে তো মনে হয় না।
হয়তো শুরু করেছিল, শেষ করতে পারেনি, বললেন গোনজালো–যেমন ধরুন। বলতে চেয়েছিল হয়তো ১২২ তাহলে দরকার হত পাঁচটারও বেশি হরফ কিন্তু পাঁচটার বেশি তোলবার আর সময় পাননি।
Epock দিয়ে কোনও সংখ্যা শুরু হয় বলে আমার জানা নেই, রুবিনের কাটকাট জবাব।
স্ক্রাবল খেলায় হরফদের উলটেপালটে করে সাজানো যায়। তবেই খেলা জমে ওঠে। স্টিপান তুলেছিল পাঁচটা হরফ ঠিকমতো সাজিয়ে সংখ্যাটা প্রকাশ করার আগেই ।
মারা গেছে এই তো? বললেন হ্যাঁলস্টেড সরি, ম্যারিও, তা সম্ভব নয় কোনওমতেই। সংখ্যাদের যখন হরফ দিয়ে লেখা হয়–তখন একটা বাঁধাধরা গৎ থাকে তাদের মধ্যে। আপনি কি জানেন জিরো থেকে নাইন হান্ড্রেড নাইনটি নাইন পর্যন্ত লেখা যায় a-কে একেবারে বাদ দিয়ে।
তাতে কি প্রমাণিত হল? বললেন গোনজালো epock এর মধ্যে a নেই।
নেই। কিন্তু একটা p, আর একটা c আছে। চব্বিশ অঙ্কের সংখ্যা সমেত এক হেপটিলিয়ন পর্যন্ত পর-পর লিখে গেলেও p-এর ব্যবহার পাবেন না–পাবেন তারপরে। সাতাশ অঙ্কের সংখ্যা সমেত এক অকটিলিয়ান পর্যন্ত c-এর প্রয়োজন হবে না। এটা গেল আমেরিকান মতে সংখ্যালিখন– ব্রিটিশ মতে অবশ্য…।
ব্যস, ব্যস, বুঝে গেছি, যেন গুমড়ে উঠলেন ট্রামবুল।
সঙ্গে-সঙ্গে বললেন রুবিন–আমার কিন্তু মনে হয় না হাতের কাজ শেষ করতে পেরেছিল স্টিপান। স্পোর্টস পৃষ্ঠা থেকে খবর খুঁজে নেওয়ার মতলবকে হয় তো তাড়িয়েছিল মন থেকে। ইচ্ছে ছিল আর একটা মাত্র হরফ তুলে নেওয়ার। তাহলেই তাদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাজালে শব্দটা দাঁড়াত pocket; পকেট খুঁজে বের করে নিতে বলত গুপ্ত সংবাদটা…
কিছুই ছিল না পকেটে, জবাব তো নয় যেন গিলোটিনের কোপ মারলেন পেনটিলি।
ছিল নিশ্চয় ছুরি মেরেই বের করে নিয়েছিল খুনি–প্রাণটা তখন বেরিয়ে যাচ্ছে বলেই টের পায়নি স্টিপান।
অনুমানটা দ্বিতীয় শ্রেণীর হয়ে যাচ্ছে না? ধরে নিলেন একটা বাড়তি, শুধু তাকে খাপ খাওয়ানোর জন্যে টেনে আনলেন পিকপকেটিং এর অনুমিতি। অসম্ভব।
পকেট তো একটা সাংকেতিক শব্দও হতে পারে, ছাড়বার পাত্র নন রুবিন।
না, না, না! এইবার কিন্তু অসহিষ্ণুতায় ফেটে পড়লেন পেনটিলিজেন্টেলমেন, মজার মজার অনেক তত্ত্বই আউরে যাচ্ছেন–এবং সব কটাই ভুল দিকে আপনাদের নিয়ে যাচ্ছে। ভুলে যাচ্ছেন কেন, মানুষের স্বভাব মলেও যায় না–মরবার সময়ে তো যায়ই না। স্টিপান ছিলেন বড় পরিপাটি মানুষ। মরতে যখন চলেছেন, গুছোনি স্বভাব তখনও যায়নি। হাতটা ছিল বাক্সের ঢাকনির ওপর– টেনে বন্ধ করেছিলেন ঢাকনি। সুতরাং যে কটা হরফ তার দরকার হয়েছিল বের করার–তা বের করা হয়ছিল বলেই বাক্স বন্ধ করে দিচ্ছিলেন। পাঁচটাই হরফ, খেয়াল রাখবেন।
হ্যালস্টেড বললেন–পাঁচটা হরফকেই প্ল্যান মতো সাজানোর সময় নিশ্চয় পায়নি।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন পেনটিলি–পাঁচটা আলাদা হরফকে ১২০ রকমভাবে সাজানো যায়। কোনওটাই ইংরেজি শব্দ নয়–একটা শব্দ হল kopec–কিন্তু রাশিয়ান মুদ্রা kopek এর বানান আলাদা। না, মশাই না সংখ্যার উল্লেখই করতে চেয়েছিল স্টিপান।
আচমকা বলে ওঠেন অ্যাভালোন–স্পোর্টস পৃষ্ঠায় স্পোর্টসের খবর ছাড়া আর কিছু ছিল কি? যেমন, বিজ্ঞাপন?
এমনভাবে শূন্যে তাকিয়ে রইলেন পেনটিলি যেন একটা অদৃশ্য কাগজ পড়ছেন চোখমুখ কুঁচকে। বললেন–না, ব্রিজ খেলার এক কলম খবর অবশ্য ছিল বটে।
পেয়েছি। মিঃ পেনটিলি, ব্রিজ খেলায় দিগগজ আমি–তা বলতে চাই না। তবে কি জানেন, মাঝেসাঝে খেলাটা খেলি ব্রিজ কলমও পড়ি। North, South, East আর West–এই চারটে হেডিং-এর নীচে একটা করে হাত আঁকা থাকবেই সব কলমে। প্রত্যেক হাতে উপযুক্ত তাসের লিস্টও থাকবে। স্পেড, হার্ট, ডায়মন্ডস, ক্লাবস। তার নীচে প্রতিটি তাস পরপর সাজানো থাকবে মান অথবা দাম অনুসারে।
চোয়াল শক্ত হয়ে গেল পেনটিলির–বেশ?
9915 1974 TIP epock 691 e 626€ 69160 ans east, c 6216 clubs; East-49 হাতে পাঁচটা Clubs থাকতে পারে; ধরুন সেগুলো J, 8, 4, 3, 2; J আর 3 কে বাদ দেওয়া গেল, কেন না তাদের জায়গায় e আর c-কে আমরা আগেই কাজে লাগিয়েছি। পড়ে রইল তাহলে 842; মিঃ পেনটিলি এই হল গিয়ে আপনার সাংকেতিক অঙ্ক।
সবিস্ময়ে চেয়ে রইলেন পেনটিলি।
বললেন–মশায়, স্বীকার করছি, এভাবে ভাবিনি কখনও। ডেরায় ফিরেই ব্রিজ নিয়ে বসতে হবে দেখছি। আশ্চর্য! এক্কেবারে নতুন ধরনের একটা সম্ভাবনা।
ঈষৎ রক্তিম মুখে বললেন অ্যাভালন–স্বল্পবুদ্ধিতে যেটুকু কুলিয়েছে, তা-ই বললাম।
তবে কি জানেন, বললেন পেনটিলি–আপনার এই ধারণা খুব যে একটা কাজে লাগবে, তা মনে হয় না। স্টিপান ব্রিজভক্ত ছিলেন না বলেই জানি। তাছাড়া মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একমাত্র বাতুল ছাড়া কেউ ব্রিজের সাহায্য নিয়ে গুপ্ত সংবাদ কৌশলে পাচার করানোর চেষ্টা করবে বলেও মনে হয় না। কৌশল যাই হোক না কেন–তাকে হতে হবে অতিশয় সহজ, সরল। পৃষ্ঠা সঙ্কেত দিলেই ল্যাটা চুকে যেত কিন্তু তিনি মেলে ধরেছেন স্পোর্টস পৃষ্ঠার পুরো পাতাটাই। তাতেও সন্তুষ্ট হয়ে স্ক্র্যাবল সেট থেকে বের করেছেন বড়-বড় হরফ। এর চাইতে সহজ আর কী হতে পারে।
হেনরীর মাথায় সমাধান এসেছে নাকি? বললেন গোনজালো।
যেন লাফিয়ে উঠলেন পেনটিলি–ঘুরেফিরে শেষকালে হেনরীর কাছেই যেতে হল! কী গো হেনরি, হেঁয়ালির মারপ্যাঁচে মাথা ঠান্ডা আছে তো?
কথার ঝড়ে ঘরের মধ্যে যখন তুলকালাম কাণ্ড চলছে, হেনরী তখন ঠায় দাঁড়িয়েছিল সাইডবোর্ডের পাশে শিষ্ট বালকের মতো। এবার বললে–এইটুকু মাথায় কিছু ঢুকলে তো! ২০ সংখ্যাটির কোনও তাৎপর্য আছে কিনা–
কথা আর শেষ করতে পারেনি হেনরী। আচমকা দুই ভুরু পাকিয়ে কটমট করে তার দিকে চেয়েছেন পেনটিলি।
বলছেন কুড়ি! আন্দাজে ঢিল ছুঁড়লে নাকি?
মোটেই না, স্যার। তাৎপর্যটা তাহলে আছে?
তাৎপর্য! মুখ কালো করে বছরের পর বছর শুধু ভেবেই গেছি নিশ্চয় কুড়ি সংখ্যাটা জানাতে চেয়েছিল স্টিপান। সাংকেতিক শব্দের বই অনুসারে, কুড়ি মানে–সরকারের কড়া নিয়ন্ত্রণে সব কিছুই। এতক্ষণ তো অনেক বকলাম–20 সংখ্যাটা নিশ্চয় ভুলেও বলিনি?
সমস্বরে সবাই জানালেন–না, পেনটিলির মুখ দিয়ে এ সংখ্যার আভাসটুকুও বেরোয়নি। পেনটিলি বললেন–যদি প্রমাণ করতে পারতাম, 20 সংখ্যা দিয়ে স্টিপান আমাদের হুঁশিয়ার করতে চেয়েছেন–তাহলে অন্ততঃ শূকর উপসাগরের বিপর্যয় রোধ করতেও পারতাম। চেষ্টাটা অন্তত করতাম। কিন্তু…কিন্তু…হেনরী কী করে চট করে এসে গেল 20-তে?
আমার অজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে, সবিনয়ে জানাল হেনরী–আপনি তো বললেন, বেসবলের মোটামুটি খবর রাখত স্টিপান–আমিও রাখি মোটামুটি খবর। সেই জন্যেই দেখি বক্সের মধ্যে স্কোরগুলো। খেলার ফল কী হল–তাই জানলেই চলে যায় আমার মতো উজবুক লোকের স্কোর মানেই তো কুড়ি।
হারতে রাজি নন অ্যাভালন–তা কী করে হয়, হেনরী। স্কোর তো সেকেলে শব্দ। স্টিপান সেকেলে ইংরেজিতে মা-গঙ্গা ছিল বললেই চলে।
মিঃ পেনটিলি কিন্তু বলেছেন, আমেরিকান ইতিহাস গোগ্রাসে গিলত স্টিপান। ইতিহাসের একটা কথা তো প্রবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফোর স্কোর অ্যান্ড সেভেন ইয়ার্স এগো…
ঈষৎ মুষড়ে পড়ে পেনটিলি বললেন–তবুও বলব খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না—
বিশ্বাসযোগ্য হতেই হবে মিঃ পেনটিলি। স্ক্র্যাবল হরফগুলোর মানেও তো কুড়ি।
কীভাবে?
মিঃ গোনজালো যখন Blain শব্দটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, পরিষ্কার জিগ্যেস করেছিলেন, শব্দটা ইংরেজি কিনা। Epock শব্দটাকেও যে ইংরেজি হতেই হবে–এমন কথাও কি কেউ বলেছিলেন?–বলেননি।
সহর্ষে বললেন গোনজালো–Epock কি তাহলে রাশিয়ান শব্দ? যার মানে কুড়ি?
জবাবটা দিলেন পেনটিলি–না। Kopec/Kopek সম্ভাবনার কথা আগেই বলেছি কিন্তু তার সঙ্গে কুড়ি-র কোনও সম্পর্ক নেই।
রাশিয়ান শব্দের কথা আমি ভাবিনি, বললে হেনরী–আপনিই তো বললেন, মরবার সময়েও মানুষ তার অভ্যেস ছাড়তে পারে না। মিঃ স্টিপানও অভ্যেসের বশে নিশ্চয় রাশিয়ান হরফ তুলে নিয়েছিল।
Cyrillic অ্যালফাবেট, বললেন রুবিন।
ইয়েস স্যার। USSR-কে রাশিয়ান হরফে দেখেছি এইভাবে–CCCP; আঁচ করেছিলাম রাশিয়ান C আমাদের S-এর সমান, আর রাশিয়ান P আমাদের R-এর সমান।
হতভম্ব মুখে বললেন পেনটিলি–ঠিক! ঠিক! ঠিক! ঠিক!
রাশিয়ান k যদি আমাদের–এর সমান হয়, তাহলে epock শব্দটা হয়ে যাচ্ছে erosc; ঘুরিয়েফিরিয়ে সাজালেই পাচ্ছি Score।
আবার ভয়ানক মুষড়ে পড়েন পেনটিলি–হেনরী! হেনরী! একথা তুমি ১৯৬০ সালে কেন বললে না আমাকে?
জানলে তো বলব, হেনরীর মুচকি জবাব।
(আইজাক আসিমভের স্পোর্টস পেজ অনুসরণে)