দুঃসময়
তপা ওর মাকে সেদিন কথাটা বলেছিল। সারাদিন ঠাকুমার সাথে তুমি ঝগড়া করো কেন। তুমি একটু নিজে ভেবো। তাতে তপার মা চিৎকারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে ওর বাবাকে নালিশ জানিয়েছিল। বাবা সজল বাবু একেবারে নির্ভেজাল সাদাসিধা মানুষ। তিনি তপার মা -এর সঙ্গে আজ পঁচিশ বছর ঘর করছেন, ঝগড়াতে পেরে ওঠেননি। তাই মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন মা’র সাথে ওরকম করে কথা বলতে নেই। মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়,ঠাকুমার মতো গুরুজনের সঙ্গে এমন করে কথা বলে কেন মা। যাইহোক এইভাবেই তপাদের মত মেয়েদের আমরা শাসন করে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। অথচ প্রত্যেক বাড়িতে এমন বিষয়গুলো উঠে আসে যেখানে একটা পরম্পরা কাজ করে। তারপর ঠাকুরমা সংসারটাকে আগলে রাখে। কিছু ভুল সবাই করে। তিনিও মাঝে মাঝে বাজার থেকে নানা কিছু খাবার এনে তপাকে দিয়ে নিজে খান। আজ মায়ের মুখ থেকে ওই কথা শুনে ঠাকুরমার দুচোখ জলে ভরে উঠেছিল। ওর বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে এইভাবে কেউ অপমান করত না। তপা সেদিন দেখেছিল ওর মা ঘরের পাশের পুকুরে প্লাস্টিক সহ সমস্ত জিনিস গুলো পড়ে ফেলছে। প্রতিবাদ করেছিল। কারণ ও পরিবেশ বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করে তাই জানে এ সকল জিনিস মাটির সঙ্গে মিশে যায় না । বাতাসকে দূষিত করছে, মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে ।সামনে এই যে বন্যা এর কারণ প্লাস্টিক। মা তুমি এভাবে জলের মধ্যে এগুলো ফেলবে না। পৌরসভা থেকে বাঁশি দিয়ে যে কাকু আসে ওই গাড়িতে তুলে দেবে। ওর মার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর- ছোট মুখে বড় কথা ।তুমি আমাকে শেখাতে এসেছো। মা আমি তোমাকে যেটা বললাম সেটা ঠিক ,তুমি ভুলটা করো। এখানে অন্য কিছু বলিনি। এদিকে শুনছো বলে মা বাবাকে ডাকলেন। তোমার মেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে আজকাল আমাকে শেখাতে আসছে। ও বলছে কেন আমি নোংরা ওখানে ফেলি ।বিয়ের পর থেকে তো আমি ওখানে ফেলে আসছি। তুমি ওকে কিছু বলো। ওর বাবা মাথা নিচু করে নিজস্ব ভঙ্গিতে বলল মেয়ে বড় হয়েছে, লেখাপড়া শিখছে ।।ওর জ্ঞান বেড়েছে। আমরা যদি কোনো ভুল করে থাকি ও শুদ্ধ করে পরিবেশকে রক্ষার চেষ্টা করছে। এখানে অন্যায় কোথায়। তপা ঘর থেকে বেরিয়েএসে মাকে বোঝালো। থাক থাক আমাকে বইয়ের জ্ঞান জানাতে হবে না। ভুল করেছি তোমাকে পড়াশোনা শিখিয়ে। মুখে মুখে কথা বলতে শিখেছ। আচ্ছা মা তুমি এমন করছ কেন? আমিতো তোমাকে অপমান করিনি ।শুধু বলেছি এগুলো করোনা এগুলো পৌরসভার গাড়িতে ফেলো। তুমি এত ঠাকুমাকে উচ্চঃস্বরে কথা বলে অপমান করো। ঠাকুমার কি কষ্ট হয় না? বাবা তুমি কেন এর প্রতিবাদ কেন করো না । ঠাকুমার বয়স হয়েছে মা সবসময় খিটখিট করে। বুঝিয়ে বললে তো পারে এরকম বাজে কথা কেন বলে। বাবা আবার সেই নীরব হয়ে থাকে। আসলে পঁচিশ বছরে তার বউয়ের সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া করেনি। মুখ বন্ধ করে নীরবে মেনে নিয়েছে। অবশ্য এর জন্য তো । তুমি অন্যায় কে প্রশ্রয় দাও কেন বাবা। যেকোনো অন্যায় বুঝিয়ে দিতে হবে সেটা ভুল আর তিনি যদি ভালো কাজ করেন তোমাকে সবার সামনে স্বীকার করে বলতে হবে সেটা ঠিক। এই নয় যে সংসারে ঝগড়া বিবাদ করা। ভুল ত্রুটিগুলো সকলের মধ্যেই আছে। হয়তো নিজে বোঝা যায় না কোনটা তুমি ভুল করেছো। তারপর বাবা তপা, স্ত্রী এবং মাকে কাছে নিয়ে বসে সমস্যাটা বুঝিয়ে বলেন।