Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বৃদ্ধাশ্রম || Maya Chowdhury

বৃদ্ধাশ্রম || Maya Chowdhury

বৃদ্ধাশ্রম

দীপ্তি কাকিমা একান্নবর্তী পরিবারের মেয়ে, আবার একান্নবর্তী পরিবারে তার বিয়ে হয়েছিল। ছোটবেলা থেকে ধনী পরিবারে বড় হয়েছেন। শ্বশুরবাড়ি জমিদার বললে কম বলা হয় যথেষ্ট অবস্থাপন্ন পরিবার ।তবে দীপ্তি কাকিমার স্বামী সমীর দা ভাইবোন মিলে এগারো জন ।প্রত্যেক বোনের বিয়ে হয়ে গেছে ।সকলেরই অবস্থা যথেষ্ট ভালো। দীপ্তি কাকিমার শ্বশুর শাশুড়ি বেশ কিছুদিন আগে গত হয়েছেন। অনেক বয়স হয়েছিল প্রায় নব্বই এর কাছাকাছি ।শাশুড়ি মা বেঁচে ছিলেন আশি-বিরাশি বছর হবে। দীপ্তি কাকিমার এক ছেলে এক মেয়ে ।ছেলে আমেরিকায় ডাক্তারি পড়তে গিয়ে আর ফিরে আসেনি, ওখানে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বিয়ে করে সংসার জীবন করছে ।ওদের এক মেয়ে। কাকিমা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন কাছাকাছি। তবে মেয়ে ভালো চাকরী পেয়ে ভিয়েতনাম চলে যায়। ওর এক ছেলে। এখানে সমীর দার তিনজন ভাই মারা গেছেন দুজন বৌদিও নেই ।সমীরদা গত হয়েছেন দু’বছর হলো। দীপ্তি কাকিমা একেবারে একা হয়ে পড়েছেন। ছেলে আগে ফোন করে কথা বলতো। বছরে একবার আসত। এখন সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে। মেয়ে মাঝেমধ্যে ফোন করে তবে পাঁচ বছর হলো মেয়ে আসে না। বড় একা লাগে দীপ্তি কাকিমার। একান্নবর্তী পরিবার থেকে আজ একেবারে একা। মেনে নিতে পারে না, নিজেকে নিজেই দোষারোপ করেন_ হয়তো পাপের ফল। বাড়ি আগলে বসে থাকেন। কিছুদিন আগেই দেওরের ছেলেরা বাড়িটা বিক্রি করে সবাইকে টাকাপয়সা ভাগ করে দিয়েছে। এখন যে যার মতো করে একটা করে বাড়ি কিনেছেন। কিন্তু বয়স হয়েছে দীপ্তিকাকিমার প্রায় সত্তর বছর। একেবারে একা নীরবে। ছেলে মেয়ে জানিয়েছিল অসুবিধা হলে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেও ওখানে সবরকম ব্যবস্থা আছে। দীপ্তি কাকিমা বৃদ্ধাশ্রমকে হাসপাতালের মত ভাবেন ।হাসপাতাল থেকে যেমন মানুষ বাড়িতে আসতে পেলে শান্তি পায় ,বৃদ্ধাশ্রমও তার কাছে তাই । ভীষণ ভয় পান। উপায়ও নেই। নিজেই একদিন খোঁজ করে একটা ভালো বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছালেন। সমস্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে নিজের টাকা জমা দিয়ে একটা ঘর বুক করলেন। ক্রমে এখানকার বাসিন্দা হয়ে উঠেছেন। সবাই এসে গল্প করে, আনন্দ উচ্ছ্বাস ,নাচ গান কিছু বাদ যায় না। হ্যাঁ তবে পুরনো জীবনের কথা মানুষ ভুলতে পারেনা। ঐসব কথা মনে পড়লে বড় কষ্ট হয়। বছর দুই হলো তিনি এখানে এসেছেন। স্বামী গত হওয়ার পর। এই বয়সেও অজান্তে একজন ভালো বন্ধু পেয়েছেন। একে অপরের পরিপূরক হয়েছে। ওই ভদ্রলোকের স্ত্রী বছর চারেক গত হওয়ার পর ছেলে বউয়ের অত্যাচারে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন দীপ্তি কাকিমাকে পেয়ে বিনয় বাবু বেশ ভালো আছেন। তাদের দুজনের থাকার ব্যবস্থা একই ক্যাম্পাসের মধ্যে হলেও অনেকটা দূরবর্তী। তবুও তো একই বাড়িটার মধ্যে আছি। দুজনে একটা নিরিবিলি জায়গায় বসে গল্প করেন সকালে চা খাওয়ার সময় টা বিনয় বাবুর জন্য অপেক্ষা করেন দীপ্তি কাকিমা। আশ্রম টা বড়, মর্নিং ওয়াক এর মত জায়গা রয়েছে।অ দুজনে কিছুটা পায়চারি করেন তারপর আবার আলাদা ঘরে প্রবেশ করেন। মনের মধ্যে একটা আনন্দ এসেছে যে একেবারে আপনজন তার জন্য কেউ আছেন। নাইবা হল একঘরে একসাথে শোয়া। তবুওতো ভালোলাগা-মন্দলাগা অসুখ-বিসুখে একজন মাথার কাছে আছেন _বিনয় বাবু। প্রথমে আশ্রমের সবাই হাসাহাসি করত যে এই বয়সে প্রেম। আধুনিক যুগ ,কিছু মানুষ এটা খুব ভালো ভাবে গ্রহণ করতে পারেন তারা তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বৃদ্ধাশ্রম এর মালিক বেজায় খুশি। তার মতে কষ্ট পেয়ে মানুষগুলো আমাদের এখানে আসেন সেখানে যদি তারা সুখ খুঁজে পান অসুবিধা কোথায়। আজকাল কোন শাড়িটা দীপ্তি কাকিমা বিকালে পড়বে সেটা বিনয়বাবু নির্বাচন করে দেন। মুখটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে সাজলে বিনয় বাবুর ভালো লাগে। এসব বলার জন্য আর তো কেউ ছিলনা। ছেলে বউ মেয়ে জামাই একদিন তো বলে না মা এই কাপড়টা বদলে ঐ কাপড়টা পড়ো। বলেনা আজকে কপালে টিপটা কেন খুলে রেখেছো। এই ছোটখাটো জিনিসগুলোই হলো ভালোবাসা। তাই কাকিমা আর বিনয় বাবুর বৃদ্ধাশ্রম এর জীবনটা সত্যিই আনন্দের‌ এই ভাবেই কাটুক তাদের চার হাতের জীবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress