সেই কখন থেকে আমার লেখার টেবিলে
লম্বা চওড়া একটা শাদা কাগজ অনিকেত, রুক্ষ
সন্ন্যাসীর মতো অলস শুয়ে আছে খাঁ খাঁ অক্ষরহীন;
আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে যেন। সকাল ও দুপুরকে
এক কাঠঠোকরা ঠোকরাতে ঠোকরাতে
ঠেলে দেয় প্রগাঢ় গোধূলিতে। এমন হ’তে থাকলে
তোমার কাছে প্রার্থনা করি কবিতা। যখন আমি তোমাকে
বলি, ‘কবিতা দাও’, তুমি বিস্ময়ে খানিক বাক্যহারা
তাকাও আমার দিকে, ভাবো ঠাট্রা মশ্করা
করছি। আমার কাতরতা উপেক্ষার ধূসরতায় গড়ায়।
‘এই আমি কী ক’রে কবিতা দেবো তোমাকে’, তুমি প্রশ্ন করো।
গাছের পাতা থেকে পিছলে-পড়া রোদ, যাযাবর মেঘ, বৃষ্টিভেজা
গলিপথ, দেয়ালে ব’সে লেজ-দোলানো
মসৃণ পাখি আমাকে কবিতা দেয় কখনও কখনও, তাহ’লে
তুমি কেন তোমার অমন ঐশ্বর্যকে পাঠাবে না এই অপেক্ষমাণ
বন্ধ্যা পাতায়? আমার ব্যাকুলআত কি তৃষিত
পাখির মতো চঞ্চু গুঁজে প’ড়ে থাকবে কাঁকড়াময় নিঃসাড় বালিতে?
আমার শূন্য শাদা পাতা মেলে ধরেছি তোমার সামনে, সাড়া দাও।
আমার ব্যাকুলতা তোমাকে স্পর্শ ক’রে অনন্তের
কিছু বদ্বুদ তুলে নিতে চায় করতলে;
আমার ব্যাকুলতা তোমার ঠোঁটের কাছে এগিয়ে যায়
চুম্বনকে অমরতায় অনূদিত করার আশায়। আমার
এই-আমিকে উন্মোচিত করেছি
তোমার ঘনিষ্ঠ উষ্ণতায়। এমন উন্মোচনকে তুমি কি
শাদা পাতায় গৌরবহীন মূকে ভিখারী ক’রে রাখবে সকল সময়?