এতটুকু বাড়িয়ে বলার ইচ্ছে নেই। যা বলছি,
সত্যি সবই। বেশ ক’বছর থেকে আমার দু’হাতে
কিছুটা ইস্পাত গেঁথে আছে, আমার বুকের কাছে
লোহা-লক্কড়ের এটা সেটা দৃঢ় গেঁথে গেছে, গালে
তামার পাতের চাপ বড় বেশি, এবং কপালে জং-ধরা
টিন ফুটে রয় সারাবেলা। যখন রাস্তায় হাঁটি
অথবা বেড়াই পার্কে, তখনও কি কেউ তাজা আলোয় দেখে না
এ শহুরে আমার এমন রূপান্তর? আজ অব্দি কেন কেউ
আমার মুখের এই ভীষণ কালিমা দেখে চমকে ওঠেনি
একবারও? আধখানা যন্ত্র আর অর্ধেক মানব হয়ে আছি!
কোনও বৈদ্য অথবা হেকিম পারবে না কোনওদিন
সারাতে আমার এই ভয়ানক ব্যাধি, হায়। কাউকে কিছু না
বলে যদি এ শহর ছেড়ে ছুড়ে দূরে, বহুদূরে
চলে যাই কোথাও, যেখানে কলকারখানা আর
ভয়ঙ্কর আয়ুক্ষয়ী ধোঁয়ার কালিয়া নেই, গাছ গাছালির
ধ্বংসযজ্ঞ নেই, নেই ধুলোর সন্ত্রাস, তাহলেই
আমার কপাল, গাল, হাত আর বুক থেকে দ্রুত খসে যাবে
টিন, তামা, লোহা আর ধারালো ইস্পাত। সূর্যোদয়ের মতোই
চকিতে উঠবে জেগে আমার প্রফুল্ল নিরাময়। হে পাড়াগাঁ,
মাইল মাইল্ব্যাপী হে সবুজ, হে বিলের পানি, পানকৌড়ি,
মাছরাঙা, হে আমার পাড়াতলী, পদ্মপুকুর জোনাকি, ওগো
সর্ষে ক্ষেত, প্রজাপতি, হে ইঁদারা, ওগো বাঁশবন,
হে ঘুঘুর ডাক, হে রাখাল, মেঠো বাঁশি, যদি আসি
তোমাদের কাছে, তোমরা কি এই রুক্ষ, রিক্ত শহুরে আমাকে
করবে গ্রহণ হেসে বেলাশেষে? নাও,
ধূসর, অসুস্থ লোকটিকে টেনে নাও বুকে সস্নেহে সবাই।