Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সমুদ্র মেখলা || Shipra Mukherjee

সমুদ্র মেখলা || Shipra Mukherjee

বাড়ির কাছে আসতেই গাড়ির হেড লাইট টা নিবিয়ে দিল রাজা । ভিজে চুল কপালে রিং হয়ে লেপটে আছে। বিশাখা সিটে হেলান দিয়ে বসা। মাথাটা এক পাশে হেলে আছে।

গাড়ির দরজা খুলে বিশাখাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে দরজায় পা দিয়ে একটা লাথি মেরে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিল। পাঁজা কোলে করা হাতেই বাড়ির দরজা খুলল। বিশাখার শরীর ও জলে ভেজা। সিফন শাড়িটা ভিজে গিয়ে ওর শরীরের আঁকে বাঁকের রাখঢাক একেবারে পরিস্ফুট হয়ে ধরা পড়েছে রাজার চোখে । বিশাখার চোখ বোজা। ক্লান্ত শরীর। রাজার শরীরের তাপে একটু একটু করে উত্তাপ ফিরে আসছে বিশাখার। রাজা সন্তর্পনে বিশাখাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। একটা তোয়ালে দিয়ে মাথাটা মুছিয়ে দিতে চেষ্টা করল। ঠান্ডা হাতের তেলো হাত দিয়ে ঘষতে শুরু করল উত্তাপ ফিরিয়ে আনার আশায় ।

চোখ মেলল বিশাখা ,দৃষ্টি পড়ল রাজার চোখে। তারপর দৃষ্টি ফিরল নিজের আলুলাইত কেশ ও বেশবাসের দিকে। আঁট সাট হলুদ ব্লাউজ আর সিফন শাড়িটা লেপটে রয়েছে উর্ধাঙ্গে। বৃথাই চেষ্টা করে শরীর ঢাকার। ওর নজর যায় রাজার দিকে। রাজার সিল্কের সার্ট, টাই, সব জলে চুপ চুপে। বিশাখার নজর যায় আরও গভীরে। এভাবে কখনও দেখে নি রাজা কে। রাজার গভীর দৃষ্টি থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল। রাজা তোয়ালেটা বিশাখার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল। বিশাখার মাথাটা বুঝি এতক্ষণে কাজ করছে! কি করতে এখানে নিয়ে এল বিশাখাকে! কেন এলো? ভাবতে পারছে না ! ভাল ও লাগছে না ভাবতে। বিছানায় শুয়েই বিশাখা মাঝখানের দরজা দিয়ে দেখতে পাচ্ছে রাজা আলমারি খুলে জামা কাপড় বার করছে। এ ঘরে এলো সে। বিছানায় জামা কাপড় রেখে খুব গম্ভীর গলায় বলল। – শাড়িটা বদলে নাও, ঠান্ডা লেগে যাবে। তখন রাজার দৃষ্টি বিশাখার শরীরের চড়ান- উতরানের দিকে। ওর দৃষ্টিটাই বলে দিল রাজার সামনে বিশাখা ভিজে শাড়ী তে প্রায় নিরাবরণ। রাজা যে অসন্তুষ্ট তা ওর শক্ত চোয়াল ই বলে দিচ্ছে ।

তোয়ালে দিয়ে শরীর ঢাকার প্রচেষ্টা বিশাখার। লজ্জা ঢাকতে গিয়ে ওর বোধ শক্তি ফিরে আসছে। দৃষ্টির বলে দেয় অন্য নারীর শাড়ি পড়তে বিশাখার অনীহা।

আর সেটা বুঝেই রাজা বলে ,- ওগুলো সুছন্দার।

বিশাখার আশ্বস্ত হবার ভঙ্গী তে রাজার ঠোঁটে একটা দুষ্টমীর হাসি খেলে যায়। একটু ঝুকে পড়ে বিশাখার দিকে। নিজের মুখ খানা বিশাখার কাছে নিয়ে বলে। – রাজার বাড়িতে রাজার বৌ ছাড়া অন্য কোন মেয়ের প্রবেশ করতে পারবে না ,বুঝলে?

“রাজার বৌ “কথাটা বিশেষ অর্থ বহ মনে হল বিশাখার। বিশাখাকে শাড়ি ছাড়ার কোনও উদ্যোগ নিতে না দেখে বলে–কি হলো?পড়িয়ে দিতে হবে নাকি?

ভয়ে বিশাখা বিছানায় উঠে বসল। রাজা হেসে টয়লেট টা দেখিয়ে দিল বিশাখাকে।

হট ওয়াটার ট্যাপ খুলে বিশাখা স্নান সেরে নিল। সারা গায়ে বালি কিচকিচ করছে। প্রথমে ভেবেছিল অল্প জলে স্নান করে নেবে। কিন্তু মাথার বালি দূর করতে শ্যাম্পু করতেই হবে। তাই করলো বিশাখা ।গরম ঠান্ডা জলে স্নান করে ত্রাসটা কাটলো।

প্রতিবার ই রামকৃষ্ণ বিচ এ ভাসান হয়। প্রতিবারের মতো আজও গনেশ ঠাকুরের ভাসান ছিল। তেলেগুরা বলে বিণায়ক চতুর্থী। আর এই সব ভিড় ভাট্টায় রাজা কোন দিন যায় না। বিণায়ক এর সঙ্গে বিশাখার ও ভাসান হয়ে যাচ্ছিল আজ। অন্য বার অবশ্য রাজাকে রাগাতে তনয়ের সঙ্গে হৈ হুল্লোর করে । যেটা রাজার ভাষায় ফস্টিনষ্টি ।

বিশাখা তখন টিম্পনী স্কুলে পড়ে । তখন তনয় আর বিশাখা সমুদ্রের জল ছোড়াছুড়ি করে খেলছিল ভাসানের দিন । কোথা থেকে রাজা এসে বিশাখার দু বাহু বিশাখার পিছনে টেনে ধরে রেখেছিল। এমন ভাবে ধরেছিল যে বিশাখার বুক রাজার বুকে পিষ্ট হচ্ছিল। তার সঙ্গেই শাসিয়েছিল। – ফের যদি ফস্টিনষ্টি করতে দেখি দেখবে কি করি?

রাগ হয়েছিল বিশাখার। বিশাখা কি ওর সম্পত্তি! অবশ্য ওদের দু বাড়ির বাবা মায়েরা ই এর জন্য দায়ি। ওদের ইচ্ছে টা রাজার মধ্যে সংক্রামিত হয়েছিল। হাতের কালসিটের দাগ টা সারতে প্রায় সাত দিন লেগেছিল। কিন্তু মনে প্রতিহিংসার জ্বালা টা ছিল বহুদিন। রাজাকে জ্বালানোর উদ্দেশ্যেই তনয়ের সঙ্গে ফস্টিনষ্টি করতো । আবার রাজার অত্যাচারের ভয়ে কখনও দল ছাড়া হতো না । ভিড় ভাট্টায় আসা রাজার স্বভাব বিরুদ্ধে হলেও কয়েক বছর ধরে রাজা ভাসানে আসছে । আসল কারণ টা বিশাখার জানা ।সেটা হলো বিশাখার ওপরে নজর দারি করা । আর পুরানো প্রতিহিংসার জ্বালা টা জুড়াতো বিশাখা তনয়ের সাথে হৈ হুল্লোড় করেই সেই কালসিটের শোধ তুলতো । কিন্তু আজকের ব্যাপার ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। বিশাখার চোখ বারেবার ওকে খুঁজেছিল। কিন্তু সে আসেনি ভেবে মনটা ভাল না লাগায় ছেয়ে গেছে বিশাখার। কারণ সুছন্দাদের বাড়িতেই সেদিনের রাজার শরীরের উত্তাপ বিশাখাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে,রাজাই ওর জীবনের প্রথম ও শেষ পুরুষ। বিশাখার মন যখন রাজা ময় হয়ে গিয়েছিল তখন কখন যে তনয় ওকে টেনে নিয়ে যায় সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে তা বিশাখা বুঝতেও পারেনি ! বুঝি আনমনা থাকাতেই বিশাখাকে বিশাল ঢেউ টা টাল বেটাল করে দেয় । ঢেউ এর পাঁকে উল্টে পাল্টে বেঁধে নিয়েছিল সকলের চোখের সামনেই। চারদিকে হৈ হৈ চিৎকার। আর তখন বিশাখার হাত উঁচু করে বাঁচার প্রচেষ্টা । তখনই কে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে সমুদ্রে ।

পাড়ের নিস্তব্ধতা!শ্বাস রুদ্ধ শ্বাসে সকলে দেখছে তাকে। বিশাখাকে পাঁজা কোলে করে একটার পর একটা ঢেউ লাফিয়ে পাড় হয়ে আসছে। অনেক গুলো ক্যামেরার ক্লিক, সাটার টেপার আওয়াজ হল। যে সব নিউজ রিপোর্টার রা এসেছিল বিসর্জনের ছবি নিতে এসেছিল বিসর্জনের ছবি নিতে, তারা এত সুন্দর হীরো র খবরটা ক্যামেরায় বন্দি করতে ভুল করলো না । এ যেন সমুদ্র মন্থন করে অমৃত হাতে নিয়ে আসছে পৃথিবীতে ।

পাড়ে আসতে মিনিট দশেক লাগল। রাতের আঁধারে “বিচ” এ মুখ ভাল করে দেখা না গেলেও ক্যামেরার দৌলতে পরিস্কার ছবির এক ঝলক দেখল পাড়ের সকলে। পাড়ে এসে বিশাখাকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে , পেটে চাপ দিয়ে সব জল বার করে দিল রাজা। সকলে নির্বাক দর্শক। এরপর বিশাখার মুখে মুখ দিয়ে আর্টিফিসিয়াল রেসপিরেশন দিল। বিশাখার একটু জ্ঞান ফিরতে পাঁজাকোলে করে বিশাখাকে ধরে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। মাঝে মাঝেই ভয়াবহ স্বপ্ন টা তাড়া করছে বিশাখাকে। বিশাখার প্রায় অচেতন শরীর টা রাজা বাঁ হাতে আঁকড়ে ধরে রাখে। যাতে বিশাখা হেলে পড়লেও রাজার সাপোর্ট পায় । বাঁ হাতে মাঝে মাঝেই বিশাখাকে কাছের করে রাখে। একটু চেতনা ফিরতেই বিশাখা বোঝে যে ওরা সমুদ্রের ধার দিয়েই কোথাও চলেছে। হয়তো বা ঋষিকোন্ডা! একটা ত্রাসের পর আর একটা ত্রাস । পাশের মানুষটার থেকে একটু সরে বসতে চেষ্টা করে বিশাখা। কিন্তু তার আগেই ঐ বলিষ্ঠ হাতখানা বিশাখার কাঁধ ছুঁয়ে বিশাখাকে আরও কাছের করে টেনে নেয়। বলে- ভয় নেই, আমি আছি। একটু চুপ করে থাকে রাজা । কাঁধে মাথার স্পর্শে আবার বলে। – সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছিলে।

সাহস দেবার জন্য বিশাখার কাঁধে হালকা হাতের চাপ রাজার।

সমুদ্রে ডুবে যাবার কথায় ঐ শক্ত হাতের চরম টানটার অনুভূতিটা বিশাখার শরীরের রক্তে মিশে গেছে। ঐ হাতের টানটা না থাকলে বিশাখা এতক্ষণে কোথায় তলিয়ে যেত। এই নরম হাতটা যে কতো শক্ত তা বিশাখার জানা ছিল না । মাথা এলালো রাজার কাঁধে । দৃষ্টি সমুদ্র তটে। ফসফরাস জ্বল জ্বল করছে। বাঁয়ে পাহাড়ের প্রাচীর। নিজেকে একটু একটু করে চিনতে পারছিল বিশাখা । বাঁয়ে পাহাড়ের প্রাচীর আর ডানে অতল সমুদ্রের গর্জন। কিন্তু বিশাখা মন ও মুখ এক করতে এত চায়নি এত কান্ডের পর ও জেদ করে।

বিশাখাপত্তনম এর প্রতিটি কাছেই রাজা ছিল অতি প্রিয়। পাত্র হিসেবে রাজার দর টা উঁচুদরের। কিন্তু ওদের দু বাড়ির মধ্যে কিছু একটা বোঝা পড়া আছে তা বুঝতে কারো বাকি ছিল না । বিশেষ করে বাঙালি পরিবারের মধ্যে । তাছাড়া রাজার ও বিশাখার প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল তাও সবার জানা। তাই সাহসে ভর করে কেউ নিজের মেয়ের জন্য রাজা লোভনীয় পাত্র জেনেও সে দিকে হাত বাড়ায় নি ।

স্ত্রী গত হবার পর থেকেই রাজার বাবা নারায়ণ দত্ত ছেলের বিয়ের জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন। বিশাখার মতো সুন্দরী, ভাল মেয়ে ছেলের বৌ হবে তাতে তিনি গর্বিত বোধ করছিলেন। কিন্তু বিশাখা রাজী না হওয়ায় ,বিশেষ করে বিশাখার পড়াশোনার জন্য, অপেক্ষা করাই ঠিক করেন। বিশাখার মা বাবার মতটাও নারায়ণ দত্তের ধারেকাছের। কিন্তু ঐ দস্যু টা কে জব্দ করতে ই বিশাখার পড়াশোনার টালবাহানা করেই বিয়েটা আটকে রেখেছে। আর বিশাখাকে বাগে আনতে না পেরে রাজা কালীবাড়ির পুজোর দিন গুলোতে বিশাখাকে বন্ধুদের সামনে অপ্রস্তুত করতে নানা রকম ফন্দি আটতো । ফন্দির অবশ্য রকম ফের হতো । রকম ফের হলেও প্রতিটার উদ্দেশ্য ই হতো বিশাখার শরীর টাকে একটু ছোঁওয়া । হঠাৎই বিশাখাকে পাশ কাটাতে দেখলে চেয়ারে বসা অবস্থায় পা ছড়িয়ে দেওয়া যাতে বিশাখা পড়ে যায় । আর বিশাখা টাল বেটাল হয়ে পরে যাবার আগেই রাজা বিশাখাকে জাপটে ধরে । এটার কিছুটা বিশাখাকে বাঁচানোর তাগিদে আর কিছুটা ওর শারীরিক তাগিদে করতো। রাজার বুকের মধ্যে ঝটপটানো বিশাখার গালের লালের ছটা দেখতে দেখতে রাজার ও মুখে রক্তের আধিক্য হতো । আর বন্ধুরা তা তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখতো। কেউ আবার হর- বোলার সুরে বলত। – ও বৌদি, রাজাদা তোমায় খেয়ে ফেলবে ।

ঐ কথা শুনে রাজা দাঁত বার করে অশালীন ভাবে বিশাখার রাগী মুখের দিকে চেয়ে হাসতো। বিশাখার তখন মনে হতো একটা নোড়া দিয়ে ওর মাথাটা ছেঁচে দিতে। কিন্তু রাগে বিশাখার দুরদার করে ছুটে পালানো ছাড়া আর কিছুই করার ক্ষমতা ছিল না । একটা পন্থা পেয়েছে বিশাখা ঐ দস্যুটাকে জব্দ করার। তাই বাবা মা , এমন কি রাজার বাবার ইচ্ছাকে জলাঞ্জলী দিয়ে নিজের দৃঢ়তা কে প্রতিষ্ঠা করেছে । এটা বিশাখা বুঝতে পেরেছিল যে ওকে বিয়ে করতে রাজি না হবার জন্য রাজার অনেক দাপট সইতে হবে ।তাই হোক। ওকে জব্দ করার ঐ একটা পথ হল ওকে বিয়ে না করা ও তনয়ের সাথে হুটোপুটি করা ।

বন্ধুদের সামনে জড়ানোর পর বিশাখা রাজার সাত হাত দূরে পালাতো। এমন কি ছোট বেলার বন্ধু রাজার বোন সুছন্দার কাছে ও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। সুছন্দা বুঝতো না কেন বিশাখা দাদাকে পছন্দ করে না !

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
Pages ( 1 of 10 ): 1 23 ... 10পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *