প্রেমিক কবি
রবীন্দ্র অননুসারী ধারার কবি নজরুল। তিনি প্রেমিক , মানবতাবাদী দেহবাদী। তাঁর কবিতা-গানে বাস্তবতার ছোঁয়া। তাঁর লিখন দেহবাদী— সাধারণ মানুষের বড় মন ছোঁয়া!
কবি যখন বলেন,
– মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল—- তখন তা যেকোন প্রেমিক হৃদয়েরই কথা হয়ে ওঠে। তাঁর প্রেম দেহকে ঘিরেই , মানবিক কামনার রঙে রাঙা! জ্যোৎস্না ও চন্দনের রূপটানে প্রেয়সীর অঙ্গ মার্জনা বা রামধনুর লাল রং কে প্রিয়ার পায়ের আলতার কল্পনা তো এক প্রেমিকই করতে পারে। এখানেই তিনি আমাদের একান্ত আপন—- আমাদের মননের সঙ্গী!
কবির লেখনি যখন বিরহবিধুর নায়িকা হয়ে বলে—- শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এল না
বরষা ফুরায়ে গেল আশা তবু গেল না— কিংবা
ধানী রং ঘাঘরীর মেঘ রং ওড়না
পরিতে আমারে মাগো অনুরোধ করোনা— তখন তা যেকোন বিরহী প্রেমিকার কথাই হয়ে ওঠে।
প্রেমিক কবির লেখনী বলে—- আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফস গয়ি
বিনোদ বেনীর জরিন ফিতায়
অন্ধা ইশক মেরা বস গায়ি।— এইতো মানবিক প্রেম! কবির নিদ্রাহারা চোখ প্রিয়ার দেহ দেউড়িতে এসেই বন্দি হয়েছে বিনিসুতোর বন্ধনে—- কানেরও দুলে প্রাণ রাখিলে বিঁধিয়া
আঁখ ফিরা দিয়া চোরি কর নিন্দিয়া
দেহেরও দেউরীতে বেড়াতে আসিয়া
ওর নেহি ও ওয়াপস গয়ী।
কবির গান দোলা লাগায় চিরন্তন প্রেমিক মননে—
আমি যার বরষার আনন্দ কেকা
নূত্যের সঙ্গিনী দামিনী লেখা—
প্রেমিক কবি হৃদয় কল্পনা য় ভেসে যায় —–
শিয়রে বসি চুপি চুপি চুমিলে নয়ন
মোর বিকশিল আবেশে তনু
নীপ সম, নিরুপম , মনোরম!
কবির কল্পনায় কখনো তিনি বিরহী রাধা। তাঁর সুন্দর শ্যামকে ঘিরেই তাঁর কাব্য—-
কে সেই সুন্দর কে?
আমি যার বিলাস ও যমুনা , বিরহ-বিধুর—
অথবা—
যার শিখিপাখা লেখনি হয়ে
গোপনে মোরে কবিতা লেখায়
সে রহে কোথায় হায়—-
এযে সেই চিরন্তনী বিরহী প্রেমিকার আর্তি।
তাঁর সুরের জাদুতে ভেসে গেছে বাংলা সাহিত্য অঙ্গন। তিনি সেই শাশ্বত প্রেমিক বলেই তো লিখেছেন—-
ব্যথা মুকুলে অলি না ছুঁলে বনে কি দুলে ফুল পতাকা?—
জীবনের গোধুলিবেলায় কবি নীরব হয়ে পড়লেন! মুখর কবির বিরহী মনে বাঁশিওয়ালা নিরালায় কাঁদে— সেই কাঁদনে সিক্ত হয় নিখিল বিরহী চিত্ত।
সাহিত্য বাগিচার নার্গিসি বুলবুল— চির প্রেমিক কবি নজরুল— তোমাকে প্রণাম!