Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সুতীক্ষ্ণ তীর || Suchandra Basu

সুতীক্ষ্ণ তীর || Suchandra Basu

জানো দিদি,বলেই দীপা আওড়াতে শুরু করল__
কাল একটা ঘটনা ঘটেছে ওই সরকার বাড়িতে।
ছেলে চাকরি করে বিদেশে। ভদ্রলোক একাই থাকেন।রান্নার কাজ করে দু’বেলা আমার মেয়ে
পম্পি,আর আমি ঘরমোছা বাসনমাজার কাজটা করি।পম্পি আমাকে বলল,
“কি সাংঘাতিক একটা মেয়ে এসেছে জানো মা।
কাল বেল দিতেই আমি দরজা খুলে দিয়ে দেখি
একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে সে ইংরেজিতে বলে ওঠে অখিলেশ আঙ্কেল ইজ? গলাটা শুনেই দাদা বলে
ওঠে, কে ড়ে,?মেয়েটি তার গলা শুনে বলে, আই এম এষা,স্টাডি ইন জে ইউ। তার নাম শুনে দাদা বলে,আছি রে মা।এই তো আমি।
বলে মেয়েটির সামনে যেই এলো অমনি মেয়েটি ভিতরে ঢুকে দাদাকে জড়িয়ে ধরে ইংরেজিতে কি সব বললে।”

দীপা আমাকে বলল পম্পি ইংরেজি পড়ে তো তাই ও সব বোঝে।–ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি ঢ্যামনা মেয়ে গো দিদি, দাদার গালে চুমো দিয়ে বলল “আইএম এপেটাইট।” দাদা অবশ্যি চেঁচিয়ে উঠে বলেছিল,’হাউ ননসেন্স ইউ আর। এ’সব কি!”

মেয়েটির ঠোঁটকাটা জবাবটা শোন একবার।
সো হোয়াট ! ইওর সুইটি গার্ল আদরমণি।আই
ডোন্ট মাইন্ড, হোয়াট আদার সে। কে কি
বলল,দেখল তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
এমন বেপরোয়া মেয়ে দাদার কোন কথাই সে কানে নিল না।ব্যাগটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে রেখেই বলল,” হোয়ার ইজ ইওর ওয়াশরুম?আই নো ইউ আর এলোন।প্লিজ ডোন্ট টেক ইট স্ট্রেস।”
বলেই সে বাথরুমে চলে গেল।
বলব কি দিদি তার পোশাক দেখলে তুমি ওর
সামনে যেতে নিজেই লজ্জা পেতে ।ছোট একটা
হটপ্যান্ট আর পেট বার করা গেঞ্জি তার টপ।
বুকের অস্থিযুগল যেন ঠেলে বেড়িয়ে আসছে।এরা এমন আধুনিক হ্যাংলা মেয়ে লোমহর্ষক
পোশাকে সকলের সামনে এসে দাঁড়ায়।

দীপা ঘর মুছতে মুছতে এতক্ষণ এসব বলে
গেল।আমি শুধু ওর কথায় একটা করে হ্যাঁ হুঁ করে যাচ্ছি। পরের ঘরের ন্যাকামো শুনে আমার কি লাভ।কিন্তু ওর ওই স্বভাব। কার ঘরে কি ঘটছে সবএসে নিজের মনে আওড়াবে আর নিজেই তাকে খিস্তি দেবে।

এতো গেল সকালের ঘটনা। সন্ধ্যায় পম্পি টেবিলে কফি দিতে গেলে দাদা মেয়েটিকে
জিজ্ঞেস করে চিনি গুলতে থাকে। এত অসভ্য
মেয়েটা সে চেয়ারে বসেই দাদার পায়ে পা ঘষতে থাকে।আর ইংরেজিতে সুইট হট হ্যান্ডসাম এট্রাকটিভ বলেই আবারও দাদাকে চুমো দিতে
গেলে দাদা মাথা সরিয়ে নেয়,চেঁচিয়ে উঠে বলে,এসব কি পাগলাম?তোমার মাথা ঠিক আছে তো?আমার ছেলে তোমার থেকে বছর খানেক বড় হবে। লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে সে জবাব দিলে,
সো হোয়াইট? লাইক ফাদার,নট ফাদার
অলসো!ইউ আর গ্ল্যামারাস হিরো ইন মাই
আইজ।

দীপা বলল কি ঘেন্না কি ঘেন্না। পোশাকের ফাঁক
দিয়ে তো সব শরীর দেখা যাচ্ছে।কে জানে কেমন আজকালকার ভদ্র শিক্ষিত মেয়েদের
স্বভাব।বলে কিনা আবার ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।
দাদার পায়ে পা ঘষে ঘষে বলছে ভোগ আনন্দ
এন্টারটেনমেন্ট এজেড পুরুষ এসব তার
ছোটবেলা থেকেই রপ্ত। কিছু মনে কর না আবার।আমি মাথা নোয়াতে শিখিনি।দাদাও বলে
ইংরেজিতে,”দেটস ওকে”।
কথা বলা পুতুলের মত সে বলে চলেছে,আঙ্কেল
তুমি রাগলে তোমাকে আরো সুন্দর দেখায়।
এই বয়সেও তুমি ভীষণ এট্রাকটিভ।বলেই
সংলগ্ন হয়ে দাদাকে জড়িয়ে ধরে আদর
করতে থাকে। দাদাতো কোনরকমে সামলে
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।বলে এ_ কি
বেবী? তুমি এ কি করছ? মেয়েটি বলে যেদিন থেকে আমি ঋতুমতী হয়েছি সেদিন থেকেই যুবতী হয়ে গেছি।আমার ইমোশন আমি নষ্ট করতে পারবো না। প্রেমে পড়ার জন্য আবার কোনো বয়স লাগে নাকি আঙ্কেল? বলেই জড়িয়ে ধরে আর বলে,
তুমিও একা আমিও একা দুজনেরই সঙ্গী দরকার।এজেড ম্যাচিয়রড পুরুষ আমি খুব পছন্দ করি।
দাদা রেগে চিৎকার করে হোয়াট ননসেন্স।
কি সব আবোল তাবোল বকছো তুমি?
মেয়েটি বলে,জ্ঞানদামোহিনী স্কুলের হেডমাস্টারের মতো কথা বল না তো আঙ্কেল।
একটা কথা স্পষ্ট করে বলি শোন আমি আমার খুশি মতো চলি,পার্টি পছন্দ করি। কাল আমার পার্টি আছে,বেরতে হবে।কোথায় যাব কখন
ফিরব এ’সব কথা না জিজ্ঞেস করলেই খুশি হব।আমি কাউকেই কোন কৈফিয়ত দেওয়া পছন্দ করি না।

অখিলেশের হাতে এষা ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বলে, দেখ বাবা ফোন করেছে,ধরে কথা বল।
অখিলেশের কানে ওপার থেকে এষার বাবার
কণ্ঠস্বর ভেসে এল।কিরে এষা ঠিকঠাক পৌঁছেছে তো? একটু ঠোঁট কাটা স্বাধীনচেতা।
সামলে নিস কেমন। হা হা করে হেসে দাদা
বলে একটু নয় বড্ড বেশি। ও কিছু ভাবিস
না আমি সামলে নেব। ও তো আমার মেয়ের
মতো নাকি! ভাল থাকিস বলে রেখে দিল।

পরের দিন সকালে চা খেয়ে দাদা খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছে আর মেয়েটা রেডি হয়ে
দাদার অজান্তেই পেছন থেকে জাপটে ধরে
দু গালে চুমো দিয়ে বলে ডার্লিং চাপ নিও না
ফিরতে রাত হবে। দাদাও গম্ভীর স্বরে বুঝিয়ে দেয় তাকে এইসব কথাবার্তা একদম পছন্দ নয় তার। লেট নাইটে ফেরাও একদম পছন্দ নয় তার।তিনি বাড়িতে একলা থাকেন।বললেন শোনরে মা স্বাধীনচেতা হওয়া ভাল তবে স্বেচ্ছাচারীতা ভাল নয়।মেয়েটি কোন কথার উত্তর না দিয়ে ব্যাগ ঘোরাতে ঘোরাতে বেড়িয়ে গেল।

অখিলেশ সিগারেট টানে আর ভাবে এ আবার
নতুন কি আপদ জুটল।একা থাকি।এই বয়সে কি এ সব মানায়? জীবনে মানুষকে কত রকমের পরিস্থিতিতে পরতে হয়।কত ঘটনা মনটাকে তছনছ করে ভেঙে দুমড়ে দেয়।অন্যায় অসহ্য হলেও অপরাধ বোধ হারিয়ে যায়। মন যেন আনন্দটাকে নিঙড়ে নিতে চায়।

ভাবছিলাম ভোরের সূর্যোদয় দেখে একটা কবিতা লিখব।দিল সব পন্ড করে। সে সময়
দীপা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, জানো দিদি আজ কি হয়েছে?আমি বিরক্তি সহকারে বলি, কি আবার হল এত হাঁপাচ্ছ কেন? হাসবে না বলবে? না হয় চুপ করো। না গো দিদি দাদাকে মেয়েটা পটিয়ে ফেলেছে। চুপ করো, কি আজেবাজে কথা বলছো? হ্যাঁ গো, দাদা দরজা খুলেই আবার মেয়েটার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল। ঘর মুছতে ঢুকে দেখি মেয়েটার পরনে নাইটি আর সরকারবাবুকে জড়িয়ে শুয়ে। আমি ঝাঁঝি মেরে বলি তাতে তোমার কি হল? না মানে বলছিলাম,আমাদের ঘরের মেয়েরা
এ সব করলে ছিঃ ছিঃ রটে যেত। এরোস্কেট
( এরিস্ট্রোকেট) বলে এদের সাতখুন মাপ।
আমি ওকে বলি যাও কাজ করো আর জ্বালিও
না আমায়।ওকে কাজে পাঠালাম বটে কিন্তু প্রশ্নটা মাথায় সুতীক্ষ্ণ তীরের মত বিঁধে রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *