ধর্ম,না,মনুষ্যত্ব
মলয় আর ইব্রাহিম দুই বন্ধু। ওদের বাবা-মাও দুজনকে ভালোবাসেন। মলয় বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। মলয়ের বাবা সরকারি অফিসার। ইব্রাহিমের বাবাও তাই। তবে ওরা এক ভাই এক বোন। বোনের নাম আয়েশা। ইব্রাহিমের থেকে দুই বছরের ছোট। দেখতে খুবই সুন্দরী। ঘর থেকে মোটামুটি বেরোয় না। সারাটা দিন পড়াশোনা নিয়েই থাকে।
ঈদের সময় মলয়দের বাড়ির সবাইকেই নিমন্ত্রণ করা হয় ইব্রাহিমদের পরিবারের তরফ থেকে। ইব্রাহিমের মায়ের হাতের বানানো সিমুইয়ের পায়েসের স্বাদ অনন্য। সেই স্বাদ মলয় ওর মায়ের হাতের রান্নাতেও পায়না। তাই ও প্রায় দিনই ইব্রাহিমের বাড়িতে গিয়ে খেয়ে আসে। ইব্রাহিমের বাবা-মাকে চাচা-চাচী বলবার বদলে কাকু কাকিমা বলেই ডাকে। ওনারাও খুব খুশি হয়ে উত্তর দেন। মলয়দের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটা হয়।
মলয় আর ইব্রাহিম এবছরই গ্রাজুয়েট হয়েছে। আর চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর আয়েশা এবার কলেজে ভর্তি হলো পদার্থবিদ্যা নিয়ে। মলয় আর ইব্রাহিম জীববিদ্যা নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে। দুইজনে পাশ করবার পরপরই চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে। দুজনে একইসাথে চাকরিও পেয়ে যায় দুটি কর্পোরেট সংস্থাতে। ওরা চাকরি করছে কিন্তু একসাথেই অফিসে যাতায়াত করে।
সবকিছুই ঠিক ঠাকই চলছিলো। মলয়ের বাড়ি থেকে ওর বাবা-মা বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে শুরু করলো। ওর বাবা-মা যখন মলয়কে জিজ্ঞাসা করল কিরে তোর কাউকে ভালো লাগে নাকি যাকে তুই তোর জীবনসঙ্গী বানাতে চাস।
মলয় একটু লজ্জা পেলেও বুঝতে পারলো এই সেই মুহূর্ত যে সময় ওর মনের কথাটা বলতে হবে। তাই ও ওর বাবা মাকে লজ্জাজড়িত কণ্ঠে বলল মা আমি একজনকে ভালোবাসি।
কে সেই মেয়ে বল?
মা তোমরা তাকে চেনো ওর নাম আয়েশা।
বাবা মা চোখ চাওয়াচাওয়ি করলেন কিন্তু কোনো কথা বললেন না। বলবেন কেন ওনাদেরও ওকে যে পছন্দ।
পরেরদিন ইব্রাহিমের বাবার সাথে ছেলের মনের কথাটা বললেন মলয়ের বাবা। ইব্রাহিমের বাবা শুধু বললেন আমি ওর আম্মুর সাথে একটু কথা বলে নি।
দিন দুয়েক পর ইব্রাহিমের মা মলয়ের মায়ের সাথে কথা বলতে এলেন এবং মোটামুটি সম্মতি দিয়ে গেলেন।
খবরটা পাঁচকান হতে সময় লাগলো না। দুই পরিবারের ওপরেই বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া শুরু হলো। মলয়ের বাবা খুবই শক্ত হাতে পুরো ব্যাপারটা সামলে নিলেন। যারা ওনার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করতে এসেছিলেন তাদের মোটামুটি পত্রপাঠ বিদায় করে দিলেন।
আবার ঐদিকে ইব্রাহিমের পরিবারের ওপর ধর্মীয় চাপ আসছিল। ইব্রাহিমের বাবা সবার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন দেখুন আমি আমার ধর্মকে শ্রদ্ধা করি কিন্তু তারমানে আমি মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিতে পারব না। আমি ধর্মের আগে মানুষকে বিশ্বাস করি। আর মলয়ের মতো ছেলে খুব কমই পাওয়া যাবে। আমার পুরো পরিবার এই সম্পর্কের ব্যাপারে একমত। আমার মেয়ে আয়েশাও মলয়কে খুবই ভালোবাসে। আর ওরা একসাথে জীবন কাটাতে চায়। আপনারা বাধা দিলেও আমি আমার মেয়ের ভালোবাসাকে সম্মান করি। তাই মলয়রা আমার ধর্মাবলম্বী না হলেও আমি ওদের ভবিষ্যৎ জীবনের পথকে সুদৃঢ় করতে ওদের পাশেই থাকবো। এতে যদি আপনারা দাওয়াতে না আসেন তাও। আর হ্যাঁ শুনে যান মানুষ না থাকলে ধর্ম থাকবে না। তাই আগে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখুন। তারপর ধর্ম ধর্ম করবেন। ধর্মের নামে মানুষকে বিভাজন করবেন না দয়া করে।