Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ফেরা -1

জানালার গরাদ দিয়ে দু’চোখ ছড়িয়ে রত্নাউপভোগ করছিল বাইরের আলো, বাতাস, আকাশ, নদী, অরণ্য ও প্রান্তর।কিন্তু কোনকিছুতেই সে মন বসাতে পারছিল না । একবারঅনিরুদ্ধর কথা ভাবতে চেষ্টা করল..পরক্ষণেই সে মনে মনে বলে উঠল-দূর ছাই,এভাবে কেউ এসব ভাবে নাকি?যে অনিরুদ্ধকেসে এক মুহুর্তও তার ভাবনা তো দূরের কথাকল্পনাতেও নিয়ে আসতে রাজী নয় আর…অথচ…! নিজের কাছেই নিজেকে খুবইখেয়ালী মনে হয় । জীবনে অত বড়ো একটাহোঁচট খেয়েও…! আবার ভাবনা.. ?কেনকিসের জন্য? ভীষণ বিরক্তি বোধ করেরত্না । কিন্তু অনিরুদ্ধর কথা মনে করতেকরতেই তার ভেতর বুকটা কেমন‌যেন ভারীহয়ে ওঠে । এক একবার বড়ো বড়ো হাইতুলে সে বুকটাকে একটু হালকা করে নিতে চায়।কিন্তু না , সে কিছুতেই অনিরুদ্ধর কোমলকচি প্রচ্ছন্ন মুখটাকে মন থেকে সরিয়ে রাখতেপারে না,মুছেও ফেলতে পারে না ।তাই সেজানালার গরাদে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে থাকল বেশ কিছুক্ষণ । তারপর হঠাৎ চোখখুলতেই রত্না যেন অনিরুদ্ধকেই চোখেরসামনেই জানালায় দেখতে পেল । অনিরুদ্ধ যেন রত্নার একেবারে মুখোমুখিএসে চোখে চোখ রাখল ।অনিরুদ্ধকে সেএমন করে কোন দিন তার দিকে চোখেচোখ রেখে চেয়ে থাকতে দেখেনি কখনও।যখনি চোখে চোখ পড়েছে সঙ্গে সঙ্গেইঅনিরুদ্ধ চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তুআজ এ কি হলো? বিস্ময়ে অভিভূত হয়েউঠল রত্না ।আবেগের আতিশয্যে রত্নাভুলেই গেল যে তার এই অসংলগ্ন ভাব-নার মধ্যে অনিরুদ্ধ এভাবে কখনই সশরীরেতার মুখোমুখি আসতে পারে না । তবুওরত্না বারবার পলক ফেলার পরও দেখতেপেল অনিরদ্ধই মূর্তিমান সামনে দাঁড়িয়েবিহ্বল চোখে তার দিকেই অপলক তাকিয়ে আছে । কিছু বলবেন অনিরুদ্ধ বাবু? কবেএলেন কলকাতা? রত্না অস্ফুট ও ধরাগলায় জিজ্ঞাসা করল । সঙ্গে সঙ্গে অনিরুদ্ধওযেন মুখ খুলল এবং একটু ভারী গলায়পেলব মমতা মেশানো স্বরে উত্তর দিল- মানে…আমি তো কবেই এসেছি।ফোনও তো করেছি আপনাকে ! আমাকে…? ফোন? কই,নাতো!এবার অনিরুদ্ধ আরও একটু এগিয়ে এসেরত্নার একেবারে কানের কাছে মুখ এনেএক নিঃশ্বাসে বলল-আপনি কি সত্যি সত্যিইএখনও আমাকে নিয়ে ….! কথা শেষ নাহতেই রত্না প্রশ্ন করল- কি বলছেন এসব? এ সবের মানে কি? মানে?মানে এই ধরুন আমার প্রতি আপনার… এই টুকু কথা শুনেই রত্নার শরীর বেয়েএকটা দমকা হাওয়া খেলে গেল ।মনেরভেতর যে সব ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল এইদমকা হাওয়ায় যেন তা ভেতর থেকে বাইরেগিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছত্রখান হয়ে পড়ল । রত্নার এই মুহুর্তে অনিরদ্ধকে বলতেইচ্ছে হল-আপনারও তো সেটা উপলব্ধিকরা উচিৎ ছিল অনিরুদ্ধবাবু? কিন্তু না,রত্না সে কথা অনিরুদ্ধকে বলতে পারল না ।মাথা নিচু করে একটু ভেবে রত্না বলল- ও, হ্যা,আপনার প্রেজেন্ট করা রাইটিংপ্যাড আর উইংসাং পেনটা আমার কাছেআজও সেই ভাবেই অব্যবহৃত পড়ে আছে ।—কেন?—কোন অধিকারে বা কিসের তাড়নায় আমি ওগুলো ব্যবহার করবো বলতে পারেন…?—-অধিকারের প্রশ্নই উঠল যদি,তা হলে আমিও আজ স্পষ্টতই বলতে পারি, বড্ড দেরী হয়ে গেছে রত্না দেবী।আর পাঁচটা বছর আগে যদি আমাদের এ পরিচয়টা হতো,!..তা,হলে ভাবা যেত হয়তো । না, রত্না দেবী,আমাকে ক্ষমা করুন ।

ফেরা -2

অনিরুদ্ধর মুখে ‘ক্ষমা’শব্দটা শুনেই-…ক্ষমা ? বলে চেঁচিয়ে উঠতে চাইল রত্নাকিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার মনে পড়ে গেল এইক্ষমা চাওয়ার কথা অনিরুদ্ধর মুখ থেকেআগেও সে বেশ কয়েকবার শুনেছে ।রত্নাতাই অনেকটাই রুঢ়তার সুরে গম্ভীর গলায়মেজাজে বলে উঠল- —যে পুরুষ একটা মেয়ের কাছে বারবার ক্ষমা চায় তার আবার পৌরুষত্ব কিসে?বলতে পারেন? …পুরুষের পৌরুষত্ব একটা মেয়ের কাছে কিসে তাৎআপনি যেমন জানেন,আমিও তা জানি। তবে এখানে আমার পৌরুষত্ব কোন মেয়েকে অন্তত প্রতারণা না করা ।সঙ্গে সঙ্গে অনিরুদ্ধর দৃঢ় কন্ঠের এই শব্দগুলো যেন প্রতিধ্বনির মতো বার বার রত্নারচারপাশে আছড়ে পড়তে লাগল।আর রত্নাআরও উত্তেজিত হয়ে ওঠার চেষ্টা করলকিন্তু অনুতাপের কাতরতায় অনেকটাইনিশ্চল হয়ে পড়ল সে । ভাবাবেগও ক্রমেশান্ত হয়ে এলো।কিন্তু মাথার ভেতর বনবন করে ঘুরতে লাগল বোধের লাটাই ।রত্না এবার ক্রমশঃ স্মৃতিচারী হয়ে উঠলযেন । এই তো মাত্র এক বছর আগের কথা,কলকাতার বই মেলায় আকস্মিক ভাবেরত্নার সঙ্গে অনিরুদ্ধর পরিচয়।তারপরআলাপ । মেলা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত কবিসম্মেলনে অনিরুদ্ধও রত্নার সঙ্গে কবিতাপাঠ করেছিল ।দূজনেই ভালো কবিতা লেখে । সেই সূত্রেই দুজনের যোগাযোগক্রমশঃ দৃঢ় হয়। তারপর পুরো একটি বছরদুজনের মধ্যে সাহিত্যগত প্রয়োজনেইচিঠিপত্র ও ফোন বিনিময় হয়েছে ।রত্নাপ্রায়ই অনিরুদ্ধকে তার চাকুরীস্থল হাউজিংএ্যাষ্টেটে আসতে অনুরোধ করেছে।যাবযাব করে অনিরুদ্ধ অবশেষে অনিরুদ্ধযেদিন রত্নার হাউজিং এ্যাষ্টেটে প্রথম এসেপৌঁছল সেদিন অনিরূদ্ধকে এভাবে কাছেপেয়ে রত্না বহুদিনের ফাঁকা ফাঁকা লাগাবুকটা যেন মুহূর্তের মধ্যে রঙিন স্বপ্ন,কল্পনাআর অন্তরের নিভৃত প্রত্যাশায় ভরে উঠল। নিজের মতো করে নিজের এত কাছেপ্রথম পাওয়ায় রত্না আবেগঘন আড়ষ্টগলায় অনিরুদ্ধকে বলেছিল- …আপনার এখানে পৌঁছতে কোন অসুবিধা হয়নি তো? …না, না,আপনি চিঠিতে যেভাব ছবি এঁকে এঁকে পথের ডিরেকশান দিয়ে ছিলেন,ফোনে বলে ছিলেন,তাতে আপনার এই এ্যাষ্টেটে কেন ওই আন্টার্টিকার যেকোন দূর্গম অরণ্যে যেতেও অসুবিধে হতো না ‌।রত্না কথা শুনে অনিরুদ্ধর দিকে তাকিয়েমুচকি হেসে বলল… ও…,তাই নাকি! আপনি বেশ রোমান্টিক তো! …কেন বলুন তো? …আপনার লেখা চিঠি পত্রগুলোর ভাষা দেখে শুনে তো তাই মনে হয়েছে আমার! আপনার আসবার কথা শুনেই আমি তো ভাবনায় পড়েছিলাম এই ভেবে যে আমি কথা বলব কিভাবে আপনার সঙ্গে । …কেন? গতবারের বই মেলাতেই তো আমাদের অনেক কথা হয়েছিল!বলতে বলতেই এক সঙ্গে হেসে উঠল দুজনেই। তারপর অনিরুদ্ধ তার ব্যাগ থেকেমার্বেল পেপারে মোড়ানো প্রেজেন্টেশনেরপ্যাকেটটা রত্নার দিকে এগিয়ে দিল।রত্নাহাসি থামিয়ে বলল-এটা আবার কি? …না, ও তেমন কিছু নয় । … তো? …মানে, ওতে সামান্য একটা রাইটিং প্যাড আর একটা রাইটিং পেন আছে মাত্র ।

ফেরা-3

অনিরুদ্ধর প্রেজেন্ট করা রাইটিং প্যাডআর রাইটিং পেন ‘এর প্যাকেটটা হাতেনিতেই রত্নার বুকের ভেতর বিদ্যুতের চমকেরমতোই একটি আশ্চর্য্য শিহরণ হলো আরঅবচেতন মনে সমস্ত ভাবনারই ভাবান্তরঘটল অনিরুদ্ধকে নিয়ে ।এতোদিন সেযে রঙিন স্বপ্ন দেখে এসেছিল অনিরুদ্ধকেনিয়ে আজ কি তবে তা সত্যে পরিণত হল?রত্না নিজেকে নিজেই মনে মনে প্রশ্ন করে আর ভাবে-হ্যা, নিশ্চয়ই তাই , তা না হলেরাইটিং প্যাডটা ডেকোরেটেড লাভ লেটাররাইটিং প্যাড দেবে কেন! একটা পেনইতো যথেষ্ট।না হয়,বড়ো‌ জোর একটা এমনিজেনারেল প্যাড ! আত্মপ্রত্যয়ে রত্না তাইঠোঁটে এক দুর্বার মুগ্ধ হাসি ছড়িয়ে আড়ষ্টতারভাণ করে অনিরুদ্ধকে ধন্যবাদ জানিয়েপ্যাকেটটা সে তুলে নিল হাতে ।রত্নার এইভাবনা বা কল্পনা কতখানি যুক্তিযুক্ত বাভ্রান্ত এমন চুলচেরা বিশ্লেষণেরও তেমনকোন পরিস্থিতি অথবা কোন প্রতিক্রিয়ানিয়ে সেই মুহুর্তে কিছু ভাববার মনেই হয়নিআদৌ তার । কারণ রত্নার মনে অনি্রুদ্ধকেনিয়ে যে রঙিন স্বপ্ন ও কল্পনা আর প্রত্যাশারঅঙ্কুরোদগম হয়েছিল তা ক্রমে বেড়ে ওঠেশাখা প্রশাখায় পল্লবিত হয়ে উঠেছিল ।কোন প্রতিকুল আবহাওয়ার আভাসেরকথা তার মনেই হয়নি কখনও । রত্নাএবার অন্য একটা ঘটনার কথামনে করল । কথাছিল গতকাল তিনটেরশো’ য় মেট্রোতে দুজনে সিনেমা দেখবে।রত্না হাউজিং থেকে এসে ঠিক সময়েই ওইমেট্রোর নীচে দাঁড়িয়েছিল।কিন্তু অনিরুদ্ধইপৌঁছতে লেট করল । এটাই ছিল প্রথম একসাথেসিনেমা দেখা । অথচ…এমন সময় অনিরুদ্ধএসে পৌঁছল যখন মেট্রো থেকে ফেরা ছাড়াঅন্য কোন উপায় নেই।…সরি, এক্সট্রিমলি সরি রত্না দেবী,আমি সত্যিই খুব দুঃখিত ।জ্যামে আটকে গিয়েছিলাম ।রত্নার ভীষণ রাগ হচ্ছিল ।তবু সে চুপ করেনা থেকে অভিমানের স্বরে বলতে চাইল-তাই বুঝি,মশাই? না কি অন্য কোন বাহানা?না,রত্না সে সব কিছুই মুখে আনতে পারলনা । বরং স্বাভাবিক ভাবেই সে বলল..যাক গে,জ্যাম থাকলে উপায় কি! তা,এখন কি করবেন?…যদি পরের শো’তে? অনিরুদ্ধ বলে।…না,অনিরুদ্ধবাবু। আর ছবি দেখবোনাআজ, বরং…রত্নার কথা শেষ না হতেই অনিরুদ্ধ বলেউডল-সেই ভালো । চলুন, আজকের এইবিকেলটা না হয়কোথাও বসে গল্প করে কাটানো যাক ‌ দারুন এনজয় হবে কিন্তু।রত্নাও মনে মনে একবার এরকমটাই ভেবেছিল।তাই সে এ প্রস্তাবে অমত করল না।উদ্দেশ্যহীনহাঁটতে হাঁটতে অবশেষে দুজনেই আউটরামঘাটে যাওয়াই স্থির করল । অনিরুদ্ধ এরআগে আর কখনও আউটরাম ঘাটে আসেনি । জেটির দিকে কিছুক্ষণ বিস্ময়চোখে তাকিয়ে থেকে অনিরুদ্ধ রত্নার দিকেমুখ ফেরালো । রত্না বলল-চলুন, আমরাওই রেলিংটার ধার ঘেঁষে বসি,ওখানেইএকটু নিরিবিলি আছে । অনিরুদ্ধ রত্নার সাথেই এগিয়ে গিয়ে সেইরেলিংটার ধার ঘেঁষে বসে পড়ল ‌। রত্না তারপাশাপাশি বা কাছে না বসে খানিকটাকোণাকুনি ভাবে মুখোমুখি বসল ।অনিরুদ্ধআয়েস করে একটা সিগারেট ধরালো ।অনিরুদ্ধকে সিগারেট খেতে দেখে রত্নারভালো লাগছিল ।কারণ সিগারেট খেলে তার স্মার্ট মনে হয় । ছবি দেখতে না পারারজন্য অনিরুদ্ধ আরও একবার দুঃখ প্রকাশকরতে চেয়ে হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটাজেটির দিকে ছুঁড়ে ফেলল । বসার পরথেকেই রত্না চুপচাপ থাকায় অনিরুদ্ধ সেকথাআর না‌ বলে সেও চুপ থেকে গেল ।অনেকক্ষণ ধরে দুজনেই চুপচাপ ।…এভাবে চুপচাপ বসে বসে কি এনজয়মেন্টহবে? রত্নাই একটা অন্তরঙ্গ আলোচনারপ্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রথম মুখখুলল।.. কি বলব? অনিরুদ্ধ উত্তর দেয় ।…কেন,?আপনার কথাই না হয় কিছু বলুন?…আমার কতা কি বলবো বলুন?…কেন,?আপনার নিজস্ব কোন কথাই কি নেই? আচ্ছা, আপনার বাড়ির লোজনের কথাই না হয় কিছু বলুন। রত্নাইআলোচনার প্রসঙ্গতুলে দেয় । ভলে-…আপনার বাবা হঠাৎ চলে গেলেন?…মৃত্যু তো হঠাৎই হয় । বলে কয়ে হয় কি?…না, মানে, আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন না কি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন?বাবার কথা উঠতেই অনিরুদ্ধ খুবই শোকবিহ্বল হয়ে পড়ল ।চোখ বেয়ে জল বেরিয়েআসতেই অনিরদ্ধ চোখের জল মুছে নিয়েস্বাভাবিক হতে চেষ্টা করল ।…ঠিক তা নয় । দীর্ঘ ছ মাস ধরেই বাবা শয্যাশায়ী ছিলেন ।

ফেরা-4

দীর্ঘ ছ বছর ধরে অনিরুদ্ধর বাবার শয্যাশায়ীথাকার কথা শুনে বিস্ময় মিশ্রিত করুণায়আৎকে উঠল রত্না,বলল- সে কি!…হ্যা…বাবার শরীরের বাম দিকটা টাইফয়েডেপ্যারালাইসভ হয়েছিল,এ ছাড়াও দীর্ঘদিনের পুরনো এ্যাজমা ছিল । খুবই কষ্টপাচ্ছিল বাবা ।অত কষ্টে বেঁচে থাকারচাইতে…কথা শেষ না করতেই রত্না উদ্বেগ কন্ঠেজিজ্ঞেস করল-সরি,আপনাকে দুঃখদিলাম ।না,না,ঠিক আছে । আর কিছু ?হ্যা, বাড়িতে আর কে কে আছেন আপনার?মা,ভাই বোন,দাদা বৌদি ?আর…কি মনেকরে থেমে গেল অনিরুদ্ধ ।রত্নাই আবারকথার খেই ধরিয়ে দিল- আর? আর কে?কে?অনিরুদ্ধ ভাবছে এখন সে কি করবে?সে কি জানিয়ে দেবে সব?বলে দেবে কিসে বিবাহিত! বললে রত্না দেবী এতে কিভাববে,কি মনে করবে তাকে? বিবাহিতপুরুষ হয়েও এভাবে ওর সঙ্গে মেলামেশা…না,না এটা ঠিক হচ্ছে না ‌।এমন একটাসরল নিস্পাপ আর ইমোশনাল মেয়েরকাছে নিজেকে গোপন করাটা অনিরুদ্ধরকাছে দারুন অপরাধ বলেই মনে হল।মনেহল এভাবে গোপন করে যাওয়াকে বলেপ্রতারণা । ঠকানো । কথাগুলো দ্রুত ভেবে নিয়েই সে চাপা স্বরে জবাব দিল- আর?আর আমার স্ত্রী অনন্যা ও ছেলে বিকাশ। উত্তর শোনার সঙ্গে সঙ্গে রত্নার চোখ দুটোবড়ো বড়ো হয়ে গেল ।শরীরটা কেঁপে কেঁপেউঠল যেন । আ – প – নি বি – বা-…অস্ফুট স্বরে বিড়বিড় করতে করতেওবিবাহিত শব্দটি শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ উচ্চারণকরতে পারল না রত্না । সে যেন আচমকাহোঁচট খেয়ে পা ফসকে উঁচু কোন পাহাড়থেকে গড়িয়ে পড়ে গল অনেখ নীচে একগভীর খাদে । অনিরুদ্ধ আড় চোখে তাকিয়েদেখল রত্না উজ্বল চোখ ও মুখটা কেমনযেন বিবর্ণ ও ফ্যাকাসে হয়ে গেছে একমুহূর্তে । দুচোখের কোণে জমে উঠেছেটলটলে জল । অনিরুদ্ধর দিকে চোখ পড়তেইরত্না চৈখ ফিরিয়ে নিয়ে মাথা নীচু করলআর অমনি কয়েক ফোঁটা চোখের জলগড়িয়ে পড়ল মাটিতে । অনিরুদ্ধ টের পেলরত্না ভীষণ আঘাত পেয়েছে মনে । একভয়ংকর যন্ত্রণায় অনিরুদ্ধর ভেতরের মানুষটাভীষণ ছটফট করতে লাগল।অনিরুদ্ধরমনে প্রশ্ন জাগল-রত্না তার সম্পর্কে এখনএই মুহূর্তে কি ভাবছে? রত্না কি তাকে খুবঘৃণা করছে? তা সে যাই ভাবুক না কেন,অনিরুদ্ধ অসহায় ।এই অসহায় অবস্থায়আত্মদহনে বেদনা কাতর অনিরুদ্ধ যেনবাকরুদ্ধ হয়ে গেল । অনিরুদ্ধর সেই নীরবতা যেন মুহূর্তেরমধ্যে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো রত্নার মনেআছড়ে পড়ল ‌ একি তবে বিপর্যয়?না কিদুর্ঘটনা? না কি জীবনের পরাজয়?ভাবতেভাবতে রত্না একটু আগে যে জানালারগরাদ দিয়ে অনিরুদ্ধকে তার একেবারেসামনে মুখোমুখি দেখেছিল, কথা বলছিল,সেদিকে দু’চোখ কচলিয়ে ভালো করে তাকাতেই রত্না দেখল তার সামনে আসলেইকেউ কোথাও নেই । সবটাই কল্পনা …অন্তর্লীন বিষাদে বেদনা বিধুর রত্নার দু’চোখেসমস্ত জগৎটাই ক্রমশঃ ঘন কালো অন্ধকারময়হয়ে উঠল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *