রিয়া এই রিয়া দেখ আমি এসেছি, একবার তাকা আমার দিকে, মনে আছে তোর, রোজ ঝামেলা করতি আমার তাড়াতাড়ি ফেরা নিয়ে, দেখ আজ আমি তাড়াতাড়ি চলে এসেছি।
রিয়া আর দীপ একটা ছোট্ট শহরে একসাথে বেড়ে ওঠা দুটো তরতাজা প্রাণ। রিয়া ছোটো থেকে সেখানে বড়ো হলেও দীপ সেখানে আসে তার বাবার কর্মসূত্রে। শহরটা বেশ ছোটো আর সেই জন্যই সেখানে সবাই সবাইকে মোটামুটি চিনতো। আর দীপের বাবা এখানে এসে রিয়াদের পাশের বাড়িতেই ভাড়া নেয়। আর যেহেতু শহরটা বেশি বড়ো না তাই ভালো স্কুল কলেজ ও ছিল হাতে গোনা। নতুন প্রতিবেশী এসেছে শুনে রিয়ার মা-ই যায় তাদের সাথে আলাপ করতে।
নমস্কার দিদি শুনলাম আপনারা এখানে নতুন এসেছেন, তাই চলে এলাম আলাপ করতে।
খুব ভালো করেছেন দিদি আমরাও তো এখানে কাউকে চিনি না জানি না আপনি নিজে থেকে এলেন খুব ভালো লাগলো। তারপর নানান কথায় আলাপ বেশ জমে উঠলো।
তাহলে আজ আমি উঠি মেয়ের আবার স্কুল থেকে ফেরার সময় হয়ে গেলো। এসে আমাকে না দেখলেই চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করবে।
ও আপনার বুঝি একটিই মেয়ে ? আমার ছেলেটাকে নিয়ে বেশ চিন্তায় এখানে তো তেমন কিছুই চেনাজানা নেই !! কোথায় ভর্তি করবো কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
ওহ এই ব্যাপার ? ওতো চিন্তা করতে হবে না । আজ রাতে আপনাদের সকলের আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রইলো সেখানেই রিয়ার বাবার সাথে কথা বলিয়ে দেবো !! সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
এমা না না আবার এসব ঝামেলা কেনো?
আর কোনো কথা না আসা কিন্তু চাই , আমরা সক্কলে আপনাদের অপেক্ষা করবো কিন্তু এখন আসি।
ওভাবে বলে যাওয়াতে অগত্যা সন্ধ্যে বেলায় সবাই তৈরী হয়ে গেলো রিয়াদের বাড়ি। অরে দিদি আসুন আসুন দাদা আপনি পিছনে কেনো আসুন উনি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। কোই দীপ বাবু এস এখানে তোমার মতোই একটা ছোট্ট দিদি আছে চলো চলো।
রিয়া এসে দীপকে ডেকে নিয়ে গেলো নিজের ঘরে। রিয়ার বাবা বলে উঠলেন বেশ জমে গেছে দুটিতে। চলুন আমরা গিয়ে এবার আমাদের মতো কথা বার্তা বলি। তা শুনছিলাম আপনারা নাকি ছেলের স্কুলে এডমিশন নিয়ে খুব চিন্তিত ? ওতো ভাববেন না মশাই এই শর্মা তো আছে। কাল ছেলের সমস্ত ডকুমেন্ট নিয়ে চলে আসবেন আমার মেয়ের স্কুলে ওকে এডমিশন করিয়ে তবে আমি ক্ষান্ত। নিন চলুন অনেক রাট হলো এবার দেন হাতের কাজটাও সেরে নেওয়া যাক। কথায় তো আর পেট ভরবে না মশাই। সেখানে উপস্থিত সকলে হেঁসে উঠলো।
খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে এবার ওদের ফেরার পালা। আজ তাহলে আসি ? এরপর কিন্তু একদিন আমাদের গৃহে ও পায়ের ধুলো দিতে হবে।
এম ছি ছি এভাবে বলবেন না। আগে আপনার ছেলের এডমিশন টা করাই তারপর চেয়ে চেয়ে আসবো । আমি আবার খাবার ব্যাপারে খুব পাকা হিসাবী। আবার সকলে হেঁসে উঠলো।
দীপ রিয়ার থেকে মাত্র বছর ২ এর ছোটো হবে। একসাথে স্কুলে যাওয়া বাড়ি ফেরা এমন কি স্কুলের টিফিন টাইমে ও দুজন সারাক্ষন একসাথে। বয়সের ফারাক বেশি না হওয়ায় ওরাও খুব অল্প দিনের মধ্যেই খুব ভালোও বন্ধু হয়ে উঠলো। ধীরে ধীরে দুজন স্কুলের গন্ডি থেকে কলেজ পাশ করলো। রিয়া যদিও বছর ২ এগিয়ে দীপের থেকে । তাই রিয়া কলেজ শেষ করে কয়েকটা টিউশন করতো কিন্তু ওর খুব ইচ্ছে যে ও আফটার গ্রাজুয়েট পড়াশোনা করে । কিন্তু ওদের সেই ছোট্ট শহরে সেটা সম্ভব ছিল না আর রিয়ার বাবা মেয়েকে কিছুতেই এক কলকাতায় ছাড়তে রাজি ছিলেন না। অগত্যা রিয়ার কিছুই করার ছিল না। রিয়া নিজের মনের কথা দীপকে জানালে সে বলে তুই চিন্তা করিস না , আমাকে কলজেটা পাশ করতে দে তোকে নিয়েই কলকাতা যাবো, তোকে ছেড়ে অতো দূরে আমি কি করে থাকবো ? তুই যা বোকা তোকে এক কোথাও রেখে আমি যেতে পারবো না !!!!! আহা রে আমি বোকা আর তুই বিরাট চালাক তাই না ? তুই থাকে আমি গেলাম বোকাদের সাথে কথা বলতে হবে না তোকে।
রিয়ার কপট রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে জেট উদ্যত হলে দীপ তার হাত ধরে টেনে এনে নিজের বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে দেখি তো কেমন যেতে পারিস আমার বাঁধন ছাড়িয়ে ? রিয়া আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দীপকে !!! ছাড়াতে তো চাই না , তাহলে ছাড়বো কেনো ? কিন্তু আমার বীর পুরুষ এই যে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন সবাই তো আপনাকে আমার ভাই বানিয়ে রেখেছে সেই কবে থেকে চালাকি করে সবটা ম্যানেজ করছি।
——কোনো চিন্তা নেই রাজকুমারী ঠিক সময় তোমরা রাজপুত্র তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে। এখন আদর করি , সারাক্ষন আমাকে ফাঁকি দেওয়া চলবে না। দীপ রিয়ার দুটো ঠোঁট যেন একে অপরের সাথে মিশে গেলো। দীপ নিজের হাত রিয়ার স্তনের উপর দেওয়ায় রিয়া যেন আরো শিহরিত হয়ে উঠলো। হঠাৎ দীপের মার্ ডাকে ২ জন ছিটকে গেলো দুই দিকে।
এই ভাবেই আরো বছর দুই কেটে গেলো , দীপ কলেজ পাশ করলো। দীপ নিজেও বললো আর বাড়ি থেকেও সবাই এবার কলকাতা গিয়ে বাকি পড়াশুনা শেষ করতে হবে। সেদিন দীপের পাশ করার খুশিতে রিয়ার বাবা ওদের সকলকে নিজে গিয়ে নিমন্ত্রণ জানিয়ে এলেন। রাতে দীপ তার বাবা মা সকলে মিলে গেলো রিয়ার বাড়িতে। কিরে তোর মনে আছে তো ? আমাকে নিয়েই কিন্তু জাবি তুই একা যাবি না কলকাতা। পিছন থেকে দীপকে জড়িয়ে ধরে বললো আমি কিন্তু একা কোথাও ছাড়ছি না। রিয়ার হাত দুটো ধরে চুম্বন করে দীপ বললো ছাড়তে হবে না মা আমার, আমি আমার বৌকে নিয়ে তবেই যাবো।
খেতে বসে দীপ রিয়ার বাবাকে বললো কাকু একটা কথা বলবো যদি আপনি কিছু মনে না করেন ?
না না বাবা মনে কেনো করবো ? বোলো তুমি নিশ্চিন্ত হোয়ে।
বলছি কাকু আমি তো কলকাতায় যাচ্ছি রিয়াও আমার সাথে গেলে কেমন হয় ? এখন তো আমিও ওখানে থাকবো রিয়াকে একা থাকতে হবে না আর আপনাদের ও চিন্তা করতে হবে না , ও একটা লেডিজ হোস্টেলে থাকবে আর আমি তো থাকবোই দেখাশোনার জন্য একসাথে একই ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিয়ে নেবো কোনো অসুবিধাই হবে না। আসলে ও তো চায় আরো পড়তে তাই বললাম।
ওখানে উপস্থিত সবাই একটু চুপ করে রইলো । তারপর রিয়ার বাবা বললেন সবটাই ঠিক কিন্তু মেয়েকে বাইরে পড়তে পাঠাবো এমন তো আগে ভাবিনি আমি একটু চিন্তা করি বুজলে বাবা। বিবাহ যোগ্য মেয়ে। এবার রিয়া পাশ থেকে বলে উঠলো বিবাহ যোগ্য মানে কি বাবা ? আমি এখন বিয়ে টিয়ে করছি না , তুমি আমাকে পড়তে দাও আর নাই দাও।
আহা আমি কি পড়তে দেব না বললাম কিন্তু হ্যাঁ আমাকে ভাবতে সময় দিতে হবে , তুমি এখন বোরো হয়েছো মা। হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত এভাবে নেওয়া ঠিক না।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওরা সমর্থ হয় রিয়ার বাবা মা কে বোঝাতে। একই ইউনিভার্সিটিতে আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে ওরা এডমিশন নেয়। রিয়ার থাকার জন্য একটা লেডিজ হোস্টেল নেওয়া হয় আর দীপ একটা সিঙ্গেল রুম ফ্ল্যাট ভাড়ায় নেয় , ফ্ল্যাট টা একজন বয়স্ক ভদ্রলোকের !!! স্বামী স্ত্রী কোনো সন্তান নেই। রিয়ার হোস্টেল টা দীপের ফ্ল্যাট থেকে বেশি দূরে না বাড়ি থেকে সেই ভাবেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন দীপ চলে গেলো রিয়ার হোস্টেলে যেখানে ওর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে , যাবার আগে একটা ফোন করে দিলো রিয়াকে। রিয়াও সময় মতো তৈরী হয়ে নিচে এসে দাঁড়ালো তারপর দুজন একসাথে রওনা দিলো ইউনিভার্সিটির দিকে। সেখানে পৌঁছতেই ওদের মতো অনেক নতুন স্টুডেন্টদের সাথে আলাপ হলো। কিন্তু রিয়া আর দীপের সাবজেক্ট যেহেতু আলাদা তাই ওদের ক্লাসের সময় ও ছিল আলাদা । দীপের ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ায় ও রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আর ঠিক সেই সময় হঠাৎ একটি মেয়ে এসে দীপের সাথে আলাপ করে।
হাই, আমি পর্ণা তোমার ক্লাসমেট তাই নিজেই চলে এলাম আলাপ করতে !!! খুব ভালো করেছো, আমি দীপ। ভালো লাগলো তোমার সাথে কথা বলে। আমাদের তো অনেক্ষন ক্লাস শেষ তুমি এখানে কার জন্য অপেক্ষা করছো ? চলো বরং এগিয়ে যাই কথা বলতে বলতে।
না পর্ণা আসলে আমি আমার এক বান্ধবীর জন্য অপেক্ষা করছি ওর ক্লাস এখনো শেষ হয়নি ও এলে একসাথে ফিরবো। ও গার্লফ্রেন্ড বুঝি ? না না তেমন কিছু না কিন্তু হ্যাঁ ছোটবেলার বন্ধু। আসলে আমরা কলকাতার লোক নই। বাইরে থেকে এসেছি আর ওর মা বাবা আমার ভরসা করেই ওকে কলকাতা পাঠাতে রাজি হয়েছে , ও এখানকার কিছুই ঠিক মতো চেনেনা আর সেই জন্যই ওর হলে আমরা একসাথে ফিরবো। এসব কথা হতে হতেই সেখানে রিয়া চলে এলো ওর ক্লাস ও শেষ।
ও ডাক দিল দীপ আমার হয়ে গেছে চল , খুব খিদে পেয়েছে একসাথে কিছু খেয়ে তারপর ফিরবো। রিয়া ও পর্ণা আমার ব্যাচমেট ও যাবে বলছিলো তুই আসবি বলে ওকে দাঁড় করিয়ে রেখেছি তাহলে একসাথেই যাই ? রিয়ার ব্যাপারটা ভালো না লাগলেও ও আপত্তি করে না। খাবারের দোকানে দাঁড়িয়ে রিয়া কিছু বলতে যাবে এমন সময় পর্ণা জানতে চাইলো দীপ কি খাবে তুমি ? দীপ বললো আমার সব কিছুই চলে কোনো অসুবিধা নেই। পর্ণা নিজের মতো করে তিন প্লেট খাবার অর্ডার করে দেয় যেটা রিয়ার একদম ভালো লাগে না । তাই ও একটু মুখে দিয়েই বলে আমি আর খাবো না , আমার পেট ভোরে গেছে। রিয়ার যেন মনে হয়ে থাকলো মেয়েটি দীপের একটু বেশিই ক্লোজ হবার চেষ্টা করছে তাই মেয়েটিকে ওর একদম ভালো লাগে না।
খাওয়া শেষ হলে রিয়া দীপকে বলে তাহলে এবার আমরা এগোই হোস্টেলে ঢুকে বাড়িতে ফোন করতে হবে বাবা মা চিন্তায় আছে। দীপ রিয়ার মনের ভাব বুঝতে পেরে কথা না বাড়িয়ে পর্ণাকে বলে এবার আমরা এগোই কাল ক্লাসে দেখা হবে।
বাকি রাস্তা রিয়া একটা কথাও বলেনি দীপের সাথে। হোস্টেলে ঢোকার সময় দীপ বলে এখন হোস্টেলে ঢুকে কি করবি ? আমার সাথে ফ্ল্যাটে চল আমি তোকে পৌঁছে দিয়ে যাবো আবার !!! রিয়া উত্তরে বলে : না আমার খুব ক্লান্ত লাগছে আমি একটু রেস্ট নিয়ে পড়তে বসবো। বলে রিয়া হোস্টেলের ভিতরে ঢুকে যায়। দীপ আর কিছু বলার সুযোগ না পেয়ে নিজের ফ্ল্যাটের দিকে রওনা দেয়।
দীপ জানে রিয়া যখন খুব রেগে যায় তখন চিৎকার করে ঝগড়া করার বদলে একদম চুপ করে যায়। দীপ বুঝতে পেরেছে পর্ণার ব্যবহার ওর একদম ভালো লাগেনি , কিন্তু ওই বা কি করবে কেও যদি নিজে এসে আলাপ করে তাহলে কথা না বলে কি করতো? এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যে গড়িয়ে গেলো। দ্বিধা কাটিয়ে ও রিয়াকে ফোন করে জানতে চাইলো শরীর কেমন আছে ? রাতে কখন খাবে , কি খাবে ? কোনো কথার উত্তরই রিয়া ঠিকমতো দিচ্ছে না দেখে দীপ বললো : দেখ রিয়া তুই শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝিস, কেউ আমার সাথে নিজে থেকে কথা বলতে এলে আমি তাকে কি বলতাম ? আমি নিজে যেচে তো কারো কাছে যায়নি তাহলে তুই কেনো এমন করছিস ?
রিয়া খুব শান্ত আর গম্ভীর হয়ে দীপকে বললো ওতো কিছু আমি বুঝি না। শুধু তোকে একটা কথাই বলে রাখতে চায় আমি এই মেয়েগুলোর মতো এত স্মার্ট নই আর আধুনিক ও না। আর না আমি তা হতে চায়। তুইও যেভাবে ওর সাথে কথা বলছিলি সেটা আমার ভালো লাগেনি এই দীপকে আমি চিনি না আমার অচেনা লেগেছে এই দীপকে। কথাটা বলে রিয়া ফোন খেতে দিল।
সারারাত বেশ অস্বস্তিতে কাটে দীপের ও জানে আজ আর রিয়া কিছু খাবে না , ও যে নিজে যাবে তারও কোনো উপায় নেই কারণ লেডিজ হোস্টেলে ও ঢুকতে পারবে না। রিয়ার জন্য চিন্তায় রাতে ভালো ঘুম নয় না দীপের, সকালের দিকে চোখ লেগে যাওয়ায় রিয়ার ফোন ও টের পায়নি। ঘুম ভেঙ্গে ও রিয়ার মিসড কল পেয়ে ফোন করে কিন্তু রিয়া ফোনটা ধরেনি। উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে যায় হোস্টেল কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারে রিয়া হোস্টেলে নেই। চিন্তায় আরো অস্থির হয়ে পরে দীপ। ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে খোঁজ করে রিয়ার !!! ক্লাসের পর শেষমেষ দেখা হয় রিয়ার সাথে।
রিয়া, রিয়া প্লীজ একবার শোন তুই যেভাবে ভাবছিস তেমন কিছু না তুই ভুল ভাবছিস !!! তুই কথা না বললে জানিস তো আমি ভালো থাকি না। সারারাত ঘুমোতে পারিনি সকালে চোখ লেগে যাওয়ায় তোর ফোন টের পায়নি । তুই জানিস পাগলের মতো ছুটে গেছি তোর হোস্টেলে সেখানেও তুই নেই !!! এখানে এসেও নিজের ক্লাস করতে পারিনি কেনো এমন করছিস তুই ? প্লীজ সোনা একটু বোঝ আমি কি এমন করলাম —- কথাটা শেষ হতে না হতেই সেখানে পর্ণা এসে উপস্থিত : একই দীপ তুমি এলে অথচ ক্লাস করলে না ? এভাবে শুরু থেকে ক্লাস মিস করলে তো তুমি পিছিয়ে পরবে। রিয়া তুমি ওকে যেতে দাওনি না ক্লাসে ? রিয়া পর্ণার দিকে তাকিয়ে দীপকে বললো : তোরা কথা বল আমি আসি , আর হ্যাঁ পর্ণা তোমার যা জানবার আছে তুমি দীপের থেকে জেনে নাও।
রিয়া সেখান থেকে চলে যায় দীপ পর্ণার কোনো কথাটা উত্তর না দিয়ে রিয়ার পিছনে দৌড়ে যায়। রিয়া দাঁড়া, দাঁড়া বলিছ আর এক পাও যদি এগোস তাহলে কিন্তু !!!! রিয়া দাঁড়িয়ে পড়ে পিছন থেকে ওর হাত ধরে দীপ কিছু বলতে যাবে তার আগেই !!!! ইটা তুই কি করছিস তোর শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে । তুই চল আমার সাথে। বলে রিয়ার হাত ধরে রাস্তায় এসে একটা ট্যাক্সি কিলো , নে ওঠ। আমি একা চলে যেতে পারবো বললো রিয়া।
আর একটা কথাও না যা বলছি তাই কর । রিয়া ও কথা না বাড়িয়ে ট্যাক্সি তে উঠে বসলো। দীপ এক বন্ধুকে ফোন করে ডাক্তারের খোঁজ নিলো সেখানে রিয়াকে দেখানোর পর ফেরার সময় রিয়ার জ্বরটা যেন বাড়লো। রিয়া যেন ক্রমশ মুছড়ে পড়তে লাগলো বুঝতে পেরে দীপ ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো !!! খুব কষ্ট হচ্ছে ? ওরে পাগলী তুই কবে বুঝবি আমি তুই ছাড়া কিছু বুঝি না বুঝতে চাই না। একটা মেয়ে জেক আমরা কেউ ঠিক মতো চিনি না জানি না তার জন্য নিজের এই অবস্থা করলি ? এতদিনেও কি আমাকে এইটুকু ভরসা করা যায় না ?
রিয়ার মুখে কোনো কথা নেই শুধু চোখ থেকে অনর্গল জল পড়ছে। দীপ চোখের জল মিশিয়ে দিয়ে বললো : আমার পাগলী বৌয়ের চোখে জল আমার একদম ভালো লাগে না। আমি তোকে হোস্টেলে নামিয়ে ওষুধ আনতে যাবো তার মধ্যে একটু কষ্ট করে নিজের জিনিস গুছিয়ে নিয়ে রেডি হয়ে থাকবি , আমি এসে ফোন করলে নেমে আসবি। যতক্ষণ না সুস্থ হচ্ছিস ততক্ষন তুই আমার সাথেই থাকবি।
রিয়া বললো : তোর সাথে এক ফ্ল্যাটে ? বাড়ি থেকে ফোন করলে কি বলবো ? দীপ রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো : আমার সাথে প্রেম করার সময় যা বলেছিলি সেটাই বলবি । আমি তোকে এই অবস্থায় একা ছাড়বো না। রিয়া আরো আঁকড়ে ধরলো দীপকে। ওরা এসে নামলো হোস্টেলের সামনে , তারপর যেভাবে দীপ বললো সেভাবেই কাজ হলো।
দীপ জানে ও রিয়াকে একা ফ্ল্যাটে রেখেও বেরোতে পারবে না তাই রাতের খাবার ও একসাথে নিয়ে নিল। তারপর রিয়াকে নিয়ে গেলো নিজের ফ্ল্যাটে।
রিয়াকে খাইয়ে দিল নিজের হাতে, খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে বিছানা ঠিক করে বললো নে এবার শুয়ে পড়। আমি শুয়ে পড়বো কিন্তু তুই ?
আমি ? হুম , তা আমি আমার সোনা বউটার পাশে শুয়ে পড়বো। কেনো দিবি না শুতে ? লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো রিয়া । থাকে আর লজ্জা পেতে হবে না আমি মাথায় বুলিয়ে দি তুই ঘুমিয়ে পড়। জ্বরটা ও বেড়েছে তোর। আর একটা ও কথা না চোখটা বুঝে ফেলো আমার সোনা মা। সারারাত দীপ রিয়ার মাথার কাছে জেগে বসে রইলো। ভোরের দিকে দীপের ও চোখটা লেগে এলো।
সকালে রিয়া ঘুম ভেঙে দেখলো ওর ঘুমিয়ে রয়েছে। ঘুমন্ত দীপকে দেখে খুব মায়া হয় রিয়ার !!! ও আলতো করে দীপের কপালে একটা চুমু খেলো। তারপর বিছানা থেকে নামতে যাবে এমন সময় দীপ ওর হাত ধরে টেনে নিল নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । কেমন আছে আমার বউটা? অনেকদিন বাদে এমন করে কাছে পেলাম আজকে আর ছাড়ছি না।
খুব দুষ্টু তুই ঘুমানোর ভান করে শুয়েছিলি। ছাড় আমাকে !!! সত্যি ছেড়ে দেবো? রিয়া এবার জড়িয়ে ধরলো দীপকে। রিয়াকে বিছানায় শুয়ে ওর সারা শরীরে চুম্বন করতে থাকে দীপ। দুটো ঠোঁট মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় । রিয়ার শরীর থেকে একটা একটা করে পোশাক খুলে নেয় দীপ। শরীরী খেলায় মেতে ওঠে দুজন। কারোরই আজ আর কোনো সংযম নেয় নিজের মধ্যে, একে অপরের ভালোবাসায় মাতাল হয়ে ওঠে দীপ আর রিয়া।
এরপর দুই তিন দিন রিয়া দীপ কেউই ইউনিভার্সিটি যায়নি। একে অপরে মেতে ছিল ওরা। এই কয়েকদিনে অনেকবার মিলিত হয়েছে ওরা। রিয়া একটু সুস্থ হলে ওরা ঠিক করে আবার ইউনিভার্সিটি জয়েন করবে বলে।
বিকেলের চা হাতে করে নিয়ে এসে দীপকে ডাকে। দীপ এই দীপ ওঠ এবার অনেক ঘুমিয়েছিস । দীপ চোখ খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রিয়ার দিকে। বিকেলের পরন্ত আলোয় কি অদ্ভুত মোহময়ী লাগছে ওকে।
রিয়া আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বলে কিরে, অমন বোকার মতো তাকিয়ে কি দেখছিস !!! আগে দেখিসনি ?
রিয়ার কোলের উপর মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে দীপ !!! না। যতো দেখছি দেখার ইচ্ছেটা বেড়ে যাচ্ছে। একটা কথা বলবো রিয়া? রাখবি?
রিয়া উত্তর দেয় তোর কোনো কথা আমি রাখিনি এমন কোনো কথা আছে? বল কি বলবি?
তুই যাস না হোস্টেলে, এই ফাঁকা ফ্ল্যাটে তোকে ছেড়ে ভালো লাগবে না আমার। আমি আর এক মুহূর্ত পারছি না তোকে ছেড়ে থাকতে।
কিন্তু দীপ বাড়িতে বললে ইটা কি মানবে? উফ আমার এই বোকা বউটাকে নিয়ে কি যে করি আমি ? কাউকে কিছু বলতে হবে না এখন, সময়মতো সবাই সব কিছু জানতে পারবে। দীপের কথা মতো রিয়া নিজের সব জিনিস নিয়ে চলে আসে দীপের ফ্ল্যাটে।
পরেরদিন দুজন একসাথে ইউনিভার্সিটি যাবে। দীপ তার আগে রিয়াকে জানিয়ে রাখে , রিয়া ক্লাসের পড় যে আগে আসবো সোজা বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে ওয়েট করবো।
দীপ, প্লীজ তুই একটু ওই পর্ণা মেয়েটাকে এড়িয়ে চলিস । আমার একদম ভালো লাগে না মেয়েটাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় ওর জন্য আমরা দূরে সরে যাবো। দীপ ভয়ে আমার বুক কেঁপে ওঠে। তুই আমার থেকে একটু ও সরে যাস কোনোদিন আমি পারবো না সেটা নিতে শেষ হয়ে যাবো আমি।
একটা সামান্য ব্যাপারকে কেনো এত বড় করে দেখছিস রিয়া ? আচ্ছা ঠিক আছে তোর ওকে ভালো লাগে না তুই আমাকে তো বিশ্বাস করিস? তাহলে আর এসব নিয়ে ভাবিস না। তোকে এমন অস্থির দেখতে আমার ভালো লাগে না।
পরেরদিন দুজন একসাথে তৈরী হয়ে ইউনিভার্সিটি যায়। কিরে রিয়া এই কয়েকদিন এলি না কেনো? জানতে চাই প্রতীকী। (প্রতীকী হল রিয়ার ব্যাচমেট)। রিয়া জানায় ওর শরীর ভালো ছিল না তাই ও আসতে পারেনি। প্রতীকী আর রিয়া খুব অল্প দিনেই ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। ক্লাসের পর ওরা ইউনিভার্সিটির সামনে একটা চায়ের দোকানে এসে দাঁড়ায়।
আচ্ছা রিয়া তোকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, যদি কিছু মনে না করিস? তুই কি যে বলিস প্রতীকী? আমার সাথে এতদিন মিশে তোর শেষে আমাকে এরকম মনে হলো? অরে ধুর তা নয়!!!! প্রশ্নটা একটু ব্যক্তিগত তাই জন্য। বল না কি জানতে চাস? বললো রিয়া। দীপ তোর কেমন বন্ধু রিয়া? রিয়া একটু অবাক হয়ে প্রতীকীর দিকে তাকায়, এমন কথা জানতে চাইছিস কেনো? দীপ আমার খুব ছোটবেলার বন্ধু, আমরা একসাথে এক পাড়ায় এক স্কুলে এক বাড়িতে বড় হয়েছি বললেও ভুল হবে না দীপ আমার তেমন বন্ধু। আমি বা দীপ আজ পর্যন্ত এমন কিছু করিনি যা একে অপরেরটা জানি না। একে অপরের নিঃস্বাসটাও আমাদের চেনা !!!! দীপ আমার তেমন বন্ধু । ওকে ছেড়ে কিছু ভাবতে পারি না আমি।
প্রতীকী রিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে আর কথা একটা জানতে চাইবো? তুই যে ভাবে দীপকে ভাবিস তোকে ও কি দীপ সেই ভাবেই ভাবে ? যদি ভাবে রিয়া ওকে পর্ণার থেকে সরা। আমি যতদূর শুনেছি ও এই ইউনিভার্সিটিতে আমাদের মতো নিউ কামার নয়। বড়লোক বাবার বখে যাওয়া মেয়ে ও। তোরা একসাথে আসছিস না দেখে ও অনেক খোঁজ খবর করছিল। ও কিন্তু এই কয়েকদিনে দীপের খোঁজ করেনি এমন দিন ছিল না। ওর থেকে দীপকে একটু সরিয়ে রাখিস।
রিয়া এই রিয়া !!! হ্যাঁ, স্তম্ভিত ফিরলো প্রতিকীর ডাকে। মেয়েটা যে ভালো না সেটা তো আমি আগেই বুঝেছি কিন্তু দীপকে কি করে সরিয়ে রাখবো বুঝতে পারছি না।
——- তুই এত চিন্তা করিস না। আমি জাস্ট তোকে জানিয়ে রাখলাম। দীপ তো তোকে ভালোবাসে তাহলে আবার কি। নে চল এবার নাহলে পরের ক্লাসটা মিস করবো।
ক্লাস শেষ করে রিয়া তাড়াতাড়ি করে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসে। আজ ও দীপের ক্লাস আগেই শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু রিয়া সেখানে পৌঁছে দেখে দীপ তখন আসেনি। ওর ক্লাস শেষ হয়নি দেখে রিয়া ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু প্রায় আধা ঘন্টা বাদে ও দীপ আসছে না দেখেও ইউনিভার্সিটির ভিতরে গিয়ে খোঁজ করে জানতে পারে দীপ ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে আছে। রিয়া সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই দীপ বলে : রিয়া আয় বস এখানে, দারুন মজার আড্ডা ছেড়ে যেতেই ইচ্ছে করছে না। পর্ণা দীপের হাতটা মুঠো করে ধরে বললো : তুমি না থাকলে কিছুই জমে না। এই কয়েকদিন আসোনি মনে হচ্ছিল ইউনিভার্সিটিতে কোনো প্রাণ নেই।
তুই আড্ডা দিবি খুব ভালো কথা সেটাতো আমাকে একবার জানিয়ে দিলেই হতো। শুধু শুধু এতক্ষন আমি অপেক্ষা করে থাকতাম না। বলে সেখান থেকে চলে যায় রিয়া। দীপ একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও পরে ব্যাপারটা ম্যানেজ করে নেয়। সেদিন দীপ বেশ অনেকটা রাত করে আসে। রিয়া নিজের পড়া নিয়ে ব্যস্ত এমন সময় দরজার বেলের শব্দে উঠে গিয়ে দরজা খোলে , আবার নিজের পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রিয়া, তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
আমার সাথে এখনও তোর কথা থাকে? ভালো লাগলো জেনে। বল কি কথা !!! তুই তখন ওই ভাবে ওখান থেকে চলে কোনো এলি? কি মনে করলো সবাই? আমি কি তোর কেনা গোলাম, যে যা তুই বলবি যা তোর ভালোলাগবে সেটাই আমাকে করতে হবে?
তুই ফ্রেশ হতে যা দীপ, তোর মাথায় ঠিক নেই। তুই যেমন আমার গোলাম নোস্ ঠিক তেমনি আমিও তোর বাদী নই। তাই যাকে আমার পছন্দ না তার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো তামাশা আমি পারবো না করতে। আমাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে পর্ণার হাতে হাত রেখে তামাশা করছিস, আবার আমাকেই প্রশ্ন করছিস? লজ্জা বলে বস্তুটাই ত্যাগ করে দিয়েছিস দেখছি।
শোন রিয়া সীমা ছাড়াস না। তোর অনেক বাইনাক্কা সহ্য করেছি সবসময় সেগুলো ভালো লাগে না। আমি কার সাথে কথা বলবো কার হাত ধরবো সবকিছু কি তুই ঠিক করে দিবি? ওই ভাবে চলে এলি তাতে আমার ইনসাল্ট হলো না।
তুই যে পর্ণার গায়ে ঢলে পড়ছিলি, সেটা আমাকে ইনসাল্ট করা নয়? রিয়া মুখ সামলে আমি কারো গায়ে ঢলে পারিনি কেউ যদি নিজে সেটা করে দায় আমার না !!!! তুই বাঁধা দিয়েছিলি পর্ণাকে? তুই কাকে চাস আগে সেটা ঠিক কর দীপ। ও ভালো কথা আমার শরীর এখন ভালোই আছে, আমি হোস্টেলে ফায়ার যাচ্ছি। বোধ করি তোর জীবনে আমার প্রয়োজন আসতে আসতে ফুরিয়ে আসছে। দীপ ও সেদিন রিয়াকে আটকানোর চেষ্টা করলো না।
এরপর ওরা ইউনিভার্সিটিতে যেত কিন্তু আলাদা আলাদা। পর্ণা রোজ অপেক্ষা করে থাকতো কিন্তু দীপ যখন আস্ত নাও একাই ফায়ার আস্ত হোস্টেলে। আজকাল ওদের ফোনে ও কথা কম হয়। প্রতিকীর থেকে জানতে পারে আজকাল দীপ আর পর্ণাকে নিয়ে অনেক অনেক কিছু বলছে ইউনিভার্সিটিতে। ওদের বেশিরভাগ সময় ইউনিভার্সিটির ভিতরে একসাথে দেখা যায়। রিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।
এরপর বেশ কিছুদিন একসাথে ছুটি থাকায় রিয়া বাড়ি চলে যায়। ছুটির দিনে একা ঘরে ভালো লাগছে না দেখে ও রিয়াকে ফোন করে দীপ, কিন্তু ফোন ধরে রিয়ার মা !!!!! কিমা আপনি? আপনি কবে এলেন কলকাতায়?
রিয়ার মা অবাক হয়ে বলে আমি কেনো কলকাতায় যাবো দীপ? রিয়া তো বাড়ি এসেছে। কেনো তুমি যেন না যে রিয়া বাড়ি এসেছে? রিয়া যে বলবো তুমিই ওকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছ।
রিয়ার মার্ কথায় দীপ কি উত্তর দেবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। না, মানে কাকিমা আপনি একবার রিয়াকে দিন না ফোনটা।
ফোন আমি রিয়াকে দেবো কিন্তু তার তুমি আমার কথার উত্তর দাও !!! এসে থেকে আমি রিয়াকে ও দেখছি কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে আছে, করো সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলছে না। এসব বলতে বলতে রিয়া ঘরে ঢুকে বুঝতে পারে মা দীপের সাথে কথা বলছে।
ওহ মা কি যে করো না তখন থেকে বলছি আমার খিদে পেয়েছ তুমি তা না করে দাও তো আমাকে দাও দেখি গাধাটা কি বলছে। আজকাল কি যে হয়েছে ওর। বলে ওর মার্ হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয় রিয়া । হ্যালো : হ্যাঁ বল কথা বলার ভান করে রিয়া ওই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
হ্যালো : বল ফোন কেনো করলি?
ফোনের ওপাস থেকে দীপ বললো : ফোন কেনো করলি মানেটা কি? তুই কিছু না জানিয়ে না বলে বাড়ি চলে গেলি, একবার জানানোর দরকার মনে করিসনি তুই? আবার বাড়ি গিয়ে বললি আমি তোকে ট্রেনে তুলে দিয়েছি, আমি তো বুঝতেই পারছিলাম না কি বলবো? কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তোর কোনো সেন্স নেয়। কোনো একটা বিপদ হলে তো সবাই আমাকেই জিজ্ঞাসা করতো । কি উত্তর দিতাম আমি? কি রে কিছু বলছিস না যে? উত্তর দে কথা গুলোর।
রিয়া খুব ধীর ভাবে উত্তর দিল আসলে বুঝতে পারছিনা দীপ তোর কোন কথাটার উত্তর দেবো। আমি তোকে কেনো জানিয়ে এলাম না? নাকি আমার কোনো বিপদ হলে তুই কাকে কি বলতি? তুই আসলে কনসার্ন কোনটা নিয়ে? আমাকে নিয়ে নাকি নিজেকে নিয়ে?
ওপাস থেকে দীপ খুব উত্তেজিত হয়ে উত্তর দিল, কথার মারপ্যাঁচ খাটাস না রিয়া। আমি সবকিছুর উত্তর তোর কাছে চাই। পুরোটাই আমার কনসার্ন।
না দীপ পুরোটা তোর কনসার্ন হতেই পারে না। ইউনিভার্সিটি বন্ধ হবার আগের দিন পর্যন্ত আমি রোজ তোর জন্য অপেক্ষা করেছি তোরই বলা জায়গায় !!! প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থেকে একা ফিরেছি, আসিসনি তুই। একটা ফোন পর্যন্ত করিসনি। রোজ ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে শুনেছি তোকে আর পর্ণাকে নিয়ে নানান কথা । আমি তোকে বলেছিলাম দীপ আমাদের মাঝখানে আমি কোনোদিন কাওকে মেনে নিয়ে পারবো না। এখন আমি রাখি ফোনটা। এরপর না জানি মার্ কি কি প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হবে । আমার কিছু মাথায় আসছে না। বলে রিয়া ফোনটা কেটে দেয়।
ফোনে রেখে রিয়া পিছন ফিরতেই দেখে মা দাঁড়িয়ে আছে। ও মা !!! মা চলো চলো খুব খিদে পেয়ে গেছে, বলে রিয়া পা বাড়াতেই রিয়ার হাতটা টেনে ধরে ওর মা। দাঁড়া রিয়া !!!! আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তোর কোথাও যাওয়া হবে না।
কিসের প্রশ্ন মা? আজকাল দীপ ওর পড়াশুনা নিয়ে এতো ব্যাস্ত থাকে যে ওর কিছুই মনে থাকে না। তুমি এখন ওকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করো দেখবে ও বলবে ওই আমাকে ট্রেনে তুলে দিয়েছে। নাও চলো এবার খেতে দাও।
রিয়ার মা রিয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে । রিয়া !!! পর্ণা কে? আর তুই দীপকে একথাই বা কেন বললি যে তোদের মাজখানে তুই অন্য কাউকে মানতে পারবো না? তোদের মধ্যে কি এমন কি সম্পর্ক আছে যে তুই একথা বললি?
মা প্লিজ চলো না। কেন এসব প্রশ্ন তুমি করছো? আমি কোনো পর্ণাকে চিনি না।
রিয়ার মা জানতে চায়, আর তোদের সম্পর্ক সেটা? সেটাও কি জানিস না?
মা, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রিয়া ।
তুই ভুলে যাস না রিয়া, আমি তোর মা। এসে থেকে তোর ঢুকরে কান্না, তোর চুপ হয়ে যাওয়া তোর অন্যমনস্ক হয়ে থাকা কিছুই আমার চোখ এড়ায়নি। আমি প্রথমদিন আপত্তি করেছিলাম তোর কলকাতা যাওয়া নিয়ে। কারণ আমি আন্দাজ করেছিলাম তোদের সম্পর্ক। কিন্তু আমি তোর বাবাকে কথা শোনাতে না পেরে বাধ্য হয়ে তোর কলকাতা যাওয়াকে মেনেনি। কিন্তু কোনোদিন মন থেকে এটাকে মেনে নিতে পারিনি। তোদের এই সম্পর্ক কেউ কোনোদিন মেনে নেবে না। মাঝখান থেকে দুটো পরিবারের ভালো সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে। আর তাই তোমার আর কলকাতা যাওয়া চলবে না। আমি ভালো পাত্রের খোঁজ করে তোমার বিয়ে দেবো। তুমি ভুলে যায় দীপকে।
না মা না এমন করে বলো না। আমি দীপকে আমার এই জন্মে কোনোদিন ভুলতে পারবো না। সেই কোনো ছোটবেলা থেকে আমি ওকে নিজের জেনে এসেছি !!! কোনোদিন ওর বাইরে গিয়ে কিছু ভাবিনি। আমি কি করে ওকে ভুলে যাবো ?তুমিই বলো না মা? বলে কান্নায় ভেঙে পরে রিয়া।
রিয়াকে স্বস্নেহে জড়িয়ে ধরে ওর মা বলে: তুই কেন বুঝতে পারছি না মা, তোর বাবা এই সম্পর্ক মানবেন না। আর দীপের বাবা মা, ওনার ও কি মানবেন তোকে?
বাবাকে আমি বুঝিয়ে বলবো বাবা আমার কথা ফেলতে পারবে না। আর আমি দীপের মা বাবার পায়ে ধরবো দরকার পড়লে কিন্তু ওকে ছেড়ে আমি পারবো না মা। তুমি একটু আমাকে বোঝ মা। আমি কালকেই যাবো কলকাতা সব বুঝিয়ে বলবো দীপকে। তুমি একবার আমাকে যেতে দাও।
মেয়ের কান্না আর জেদের কাছে হার মেনে নেয় রিয়ার মা।
পরের দিন সকাল সকাল কলকাতা রওনা দেয় রিয়া। ইউনিভার্সিটি ছুটি তাই ঠিক করে হোস্টেলে না গিয়ে ও সোজা দীপের ফ্ল্যাটেই চলে যাবে। সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেবে দীপের সাথে। অনেক আদর ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে তার দীপকে। মাত্র কটা দিন সে দীপকে দেখেনি কিন্তু মনে হচ্ছে যেন জন্ম জন্মান্তর ধরে সে তার দীপকে দেখেনি। চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে সে ছুতে যাই দীপের ফ্ল্যাটে।
ফ্ল্যাটে উঠে বেল দিতে যাবে এমন সময় সে দেখে ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দুই চোখে স্বপ্ন নিয়ে দীপকে চমকে দেবে বলে সে ঘরের ভিতরে ছুতে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে যা দেখে তার জন্য হয়তো সে কোনো ভাবেই তৈরী ছিল না। মাথায় আকাশ ভেঙে পরে রিয়ার। পর্ণা সেদিন দীপের ফ্ল্যাটে এসেছিল। পর্ণাকে আর দীপকে সে অন্তরঙ্গ ভাবে দেখতে পায়। পরনে দীপকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চিৎকার করে ওঠে রিয়া !!!! দীপ। ইটা তুই কি করলি দীপ, ইটা তুই কি করলি? আমার বিশ্বাস ভালোবাসা ভরসা সব কিছুকে এভাবে দুপায়ে মাড়িয়ে গেলি? আমি যে অনেক বড়ো মুখ করে বলে এলাম রে আমাদের সম্পর্কের কথা। কথাগুলো বলতে বলতে রিয়া জ্ঞান হারালো। দীপ প্রথমটা কিছু বলে ওঠার পরিস্থিতিতে ছিল না , ততক্ষনে যে তার সম্ভিত ফিরে পেলো ততক্ষনে রিয়া তার জ্ঞান হারিয়েছে।
সে ছুতে গিয়ে রিয়াকে পাঁজা কোলে করে তার খাতে সোয়ায়। চোখে মুখে জলের চিতা দিয়ে তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে।
ওদিকে পর্ণা দীপকে বলে রিয়ার জ্ঞান ফিরলে তাঁকে হোস্টেলে ছেড়ে আসতে।
তুমি এখনই চলে যায় পর্ণা এখান থেকে। তোমার জন্য একটু একটু করে আমি রিয়াকে হারিয়ে ফেলছি। ঠিক বলেছিল ও একদিন তোমার জন্য আমরা দূরে সরে যাবো। চলে যায় তুমি। আমি ওকে বোঝাতেই পারলাম না ওর দীপ আজ মনে প্রাণে শুধু ওর। কত খারাপ ব্যবহার করেছি আমি ওর সাথে। আমি বলতে পারলাম না ও যা দেখলো আর ও যা বুঝলো তার মধ্যে অনেক ফারাক। ও বুঝলো না তুমি আমাকে জড়িয়ে ছিলে আমি না। চলে যায় তুমি এখুনি এখান থেকে।
রিয়া এই রিয়া একবার চোখ খোল দেখ আমি দীপ। তোর দীপ রিয়া। বেশ কিছুক্ষন হয়ে গেলেও যখন রিয়া চোখ খুললো না ভয় পেয়ে যায় দীপ। এক বন্ধুকে ফোন করে তার সহযোগিতায় একটা ডাক্তারের ব্যবস্থা করে। ডাক্তার রিয়াকে পরীক্ষা করে জানায় তার নার্ভের অবস্থা খুবই ক্ষীণ তাঁকে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসে দীপের। রিয়াকে হসপিটালে ভর্তি করে সে তার বাড়িতে ফোন করে রিয়ার অসুস্থতার কথা জানালে দীপ রিয়া দুজনের বাড়ির লোকই ছুটে আসে পরেরদিন।
পাক্কা তিনদিন বাদে রিয়ার জ্ঞান ফেরে । চোখ খোলার পর নার্স খবর দিলে সবাই গিয়ে দাঁড়ায় রিয়ার বেড এর কাছে । কিন্তু সে কাউকে চিনতে পারে না। এক অদ্ভুত চাহনীতে সবার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর বির বির করে বলতে থাকে !!!! দীপ আসবে ঠিক আসবে। ও আমাকে এক ছেড়ে দিতে পারবে না ও আসবে ঠিক আসবে।
দীপ ছুটে যায় রিয়ার সামনে !!! দেখ রিয়া এই তো দীপ তোর দীপ এসেছে তোর কাছে। আমাকে ক্ষমা করে দে। আর কোনোদিন তোকে কষ্ট দেবো না। রিয়া তুই শুনতে পাচ্ছিস। কিন্তু রিয়া দীপের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকলো যেন সে কোনোদিন দীপকে দেখেইনি দীপকে।
ডাক্তারবাবু রিয়ার বাবার কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বলেন রিয়া তার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। কোনো গভীর ক্ষত তার মনে এমনভাবে দাগ কেটেছে যে সেটা সে সামাল দিতে পারেনি আর তারই পরিণতিতে সে তার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। রিয়াকে যেন বাড়ি নিয়ে গিয়ে কোনো ভালো মানসিক ডাক্তার দেখানো হয়। সবকিছু জানার পর ও রিয়ার মা দীপকে কোনো প্রশ্ন করেনি। শুধু একটা কথাই বলেছিল সেদিন কি হয়েছিল আমি জানি না , জানতেও চায় না । শুধু এই ক্ষতটা যে তোমারই দেওয়া সেটা বুঝতে পারছি। সেদিন আমার মেয়েটা সারা রাত জাগার পর তোমার কাছে ছুটে এসেছিল এই বিশ্বাসে যে দীপ তাঁকে কোনোদিন ঠকাবে না।
আপনি বিশ্বাস করুন আমি ওকে ঠকাইনি । শুধু কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরী হয়েছিল। ও যে আমাকে কোনো সুযোগই দিলো না কিছু বলার। দুই চোখের জলে সামনের দিকটা ঝাপসা দুজনের।
কলকাতা থেকে সবাই ফিরে আসে। দীপ ও সিদ্ধান্ত নেয় সে ও আর কলকাতা ফিরবে না। ডাক্তারের খোঁজ করে চিকিৎসাও শুরু হয়। কিন্তু রিয়ার মানসিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটতে থাকে। সে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার সুইসাইড এর চেষ্টা করে। তাই শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শ মতো তাঁকে মেন্টাল অ্যাসাইলাম -এ দেওয়া হয়। তারপর থেকে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে রিয়া রোজ তার দীপের অপেক্ষা করে।
দীপ রোজ যায় রিয়ার কাছে কিন্তু তার রিয়া তাঁকে চিনতে পারে না।
এভাবে কত শত দীপ রিয়ার ভালোবাসা প্রতিদিন হারিয়ে যায় পর্ণার মতো কিছু মেয়ে আর তাদের করা নিজেদের কিছু ভুলের জন্য।
********লেখার ভুল ত্রুটির জন্য অবশ্যই ক্ষমা প্রার্থনীয়