এই ভুবনের মধুর দিনের পথিক যত,
আস্ ল যারা
হাস্ ল যারা
ক্ষণেক ভাল বাসল যারা,
আজকে তারা সন্ধ্যা তোমার
পাকা সোনার
গলার হারে,
গগন পারে
যে-কথাটি গেল থুয়ে,
কপোল ছুঁয়ে
গেল চলে
যাহা বলে,
হায়রে হায়,
হারিয়ে যায়
সকল কথা আসন্ন ঐ অন্ধকারে !
আর যারা সব
বইল বোঝা, সইল ব্যথা,
মনের কথা কইল না ;
ফুলের তরী বাইল শুধু, ফলের কড়ি চাইল না ;
নীড়েতে পাখ্ পুড়্ল যাদের, আকাশে হায় উড়ল না—
ঘুরল না ;
তাদেরও আজ দিবা শেষে
ভালবেসে,
জড়িয়ে বুকে মুছিয়ে আঁখি
অশ্রু-জলে অধর রাখি,
ডাক্ বে না কেউ হায়রে হায় !
জানি, জানি, সন্ধ্যারাণী, দিনের বানী সব বৃথায় !
ধূলা সে যে ধূলাই শুধু
পরশ-পাথর নাইরে নাই,
মিথ্যা বোঝা, মিথ্যা খোঁজা
বৃথা ওরে সব বোঝা-ই ;
মরমে যে মার খেয়েছে
মিথ্যা যে তার সব ওঝাই !
বুকের ভিতর যা থাকে থাক্,
ঢেকেই তা রাখ্ |
ওষ্ঠে প্রিয়ার ভণ্ডামি নাই, নাই পেয়ালায় বুজরুকি,
পরকালের পুঁথি ফেলে, আয়রে হতাশ, আয় দুখী !
আয় রে আয়
দিন যে যায় !
উপবাসী প্রাণ যে চায়
বিপুল নিদারুণ ক্ষুধায় |
যখের কড়ি আগ্ লে আছিস্ মোক্ষ-আশায় মূর্খ কে ?
অর্ঘ্য দে !
এই দেহ তোর দেবতা শুধু,
দিন দুয়েকের স্বর্গ রে !
অর্ঘ্য দে |
মর-দেহের চেয়ে মূর্খ, মোক্ষ নয় মহার্ঘ রে !
অর্ঘ্য দে |
মৃত্যু শাসায়, শুনতে কি পাস্ ?
দেখতে কি পাস্, শ্মশান পাতা সকল ঠাঁই,
বিশ্বজুড়ে চিরটাকাল কালের হাতের নেই কামাই !
ওরে অন্ধ, ওরে হতাশ !
লুট করে নে যেথায় যা পাস্ ;
আকাশ বাতাস,
প্রেমের প্রকাশ,
নারীর দেহে রূপের বিকাশ,
যেথায় যা পাস্ |
ভিখারী তুই আছিস্ ভুখা,
শিকারী সুখ নেয় লুটে,
এ কি রে তোর মনের বিকার—
রইবি খুশী চিরকুটে ?
হাঁক উঠে
মুখ ফুটে
মোক্ষ-মোহের ডোর টুটে’,
“এই জীবন মোর সাধন
স্বর্গ মোর এই ভুবন” !
দুখ যে চায়, দুখ যে পায়,
আর যে সুখের পিছনে ধায় |
দিনের শেষে সব সমান, সব সমান !
পুঁথির পাতায় ধাপ্বাবাজি, পরকালের সব প্রমাণ |
ডাকছে কবি—আয় য়ে আয়
তিলে তিলে, প্রাণ পেয়ালায়
চুমুক দেবার সময় যে যায় !
সময় যে যায় — সময় যে যায়, বাজ্ ছে কালের ডঙ্কারে,
সকল সুখের পাছে আছে সমাপ্তির-ই শঙ্কারে !
শিবের সাথে শ্বস্ ছে রে শব,
সৃষ্টি সাথে ধ্বংসোত্সব
কাল-ভৈরব হুঙ্কারে |
যৌবনের ও মউ-বনে সব মউ-মাছিদের মর্ম্মরে
শুন্ ছি বাজায় বিসর্জ্জনী কঙ্কালেরা পঞ্জরে ;
বাজায় ফুলে বাজায় পাতায়
পাখীর পাখায় লাজুক লতায়,
মুখে, আশায়, ভালবাসায়
সব ভরসায়
বাজায় বাজায় কেবল বাজায় !
—বসন্তেরি রঙিন্ খাতায়
রঙের সাথে কালো কালি-ই লিখছে শমন পাতায় পাতায় |
ওরে তাই—
চোখের জলের সময় যে নাই !
রূপের মেয়াদ দু’দিন মোটে
দু’দিন মেয়াদ যৌবনের ;
প্রিয়ার ঠোঁটের গুল্ বাগে ভাই
ইজারা যে দুই দিনের !
ঠিকানা নেই ঠিকানা নেই
আশার ফানুষ কখন ফাঁসে ;
জীবন স্বপন ভাঙরে তোর
মহাকালের অট্টহাসে !
ভাব্ বি কি আর, করবি বিচার
বৃথা কি আর খাটবি বেগার ?
কালকে প্রিয়ার মুখে পাবি
হয়ত চিহ্ন বলি-রেখার !
আজ দরজায়
তাই ত কবি ডাক দিয়ে যায়—
ফাগুন ফুরায়—
আগুন জুড়ায়—
মধু-মাসের মহোত্সবে দস্যু হয়ে লুটবি কে আয় |
ছিনিয়ে নেবার সাহস যে চাই—
বিনিয়ে কাঁদিস্ কার ভরসায় ?