Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিশিথের অন্ধকার || Sankar Brahma

নিশিথের অন্ধকার || Sankar Brahma

মাঝরাতে মলয়ের ঘুম ভেঙে গেল বাথরুমের চাপে। বিছানা ছেড়ে ওঠার সময় পাশে তাকিয়ে দেখল, নীলিমা অকাতরে ঘুমাছে ওপশে কাৎ হয়ে। খাট থেকে নীচে নেমে যাওয়ার সময় দেখল, নীলিমার মুখে একটা আলগা হাসি লেগে আছে। হযতো কোন মধুর স্বপ্ন দেখছে সে। এসময় তাকে জাগিয়ে দিলে কেমন হয়? স্বপ্ন অসমাপ্ত অবস্থায় রেখে, ঘুম ভাঙায় সে কি খুব বিরক্ত হবে? দেখাই যাক না, একবার তার ঘুম ভাঙিয়ে। আচ্ছা আগে বাথরুম থেকে ঘুরে আসা যাক। খুব পেচ্ছাবের বেগ পেয়েছে তার। পেচ্ছাব চেপে রাখা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে কিডনির উপর চাপ পরে। মলয় তাই আগে বাথরুমে চলে গেল।
বাথরুমের কাজ শেষ করে, ঘরে ফিরে তার চোখ গেল খোলা জানলাটার দিকে। সেদিকে তাকিয়ে দেখে সে বিস্ময়ে অবাক হয়ে গেল।
কী সুন্দর চাঁদ উঠেছে আকাশ জুড়ে। নির্মল আকাশ। জোৎস্নায় চরাচর ভেসে যাচ্ছে। স্নিগ্ধ পরিবেশ। এ রকম চাঁদ জীবনে একবারই দেখার সৃযোগ হয়, মনেহল মলয়ের। পেচ্ছাবের বেগ না পেলে এসময়টা সে ঘুমিয়েই থাকত। এমন মনোরম দৃশ্য তার দেখা হত না। এমন বিরল দৃশ্য দেখলে মনটা এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। মলয় কতক্ষণ বিভোের হয়ে তাকিয়ে ছিল জানে না। নীলিমার কথায় তন্ময় ঘোর কাটল। সে ফিরে দেখল, কখন ঘুম ভেঙে উঠে এসে নীলিমা তার পাশে দাঁড়িয়ছে। নীলিমা বলল, কী সুন্দর লাগছে বাইরেটা দেখতে।
মলয় বলল, যাবে বাইরে?

  • না বাবা, এত রাতে বাইরে গিয়ে কোন কাজ নেই।
    শুনে, মলয় তার কাঁধে হাত রাখল। মৃদু চাপ দিয়ে বলল, আমি তো আছি, ভয় কি?
    নীলিমা একটু হেসে এবার বলল, তবে চল। এমন সময় মলয়ের চন্দ্রানীর কথা মনে পড়ল। চন্দ্রানী এখন কি করছে? হয়তো গভীর ঘুমে, কিংবা স্বামী সোহাগে। নিমগ্ন। এত মেয়ে চন্দ্রানীকে মনে পড়ল কেন? নামের মিল আছে বলে? নাকি অন্যকিছু?
    অন্যকিছু তো বটেই। এমন এক চাঁদনী রাতে জীবনে প্রথম চুমু খেয়ে ছিল চন্দ্রানীকে। সে এক অনন্য অনুভূতি। সে কথা আজও ভুলতে পারেনি মলয়।
    নীলিমা হেসে বলল, এই নাইট-ড্রেসে বেরবো? নাকি পোষাক বদলে নেবো?
    মলয় বলল, পোষাক বদলাবার কি আছে, এই নাইট-ড্রেসেই চলো।
  • বেশ, তবে চলো।
    ওরা দু’জনেই নাইট-ড্রেসে পরেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল।
    উজ্জ্বল বিকশিত পূর্ণ-চাঁদকে লক্ষ্য করে ওরা হাঁটতে শুরু করল। গ্রাম পেরিয়ে শহর।মাঠ পেরিয়ে বন। জঙ্গল পেরিয়ে পাহাড়। পাহাড় ডিঙিয়ে ওরা একসময় দেখল ওরা চাঁদে পৌঁছে গেছে। ওদের মনে নিবিড় আনন্দ হল। ওরা এক আর একজনকে জড়িয়ে ধরল, নিজেদের চাঁদ জয় করার সার্থকতার আবেগে। পরস্পর পরস্পরকে চুমু খেল। মলয়ের মনে পড়ল প্রথম চুম্বনের কথা। যেন সে নীলিমাকে নয় চন্দ্রানীকে চুমু খাচ্ছে। এ’কথা অনুভব করে, সে কিছুটা বিস্মিয় বোধ করল।
    চাঁদে এসে প্রথম কিছুদিন তাদের বেশ আনন্দেই কাটল। এদিক সেদিকে ঘুরে বেড়াল। যে দিকেই তাকায়, দেখে সমুদ্রের মতো বড় বড় নির্জলা শুকনো খাঁদ। ছোট ছোট নেড়া পাহাড়, গাছ-পালা হীন। আর চারিদিকে ধূ ধূ করছে শুধু বালি আর পাথর। রঙ-বেঙের সব পাথর। সূর্যের সাত রঙের পাথরই বোধহয় এখানে পাওযা যায়। পাথরগুলি দেখে তাদের চোখ জুড়িয়ে গেল। এমন সুন্দর পাথর পৃথিবীতে পাওয়া যায় না। বালি পাথর ছাড়া আর এখানে কিছুই নেই দেখার। জল নেই, গাছপালা নেই, পশু নেই, পাখি নেই, কীট-পতঙ্গ নেই, কোন প্রাণী নেই। এখানে খিদে তৃষ্ণা পায় না। তবে ঘুম আসে।
    ওরা সারাদিন নানা রকমের পাথর কুড়িয়ে জড়ো করে। তারপর ঘুম পেলে, যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে বালির উপরে। বিছানা বালিশ লাগে না। চলাফেরা করার সময় কোন পোষাকের প্রয়োজন হয় না। কারণ, দেখার কেউ নেই এখানে। তারা দু’জন ছাড়া, আপন পর নেই। আদিম রূপে দেখে কোন কামনা জাগে না পরস্পরের মনে। ভালবাসার বোধ আসে না। যেন আদম ইভের জ্ঞানবৃক্ষের আপেল খাওযার আগের অবস্থা হয়েছে তাদের। এইভাবে দিন কাটতে থাকে তাদের। মলয়ের একদিন মনেহয়, পৃথিবী থেকে কিছু গাছ এনে এখানে লাগিয়ে দিলে এটা স্বর্গোদ্যান হয়ে উঠতে পারে অচিরেই। তাই সে কথা নীলিমাকে জানতেই সে রাজী হয়ে যায়। তারপর তাার মনেহয়, গাছ এনে লাগালে কি হবে? গাছগুলি তো জল ছাড়া বেশিদিন বাঁচবে না। সেকথা মলয়কে জানায়। মলয় শুনে বলে, তাইতো। সেকথা তো আমি ভেবে দেখিনি। তবে উপায় কি? নিলীমার কাছ জানতে চায়। একটু ভেবে নীলিমা বলল, তবে পৃথিবী থেকে একখন্ড মেঘও তাড়িয়ে এখানে আমাদের নিয়ে আসতে হবে।
  • সেটা কি করে সম্ভব?
  • তাই তো ভাবছি। বরুণদেবের তপস্যা করে বরুণ দেবকে তুষ্ট করতে পারলে, হয়তো বরুণদেব মেঘ পাঠিয়ে দিতে পারে।
  • পৃথিবী হলে বরুণদেব মেঘ পাঠাতে পারত। চাঁদে সে কি করে পাঠাবে?
  • তবে?
  • মহাদের জটা থেকে যদি গঙ্গাকে এনে এখানে ছেড়ে দেওয়া যায়?
  • তা কি করে সম্ভব?
  • যদি তপস্যা করে মহাদেবকে তুষ্ট করা যায় তবে সেটা সম্ভম?
  • এসো তবে আমরা একসঙ্গে বসে তার তপস্যা শুরু করি।
  • বেশ চলো, তবে তাঁর তপস্যা শুরু করি। এইভাবে তপস্যায় দিন কাটতে লাগল তাদের। অনেক দিন তপস্যা করেও যখন কোন ফল পাওয়া গেল না, তখন তারা চাঁদ ছেড়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা ভাবল। কিন্তু মুশকিল হল পৃথিবীতে ফিরে আসার সময়, তারা পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য কোন পথ খুঁজে পেল না। তখন তারা চাঁদ থেকে পৃথিবীতে ঝাঁপ দিয়ে নামার কথা ভাবল। কিন্তু সেটা সম্ভব হল না, চাঁদে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি না থাকার ফলে। এমন সময় কোথা থেকে এক বুড়ি এসে হাজির তাদের কাছে। এতদিন তারা এই চাঁদে আছে, কোনদিন এই বুড়িকে তারা কোথাযও দেখেনি। কোথা থেকে এল এই বুড়ি। </code></pre>কী চায় তাদের কাছে। বুড়ির গায়ের রঙটা অনেকটা ছানার জলের মতো নীলাভ।
    বুড়িটা তাদের কাছে এসে সুরেলা মিষ্টি সুরে বলল, তোমরা পৃথিবীতে ফিরে যেতে চাও?
    নীলিমা মাথা কাৎ করে নীরবে তাকে সন্মতি জানল।
    বুড়ি তখন তাদের দু'জনের দু'হাতে দু-গাছা করে সূতো ধরিয়ে দিয়ে বলল, এটা ধরে তোমরা নেমে যেতে পারবে।
    ওরা তাই ধরল।
    মলয় তখন বলল, আপনি কে? আমরা এতদিন এখানে আছি, আপনাকে তো কোনদিন দেখিনি।
    বুড়ি তখন সারা মুখে একরাশ আন্তরিক হাসি ছড়িয়ে বলল, আমি চাঁদের বুড়ি।
    বলেই সে কোথায় মিলয়ে গেল।

নীলিমার ডাকে মলয়ের ঘুম ভাঙল। কি গো আজ অফিস যাবে না?
মলয় চোখ খুলে দেখল, দেওয়াল ঘড়িতে প্রায় আটটা বাজে। দশটায় অফিস। আর দেরি করা যাবে না। সে বিছানায় উঠে বসল। নীলিমাকে বলল, চা হয়েছে?

  • হচ্ছে। তুমি হাত মুখ ধুয়ে এসো।
    মলয় বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমের দিকে গেল।
    কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফিরে এসে দেখে, চা রেডি।
    চায়ে প্রথম চুমুক দিয়েই মলয় ভাবল, নীলিমাকে স্বপ্নের কথাটা এখন বলবে কিনা? তারপর আবার ভাবল, না থাক এখন, অফিস থেকে ফিরে এসে, সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে নীলিমাকে রসিয়ে রসিয়ে বলবে গল্পটা। মলয় চা শেষ করে, আবার বাথরুমে ঢুকে পড়ল, মল ত্যাগ ও স্নান সেরে অফিসের জন্য প্রস্তুত হয়ে বের হবার জন্য।
Pages: 1 2 3 4
Pages ( 1 of 4 ): 1 234পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *