পিতৃসত্য পালনে রাম বনবাসে যায়
অনুজ ভাই লক্ষ্মণ আর স্ত্রী সীতা সঙ্গে যায়।
দেবাসুর যুদ্ধে যখন দশরথ আহত হয়
মেজ রানী কৈকেয়ী তাকে সুস্থ করে বর চেয়ে নেয়।
রাম যাবে বনবাসে ভরত হবে রাজা
কুঁজী দাসী মন্থরার মন্ত্রণায় এই সাজা।
পুত্রের বিরহে দশরথ মরমেতে মরে
পুত্র শোকে অবশেষে প্রাণ ত্যাগ করে।
সীতা ছিল পরিত্যক্তা শস্যের ক্ষেতে পড়ে
জনক রাজা বাড়ি আনে পিতৃ পরিচয়ে।
এতো গেলো ত্রেতাযুগে দুই পিতার কথা
বাল্মিকীর রামায়ণ অমর সে গাথা।
দ্বাপর যুগে বসুদেব কৃষ্ণ বলরাম পিতা
কংসের রোষ থেকে রক্ষায় রাখে সে অন্যথা।
পুত্রের প্রাণ রক্ষার তরে বৃন্দাবনে যায়
ঝড় বৃষ্টি তুফান কোনো বাধা না মানায়।
নন্দ ঘোষ পিতা হন যশোদা হন মাতা
পরম পুরুষ বেড়ে ওঠে পেয়ে বদান্যতা।
পিতার পরিচয় চায় সবাই জন্ম পরিচয়
রাজা দুষ্মন্তের কথা পুত্র ভরত জানতে চায়।
ভরত শকুন্তলার পুত্র কালক্রমে রাজা হয়
ভরত রাজার নাম থেকে ভারতবর্ষ হয়।
সত্য ত্রেতা দ্বাপর যুগে পিতা পরমন্তপ
পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতৃ দেব ভব।
যুগে যুগে পিতাদের চরণে প্রণাম
কলি যুগে পিতাপুত্র অহি নকুল সমান।
আবার অভিজাত ঘরে উধাও সম্মান
হয় লাগে ঝগড়াঝাটি নয় মদ্যপান।
জানিনাতো একি হাল কলিযুগে হলো
পিতা পুত্র সকলেই ধর্মচ্যুত হলো।
ধর্ম ন্যায় ভুলে কেউ বা পিতৃহন্তা হয়
নয় তাকে রেখে আসে বৃদ্ধাবাস আলয়।
এমন তো নয় পিতৃভক্তি কারোর নাই
ভক্তিমান পুত্রের দেখা কদাচিত পাই।
সরল সুশীল পুত্র যদি বংশ রক্ষা করে
পিতৃভক্তি তেজ তাকে সমুজ্জ্বল করে।
অযোগ্য পুত্রেরা কেবল লড়াই ঝগড়া করে
বংশের অপমান করে পাপী জন্ম জন্মান্তরে।
আশীর্বাদ করে পিতা আপন পুত্রগণে
নিরলস স্বার্থত্যাগ পুত্রের কল্যাণে।
নিজে না খেয়েও পিতা পুত্রকে খাওয়ায়
বন্দী সুবল রাজা না খেয়েও পুত্র শকুনিকে বাঁচায়।
শকুনির কুমন্ত্রণায় কৌরব বংশ ধ্বংস হয়
এমনি করেই শকুনি তার প্রতিশোধ নেয়।
পুত্রস্নেহে অন্ধ রাজা প্রশ্রয় দিয়ে যায়
অতিরিক্ত পুত্র প্রেম বিপদ ঘনায়
কুরুবংশ ধ্বংস হয় ভারতে প্রমাণ
পিতা পুত্রের স্নেহ কথা মহাভারত সমান।।