একটি মানুষকে দেখলাম সূর্যোদয়ের রঙিন প্রভাত
দিনমজুরের মতো কাঁধে নিয়ে
যাচ্ছে সদরঘাটে, স্টীমারে, স্টেশনে।
একটি মানুষকে দেখলাম বয়সের বাঁকা ঠোঁটে
পোড়া সিগারেট, অফিসে ঘষছে কলম,
বাসের বাম্পারে ঝুলে দেখছে আমাকে।
একটি মানুষকে দেখলাম, পরাজিত কুক্কুরের মতো
স্ত্রীর হাতে চাবিগুচ্ছ দিয়ে তার কনিষ্ঠ সন্তানের মুখে
চুমু খেয়ে পুনর্বার অজ্ঞাত নিবাসে ফিরে গেলো।
একটি মানুষকে দেখলাম,
তার দুখিত দৈন্যের সাথে
কাউকে বাঁধলো না কোনোদিন,
চিরকাল একা একা মানুষের সাথে তার প্রেম।
একটি মানুষকে দেখলাম প্রতিটি অন্ধকারে
সে তার শরীর থেকে খুলেছে পোশাক,
অতঃপর সে হয়েছে সংসারের উন্মত্ত প্রেমিক,
স্ত্রীর ঠোঁট থেকে শুষে নিয়েছে অভাবগুলি
আদরে, চুম্বনে।
একটি মানুষকে দেখলাম মুখের মাছির মতো
মাথা নেড়ে বাসনার হাওয়াকে তাড়ায়।
একটি মানুষকে দেখলাম তবুও সে পার্ক ভালোবাসে,
তবুও সে নদী দেখে, তবুও সে রমণীর কাছে যেতে চায়।
একটি মানুষকে দেখেছি আজীবন অত্যাচারী,
তথাপি সে চিরকাল সুখে থেকে গেছে।
একটি মানুষকে জানি আনন্দের স্বভাব দেখেনি,
কোনোদিন সুখী নয়, তবুও সে দুঃখেও হেসেছে।
একটি মানুষকে দেখলাম সূর্যোদয়ের লাল রঙ
বুকে নিয়ে কী ভীষণ আশায়, বিশ্বাসে
সূর্যাস্তের দিকে যাচ্ছে,
বিকেলের দিকে,
সন্ধ্যার দিকে,
রাত্রির বিশ্রামের দিকে,
প্রভাতের প্রাত্যহিক প্রস্তুতির দিকে,
রবীন্দ্রনাথের মতো হেঁটে যাচ্ছে কবিতায়;
জীবনের সবগুলো গানে
এক-একটি মানুষ এসে
স্থান করে নিচ্ছে সবখানে।