Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিষুব অরণ্যে, জ্যোৎস্নার তল্লাসী আলোয় || Nabarun Bhattacharya

বিষুব অরণ্যে, জ্যোৎস্নার তল্লাসী আলোয় || Nabarun Bhattacharya

কত অভিমানে বলি আমার কী-ই বা আসে যায়
বিষুব অরণ্যে যদি দপ করে জ্বলে ওঠে প্রজাপতি
যদি জোনাকিতে ঝলসায় লক্ষ্যমুগ্ধ স্নাইপারের চোখ
চাঁদমারি আকাশে ভাসে মেঘের শেষ যুদ্ধ শেষ ধোঁয়া
কাঁটালতা ছিঁড়ে এগিয়ে আসা কম্যাণ্ডোর মতো পিপাসায়
আমি তো জানি
আমার চেয়েও দ্বিগুণ ত্রিগুণ
কী দারুণ অভিমানে
রক্তাক্ত থাবা চাটতে চাটতে
দলিত মথিত প্যাস্থার
হলুদ গন্ধক পাহাড়ে চলে যায়।

শীতের দুপুর যেন গভীর অরণ্য জুড়ে বিষাদের গান
বুলেট বিদ্ধ যারা, গারদে আটক যারা
—তাদের অযুত অপমান
ঝর্ণার প্রলেপ জলে ধুয়ে যায়, ধুয়ে গেলে
ফুরাবে এ বেলা
পতঙ্গ, পাখি সব ভুলে যাবে একদিন
অবশ রক্তের গন্ধে শিকার ও আততায়ী খেলা
কয়েকটি শুষ্কপত্র থাবার তলায় ভাঙে, শব্দচুর্ণ
প্যান্থার চোখ তোলে
সেই চোখে বঞ্চ নার হিম
গাছ ও পাতার কাছে পালকের উষ্ণতা
ঘিরে আসে অসহায় ডিম
ত্রস্ত সূর্য তার কেশর লুকায়ে ফেলে পাহাড়ের ঘাড়ে।

বিষুব অরণ্যে তবু জীবনের শর্ত মেনে
আহত প্যান্থার বাঁচে
বাঁচে চুপিসাড়ে
কারণ সে জানে
বুটের তলায় থাকে ধাতব পেরেক
রাইফেলে সন্ধানী আলো বাঁধা থাকে
খোঁয়াড়ে, খাঁচায়, সেলে মুখগুলি যেন কত করুণ লণ্ঠন
জঙ্গলে বিটিং, মদাশিকার, পেট্রলে জ্বালানো চালাঘর
সাঁজোয়া করাতে খণ্ড খণ্ড মানুষ, দাঁতের দাগ বসা পোড়া গাছ
সেঁকোবিষে মারা মাছ, জিপের টায়ারে মাখা মাটি
শোষণ ও অত্যাচারে
অন্তহীন তার দেশ গ্রাম মহাদেশ গ্রাম

তথায় এখনো
শিশুমৃত্যু, অপুষ্টি, ধর্ষণ, লুটে ও তরাজে
সরফরাজন্যবর্গ নানা বেশে সাজে
টিভির পর্দার মতো পক্ষীহীন নীলাভ আকাশ
বিমান মহড়ার পক্ষে বড় লাগসই
ফেনা নোনা মাটির মধ্যে ভাঙা কাচ, টিন তুঁতে
ছেঁড়া কাক, বাঁচার লটারি
হাইওয়ে দিয়ে ছোটে রাক্ষস পণ্যের কনভয়
ডিজেল বাম্প ওড়ে, চাপা পড়া রাস্তা থাকে পড়ে
টিভির পর্দায় ভাসে চমৎকার দেশ
প্রচণ্ড উল্লাসের মধ্যে জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে
মহাকাশে উঠে যায় হাজার শিশুর
গ্যাস ভরা করোটি
মূর্খমন্ত্রী ছিন্ন মুণ্ডে পদাঘাত করে, মুণ্ড গড়ায়
খেলার তো এই সবে শুরু
লক্ষ লক্ষ কবন্ধ হাততালি দেয়
আমন ও আমানির মধ্যে নাচে দুর্ধর্ষ মাল ও মালিনী
পর্যাপ্ত অর্থে মেলে অপর্যাপ্ত যোনি
মগজেতে ছাপা থাকে কাগজের প্ৰেতকথা, মৃতের কুশল
রম্ভার দাম্ভিকতা, সারশূন্য খোসা, খোলা, আঁশ
সেলোফেন, ব্রয়লার পালক
বুদ্ধি জীবাণু ও সাহিত্যসেবনের দুগ্ধকলায়
কত সরীসৃপ আসে ডলার ফলারে
মড়ক মহড়া না মাতাল খোঁয়ারি
এঁটো মুখে চুমু খায়, থুথু বিনিময়ে মাতে
ছি ছি বলে ছ-পা নেড়ে উড়ে যায়
নিন্দুক ডিগ্রিধারী মাঝি
তত্ত্বের ভেক্টর মশা শব্দবমন করে
হানে মহামারী
সমগ্র দেশটি পচে, হেজে যায়, পাঁকে ডোবে, তলায় ভাগাড়ে

এশীয় নিস্তুব্ধতা
এই মৃত্যু উপত্যকা জুড়ে
কেরোসিনে জ্বলন্ত নারী
নির্ভুল আলোকিত করে রাখে
এই মধ্যযুগ, এই বধ্যভূমি
আহত প্যান্থারের চোখে ঘুম নেই, ঘুম নেই, ঘুম নেই
ঠায় জেগে আছে
জ্যোৎস্নার আলো আঁতি পাঁতি খুঁজে গেছে খরগোশে
শৃগাল বা হায়নার ফসফোরাস, ত্রাস চক্ষুদ্বয়
অট্টহাসি হেঁকে ওঠে—সার্চ অ্যাণ্ড ডেস্ট্রয়
আমি কত দীন, ক্লাব, রেনিগেড, সংগ্রামবিমুখ
ফিস ফিস করে বলি আমার কী-ই বা আসে যায়
ধুলায় চুম্বন আছে, অশ্রু আছে শুকনো হাওয়ায়
রক্তাক্ত ভিজে থাবা কষ্ট করে টেনে নিতে নিয়ে

দলিত মথিত প্যান্থার
হলুদ গন্ধক পাহাড়ে চলে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *