Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নক্ষত্রজয়ের জন্য || by Nirendranath Chakravarty

নক্ষত্রজয়ের জন্য || by Nirendranath Chakravarty

হুশ করে নক্ষত্রলোকে উঠে যেতে চাই
কিন্তু তার জন্য, মহাশয়,
স্প্রিং লাগানো দারুণ মজবুত একটা শব্দের দরকার।
সেইটের উপরে গিয়ে উঠতে হবে।
প্রাণপণে বাতাস টেনে ফুসফুস ফুলিয়ে
নক্ষত্রলোকের দিকে গর্বিত ভঙ্গিতে একবার
চোখ রাখতে হবে।
তারপরে প্রাণপণ জোরে লাথি মারতে হবে সেই শব্দের পাঁজরে!
আসলে কী ব্যাপার জানেন,
রক্তের ভিতরে একটা বিপরীত বিরুদ্ধ গতিকে
সঞ্চারিত করা চাই।

একটা শব্দ চাই, একটা শব্দ চাই, মহাশয়।
নক্ষত্রজয়ের শব্দ কিছুতে পাচ্ছি না। তাই
আপাতত
কুকুরের মতো একটা বশংবদ শব্দ দিন,
যেটাকে পায়ের কাছে কিছুক্ষণ ইচ্ছেমতো নাচিয়ে খেলিয়ে,
ঘাড়ে ধরে, ঘরের বাইরে বারান্দায়
ছুড়ে দিতে পারি।
সুপুরির মতো একটা শব্দ দিন,
যেটাকে দাঁতের মধ্যে ভেঙে পিষে ছাতু করে দিয়ে
থুতুতে মিশিয়ে আমি ঘৃণাভরে চারদিকে ছিটিয়ে দিতে পারি।
কিংবা–কিংবা–
বুঝতেই পারছেন, সব নাট-বল্‌টু একে-একে খুলে যাচ্ছে;
বুঝতেই পারছেন, নৌকো ফেঁসে যাচ্ছে;
বুঝতেই পারছেন, আমি ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছি, মহাশয়।

‘খ্যাপা খুঁজে-খুঁজে ফেরে পরশপাথর।’
আমি একটা শব্দ খুঁজছি, মহাশয়।
নক্ষত্রলোকের দিকে যাব বলে আমি
চল্লিশ বছর ধরে হাটেমাঠে টই-টই রোদ্দুরে
বিস্তর শব্দের ঘাড় মটকালুম। অথচ দেখুন,
‘আচমন’-এর তুল্য কোনো সুলক্ষণ শব্দ আমি এখনও পাইনি।
দুই কশে গড়াচ্ছে রক্ত, চক্ষু লাল, বুকের ভিতরে
গনগনে আগুন জ্বেলে
চল্লিশ বছর ধরে শুধু আমি হাতের চেটোর উলটো পিঠে
কপাল ঘষছি।

অথচ ভাবুন,
কিছু সুলক্ষণ শব্দ হাতের সামনেই ছিল কি না।
বহু সুলক্ষণ শব্দ হাতের সামনেই ছিল, কিন্তু আমি আজ
আচমকা তাদের দেখলে চিনতে পারি না।
একদা-দুর্দান্ত-কিন্তু-রকবাজের-হাতে-পড়ে-নষ্ট-হয়-যাওয়া
সমুন্নত সুন্দর-ললাট বহু শব্দ ইদানীং
হাড্ডিসার, রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়ি ফোঁকে।
জাহাজ, পতন, মৃত্যু, মাস্তুল প্রমুখ
পরাক্রান্ত শব্দগুলি
এখন ক্রমেই
ইঁদুরের মতন ছুঁচলো-মুখ হয়ে যাচ্ছে, মহাশয়।
পাউডার-পমেড-মাখা যে-কোনো ছোকরার
পুরনো কম্বলে লাথি ঝাড়লেই ‘পতন’ ‘মৃত্যু’ ‘মাস্তুল’ ইত্যাদি
ইঁদুর কিচকিচ করে ওঠে।

কিচকিচ কিচকিচ, শুধু কিচকিচ কিচকিচ ছাড়া ইদানীং
অন্য-কোনো ধ্বনি
শুনতে পাই না!
শুধুই লোভের ধূর্ত মার্কামারা মুখ ভিন্ন অন্য-কোনো মুখ
দেখতে পাই না।
বুঝতেই পারছেন, সব নাট-বল্‌টু একে-একে খুলে যাচ্ছে;
বুঝতেই পারছেন, নৌকো ফেঁসে যাচ্ছে,
বুঝতেই পারছেন, আমি ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছি, মহাশয়।

অথচ এখনও আমি সুলক্ষণ একটা-কোনো শব্দের উপরে
সওয়ার হবার জন্যে বসে আছি।
অথচ এখনও আমি নক্ষত্রলোকের দিকে যেতে চাই।
অথচ এখনও আমি মেঘের পৈঠায় মা ঝুলিয়ে
জ্যোৎস্নায় কুলকুচো করব, এইরকম আশা রাখি।
একটা শব্দ দিন, একটা শব্দ দিন, মহাশয়।
রক্তের ভিতরে ঘোর জলস্তম্ভ ঘটিয়ে যা মুহূর্তে আমাকে
শূণ্যলোকে ছুড়ে দেবে–
চাঁদমারি-খসানো আমি এমন একটাই মাত্র শব্দ চাই।
নেই নাকি?
তবে দিন,
বুলেটের মতো একটা শব্দ দিন। আমি
যেটাকে বন্দুকে পুরে, ট্রিগারে আঙুল রেখে–কড়াক পিং–
নকল বুঁদির কেল্লা ভেঙে দিয়ে ফাটা কপালের রক্ত মুছে
হেসে উঠতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress