হে বঙ্গ তোমার মুখ নিবিড় ফটোজেনিক বলে
সবাই তুলতে চায় ছবি নানা পোজে, কেউ চায়
নামুক চুলের ঢল অমল শ্যামল গ্রীবা বেয়ে,
কেউবা টিপের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী। কস্তাপেড়ে
শাড়িতে তোমাকে খুব মানাচ্ছে সম্প্রতি ভেবে কেউ
ক্যামেরা বাগায় পটু ব্যগ্রতায়, ক্লিক, ক্লিক, ক্লিক।
মাইরি বিষম তাক লেগে যায় কেরদানি দেখে,
আমি তো তুলি না ফটোগ্রাফ কোনো, দেখি শুধু দেখি।
তোমার উদ্দেশে ভাব-গদ্গদ কতজন ইনিয়ে-বিনিয়ে
লেখেন সুচারু পদ্য রাশি রাশি, অনেক নিপুণ
চিত্রকর রাতারাতি ব’নে যান পটুয়া তোমার।
আমি তো লিখি না পদ্য, পটে রঙ মাখি না কখনো।
অক্ষম বিবর্ণ আমি, ক্লান্ত এবং গৌরবছুট-
কেবলি তোমাকে দেখি চোখ ভরে, তোমাকেই দেখি।
তুমি কি প্রান্তর ধু-ধু অথবা কাজল দিঘি শুধু?
কিংবা বনরাজিনীলা? না কি প্রেতভূমি? তুমি ধান
ভানো, গাও গান ঘুমপাড়ানিয়া নিঝুম রাত্তিরে,
প্রত্যহ ভাসাও ঘড়া, এলেবেলে গল্প করো ঘাটে,
কখনো বানাও পিঠা, কখনোবা কঙ্কালপ্রতিম
অভুক্ত সন্তান নিয়ে তোমার দুঃখের বেলা যায়।
তোমার শরীর দেখি ছিঁড়ে খায় শকুন শেয়াল,
তোমার উদাস বুকে পদধ্বনি শোকমিছিলের।
কখনো তোমার খাঁ-খাঁ বিবস্ত্র শরীর ঢেকে দেয়
পতাকা ব্যানারে ওরা লজ্জাতুর তোমার সন্তান।
মারিতে মরোনিত তুমি, ম্যাক্সিম গোর্কির জননীর
মতো তুমি সংগ্রাম ও শান্তি করো হৃদয়ে ধারণ।