Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হাস্যকৌতুক || Rabindranath Thakur » Page 5

হাস্যকৌতুক || Rabindranath Thakur

প্রথম দৃশ্য
চিন্তাশীল নরহরি চিন্তায় নিমগ্ন। ভাত শুকাইতেছে। মা মাছি তাড়াইতেছেন।

মা।

অত ভেবো না, মাথার ব্যামো হবে বাছা!

নরহরি।

আচ্ছা মা, “বাছা’ শব্দের ধাতু কী বলো দেখি।

মা।

কী জানি বাপু!

নরহরি।

“বৎস’। আজ তুমি বলছ “বাছা’– দু-হাজার বৎসর আগে বলত “বৎস’– এই কথাটা একবার ভালো করে ভেবে দেখো দেখি মা! কথাটা বড়ো সামান্য নয়। এ কথা যতই ভাববে ততই ভাবনার শেষ হবে না।

পুনরায় চিন্তায় মগ্ন

মা।

যে ভাবনা শেষ হয় না এমন ভাবনার দরকার কী বাপ! ভাবনা তো তোর চিরকাল থাকবে, ভাত যে শুকোয়। লক্ষী আমার, একবার ওঠ্‌।

নরহরি।

(চমকিয়া) কী বললে মা? লক্ষ্মী? কী আশ্চর্য! এক কালে লক্ষ্মী বলতে দেবী-বিশেষকে বোঝাত। পরে লক্ষ্মীর গুণ অনুসারে সুশীলা স্ত্রীলোককে লক্ষ্মী বলত, কালক্রমে দেখো পুরুষের প্রতিও লক্ষ্মী শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে! একবার ভেবে দেখো মা, আস্তে আস্তে ভাষার কেমন পরিবর্তন হয়! ভাবলে আশ্চর্য হতে হবে।

ভাবনায় দ্বিতীয় ডুব

মা।

আমার আর কি কোনো ভাবনা নেই নরু? আচ্ছা, তুই তো এত ভাবিস, তুইই বল্‌ দেখি উপস্থিত কাজ উপস্থিত ভাবনা ছেড়ে কি এই-সব বাজে ভাবনা নিয়ে থাকা ভালো? সকল ভাবনারই তো সময় আছে।

নরহরি।

এ কথাটা বড়ো গুরুতর মা! আমি হঠাৎ এর উত্তর দিতে পারব না। এটা কিছুদিন ভাবতে হবে, ভেবে পরে বলব।

মা।

আমি যে কথাই বলি তোর ভাবনা তাতে কেবল বেড়েই ওঠে, কিছুতেই আর কমে না। কাজ নেই বাপু, আমি আর-কাউকে পাঠিয়ে দিই।

[ উভয়ের প্রস্থান ]

মাসিমা।

ছি নরু, তুই কি পাগল হলি? ছেঁড়া চাদর, একমুখ দাড়ি– সমুখে ভাত নিয়ে ভাবনা! সুবলের মা তোকে দেখে হেসেই কুরুক্ষেত্র!

নরহরি।

কুরুক্ষেত্র! আমাদের আর্যগৌরবের শ্মাশানক্ষেত্র! মনে পড়লে কি শরীর লোমাঞ্চিত হয় না! অন্তঃকরণ অধীর হয়ে ওঠে না! আহা, কত কথা মনে পড়ে! কত ভাবনাই জেগে ওঠে! বলো কী মাসি! হেসেই কুরুক্ষেত্র! তার চেয়ে বলো-না কেন কেঁদেই কুরুক্ষেত্র!

অশ্রুনিপাত

মাসিমা।

ওমা, এ যে কাঁদতে বসল! আমাদের কথা শুনলেই এর শোক উপস্থিত হয়। কাজ নেই বাপু!

[ উভয়ের প্রস্থান ]

দিদিমা।

ও নরু, সূর্য যে অস্ত যায়!

নরহরি।

ছি দিদিমা, সূর্য অস্ত যায় না। পৃথিবীই উল্‌টে যায়। রোসো, আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। (চারি দিকে চাহিয়া) একটা গোল জিনিস কোথাও নেই?

দিদিমা।

এই তোমার মাথা আছে– মুণ্ডু আছে।

নরহরি।

কিন্তু মাথা যে বদ্ধ, মাথা যে ঘোরে না ।

দিদিমা।

তোমারই ঘোরে না, তোমার রকম দেখে পাড়াসুদ্ধ লোকের মাথা ঘুরছে! নাও, আর তোমায় বোঝাতে হবে না, এ দিকে ভাত জুড়িয়ে গেল, মাছি ভন্‌ ভন্‌ করছে।

নরহরি।

ছি দিদিমা, এটা যে তুমি উল্‌টো কথা বললে! মাছি তো ভন্‌ ভন্‌ করে না। মাছির ডানা থেকেই এইরকম শব্দ হয়। বোসো, আমি তোমাকে প্রমাণ করে দিচ্ছি–

দিদিমা।

কাজ নেই তোমার প্রমাণ করে।

[ উভয়ের প্রস্থান ]

দ্বিতীয় দৃশ্য
নরহরি চিন্তামগ্ন। ভাবনা ভাঙাইবার উদ্দেশে নরহরির
শিশু ভাগিনেয়কে কোলে করিয়া মাতার প্রবেশ

মা।

(শিশুর প্রতি) জাদু, তোমার মামাকে দণ্ডবৎ করো।

নরহরি।

ছি মা, ওকে ভুল শিখিয়ো না। একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবে, ব্যাকরণ-অনুসারে দণ্ডবৎ করা হতেই পারে না– দণ্ডবৎ হওয়া বলে। কেন বুঝতে পেরেছ মা? কেননা দণ্ডবৎ মানে–

মা।

না বাবা, আমাকে পরে বুঝিয়ে দিলেই হবে। তোমার ভাগ্‌নেকে এখন একটু আদর করো।

নরহরি।

আদর করব? আচ্ছা, এসো আদর করি। (শিশুকে কোলে লইয়া) কী করে আদর আরম্ভ করি? রোসো, একটু ভাবি।

চিন্তামগ্ন

মা।

আদর করবি, তাতেও ভাবতে হবে নরু?

নরহরি।

ভাবতে হবে না মা? বল কী! ছেলেবেলাকার আদরের উপরে ছেলের সমস্ত ভবিষৎ নির্ভর করে তা কি জান? ছেলেবেলাকার এক-একটা সামান্য ঘটনার ছায়া বৃহৎ আকার ধরে আমাদের সমস্ত যৌবনকালকে, আমাদের সমস্ত জীবনকে আচ্ছন্ন করে রাখে এটা যখন ভেবে দেখা যায়– তখন কি ছেলেকে আদর করা একটা সামান্য কাজ বলে মনে করা যায়? এইটে একবার ভেবে দেখো দেখি মা!

মা।

থাক্‌ বাবা, সে কথা আর-একটু পরে ভাবব, এখন তোমার ভাগ্‌নেটির সঙ্গে দুটো কথা কও দেখি।

নরহরি।

ওদের সঙ্গে এমন কথা কওয়া উচিত যাতে ওদের আমোদ এবং শিক্ষা দুই হয়। আচ্ছা, হরিদাস, তোমার নামের সমাস কী বলো দেখি।

হরিদাস।

আমি চমা কাব।

মা।

দেখো দেখি বাছা, ওকে এ-সব কথা জিগেস কর কেন? ও কী জানে!

নরহরি।

না, ওকে এই বেলা থেকে এইরকম করে অল্পে অল্পে মুখস্থ করিয়ে দেব।

মা।

(ছেলে তুলিয়া লইয়া) না বাবা, কাজ নেই তোমার আদর করে।

নরহরি মাথায় হাত দিয়া পুনশ্চ চিন্তায় মগ্ন

নরহরি।

তা যাও না মা! তোমার ইচ্ছে হয়েছে, আমি বাধা দেব না।

মা।

(স্বগত) নরু আমার সকল কথাতেই ভেবে অস্থির হয়ে পড়ে, এটাতে বড়ো বেশি ভাবতে হল না। ( প্রকাশ্যে) তা হলে তো আমাকে মাসে মাসে কিছু টাকার বন্দোবস্ত করে দিতে হবে।

নরহরি।

সত্যি নাকি? তা হলে আমাকে আর কিছুদিন ধরে ভাবতে হবে। একথা নিতান্ত সহজ নয়। আমি এক হপ্তা ভেবে পরে বলব।

মা।

(ব্যস্ত হইয়া) না বাবা, তোমার আর ভাবতে হবে না– আমার কাশী গিয়ে কাজ নেই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress