Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হাতে বোনা সোয়েটার || Subhra Saha Shelley

হাতে বোনা সোয়েটার || Subhra Saha Shelley

হাতে বোনা সোয়েটার

কাকলিদেবীর যখন বিয়ে হয় তখন স্বামী ভারতবর্ষে।বিয়ের পর মা বাবা, ভাইবোনকে ছেড়ে ভিনদেশে এসে পড়েছেন। নতুনদেশে এসে নতুন সংসারে স্বামীই একমাত্র সম্বল। তিনিই আনকোড়া কাকলিদেবীকে রান্নাবান্নায় হাতেখড়ি দেন।

ধীরে ধীরে কাকলিদেবী নতুনসংসারে অভ্যস্থ হয়ে ওঠেন।এরমধ্যেই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন অতিথির আগমনের সূচনা। শ্বশুরবাড়ি ,বাপেরবাড়ির কেউ কাছে নেই—সবাই বর্ডারের ওপারে। প্রথম মা হবার অজানা আশঙ্কা মনে নিয়েই স্বামী আর ভগবান ভরসা করেই ন’মাস কাটিয়ে দেন কাকলিদেবী।

বিয়ের পর থেকে বাপেরবাড়ি যাওয়া হয় নি শুধু কাঁটাতারের বেড়াজালের কারণে— ইচ্ছে ছিল বোনের বিয়ের আগে মাস দুয়েক কাটিয়ে আসবে। ছেলের যখন ছ’মাস বয়স তখন হঠাৎ করেই বোনের বিয়ে ঠিক হয়।ছোটবাচ্চা নিয়ে বর্ডার পেরিয়ে বোনের বিয়েতে যেতে পারেন নি কাকলিদেবী।

ভগ্নিপতিকেও দেখা হয় নি। ভগ্নিপতির চেহারার বর্ণনা শুনে খুব শখ করে একটা সোয়েটার বোনেন , আশীর্বাদস্বরূপ অনান্য উপহারের সাথে পাড়াতুতো এক কাকার হাতে পাঠিয়ে দেন অশ্রুসজল চোখে।

কয়েকমাসের মধ্যেই দুইদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা— 1971 এর বাংলাদেশের যুদ্ধ। সবকিছু ওলটপালট।

গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু—-সবকিছু ছেড়ে নিজেদের জীবনের অস্তিত্বরক্ষার জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে অনিশ্চয়তার পথে রওনা হয় দলে দলে মানুষ। ভারতের মাটিতে উদ্বাস্তু হিসেবে সকলে শরণার্থী শিবিরে।

কোন এক খবরের সূত্র ধরে পাগলের মতো ছুটে বেড়ান রক্তের টানে — শিবির থেকে শিবিরে। অবশেষে অসুস্থ বোনের দেখা মেলে অনেক সাধনায়।অসহায় বোনের তখন পাগল পাগল অবস্থা।সদ্যবিবাহিত স্বামীস্ত্রী — দুজন দুদিকে।

স্বামীর কোন খবর জানে না মালিনী।জীবিত না মৃত সেটাও অজানা। বোনকে বুকে আগলে নিরাশাকে দূরে সরিয়ে স্বামীর সহায়তায় কাকলিদেবীর চলতে থাকে ভগ্নীপতির জন্য শিবির তল্লাশি।

শেষ পর্যন্ত্য কাকলিদেবীর আন্তরিক প্রচেষ্টার জয় হয়।

নিজের হাতে বোনা সেই সোয়েটারটি চিনিয়ে দেয় অদেখা ভগ্নিপতিকে— রুক্ষচুলে,একমুখ দাড়িতে। ভগ্নীপতির কাছে জানতে পারেন নদীতে তিনদিন ডুবসাঁতার দিয়ে জীবনবাঁচাবার রোমহর্ষ অভিজ্ঞতার কথা—নবজন্মের কথা।

কাকলিদেবীর মনে হয় ভগবান যেন তার হাত দিয়ে সোয়েটার বুনিয়েছিলেন এইজন্যই—সোয়েটারের বুনটের সাথে সম্পর্কের বুনটের মিল খুঁজে পান। তার হাতে বোনা সোয়াটারই একমাত্র মাধ্যম হয়ে মিলিয়ে দেয় নববিবাহিত দুটি প্রাণকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress