Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হলদে পাখির পালক || Lila Majumdar » Page 9

হলদে পাখির পালক || Lila Majumdar

বাড়ি ফিরেই ছাইগাদার মধ্যে বোগি বিচিটা পুঁতে ফেলল। ঝগডু একটু হেসে বলল, কই নাচ গান হল না? গাছ পুঁতলে যে নাচতে হয়, গাইতে হয়।

রুমু বোগি কী করে? অবিশ্যি একটু নাচলে গাইলেও হয়। ঝগডু ছাড়া কেই-বা দেখবে। কিন্তু ঝগড়ুই বলল, এ গাছের জন্য নাচ-গান লাগে না, বোগিদাদা, অমনি পুঁতে দাও। এ হল দুঃখীদের গাছ, তোমাদের ঘটা করার জন্য বসে থাকবে না। তিন দিন বাদে দেখো এসে, ওর কল বেরুবে।

থেকে থেকে কালো ছেলেটার জ্বর হয়। ঝগড়ুর বউ তখন রাঁধা-বাড়া ফেলে তাকে দিনরাত বুকে করে বসে থাকে। রুমু ওর কপালে হাত দিয়ে দেখে, আগুনের মতো গরম।

একটু ওষুধ খাইয়ে দাও না, সেরে যাবে।

ঝগড়ুর বউ বলে, দুমকা থেকে মাদুলি আনতে দিয়েছি, দিদি, তাহলে আর জ্বর আসবে না।

ঝগড়ুকে বোগি জিজ্ঞেস করল, শেয়ালরা কুকুররা হলদে পাখি খেয়ে মানুষ হয়, তারপর যদি মরে যায়, তা হলে কি আবার শেয়াল কুকুর হয়ে যায়?

ঝগড়ু, তাই শুনে অবাক। মরে গেলে আবার শেয়াল কুকুর কী, বোগিদাদা? মরে গেলে মানুষই-বা কী? দেখো গিয়ে ছাইগাদায় গুণমণির কল গজিয়েছে।

ওমা তাই তো! বিচি পুঁতেছিল বোগি ছাইগাদার ঠিক মাঝখানে, কেমন করে সরে গিয়ে, ছাইগাদার একপাশে মস্ত একটা বাঁকানো বোঁটা দেখা যাচ্ছে।

দিদিমাও দেখতে এলেন। ওমা, ওই বুঝি তোদের সেই মেলায় কেনা শিম গাছ? ছুঁস নে, রুমু, ও জায়গাটা বড়ো নোংরা, ভালো জায়গায় লাগালি না কেন? তবে ওখানে সার পাবে যথেষ্ট, দেখতে দেখতে লকলকিয়ে উঠবে দেখিস।

ভালো জায়গায় লাগালে গুণমণির ফুল ধরবেনা। মেলার সেই লোকটা কোথায় থাকে কোথায় শোয় কে জানে? ঝগড়ুকে জিজ্ঞেস করতে হল।

ওই লোকটা? ওকে নিয়ে আবার তোমরা মাথা ঘামাচ্ছ? পাজির পা ঝাড়া ব্যাটা। কাচের গোলা নিয়ে বলে সাপের মাথার মণি!

ওটা সত্যি সাপের মাথার মণি নয় ঝগড়ু?

বোগিও বিরক্ত হল। তবে ওটা দেখে ঘাবড়াচ্ছিলে কেন? আমাদের হাত দিতে বারণ করেছিলে কেন? তোমার চালাকি আমরা বুঝি না ভেবেছ? সারাক্ষণ দুমকা দুমকা কর, কতদিন দুমকা যাওনি বলো তো?

ঝগড়ু জল গরমের কাঠ কাটছিল। কুড়ুল দিয়ে কাঠ লম্বা করে চিরে, কাঠের গাদায় কাঠটা আর কুড়লটা ফেলে দিয়ে, বারান্দার কোনায় ওদের পাশে পা ঝুলিয়ে বসল।

দিনের হিসাব আর রাখি না, বোগিদাদা। দুমকা যাবার আমার দরকারটাই-বা কী বল? আমার মনের মধ্যে আমি দুমকাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। দুমকায় কী করে যাই। সেখানে বড়ো কষ্ট।

কেন, তোমার মনের দুমকায় কষ্ট নেই?

ঝগড়ু, একবার বোগির মুখের দিকে, একবার রুমুর মুখের দিকে চেয়ে দেখে। কষ্ট কাকে বলে জান?

রুমু বলে, ভুলো চলে গেছে বলে আমাদের কষ্ট হয়, ঝগডু। ভুলোকে আমরা ভালোবাসি। তোমার বাড়ির লোকদের তুমি ভালোবাসো না?

ঝগড়ু হেসে বলল, তা আর বাসি না? বুড়ি মাকে মাস মাস টাকা পাঠাই। সে রুপোর পৈঁচে গড়িয়েছে। ভারি খুশি হয়েছে। আর বোশেখে আমার সবার ছোটো ভাই নানকুর বিয়ে দেব, যাব তখন।

নানকুর বিয়েতে আমাদের নিয়ে যাবে, ঝগড়ু? আমাদের দুমকায় যেতে ইচ্ছে করে।

সে তো আমার মনের দুমকায়, বোগিদাদা। পাহাড়ের ধারের ওই দুমকা হয়তো বদলে গেছে, শুনেছি ভালুকরা আর মহুয়া খেতে আসে না।

ঝগড়ু, তুমি কি ওই সত্যি দুমকাকে ভালোবাস না?

কী জানি দিদি, আজকাল আমার ভালোবাসাগুলো কেমন গুলিয়ে গেছে। তবে এটা ঠিক যে দুমকার মতো জায়গা নেই কোথাও।

দিদিমা ভুলোর থালা, ছেঁড়া কম্বল, আর চেন কলার জল গরমের ঘরের তাকে তুলে রাখলেন। কিন্তু দরজায় জানলায় যেখানে সেখানে ভুলোর নখের সব আঁচড়ের দাগ, বারান্দার দেয়ালে ভুলোর পিট ঠেসার দাগ।

ঝগড়ুর ঘরের কালো ছেলেটা রুমু-বোগির কোলে আর আসতে চায় না। ওদের দেখলে বউয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকে।

বউ ওদের বুঝিয়ে বলে, জ্বর হলে ওদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, বোগিদাদা। রাতে ভালো ঘুমোয় না।

রুমু জিজ্ঞেস করল, সেই মাদুলি আনলে না? কীসের তৈরি হয় সে মাদুলি?

তা সে তামার হয়, সিসের হয়, অনেকরকম হয়।

সোনা রুপোর হয় না, বউ?

আমরা গরিব মানুষ, সোনা রুপো কোথায় পাব বল? দেখো গিয়ে তোমাদের শিম গাছে পাতা হয়েছে।

না। আমাদের গাছের উপর কাল ঝগড়ু, ভুলে ছাই ঢেলে দিয়েছে, গাছ মরে গেছে।

তোমরা দেখোই না গিয়ে।

গিয়ে দেখে সত্যি সত্যি রাতারাতি গুণমণি আরও খানিকটা লম্বা হয়ে, আবার ছাইগাদার উপর মাথা তুলে আছে, ছোটো ছোটো ফিকে সবুজ চারটি পাতা বাতাসে নড়ছে।

ঝগড়ু শুনে বলল, তাতে আর আশ্চর্যটা কী, বোগিদাদা? দুনিয়াটাই তো আশ্চর্য জিনিসে ঠাসা; তোমার বইওয়ালারা সেসব কথা না লিখলে আর আমি কী করব?

বোগি বলল, বইতেও অনেক আশ্চর্য জিনিসের কথা থাকে, ঝগড়ু। তুমি জানো উত্তর মেরুতে ছ-মাস করে রাত হয় আর ছমাস করে দিন হয়?

ঝগড়ুকে নিয়ে মহা মুশকিল, কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। হ্যাঁ! ছ-মাস ধরে দিন হয় বই কী! তবে কি বলতে চাও সূর্যটার ছ-মাস লাগে আকাশটা পেরুতে?

না ঝগড়ু আমার বইতে লিখেছে, ওখানকার সূর্য মাঝ আকাশ পর্যন্ত ওঠেই না, চাকার মতো আকাশের চারদিকে ঘোরে। প্রথমে, যেখানে মাঠ গিয়ে আকাশে মিশেছে– তাকে দিগন্ত বলে ঝগড়ু- সেইখানে চারদিকে বালার মতো ঘুরে আসে। তারপর তিন মাস ধরে একটু করে উঁচুতে উঠে ঘোরে। আবার তিন মাস ধরে একটু করে নীচে নেমে ঘোরে। শেষটা ছ-মাস হলে, গাছের পিছনে তলিয়ে যায়, তারপর ছমাস আর তার মুখ দেখা যায় না। জানতে এসব?

ঝগড়ু হেসে বলল, এত সব কথা বিশ্বাস কর বোগিদাদা, অথচ আমি যদি আমাদের জাদুকরা ছাগলের গল্প বলি, বিশ্বাস করবে না তো? বোগি রুমু ঝগড়ুর কাছে এসে বলল, বলো-না জাদু-করা ছাগলের গল্প, ঝগডু।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *