গণতন্ত্র জিনিসটা কী বস্
আচ্ছা মহেশ্বর, তুমি বলতে পারো গণতন্ত্র জিনিসটা কী বস্তু! আমি জগৎ সৃষ্টি করলুম, প্রজা সৃষ্টি করলুম। পৃথিবীকে ঘুরিয়ে দিলুম লাটুর মতো। বলে দিলুম, রাজার কর্তব্য কী, প্রজাপালন কীভাবে করতে হয়! সমাজ কীভাবে গড়ে উঠবে। সামাজিক রীতিনীতি কী হবে। মোটামুটি সবই তো বলে দিয়েছিলুম। তারপর কী হল বলো তো মহেশ্বর?
সব তালগোল পাকিয়ে গেল প্রভু। খোদার ওপর খোদকারি। আপনার মানুষের মতো বেয়াড়া জীব আর দুটি নেই। আপনার সৃষ্টির কলঙ্ক। আপনার মুখে চুনকালি লেপে দিয়েছে। টাকা আর ক্ষমতা। ক্ষমতা আর টাকা, এই হয়েছে ধ্যান-জ্ঞান। কামিনী আর কাঞ্চন, অমৃতের পুত্ররা এই নিয়েই মেতে আছে প্রভু। এ ওকে গুঁতোচ্ছে, ও একে। সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের বাঁদরামি এত বেড়েছে আপনার আসল বাঁদরেরা হাঁ হয়ে গেছে।
বাঁদর থেকে ধাপে-ধাপে আমি মানুষ সৃষ্টি করেছিলুম, ধাপে-ধাপে আবার বাঁদর হয়ে যাচ্ছে তো মহেশ্বর?
কী জানি প্রভু। আমার তো সেই রকমই মনে হচ্ছে।
চলো না একবার দেখে আসি। আহা ওরা তো আমারই সন্তান।
প্রথমে কোন দেশে নামবেন?
কেন, ভারতে? ভারত হল পুণ্যভূমি। গঙ্গা, সিন্ধু, যমুনা যে দেশে প্রবাহিত। যার উত্তরে দেবতাদের আবাসস্থল, হিমালয়। যুগ-যুগ ধরে সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীরা সেই গিরি করে বসে দিবা নিশি আমার নাম করে চলেছে। যে দেশের দক্ষিণ তটভাগে সমুদ্রের অবিরত চুম্বন। সেই তীর্থভূমি ভারতেই চলো আমরা অবতরণ করি। স্বাধীনতা সেখানে প্রবীণ হতে চলেছে। বয়েস হল সাঁইত্রিশ। চলো-চলো মহেশ্বর, গণতন্ত্রের সেই পীঠস্থানে চলো।
মহেশ্বর এই সেই হিমালয়?
হ্যাঁ প্রভু এই সেই গিরিরাজ।।
কিন্তু এ কী! সেই পুণ্যভূমির এ অবস্থা নে? এখানে, ওখানে, সেখানে ডাণ্ডা পোঁতা ঝাণ্ডা, হুহু বাতাসে উড়ছে। কারণটা কী মহেশ্বর?
প্রভু এক্সিপিডিশান। এদেশ, ওদেশ, সে-দেশ সারা বছরই, কোনও না কোনও সময়ে পর্বত অভিযানে আসছে। এদল এপাশ দিয়ে ওঠে তো ওদল ওপাশ দিয়ে। দেশে-দেশে প্রতিযোগিতা। মাউন্টেনিয়ারিং এখন একটা ফ্যাশান। মনে নেই প্রভু, এভারেস্টের মাথায় হিলারি আগে উঠেছিল, না তেনজিং আগে, এই নিয়ে কী ঝামেলা।
বেশ সে না হয় হল। ছেলেমানুষরা অমন করেই থাকে। আমরাও যখন ছোট ছিলুম তখন ঢিবি দেখলেই চড়ে বসতুম। কিন্তু এত আবর্জনা কেন চারপাশে! এ তোমার কলকাতা না করাচি!
ওই যে প্রভু, দলে-দলে যারা এক্সপিডিশানে আসে তারা ফিরে যাওয়ার সময় টন-টন মাল, কাগজ, কৌটো হ্যাঁনা-ত্যানা ফেলে রেখে যায়। কে আর পরিষ্কার করে প্রভু! ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে সবই।
মহেশ্বর, ভারতীয়রা দেবতাত্মা হিমালয়ের এইভাবে, এঁটো-কাঁটা ফেলে মাহাত্ম্য নষ্ট করছে? বেদ-বেদান্তের দেশের মানুষ কি শেষে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হয়ে গেল!
ঈশ্বর! কিছু মনে করবেন না প্রভু! আপনাকে, আপনার সন্তানরা কবর দিয়ে দিয়েছে। বেদ আছে বেদান্ত আছে। গীতা আছে। কয়েকশো ব্যাখ্যা আছে। মন্দির আছে, মসজিদ আছে, গীর্জা আছে, গুরু আছে, চ্যালা আছে, মেলা আছে, প্রণামী আছে, সব আছে, কেবল আপনিই অনুপস্থিত।
মহেশ্বর আমার এ দশা হল কেন?
মানুষকে অত পাওয়ার দিলে এইরকমই হবে প্রভু। পিতা হয়ে পিতার কর্তব্য করেননি। শাসনের অভাব। আদরে সব বাঁদর হয়ে গেছে। পায়ের জিনিস এখন মাথায় উঠে নাচছে। ধর্ম কর্ম সব গেছে। থাকার মধ্যে আছে রাজনীতি। আপনাকে ভজে-ভজে মানুষের খুব আক্কেল হয়ে গেছে। পায় তো ঘোড়ার ডিম! কেউ তারকেশ্বর, কেউ কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। নিজের অন্ন না জুটলেও আপনার সেবা ঠিকই চড়ায়। পাণ্ডা আর সেবাইতদের পেট মোটা হয়। ঐশ্বর্য বাড়ে। নিজেরা পায় কঁচকলা। ছেলের চাকরি জোটে না। স্বামীর ক্যান্সার ভালো হয় না। কেউ দুর্ঘটনায় মরছে। কেউ ছুরি খাচ্ছে। সোনার সংসার এক কথায় ছারখার হয়ে যাচ্ছে। আপনার ওপর মানুষের আর আগের মতো বিশ্বাস নেই।
কেন মহেশ্বর, আমি তো বলেই দিয়েছি, কর্মফলেই এইসব হয়।
ওই পুরোনো যুক্তি মানুষ আর মানতে চাইছে না। সায়েবদের হাওয়া গায়ে লেগেছে। নিৎসে কী বলেছে জানেন, দি গড ইজ ডেড। আপনি মারা গেছেন।
সে আবার কে?
সে এক পাগল দার্শনিক। হিটলারের গুরু।
হিটলার? ও সেই পাগলাটা, যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়েছিল। ওর দোষ নেই মহেশ্বর। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় সব আমারই খেলা। মানুষকে শিক্ষা দেবার জন্য এসব আমারই ব্যবস্থা। নাও চলল, এই বরফের টঙে চড়ে আমার আর ভালো লাগছে না। শীত-শীত করছে। আমার স্বর্গে তো চির বসন্ত।
প্রভু এই হল আমাদের কাশ্মীর। যাকে ভূস্বর্গ বলে মানুষ নাচানাচি করে। সারা বছর ক্যামেরা কাঁধে ট্যুরিস্টরা এসে গুলমার্গ, সোনা মার্গে বরফের ওপর কাঠের জুতো পায়ে হড়কে-হড়কে বেড়ায়।
তাই না কী, এই তোমার সেই কাশ্মীর! এইখানেই তোমার সেই জাফরানের খেত। আহা কী শোভা!
আর এগোবেন না প্রভু। গুলি করে দেবে। শ্রীনগরে কার্ফু।
কার্ফু? সে আবার কী?
ও হল মানুষের জগতের নিয়ম। রাস্তায় বেরিয়েছ কী মরেছ।
তার মানে? ভূস্বর্গে লোকে বেড়াতে আসবে না?
এর নাম রাজনীতি মালিক। এটা তো বর্ডার স্টেট। সেই স্বাধীনতার পর থেকেই একটা -একটা ঝামেলা লেগেই আছে। ওপাশে পাকিস্তান, এপাশে হিন্দুস্তান। হাত ধরে টানাটানি। মা আমার ধর্ষিতা। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ।
আমার কৃষ্ণ কোথায়। সুদর্শন চক্র কি আর ঘোরে না।
প্রভু এক কুরুক্ষেত্রেই কৃষ্ণ কাত। গীতায় কিছু বাণী রেখে তিনি সরে পড়েছেন। চক্র এখন ছবি হয়ে আটকে আছে ভারতের তেরঙা জাতীয় পতাকায়।
তাহলে আমি আর একজন কৃষ্ণ তৈরি করি।
সে কৃষ্ণ শুধু বাঁশিই বাজাবে প্রভু। আর রাধার সঙ্গে প্রেম করবে। গণতন্ত্রে ভোট যুদ্ধই একমাত্র যুদ্ধ।
ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলো মহেশ্বর। পলিটিক্যাল সায়েন্সে আমার কোনও ডিগ্রি নেই।
ডিগ্রি, ডিপ্লোমার ব্যাপার এদেশ থেকেও ঘুচে গেছে প্রভু। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গাতেই এখন পেটো-পটকার খেলা। দু-দলে কাজিয়া। ভিসিরা ঘেরাও হয়ে বসে থাকে মল মূত্র চেপে।
ভিসি মানে?
ভাইস চ্যান্সেলার মালিক। কে ভাইস চ্যান্সেলার হবে সেই ফঁপরে পড়ে পশ্চিমবাংলার রাজ্যপালকে রাজভবন ছেড়ে পালাতে হয়েছে। ওরা এখন বলছে, রাজ্যপালের পদটাই তুলে দাও।
ওরা মানে?
ওই যারা বাম আর কী?
মানুষের আবার বাঁ-ডান আছে না কি। আমি তো ওদের দুটো হাত দিয়েছিলুম। একটা ডান আর একটা বাঁ। তা শুনেছি সরকারি অফিসে বাঁ-হাতের কারবার হয়।
ঠিকই শুনেছেন। তবে রাজনীতিরও বাঁ-ডান হয়েছে। আমেরিকা যাদের টিকি ধরে আছে তারা হল ডান। আর রাশিয়া যাদের কান ধরে আছে তারা বাঁ। তারা কেবল বলছে; বিপ্লব, বিপ্লব। আগে বিপ্লব তারপর জীবন। বলছে লড়ে যাও।
কার সঙ্গে লড়বে?
নিজেদের সঙ্গেই। রামের সঙ্গে শ্যাম, শ্যামের সঙ্গে যদু। এই তো সেদিন পশ্চিমবঙ্গে এক রাউন্ড হয়ে গেল। পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর।
মন্ত্রীতে-মন্ত্রীতে লড়াই! কী নিয়ে হল?
প্রভু, পৃথিবীর সব লড়াইয়ের মূলে তিনটি জিনিস–জমি, মেয়েমানুষ আর টাকা। টাকা নিয়েই হল। এ বলে, রুপেয়া লে আও, ও বলে কঁহা রুপেয়া। শ্রেণী সংগ্রাম প্রভু। যার আছে সে দেবে না। যার নেই সে ছাড়বে না।
এই বললে বামে-ডানে লড়াই। এখন বলছ বামে-বামে লড়াই।
প্রভু কত রকমের বাম আছে জানেন? মাথা খারাপ হয়ে যাবে। ও আপনার না জানাই ভালো। ভোট যুদ্ধের কথা শুনুন।
কিছু বুঝব না তো।
খুব সহজ। লোহার ফুটো বাক্সে লোকে ছাপামারা কাগজ ফেলবে। কিছু লোক নিজে নিজে ফেলবে। কিছু লোকের হয়ে অন্যে ফেলবে। তাকে ইংরিজিতে আগে বলত প্ৰসি এখন বলে রিগিং। সেই ভোটে একগাদা এম. এল. এ. হয়। এম. এল. এ. থেকে মন্ত্রী। মন্ত্রী থেকে একজন মুখ্যমন্ত্রী। ওদিকে কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী। তারপর দাবার খেল। দান ফেলল আর দান তোলো। মন্ত্রিসভা ফেলো। এম. এল. এ. কেনো। আর এক মুখ্যমন্ত্রী বসাও। গোলাগুলি, কার্ফু। আবার তাকে ফেলো, ফেলে আর একজনকে বসাও। ফেলা আর তোলা এই হল দাদা তোমার খেলা।
সারা দেশ জুড়ে এই ইয়ারকিই চলছে বুঝি! তা প্রজাপালনের কী হচ্ছে?
কঁচকলা হচ্ছে মালিক। রাজা-মহারাজাদের আমলে প্রজাপালন হত। এক রাজা আর তার চেলারা কত খাবে প্রভু। দেশের মানুষ তখন খেতে পেত। রাস্তাঘাট হত। পুকুর কাটানো হত। জলের ব্যবস্থা হত। মন্দির প্রতিষ্ঠা হত। উৎসব হত। গণতন্ত্রে প্রজা নেই, আছে ভোট। আর আছে শয়ে শয়ে এম পি, এম এল এ, মন্ত্রী। প্রভু তারা ভালো থাকলেই হল। খাচ্ছে-দাচ্ছে ভুড়ি বাগাচ্ছে। আর একবার এ-দল, একবার ও-দল করছে। প্রজাপালন সেকেলে ব্যাপার মহারাজ। তাদের জন্যে একটা সংবিধান আছে। তাও সাতশোবার জোড়াতালি মারা হয়েছে।
এ তুমি আমাকে কোথায় আনলে মহেশ্বর।
আপাতত আপনার পায়ের তলায় ভূস্বর্গ কাশ্মীর। শেখ আবদুল্লার জমিদারি ছিল। ফারুক আবদুল্লা দখলদারি নিয়েছিল। কেন্দ্র ল্যাং মেরে দিয়েছে।
তখন থেকে কেন্দ্র-কেন্দ্র করছ। কেন্দ্রটা কী।
আজ্ঞে দিল্লি। ইন্দিরার রাজধানী।
অ, সেই জওহরলালের মেয়ে!
আজ্ঞে মায়ে পোয়ে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এক ছেলে বিমান ভেঙে খসে গেছে তার বউ আবার একটা দল করে শাশুড়িকে ল্যাং মারার তাল খুঁজছে। বড় পোলা সিংহাসনে বসার জন্যে মায়ের পেছন-পেছন বিলিতি বউ নিয়ে ঘুরছে। আবার মোটরগাড়ির কারখানা খুলেছে। আর ওই দেখুন প্রভু ডাল লেকে সারি-সারি হাউসবোট। জনপ্রাণী নেই। কেউ আর বেড়াতে আসে না। গালে হাত দিয়ে বসে আছে। ট্যুরিস্ট এলে তবেই না তাদের গলা কেটে সারা বছর চলবে। পানি আছে, দানা নেই। দানার মধ্যে আছে বুলেট। একটা খেলেই এ রাজত্ব থেকে আপনার রাজত্বে।
মহেশ্বর গোলগুলির আওয়াজ পাচ্ছ?
পাচ্ছি প্রভু? একটু দূরে। অমৃতসরে লড়াই হচ্ছে।
কে আক্রমণ করলে?
কেউ না। নিজেদের মধ্যেই হচ্ছে। দেশটাকে শত-টুকরোর চেষ্টা চলেছে। পাঞ্জাব দু-টুকরো হয়েছে। আরও এক টুকরো করার তালে কিছু লড়াকু লোক বিদেশি মদত নিয়ে স্বর্ণমন্দিরে ঢুকে বসে আছে। কেন্দ্রের সেনাবাহিনী কামান দাগছে।
হায় ঈশ্বর!
আপনি নিজেই তো ঈশ্বর প্রভু। আপনার সন্তানদের খেল দেখুন।
শুনেছিলুম স্রষ্টা সৃষ্টি থেকে মহান। মহেশ্বর এ যে দেখি সৃষ্টিই মহান। আমার আর বেঁচে থেকে কী হবে? কোথায় আমার গুরু নানক। গুরু গোবিন্দ। তাদের একবার ডাকো।
কোনও লাভ নেই প্রভু। হয় আমেরিকা না হয় রাশিয়াকে ডাকুন।
চলো তা হলে ইন্দিরার কাছে যাই।
প্রভু দেখা হবে না। তিনি এখন অন্ত্র নিয়ে ন্যাজে-গোবরে।
অন্ধ্রে আবার কী বাঁধালে?
আমি বাঁধাব কেন? নিজেরাই লাগিয়ে বসে আছে। ফিল্মসের এক কৃষ্ণ নাম তার রাম রাও চৈতন্য রঙ্গমে চেপে একেবারে রমরম করে রাজ্য-সিংহাসনে বসেছিল। বেশ চলছিল। প্রায় একবারে সাধু হয়ে গিয়েছিল। শেষে বিকল হৃদয় সারাতে গিয়ে বিদেশ থেকে ফিরে এসে দেখে শ্যালক সিংহাসনে চেপে বসে আছে। কেন্দ্র খুব তো দড়ি টানাটানি করছিল। রামবাবু আবার অ্যায়সা চাল দিলেন শ্যালক চিৎপাত। মাঝখান থেকে হায়দরাবাদে কমুনাল রায়াটে সব চৌপাট হয়ে গেল।
এসবের কী মানে মহেশ্বর?
প্রভু এর নাম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজ্যশাসন। যেখানে দেশের চেয়ে গদি বড়। প্রজার চেয়ে চামচা বড়। আইনের চেয়ে ক্রাইম বড়।
ধরো।
কাকে ধরব পরমেশ্বর?
ইন্দুকে ফোনে ধরো।
হ্যালো। হ্যালো।
হ্যালো প্রাইমমিনিস্টারস সেক্রেটারিয়েট।
ইন্দু আছে?
কে ইন্দু?
তোমাদের প্রধানমন্ত্রী গো! বলো পরমেশ্বর কথা বলবেন।
পরমেশ্বর। সে আবার কে? কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী?
বলো, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যিনি প্রধান তিনি কথা বলবেন।
পি এম পাগলদের সঙ্গে কথা বলেন না।
অ, তাই নাকি? আচ্ছা সে কথা আমি খোদ মালিককে জানাচ্ছি। প্রভু পি এম আপনাকে পাগল ভেবেছেন। তার পি-এ বলছে, প্রধানমন্ত্রী পাগলদের সঙ্গে কথা বলে না।
আচ্ছা, তাই নাকি! তাহলে বাতাস-তরঙ্গে সরাসরি তার সঙ্গে কথা বললে কেমন হয়।
কোনও প্রয়োজন নেই। প্রভু আমি বরং একটু মজা করি। আবার একবার ফোন করি।
হ্যালো।
প্রাইম মিনিস্টারস…
মহেশ্বর বলছি।
কে মহেশ্বর প্রসাদ সিং?
না শুধু মহেশ্বর। ভক্তরা বলে ভোলা মহেশ্বর। তোমার মালকানকে বলো খোদ পরমেশ্বর কথা বলতে চেয়েছিলেন, তুমি যাকে পাগল বলে উড়িয়ে দিলে। মা-মণিকে শুধু স্মরণ করিয়ে দিও, নির্বাচন তো এসে গেল।
মহেশ্বর ফোন ছেড়ে দিলেন। কী মনে হল পি এম-কে একবার জানালেন, কে এক মহেশ্বর ফোন করেছিল, বলেছিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক পরমেশ্বর আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। পাগল ভেবে লাইন দিইনি। আবার ফোন করে বললে, বলে দিও নির্বাচন আসছে। তারপর লাইন ছেড়ে দিলে।
পি এম লাফিয়ে উঠলেন, মূর্খ? আমার সব সাধনা ব্যর্থ করে দিলে। আমি কখনও বেলুড়, কখনও তিরুচেরুপল্লী, কখনও আকালতখতে গিয়ে রাতের-পর-রাত সাধনা করে যাঁকে নামিয়ে আনলুম তাকে পাগল বলে ভাগিয়ে দিলি গাধা! সামনের নির্বাচনে আমার ফিউচার তোরা ভাবলি না। এখুনি যোগাযোগ কর ফোনে।
মাতাজি ভগবানের ফোন নম্বর যে পৃথিবীর ডাইরেক্টারিতে নেই!
তুমি মরে ভূত হয়ে জেনে এসো।
দেশের প্রায় সবাই তো মরে এসেছে দিদি! আর তাড়াহুড়োর কী দরকার। আপনি আর পরমশ্বের ছাড়া এরপর আর তো কেউ থাকবে না।
সব কটা স্যাটেলাইট একসঙ্গে চেষ্টা করতে লাগল– হ্যালো পরমেশ্বর, হ্যালো। কলকাতার সব ফোন বিকল? কারণ, সব ফোনই পরমেশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। হ্যালো পরমেশ্বর।