Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হরপ্পার শিলালিপি || Sujan Dasgupta » Page 7

হরপ্পার শিলালিপি || Sujan Dasgupta

আমরা সবাই একেবারে হতবাক হয়ে বসে আছি। ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট ভৈরববাবুকে নিয়ে যাবার পর প্রমথ বলল, “আপনি অবাক করলেন মশাই, কীভাবে জানলেন ভৈরববাবু প্রফেসর উডের মৃত্যুর ব্যাপারটা জানেন?”

“সন্দেহটা একটু একটু করে হচ্ছিল স্যার, কিন্তু দীপাদেবীর সুইসাইডের পর প্রায় নিশ্চিত হলাম।”

“হেঁয়ালি ছেড়ে ভালো করে ব্যাপারটা বলুন তো।” প্রমথ ধমক দিল। “আর একটু সহজ করে বলুন, বাপিকে তো আবার লিখতে হবে আপনার কীর্তিকাহিনি। সহজ করে না বললে ওর মাথায় ঢুকবে না।”

একেনবাবু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “প্রমথবাবু না স্যার, সত্যি!”

আমি বললাম, “ওর কথায় কান দেবেন না। যেমনভাবে বলতে চান, বলুন।”

একেনবাবু বাকি চা-টুকু খেয়ে শুরু করলেন, “আসলে দীপাদেবীর কেসটাতে কতগুলো ব্যাপার আমাকে ভীষণ কনফিউজড করছিল। এক নম্বর –দেবেশবাবু হরপ্পা বিশেষজ্ঞ না হয়েও হরপ্পায় যাবার সুযোগ কেন পেলেন? দু’নম্বর –স্বামীর মৃত্যুর পর চার বছর বাদে তাঁর একটা স্যুটকেস পেয়ে দীপাদেবী কেন অত বিচলিত হলেন? তিন নম্বর –সেই স্যুটকেস থেকে একটা পাথর দীপাদেবী নিয়ে এলেন, কিন্তু সেটা হারিয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েও সেটা ফেরৎ পাবার কোনো চেষ্টাই করলেন না।

কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না স্যার। এরপর পোকোনোতে গিয়ে রবার্ট উডের মৃত্যুর ব্যাপারে যা শুনলাম তাও বেশ কনফিউজিং। কেন উনি হরপ্পা থেকে ফিরে এসে মাত্র এক বছরের বিবাহিত স্ত্রী ম্যাডাম ক্লারাকে সম্পত্তির অধিকাংশ জিনিস দিয়ে ডিভোর্সে রাজি হলেন? কাকে তিনি কিছুদিন অন্তর অন্তর মোটা টাকা দিতেন? কেন তিনি ম্যাডাম ক্লারার পুরোনো একটা প্রেমপত্র রেখে দিয়েছিলেন? কেন উনি হঠাৎ আত্মহত্যা করতে গেলেন, যেখানে দুয়েকদিন আগেও আত্মহত্যার কোনো ইচ্ছে ছিল না? ফ্র্যাঙ্কলি স্যার আই হ্যাড নো ব্লু, কী থেকে কী হচ্ছে। তারপরেই বাপিবাবু আমার চোখখুলে দিলেন।”

“আমি!” অবাক হয়ে বললাম।

“হ্যাঁ স্যার, ঐ যে কবিতাটা, যত কিছু সুর, যা-কিছু বেসুর বাজে, মেলাবেন। ঠিক তখনই আমার মনে হল দেবেশবাবুর মৃত্যু, প্রফেসর উডের মৃত্যু –এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় স্যার। ধীরে ধীরে ক্লিয়ার হতে শুরু করল প্রফেসর উডের পাশে পাওয়া পাথরের টুকরোগুলোর সঙ্গে দীপাদেবীর পাথরের মিলটা।”

“আঃ, এতকথা না বলে বলুন ব্যাপারটা কী?” প্রমথ অধৈর্য হয়ে বলল।

“বলছি স্যার, বলছি। দেবেশবাবু রিটায়ার করার কিছুদিন আগে একটা ফেলোশিপ পেয়ে আমেরিকাতে এসেছিলেন। প্রথমে স্ট্যানফোর্ডে এসেছিলেন পরে প্রিন্সটনে যান। প্রিন্সটনে কাজ করছিলেন প্রফেসর উডের সঙ্গে। প্রফেসর উড তখন রিটায়ার করে রিসার্চ প্রফেসর। ধরে নিচ্ছি নিজের বাড়িতেই রিসার্চের কাজ অনেক করতেন। সেই সূত্রে দেবেশবাবুর সঙ্গে রবার্ট উডের স্ত্রী ক্লারার পরিচয় হয়। রবার্ট উডের অজান্তেই সেই চেনাজানাটা দ্রুতগতিতে ঘনিষ্টতার পর্যায়ে পৌঁছয়। প্রফেসর উড সেটা জানতে পারেন, সে নিয়ে এঁদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটিও নিশ্চয় হয়। কিন্তু এবার হল মুশকিল, রিসার্চের কাজে প্রফেসরকে যেতে হবে হরপ্পায়। নিজের সুন্দরী স্ত্রীকে ওঁর বিশ্বাস নেই, দেবেশবাবুকেও নয়। তখন রবার্ট সাহেব একটা প্ল্যান ফাঁদলেন। উনি দেবেশবাবুকে হরপ্পায় ওঁর সঙ্গে যেতে বললেন, যদিও দেবেশবাবুর কাজ হরপ্পার উপরে নয়। মনে আছে স্যার, স্টুয়ার্ট সাহেবের বন্ধু স্ট্যানফোর্ডের সেই প্রফেসরের কথা– যিনি খুব অবাক হয়েছিলেন দেবেশবাবুর হরপ্পা যাবার কথা শুনে। ধরে নিচ্ছি দেবেশবাবুর খরচা পাতি প্রফেসর উড নিজেই দিয়েছিলেন… ম্যাডাম ক্লারাকে দেবেশবাবুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এটা কোনো খরচই নয়।

দেবেশবাবুও প্রস্তাবে রাজি হলেন। হয় ওঁর নেশা কেটে গিয়েছিল, নয় উনি ভয় পাচ্ছিলেন প্রফেসর ওঁর অফিসে যদি ব্যাপারটা রিপোর্ট করেন, তাহলে একটা কেলেঙ্কারি হবে। বাকি প্রোগ্রাম ক্যানসেল করে উনি দেশে ফিরে গেলেন। এই জন্যই ওঁর ফেলোশিপে স্ট্যানফোর্ডে যাওয়ার কথা থাকলেও উনি আর যেতে পারেননি। তারপর দীপাদেবীকে বলে দেবেশবাবু হরপ্পায় গেলেন।”

“একটা প্রশ্ন”, প্রমথ বলল, “দেবেশবাবু যে রবার্ট উডের সঙ্গে যাচ্ছেন সেটা দীপাদেবীকে জানালেন না কেন।”

“ভেরি গুড কোয়েশ্চেন স্যার, একটু বাদেই সেখানে আসছি। হ্যাঁ, যা বলছিলাম প্রফেসর উড সাহেব যেটা বোঝেননি, সেটা হল ম্যাডাম ক্লারা দেবেশবাবুর জন্য একেবারে পাগল। দেবেশবাবুর মনোভাব জানা কঠিন, কিন্তু উনি নিশ্চয় ফাটা বাঁশের মাঝখানে স্যার। একদিকে দীপাদেবী, ম্যাডাম ক্লারাকেও এড়াতে পারছেন না, আবার প্রফেসর উডেরও ভয় আছে। হরপ্পায় ফোনে যোগাযোগ করতে পারাটা কঠিন, তাই মনে হয় ম্যাডাম ক্লারা তাঁর মনের কথা জানিয়ে দেবেশবাবুকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। হয়তো একাধিক চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু একটা চোখে পড়েছিল রবার্ট উডের। এটুকু বলে আমার দিকে তাকিয়ে একেনবাবু বললেন, প্রফেসর উডের বাড়িতে যে চিঠিটা আপনি আর ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট দেখেছিলেন, সেটা প্রফেসর উডকে উদ্দেশ্য করে লেখা নয়, সেটা দেবেশবাবুকে লেখা চিঠি। প্রিয়তম R-এর R হল রয়, দেবেশবাবুর পদবি, রবার্ট নয়। আমার বিশ্বাস ঐ চিঠিটাই প্রফেসর উডের হাতে কোনো-না-কোনোভাবে পৌঁছেছিল। মানুষের মন বিচিত্রভাবে কাজ করে স্যার। কেন ম্যাডাম ক্লারার আর কোনো চিঠি বাড়িতে না রেখে, শুধু এই চিঠিটাই প্রফেসর রেখে দিয়েছিলেন, সেটা মনোবিদরাই বলতে পারবেন।”

“যাইহোক,” একেনবাবু বলে চললেন, “প্রফেসর উড নিশ্চয় এই চিঠিটা দেখে ক্ষেপে উঠলেন। তারপর কী হল আমরা শুধু অনুমান করতে পারি স্যার। আমার ধারণা, দেবেশবাবু ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটবে আশঙ্কা করেছিলেন। সেই ভয়ে স্যুটকেস প্যাক করে, ক্যাম্প ছেড়ে পালাবার উদ্দেশ্যে স্টেশনে যাচ্ছিলেন। ওঁদের দুজনের মধ্যে তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে দেবেশবাবু ওঁর রিসার্চ পণ্ড করার জন্য ওঁদের যেটা সবচেয়ে বড় আবিষ্কার সেই পাথরটা নিজের স্যুটকেসে প্যাক করে নিয়েছিলেন। কিন্তু অদৃশ্য হতে পারার আগেই তিনি খুন হন। প্রফেসর উড নিজে দেবেশবাবুকে খুন করেছিলেন, না অন্য কেউ ওঁর হুকুমে গুলি চালিয়েছিল, সেটা স্যার জানা অসম্ভব। তবে উনি যে দেবেশবাবুর মৃত্যুর জন্য দায়ী সে বিষয় আমি নিশ্চিত।”

“ওয়েট এ মিনিট, প্রমথ বলল, “এটা তো শ্রেফ আপনার কল্পনা বলে আমি উড়িয়ে দিতে পারি।”

“তা পারেন স্যার, কিন্তু তাহলে প্রফেসর উডের পরের অ্যাকশনগুলো এক্সপ্লেইন করতে পারবেন না।”

“তার মানে?”

“একটু ভাবুন স্যার, প্রফেসর ফেরা মাত্র ম্যাডাম ক্লারা ডিভোর্স চাইলেন আর প্রফেসর উচ্চবাচ্য করে ম্যাডামকে বাড়ি, গাড়ি, ইত্যাদি –যা প্রাপ্যের থেকে অনেকে বেশি দিয়ে দিলেন। কেন?”

“আই ডোন্ট নো।”

“তার একটাই সম্ভাব্য কারণ স্যার, প্রফেসর উডের সঙ্গে যখন দেবেশবাবুর ঝগড়া চলছে, তখন দেবেশবাবু নিশ্চয় আঁচ করতে পেরেছিলেন যে ওঁর জীবনসংশয় হতে পারে। সেটা তিনি ম্যাডাম ক্লারাকে জানিয়েছিলেন। দেবেশবাবুর মৃত্যুর পর, সেটাই হয়ে দাঁড়াল ম্যাডাম ক্লারার তুরুপের তাস। প্রেমিককে তিনি পেলেন না, কিন্তু তার জন্য খেসারত পুরোপুরি আদায় করলেন প্রফেসর উডের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, আমার বিশ্বাস ডিভোর্সের পরেও যখন প্রয়োজন হতো সোজা এসে দশ পনেরো হাজার ডলার নিয়ে চলে যেতেন। টাকা না দিলে পুলিশের কাছে সব কিছু ফাঁস করে দেবেন ভয় দেখিয়ে। প্রফেসরের ভাঁড়ার যখন শূন্য হয়ে আসে তখন ম্যাডাম ক্লারা ক্যালিফোর্নিয়া চলে যান।”

“বুঝলাম, কিন্তু দীপাদেবী কেন সন্দেহ করলেন স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে রবার্ট উড জড়িত?”

“দীপাদেবীর চরিত্রটা স্যার মোস্ট কমপ্লেক্স। উনি পাথরটা নিয়ে এসেছিলেন অনেক ঝুঁকি নিয়ে। এইসব জিনিস বাইরে আনা বে-আইনি নিশ্চয় উনি জানতেন। তবু ওটা এনেছিলেন যাঁর প্রাপ্য তাঁকেই ফেরত দিতে। উনি জানতেন কার সঙ্গে দেবেশবাবু হরপ্পা গিয়েছিলেন, তবে জানতেন না কোথায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। নিজের অজান্তেই ওঁকে সাহায্য করলেন প্রফেসর গেরহার্ট।”

প্রফেসর গেরহার্ট বললেন, “দীপা তো প্রফেসর উড সম্পর্কে কিছু জানতে চাননি, আমিই বরং উদ্যোগী হয়েছিলাম।”

“তা চাননি স্যার, কিন্তু পাথরের প্রসঙ্গটা উনিই তুলেছিলেন। শুধু তাই নয় বলেছিলেন পাথরটা উনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। স্বামীর মৃত্যু-কাহিনিতে এই পাথরের গল্পটা যোগ করা আমার একটু অবান্তর মনে হয়েছিল স্যার। কিন্তু দীপাদেবী জানতেন যে এই পাথর সম্পর্কে ইন্টারেস্ট শুধু কয়েকটি লোকের থাকবে। তাঁদের কাছ থেকেই প্রফেসর উডের খবর পাওয়া যাবে।”

প্রমথ বলল, “কিন্তু এত বাঁকা পথে এগোনোর কি দরকার ছিল, সোজাসুজি গেরহার্ট সাহেবকে বললেই তো হত।”

“তার কারণ খুব সিম্পল, উনি চাননি প্রফেসর উড আগের থেকেই জানুন যে দেবেশ রায়ের স্ত্রী ওঁর খোঁজ করছেন। দীপাদেবী আঁচ করেছিলেন স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারে প্রফেসর উড সম্ভবত জড়িত। সন্দেহ শুরু হয়েছিল ওই স্যুটকেসটা পাবার পর থেকে। হয় যে নিয়ে এসেছিল তার দেওয়া কোনো খবরে অথবা স্যুটকেসের ভেতর ম্যাডাম ক্লারার কোনো চিঠিপত্র থেকে। দেবেশবাবু যে নারীঘটিত কোনো একটা সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁর আকস্মিক মৃত্যুটা কোনো ডাকাতের আক্রমণে নয়, এই সন্দেহ মনে হয় তাঁর জেগেছিল। যেটা আমরা জানি স্যার, সেটা হল স্যুটকেস পেয়ে দীপাদেবী খুবই বিচলিত হয়েছিলেন। শুভবাবু মাকে ধীরস্থির মহিলা বলেই জানতেন। তিনি মা-কে এরকম আপসেট হতে দেখে যখন প্রশ্ন করেছিলেন, দীপাদেবীর উত্তর, ‘তুই বুঝবি না, তোকে বোঝানো যাবে না। বাবার মৃত্যুতে মায়ের দুঃখ হয়তো ছেলেকে বোঝানো যায় স্যার। কিন্তু বাবার পদস্খলনে মায়ের দুঃখটা ছেলেকে বোঝানো শক্ত।”

এটুকু বলে একেনবাবু একটু চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, “দীপাদেবী একজন রিমার্কেবল লেডি স্যার। ওঁর কর্তব্যজ্ঞান প্রবল। বহুমূল্য পাথরটা উনি যাঁর প্রাপ্য, যিনি এর সুব্যবহার করতে পারবেন –তাঁর হাতেই ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। অন্যপক্ষে শি ওয়াজ ইন এ মিশন টু ফাইণ্ড দ্য ট্রুথ।”

“তা বুঝলাম, কিন্তু ভৈরববাবু এ ব্যাপারে জড়িত –সেটা সন্দেহ করলেন কেন?”

“কারণ মনে হল স্যার, এ ব্যাপারে যিনি ওঁকে সাহায্য করতে পারেন তিনি হচ্ছেন ভৈরববাবু। ভৈরববাবুকে দীপাদেবী বহুদিন ধরে চিনতেন। তিনি ছিলেন প্রায় ভাইয়ের মতো এবং ওঁর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। একমাত্র তাঁর সাহায্যই চাওয়া যায় প্রফেসর উডের বাড়িতে পৌঁছে দেবার জন্য। ওই একটা জায়গাতেই আমি একটু চান্স নিয়েছিলাম স্যার। শুভর কোনো বন্ধুর সাহায্য নিতে পারতেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল এই মিশনে ছেলের কোনো বন্ধুকে জড়াবেন না। কিন্তু দেখলাম ভৈরববাবুকে চেপে ধরতেই বেশ মিলে গেল।”

“তাহলে পাথর চুরি হয়ে যাবার ব্যাপারটা পুরো সাজানো?”

“হ্যাঁ স্যার, হয়তো ভৈরববাবুর সঙ্গে পরামর্শ করেই গল্পটা বানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রফেসর উডের মৃত্যুর জন্য যে তিনি দায়ী এই চিন্তাটা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছিলেন না। সেইজন্যই ওই ঘটনার পরে উনি মানসিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এরমধ্যে অধ্যাপক গেরহার্ট আমাকে নিযুক্ত করলেন চুরির কিনারা করতে। তখনই হল মুশকিল। খবরটা শুনে ভৈরববাবু নিশ্চয় ওঁকে সতর্ক করেছিলেন, কারণ ওঁর আবার আমার ক্ষমতার উপর একটু বেশি আস্থা। তাই প্রথমে ‘হ্যাঁ’ বলেও দীপাদেবী পিছিয়ে যান। ভৈরববাবুও স্যার নিশ্চিত হতে চাইছিলেন যে চুরি নিয়ে আমি আর তদন্ত করছি না, তাই বাপিবাবুকে দিয়ে সেটা কনফার্ম করার চেষ্টা করেছিলেন। চুরি-রহস্যের সমাধান হয়ে গেলে উনিও তো সমস্যায় পড়বেন। এদিকে বাঁচার ইচ্ছে দীপাদেবীর ফুরিয়েই আসছিল, সেটা তো দেখলেনই স্যার।”

আমি আর প্রমথ চুপ। প্রফেসর গেরহার্ট শুধু মাথা নেড়ে বললেন, হোয়াট এ ট্র্যাজেডি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7
Pages ( 7 of 7 ): « পূর্ববর্তী1 ... 56 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *