Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 48

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

পর দিবস প্রাতে যমুনাদাস বাড়ীর বাহির হইয়া, পুলিস এ সম্বন্ধে কি করিতেছে, তাহাই সন্ধান লইতে আরম্ভ করিল। জানিল যে, পুলিস যে লাস লইয়া গিয়াছে, এখন পৰ্য্যন্ত লাস সেনাক্ত হয় নাই। সে জানিত, কেহই তাহাকে সন্দেহ করিবে না। যে লোকটা রঙ্গিয়ার নিকট হইতে পলাইয়াছিল, সে তাহাকে দেখে নাই—দেখিলেও ভাল করিয়া দেখে নাই। বিশেষতঃ তাহাকে চিনিবার তাহার কোন সম্ভাবনা ছিল না। তাহার ছদ্মবেশ ছিল; বিশেষতঃ তাহার সেই লম্বা কালো দাড়ি। এক রাত্রে এক সময়ে দুইটা খুন করিয়া বোধহয়, যমুনাদাস ভিন্ন কেহ এরূপ নিশ্চিন্তভাবে বেড়াইতে পারিত না। তাহাকে দেখিলে কেহ বুঝিতে পারিত না যে, এই লোক এই ভয়াবহ কাণ্ড করিয়াছে।

গঙ্গাকে সকল কথা বলা যমুনাদাস নিতান্ত প্রয়োজন মনে করিল। সে জানিত, পুলিস দুই- একদিনের মধ্যেই কে খুন হইয়াছে, জানিতে পারিবে; তখন তাহারা হুজুরীমলের বাড়ী যাইবে —গঙ্গা, যমুনা প্রভৃতিকে জেরা করিবে। হুজুরীমলের স্ত্রী বা যমুনা কিছুই জানে না; রঙ্গিয়া যদিও জানিত, সে আর এ পৃথিবীতে নাই। একমাত্র গঙ্গা—তা যমুনাদাস তাহাকে বেশ জানিত যে, পুলিস সহজে তাহার নিকট হইতে কোন কথা বাহির করিতে পারিবে না; তবুও তাহাকে সাবধান করিয়া দেওয়া কৰ্ত্তব্য।

রঙ্গিয়া ও তাহার উভয়ের জন্যই গঙ্গা উদ্বিগ্ন থাকিবে, তাহার নিকটে এ ব্যাপার গোপন করা ঠিক নহে। কি জানি, যদি এ অবস্থায় সে নিজেকে সাম্‌লাইতে না পারিয়া কোন কথা পুলিসকে বলিয়া ফেলে? এই সকল ভাবিয়া যমুনাদাস চন্দননগরে গিয়া গোপনে গঙ্গাকে সকল কথা খুলিয়া বলিল। অন্য স্ত্রীলোক হইলে বোধহয়, ভয়েই অস্থির হইত; কিন্তু গঙ্গা পরম নিশ্চিন্ত মনে হাসিয়া বলিল, “শেষে বুড়োর এই দশা হইল?”

যমুনাদাসও গঙ্গার এই নিৰ্ম্মম ভাবে যেন কিছু লজ্জিত হইল। বলিল, “যথার্থই তাহাকে খুন করিবার ইচ্ছা ছিল না; সে আমাকে কিছুতেই ছাড়ে না—কি করি?”

গঙ্গা বলিল, “যাহা হইয়া গিয়াছে, তাহার উপায় নাই। রঙ্গিয়াকে ওরকম না করিলেই, ভাল ছিল।”

“সে সব কথা প্রকাশ করিয়া দিত। বোধহয়, যে লোকটার সঙ্গে সে কথা কহিতেছিল, তাহাকে বলিয়াছিল।”

“সে কে?”

“কেমন করিয়া জানিব? তাহাকে দেখিবার অবকাশ পাই নাই। নিশ্চয়ই রঙ্গিয়ার প্রেমাকাঙক্ষী। তাহার সঙ্গে সেই রাত্রে এইখানে দেখা করিবার নিশ্চয়ই কথা ছিল; নতুবা অত রাত্রে সে সেখানে থাকিবে কেন? আগে হইতে বন্দোবস্ত ছিল।”

“সে ত আমাকে কিছু বলে নাই।”

“আমরা ভাবিয়াছিলাম, সে পাঁচ শত টাকার লোভে এ কাজ করিতেছে তাহা নয়—সমস্ত টাকাই নিজে হাতাইবার চেষ্টায় ছিল, তাই সে সেই লোকটাকে গঙ্গার ধারে সেই সময়ে অপেক্ষা করিতে বলিয়াছিল, ভাবিয়াছিল, আমি তাহাকে দিয়া তোমার কাছে টাকা পাঠাইব। তখন আমি চলে গেলে সে ফিরিয়া আসিয়া সেই লোকটাকে টাকা দিবে।”

গঙ্গা হাসিয়া বলিল, “মোটের উপর তাহাই দাঁড়াইল, তোমার খুন করাই সার হইল।”

ক্রোধে যমুনাদাস উন্মত্তপ্রায় হইল; কিন্তু মনোভাব গোপন করিয়া বলিল, “যা হবার হইয়া গিয়াছে।”

“এখন ফাঁসী যাহাতে না যাও, তাহারই চেষ্টায় থাক।”

“এখন তুমি অনুগ্রহ করিয়া না প্রকাশ করিলে, আমাকে কেহই সন্দেহ করিতে পারিবে না।”

“আমার দ্বারা প্রকাশ হইবে না, নিশ্চিন্ত থাক।”

“তাহা আমি জানি।”

যমুনাদাস হুজুরীমলের বাড়ী প্রবেশ করিয়া দেখিয়াছিল যে, নগেন্দ্ৰনাথ বসিয়া আছেন। তাহার পর যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি।

নগেন্দ্রনাথ নিকটে খুন সম্বন্ধে পুলিস কি করিতেছে, জানিয়া একটা ফন্দী যমুনাদাসের মাথায় আসিয়া জুটিয়াছিল। ইহাদের সঙ্গে মিশিয়া পড়িতে পারিলে, পুলিসের সকল সংবাদ পাওয়া যাইতে পারিবে; সুতরাং সঙ্গে সঙ্গে সেইরূপ সাবধানও হইবার সুবিধা হইবে।

খুনের সঙ্গে সঙ্গেই যমুনাদাস একটা বুদ্ধি খেলাইয়াছিল। দুই লাসের কাছেই পঞ্জাবের সম্প্রদায়ের চিহ্ন সিঁদুরমাখা শিব রাখিয়া দিয়াছিল। ভাবিয়াছিল, তাহা হইলে সন্দেহ সম্প্রদায়ের উপরেই পড়িবে। নগেন্দ্রনাথের সহিত মিলিবার আরও কারণ যে, তাহা হইলে অক্ষয়কুমারের সন্দেহ গুরুগোবিন্দ সিংহের উপর যাহাতে পড়ে, তাহারই চেষ্টা করিবে।

সে তাহাই করিতেছিল। প্রকৃতপক্ষে তাহার উপরে কাহারই সন্দেহ হয় নাই। ভগবান্ না মারিলে তাহাকে কেহই ধরিতে পারিত না। নগেন্দ্রনাথের নিকটে সে প্রথমে জানিল যে, সে রাত্রে রঙ্গিয়া যাহাকে নোট দিয়াছিল, সে উমিচাঁদ। এখনও নোট উমিচাঁদের হাতে আছে।

যমুনাদাস নোটের লোভ সম্বরণ করিতে পারিল না। উমিচাঁদকে পত্র লিখিল। সে কুক্ষণে সেই পত্র লিখিয়াছিল, নতুবা কেহই তাহাকে ধরিতে পারিত না।

ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে এইসকল কথা প্রকাশ হইল। যমুনাদাস দুই খুনের অপরাধে সেসন সোপর্দ হইল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *