হঠাৎ বৃষ্টির মতো এলি তুই, হঠাৎ!
এমন বৃষ্টিতে ভিজতে হয়, ভিজতেই হয়,আমি ভিজলাম।
তুইও ভিজলি আমার সঙ্গে, বৃষ্টি ভেজা তুই- এর গল্প না হয় অন্য আরেক দিন হবে।
জানিস, আমার সঙ্গে বৃষ্টির খুব ঘনিষ্ট মিল আছে, আমার খুব খুশির দিনে বৃষ্টি হয়। দেখ আজ তুই পাশে আছিস আর…
বৃষ্টিতে ভিজছি আমরা, ছাতা আনতে ভুলে যাওয়ার অছিলায়।
বল, বৃষ্টিতো এমনি হয়, যার একটা ঘর আছে তারই তো ভিজতে ভালো লাগে!
কত দিন বৃষ্টি ভিজিনি, শুধু একটা ঘর ছিল না তাই।
বেলা গেলো বয়ে, সময় বয়ে এলো তোর ফিরতি ট্রেনের। তক্ষুনি তুই বললি, ‘আমি তো ছাতা আনিনি, ভুলে গেছি; বাড়ি ফিরতে হবে তো।’
বললাম আমি ‘চিন্তা করিস না, আমার কাছ থেকে তুই চলে যাবি তো! বৃষ্টিও থেমে যাবে।’
এগাচ্ছি আমরা স্টেশনের দিকে, ওকে ট্রেন ধরিয়ে দেবো বলে,
এগাচ্ছি আমরা…
বৃষ্টি আরো রোগা, আরো সরু, আরো মিহি হয়ে আসছে।
ক্রমে ক্রমে কমে আসছে যেন।
সে ট্রেনের দরজার ভেজা মুখটায় দাঁড়িয়ে,
তখনও ছাড়েনি ট্রেনটা, আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে।
তারমধ্যেই চোখ পাকায়ে বলা হল, ‘যা ভিতরে গিয়ে বস’।
কথা শেষ হতেই বিষন্ন বাতাসে উত্তর ভেসে এলো শান্ত গলায় ‘আর একটু দেখি’।
যদিও আমারও যে একই ইচ্ছা, আর একটু দেখি আর একটু…(!)
কিছু বলা গেলো না তাই।
এমনি এমনি কী বলি সে আমার না বলা কথা শুনতে পাওয়া মেয়ে!
এই আবার বিদ্যুৎ চমকালো কিন্তু আওয়াজ হলো না কোনো,
কিন্তু সে ততক্ষনে ভয়ে কুঁকড়ে গেছে হাতটা চেপে ধরছে আমার,
স্টেশনের লোকজনকে তয়াক্কা না করেই।
সে বিদ্যুৎ চমকালে বড় ভয় পায় মুখ গুঁজে দেয় বালিশে, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে অভয় দিলাম।
তখন যেন মনে হল, যে এতকাল একটা ঘর খুঁজেছে সেই এখন একজনের ঘর।
তার দিকেই তাকিয়ে আমি,তার মণিতে আমি।
এই বোধহয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আয়না নিজেকে খুঁজে পাওয়ার! এই কী তবে শ্রেষ্ঠ অনুভূতি ভালোবাসার!
তবুও যেন কোথা থেকে উরন্ত কোনো দমকা বাতাসে সোঁদা মাটির গন্ধ উড়ে এসে বিষন্নতা ছড়িয়ে দিয়েছে স্টেশনের চত্বরে।
হুইসল দিয়ে ট্রেন বেরিয়ে যাচ্ছে স্টেশন থেকে,
তাকেও যেন একটু একটু করে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে আমার কাছ থেকে।
বৃষ্টিও প্রায় থেমেই গেছে তবু ধূসর মেঘলা আকাশ বিছিয়ে রেখেছে আকাশে।
‘ভিতরে গিয়ে বস্’ ‘সাবধানে যাস’ বলার পরই
শোনা গেল হু তুইওওও সাবধানে যাস…
গোটা ট্রেনটা চলে না যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দেখলাম আমি।
তারপর চলে আসছি এরপর আমাকেও ট্রেন ধরতে হবে, আমাকেও ফিরতে হবে।
চলতে চলতে ট্রেনটার দিকে ফিরে তাকালাম একবার,
ঠিকভাবে দেখায় গেলো না তখন তাকে সময় কেড়ে নিয়ে চলে গেছে বহুদূরে..(!)
আমি জানতাম সে চলে গেলে থেমে যাবে বৃষ্টি,
সে চলে গেল, বৃষ্টি থেমে গেছে।
তবু যেন এখনো চোখ গুলো ভিজে।
তবু চোখে লেগে আছে শেষবার ফিরে তাকানো তুই’টা, তাই চোখ মুছিনি আর।
সেই চোখগুলো যেন শপথ নিয়েছে না বলা কথায়,
নিদানকালের বাম পাশ দশমিকের আগের শূন্যতে ভরবে না।
তাই যেন এখনো আমার হাতে লেগে আছে তার হাত,
আর কানে যেন এখনো লেগে আছে,’ তুইও সাবধানে যাস।’
তখনো আমার বুকপকেটে ছোটোখাটো বজ্রপাত, যদিও সে শুনতে পাবে না অনেকটা দূরে আছি দুজনে।
আমি শুধু মনে মনে প্রার্থনা করছি বিদ্যুৎ যেন না চমকায়, তার এসবে খুব ভয়।
তুই নেই তবু তোর চিন্তাটা রয়ে গেছে, হ্যাঁ আমি সাবধানে ফিরেছি।
তুই চলে গেলি দেখ বৃষ্টিও থেমে গেছে।