Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্যার আর্থার কোনান ডয়েল || Sankar Brahma

স্যার আর্থার কোনান ডয়েল || Sankar Brahma

শার্লক হোমসের স্রষ্টা “স্যার আর্থার ইগনেতিয়াস কোনান ডয়েল’ ২২শে মে, ১৮৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রেট ব্রিটেনের প্রচুর রক্ষণশীল ধনী আইরিশ ক্যাথলিক পরিবারে তিনি বেড়ে ওঠেন। তাঁর মা ‘মেরি ফোলি’ বাড়ির রক্ষণশীলতার ভিতরও কীভাবে চিঠির মাধ্যমে তাঁর আবেগকে একত্রিত করে তা তার সন্তানদের কাছে প্রেরণ করতে হয় জানতেন. অন্যদিকে তাঁর বাবা চার্লস ছিলেন এক চমৎকার ড্রাফটসম্যান (তাঁর কভার চিত্রিত স্কারলেট পড়াশোনা, হোমস অভিনীত প্রথম বই)। তবুও সে ছিল এক মদ্যপায়ী, যার জন্য, তিনি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থাগুলিতে থেকে গেছেন। তেমনি, তাঁর বাবার অসুস্থতার কারণে কাকারা শিশু বয়সে (৯ বছর) আর্থারের দায়িত্ব নেয়।

স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং সুলেখক।
বোয়ারের দুর্দান্ত যুদ্ধ (১৯০০ সাল) এবং হারানো পৃথিবী (১৯১২ সাল) সম্ভবত সর্বাধিক পরিচিত। ডয়েল এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক, রোমান্টিক উপন্যাস প্রকাশ করেছিলেন। বিজ্ঞান কথাসাহিত্যের পাশাপাশি কমিক গল্প, নাটক, কবিতা বই, প্রবন্ধ এবং একটি আত্মজীবনী তিনি লিখেছেন। তাঁর অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে কল্পবিজ্ঞান গল্প, নাটক, প্রেমের উপন্যাস, কবিতা, ননফিকশন, ঐতিহাসিক উপন্যাস এবং রম্যরচনা।
তরুণ ডয়েল ১৯৬৮ সালে, ইংল্যান্ডে ল্যাঙ্কাশায়ারে অবস্থিত স্টনিহার্স্ট সেন্ট মেরি হল জেসুইট কলেজ (প্রিপারেটরি বোর্ডিং স্কুল) থেকে পড়াশোনা করেছেন। ১৮৭০ সালে তিনি মূল প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হন – স্টনিহার্স্ট কলেজ – ১৮৭৫ সালে। সেখানে তিনি অস্ট্রিয়া এর ফিল্ডকির্চের জেসুইট স্টেলা মাতুতিনা স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যান। একবছর পরে তিনি মেডিসিন পড়ার জন্য এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই সিদ্ধান্তটি তাঁর সমস্ত আত্মীয়দের অবাক করে (তাদের বিশ্বাস করেছিল যে তিনি কলা অধ্যয়ন করবেন)। তাঁর ডাক্তারি পড়াশোনার পাশাপাশি, ডয়েল বিভিন্ন খেলাধুলায় (রাগবি, গল্ফ এবং বক্সিং) প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তাঁর প্রথম ছোট গল্প ‘সাসাসা উপত্যকার রহস্য’ (১৮৭৯ সালে) চেম্বারসের এডিনবার্গ জার্নাল.পারাপার-য়ে প্রকাশিত হয়।
১৮৮০ সালে, আর্থার ডোল একটি তিমিবাহী পার্কে আর্কটিকের সার্জন হিসাবে তাঁর ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছিলেন। পরের বছর তিনি একজন ডাক্তার হিসাবে স্নাতক হন এবং ১৮৮৫ সালে তিনি ডক্টরেট শেষ করেন। এরই মধ্যে, ১৮৮২ সালে তিনি আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে ভ্রমণ করার সুযোগ পান এবং তাঁর প্রথম বইগুলি লেখা শুরু করেন। এই গ্রন্থগুলি তাঁর সমুদ্র ভ্রমণে অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিকেট ক্লাবে তিনি জেমস বারি এবং রবার্ট এল স্টিভেনসনের (ভবিষ্যতের লেখকদের) সাথে দেখা করেছিলেন। সেই সময়ে, ডয়েল ক্যাথলিক ধর্মের ক্ষতির দিকে তাঁর আধ্যাত্মিক পথ শুরু করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, কয়েক বছর পরে তিনি “সাইকিক ধর্ম” এর বর্তমান সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন।

তাছাড়া দুইবার ব্রিটেনে নির্বাচনেও অশংগ্রহণ করেছেন কোনান ডয়েল। হেরেছেন দুবারই, কিন্তু বেশ ভাল ভোটও পেয়েছিলেন। অবশ্য এ সাফল্যের বেশীরভাগটাই যে শার্লকের জনপ্রিয়তার জোরে, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সাহিত্যে মন পড়েছিল বলেই ডাক্তারী পেশাতে মনোনিবেশ করতে পারেননি, এমন ধারণা করারও কিন্তু উপায় নেই। তিনি দুটি পোর্টসমাউথ এবং পরে লন্ডনে দুটি মেডিকেল অফিস স্থাপন করেছিলেন। উভয় ক্ষেত্রেই, তিনি তার পেশাকে টেকসই করতে প্রয়োজনীয় উপার্জনের পথ গ্রহণ করেননি। যাইহোক, এই পরিস্থিতিতে লেখার জন্য তাঁর প্রচুর সময় বাকি ছিল। ফলে, সংক্ষিপ্ত গ্রন্থের প্রকাশনা হাজির হন – জে হাবাকুক জেফসনের গল্প (১৮৮৪ সাল) ও ক্লোবার রহস্য (১৮৮৯ সাল)।
তিনি সত্যিই চেষ্টা করেছেন পেশাগত জীবনে সফল চিকিৎসক হতে। তাই যখন পসার জমছে না, তখন চোখের উপর গবেষণা জার্নাল প্রকাশ করে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পাশ্চাত্যে এখন যেমন সবচেয়ে বেশী ব্যস্ততা ও পয়সার আনাগোনা ডেন্টিস্টদের চেম্বারে, উনবিংশ শতকের শেষের দিকে সে সফলতার ভিড় ছিল চক্ষু বিশেষজ্ঞদের দরজায়। তবে ডয়েলের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি, বরং উত্তপ্ত কড়াই থেকে যেন জলন্ত চুলায় গিয়ে পড়েছিলেন। চক্ষু চিকিৎসক ডয়েলের চেম্বারে একজন রোগীরও দেখা মেলেনি কখনও।
জীবিকার তাগিদেই শেষ পর্যন্ত ডাক্তারী ছেড়ে পুরোদস্তুর সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন ডয়েল। স্কটিশ লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল শার্লকের চারটি উপন্যাস ও চুয়ান্নটি ছোটগল্প ছাড়াও আরো বহু বিচিত্র সাহিত্য উপহার দিয়েছেন পাঠককে। প্রফেসর চ্যালেঞ্জার নামে ডয়েল সৃষ্ট আরেকটি চরিত্র প্রথম দিকে শার্লকের পাশাপাশি দারুণ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিল সেই সময়ে। এছাড়াও সায়েন্স ফিকশন, নাটক, রোম্যান্স, কবিতা, ঐতিহাসিক উপন্যাস, স্মৃতিকথা আর কিছু নন-ফিকশন রচনাও আছে তাঁর।
১৯০০ সালে, ডয়েল কতৃক প্রকাশিত হয়েছিল ‘মহান বোয়ার যুদ্ধ’। এটি এমন একটি ইশতেহার যা দক্ষিণ আফ্রিকাতে সংঘটিত একই নামের যুদ্ধে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশগ্রহণকে ন্যায়সঙ্গত করে তুলেছিল। এই বইটি যুক্তরাজ্যের অভিজাতদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। যে বিষয়টি তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অর্ডার অব নাইট হয়ে শেষ হয়েছিল, তার পর থেকে তাকে “স্যার” বলে গণ্য করা হয়েছিল। বর্তমান সময়ে এসে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য, ডয়েল ব্রিটেনের রাণীর কাছ থেকে নাইটহুড উপাধি পেয়েছেন বোয়ার যুদ্ধ নিয়ে নন-ফিকশন লেখাগুলোর জন্য। তার নামের আগে ‘স্যার’ উপাধি যুক্ত এ কারণেই, শার্লক হোমসের সৃষ্টির জন্য নয়। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে শার্লকের ছায়ায় ঢাকা পড়ে তার অন্য সব সৃষ্ট সাহিত্য। এ নিয়ে ভীষণ আক্ষেপও ছিল একসময় ডয়েলের।

শার্লক হোমস লিখতে গিয়ে নতুন কোন সাহিত্যে মনোযোগ দিতে পারছেন না বলে ডয়েল নিজের মাকে চিঠিতে জানান, তিনি শার্লক হোমসকে খুন করতে চান, কারণ শার্লক তার সমস্ত সাহিত্য সৃষ্টির প্রতিভাকে প্রতিনিয়ত খুন করে ফেলছে। আর তারপর তা করেও ফেলেন, ‘দ্য ফাইনাল প্রবলেম’ গল্পে হাজার হাজার পাঠকের মন ভেঙে শার্লক হোমসকে খুন করালেন।

দীর্ঘদিন শার্লক হোমস নিয়ে আর লেখেননি তারপর, কিন্তু ফিরতে হলো একসময় পাঠকদের চাহিদা ও ভালবাসার চাপেই, ফেরাতে হলো শার্লক হোমসকে। ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য এমটি হাউজ’ গল্পে অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে এলেন শার্লক হোমস। মজার ব্যাপার হচ্ছে, শার্লককে ফিরিয়ে আনার জন্য পাঠকদের আন্দোলন শুরুর নেপথ্যে এবং পুরোভাগের নেতৃত্বে ছিলেন ডয়েলের মা নিজেই, ছেলের সৃষ্ট চরিত্রের এমনই ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

অনেকেরই ধারণা, শার্লক চরিত্রটি আর্থার কোনান ডয়েল নিজেকে কল্পনা করেই লিখেছেন। ভাবাটাই স্বাভাবিক, শার্লকের এমন তীক্ষ্ণ সব বুদ্ধির ছড়াছড়ি তো লেখকের কলমের জোরেই। আসল ঘটনা কিন্তু ভিন্ন, শার্লক হোমস চরিত্রটি ডয়েল তৈরী করেছেন তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষক প্রফেসর জোসেফ বেলের ছায়ায়। সাধারণ পাঠকরা এ খবর না জানলেও জোসেফ বেলকে চিনতেন এমন সবাই তা ভালোভাবেই টের পেয়েছিলেন। এক কনফারেন্সে তো একজন ডয়েলকে সবার সামনে জিজ্ঞেস করেই বসেছিলেন, “শার্লকই কি আমার বন্ধু জো?” বলা বাহুল্য, জোসেফ বেলকে বন্ধুটি জো বলেই সম্মোধন করতেন।

আর্থার কোনান ডয়েলের গোয়েন্দাগিরি

গোয়েন্দা গল্প লেখকের পাশাপাশি সত্যিকারের গোয়েন্দাগিরিতেও আর্থার কোনান ডয়েল দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে অন্তত দুটো দুর্দান্ত কেসের সমাধান করেন। জর্জ এডালজি নামক এক ভদ্রলোক হুট করে ফেঁসে গিয়েছিলেন পশু নির্যাতনের কেসে, পুলিশের তথ্য-প্রমাণ সবই তার বিরূদ্ধে। ডয়েলের কাছে খটকা লেগেছিল পত্রিকায় প্রকাশিত বিবাদীর ছবি দেখে, এমন দূর্বল শারিরীক গঠনের একজন কী করে এমন ধরণের পশু নির্যাতনের দৈহিক ক্ষমতা রাখে! তারপর যুক্তিতর্ক দিয়ে একসময় তার বিরুদ্ধে আনীত প্রমাণগুলোও ঠিক না বলে পরিষ্কার করে দেন বিচারকদের সামনে। মুক্তি পান জর্জ এডালজি। তবে জর্জের মতো সবার ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়, অস্কার স্ল্যাটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এক মহিলাকে খুন করার। ডয়েল এখানেও দেখালেন, প্রমাণগুলো সবই ভুল। খুনের সময় তিনি খুনের জায়গাতেই ছিলেন না। কিন্তু ততদিনে স্ল্যাটারের রায় হয়ে গেছে। সাড়ে ১৮ বছর কারাভোগের পর মুক্তি মেলে অস্কার স্ল্যাটারের।
এমন অসংখ্য অদ্ভুতুড়ে ঘটনা উদ্ভটভাবে ঘটেছে আর্থার কোনান ডয়েলের জীবন জুড়ে। চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে ব্যর্থ ডয়েলের সৃষ্টি শার্লক শুধু চোখ দিয়ে দেখেই নাড়িনক্ষত্র বলে দিতে পারতেন। আবার তিনি, শার্লকের প্রতিটা কার্যক্রম, সিদ্ধান্ত যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করতেন অথচ শার্লকের স্রষ্টা আর্থার কোনান ডয়েলের আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস ছিল ভীষণ রকমের।

আরেক বিখ্যাত সাহিত্য চরিত্র ‘ড্রাকুলা’র স্রষ্টা ব্রাম স্টোকারের সাথে আর্থার কোনান ডয়েলের সম্পর্ক নিয়ে ‘শার্লোকিয়ান’ নামে আস্ত একখানা উপন্যাসই আছে। তবে তার কতখানি সত্যি আর কতখানি ফিকশন তা বলা মুশকিল। তাছাড়াও অতিমানবিক বিষয়ে ডয়েলের বিশ্বাসের গল্প প্রচুর গল্প চালু আছে।

১৯১৭ সালের দিকে ব্র্যাডফোর্ড শহরের কটিংলিতে দুই বোনের তোলা পাঁচটি ছবিতে ছোট ছোট পরিও দেখা যায়। ফটো এডিটের ব্যাপার তো তখনকার দিনে কারও কল্পনাতেও ছিল না, তাই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ছবিগুলো। পরে ওদের বাবা অবশ্য বলেছিলেন, বড় বোন এলসি ছবির কিছু কিছু কারিকুরি শিখেছিল। সম্ভবত এলসি নিজেই ছবিগুলোতে আলো-ছায়ার কারসাজিতে পরি বানিয়েছিল। কোনান ডয়েল কিন্তু ছবিগুলোর সত্যতা মেনে নিয়েছিলেন। এতোই বিশ্বাস জন্মেছিল তার মনে যে সেই ছবিগুলো নিয়ে তিনি রীতিমতো একটি বইও লিখেছিলেন।

এখনকার ম্যাজিক শো’তে অনেক ম্যাজিশিয়ানই হ্যান্ডকাফ পরা বা বিভিন্ন বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার ম্যাজিক দেখায়। এইসব ম্যাজিকের জনক বলা হয় হ্যারি হুডিনিকে। সেই সময় প্রচুর নাম করেছিলেন ভদ্রলোক, ডয়েল তার ম্যাজিকে মুগ্ধ হয়েছিলেন, বেশ ভালো বন্ধুত্বও হয়ে গিয়েছিল দুজনের। জীবনের শেষ দিকে হ্যারি স্বীকার করেন তিনি অলৌকিক কিছু করতেন না, সবই কৌশল। এতে কোনান ডয়েল এতটাই কষ্ট পান যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বেরই ইতি টানেন।
তবে তাতে তার আধ্যাত্মিকতার চর্চা থেমে থাকেনি। অলৌকিক, ব্যাখ্যাতীত সবকিছুর প্রতিই তাঁর অদম্য আগ্রহ ও বিশ্বাস ছিল। দেশ, মহাদেশ পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছেন এই আগ্রহের দরুন।
তাঁর বিশ্বাস সম্পর্কিত কয়েকটি লিখিত রচনা তিনি প্রকাশ করেছিলেন এবং জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি এ ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিলেন। যে তিনি তাঁর বন্ধু হ্যারি হৌদিনীর উপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন, তেমনই বিতর্কিত বিষয়কে সমর্থন করেছিলেন (যেমন কোটিংলে পরীদের ক্ষেত্রে জড়িত ঘটনাটি)।
এমন কি, ১৯২৯ সালে ডয়েল অ্যাঞ্জিনা প্যাক্টেরিসের বিশ্রামের প্রেসক্রিপশন উপেক্ষা করে নেদারল্যান্ডসের একটি আধ্যাত্মবাদী বক্তৃতা সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।। ইংল্যান্ডের ক্রোবারোতে দেশে ফিরে এসে বুকে ব্যথার কারণে তিনি পুরোপুরি শয্যাশায়ী ছিলেন। ১৯৩০ সালের জুলাই তিনি শেষবারের মতো উঠে পড়লে তাঁর বাগানে তাকে আঘাত করা হয়।

১৮৮৫ সালে আর্থার কোনান ডয়েল তার প্রথম দুই সন্তানের জননী লুইসা হকিন্সকে বিয়ে করেছিলেন। ১৮৮৩ সালে তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, ১৩ বছর পরে ডয়েলের বাহুতে তার মৃত্যু হয়েছিল। ১৯০৭ সালে, এডিনবার্গ লেখক জিন লেকিকে বিয়ে করেছিলেন, একজন মনুষ্যবাদী মনস্তাত্ত্বিক যার সাথে তাঁর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্পর্ক ছিল। এই দম্পতির আরও তিনটি সন্তান ছিল।
পরিবার পরিজনদের সফরে বাঁধা দেয়া অভিযোগ অনুযোগের জবাবে ‘জন্মিলে মরিতে হবে’ ধরণের সান্ত্বনা দিয়ে সফরে যাওয়া ডয়েল লন্ডনে ফিরে আসেন বুকে ব্যথা নিয়ে। তখন থেকেই শয্যাশায়ী, আর কখনও উঠে দাড়াতে পারেননি। এই মহান লেখক ‘জন্মিলে মরিতে হবে’ উক্তির শর্ত পূরণ করে পরপারে পাড়ি জমান ৭ই জুলাই ১৯৩০ সালে (৭১ বছর বয়সে।)

স্যার আর্থার কোনান ডয়েল তাঁর লেখায় শার্লককে সৃষ্টি করেছেন, একসময় তাকে খুনও করেছেন। আবার তাকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন নিজেরই খেয়ালে। ডয়েলকে চলে যেতে হয়েছে, কিন্তু শার্লক হোমস এখনো পুরোমাত্রায় জীবিত ও তরুণ, শতাব্দী পেরিয়েও পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী ও বুদ্ধিমান অস্তিত্ব।

(তাঁর রচনাবলী)

১). স্কারলেট পড়াশোনা (১৮৮৭ সাল)। উপন্যাস.
২). চারটির চিহ্ন (১৮৯০ সাল)। উপন্যাস.
৩). শার্লক হোমসের অ্যাডভেঞ্চারস (১৮৯১-৯২ সাল).
৪). শার্লক হোমসের স্মৃতিচারণ (১৮৯২-৯৩ সাল).
৫). বাস্কার্ভিলের মাটি (১৯০১-০২ সাল)। উপন্যাস
৬). শার্লক হোমসের প্রত্যাবর্তন (১৯০৩-০৪ সাল).
৭). তার শেষ ধনুক (১৯০৮-১৭ সাল).
৮). সন্ত্রাসের উপত্যকা (১৯১৪-২৫ সাল).
৯). শার্লক হোমস সংরক্ষণাগার (১৯২৪-২৬ সাল).
১০). তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত গল্প, প্রবন্ধ এবং ম্যানিফেস্টো
পোলেস্টার এবং অন্যান্য গল্পের ক্যাপ্টেন (১৮৯০ সাল).
১১). দুর্দান্ত কেইনপ্ল্যাটজ পরীক্ষা (১৮৯০ সাল)
১২). দ্য ডিংস অফ র‌্যাফেলস হা (১৮৯১ সাল)
১৩). সাদা সংস্থা (১৮৯১ সাল)
১৪). দুর্দান্ত ছায়া (১৮৯২ সাল)
১৫). আমার বন্ধু খুনি এবং অন্যান্য রহস্য
১৬). অ্যাডভেঞ্চার (১৮৯৩ সাল).
১৭). গোলাকার লাল প্রদীপটি (১৮৯৪ সাল)
১৮). রডনি পাথর (১৮৯৬ সাল)
১৯). ব্রিগেডিয়ার জেরার্ডের শোষণ (১৮৯৬ সাল)
২০). চাচা বার্নাক (১৮৯৭ সাল)
২১). প্রাকৃতিক পড়াশোনা (১৯০১ সাল)
২২). ব্রিগেডিয়ার জেরার্ডের অ্যাডভেঞ্চারস (১৯০৩ সাল)
২৩). স্যার নাইজেল (১৯০৬ সাল)
২৪). হারানো পৃথিবী (১৯১২ সাল)
২৫). বিষাক্ত অঞ্চল (১৯১৩ সাল)
২৬). কুয়াশার জমি (১৯২৬ সাল)
২৭). যখন পৃথিবী চিৎকার করেছিল (১৯২৮ সাল)।
২৮). বিভাজক যন্ত্র (১৯২৯ সাল)
২৯). মারাকোটের অতল গহ্বর (১৯২৯ সাল)
– ঐতিহাসিক উপন্যাস
৩০). মাইকা ক্লার্ক (২০১০ সাল)
৩১). ব্রিগেডিয়ার বিবাহ (১৯১০ সাল)
৩২). জেন অ্যানি বা গুড কন্ডাক্ট প্রাইজ (২০১০ সাল)

(চিকিৎসা অনুশীলন ও অন্যান্য নিবন্ধ)

১). দ্য স্টার্ক মুনরো লেটারস (১৮৯৫ সাল).
২). অ্যাকশনের গান (১৮৯৮ সাল).
৩). ট্রাজেডি অফ করোস্কো (১৮৯৮ সাল).
৪). ডুয়েট (১৮৯৯ সাল).
৫). মহান বোয়ার যুদ্ধ (১৯০০ সাল).
৬). ওড়না দিয়ে (১৯০৭ সাল).
৭). গোল দমকলের গল্পগুলি (১৯০৮ সাল).
৮). কঙ্গোর অপরাধ (১৯০৯ সাল).
৯). হারানো গ্যালারী (১৯১১ সাল).
১০). উচ্চতায় সন্ত্রাস (২৯১৩ সাল).
১১). ফ্রান্স এবং ফ্ল্যান্ডারসে ব্রিটেনের প্রচার: ১৯১৪ (১৯১৬ সাল)
১২). ভয়াবহতা এবং রহস্যের গল্প (১৯২৩ সাল)
১৩). স্মৃতি এবং দু: সাহসিক কাজ (১৯২৪ সাল)
১৪). দ্য ব্ল্যাক ডক্টর এবং সন্ত্রাস ও রহস্যের অন্যান্য গল্প (১৯২৫ সাল)
১৫). ক্যাপ্টেন শার্কির ডিলিংস (১৯২৫ সাল)
১৬). আর্কেঞ্জেলের লোক (১৯২৫ সাল)
১৭). নতুন প্রকাশ (২০১০ সাল)
১৮). পরীর রহস্য (২০১০ সাল)
১৯).আধ্যাত্মিকতা ইতিহাস (২০১০ সাল)

—————————————————————
[ তথ্য সংগৃহীত ও সম্পাদিত।
কৃতজ্ঞতা ও ঋণস্বীকার – মারুফ মুক্তাদীর খান ও জুয়ান অর্টিজ ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress