Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্মৃতির আতর || Manisha Palmal

স্মৃতির আতর || Manisha Palmal

স্মৃতির আতর

কখনো ভাবি নি তোকে নিয়ে এভাবে লিখবো”রু”! তুই যে আমার ” শ্যামলে শ্যামল”, “নীলিমায় নীল”! কোন ছোট্টবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হওয়া- – কখনো মনে হয়নি যে তুই কোন আলাদা ব্যক্তি! মনে হতো আমরা যেন এক আত্মা! দেখতে দেখতে কবে যে আমার মনটা চুরি করে নিয়ে ছিলি বুঝতেও পারিনি! বিনি সুতোর বাঁধনে বাঁধা পড়েছিলাম। কখনো তো মুখে ওই চার অক্ষর বলিস নি – দরকার ও পড়েনি। একসাথে পড়াশুনা ,ট্রেকিং ,বার্ড ওয়াচিং’ ,সোশ্যাল সার্ভিস সবই করতাম। তোর সাথে মিশেই তো এই প্রান্তিক মানুষগুলোর ভালোমন্দের ভাগিদার হতে পেরেছি। তুই আমার শিক্ষাগুরু এই বিষয়ে। তোর সাথে মিশেই প্রকৃতিকে এত আপন করে চিনেছি। তোর ওই বাউন্ডুলে জীবনে কিছুই গোছানো ছিলনা। খালি ছিলো একরাশ ভালোবাসা— সবার জন্য! তুইতো নিঃস্বার্থভাবে সবাইকে ভালোবাসতে শিখিয়ে ছিলি। তোর দেখানো পথই এখনো অনুসরণ করছি রে। তুই যে সবাইকে ভালোবাসতিস ,সবার ভালো চাইতিস তা তো অনেকের পছন্দ ছিল না। জঙ্গল পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে সঙ্ঘবদ্ধ করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিলি তুই। জঙ্গল মাফিয়ারা তা মানবে কেন বল? তাদের চক্ষুশূল হলি শেষে নিজের জীবন দিয়ে মাশুল গুনলি প্রতিবাদ করার। তবে তোর বলিদান ব্যর্থ হয়নি রে। প্রান্তিক মানুষেরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে কাঠ মাফিয়াদের প্রতিরোধ করেছে। আর জঙ্গল ধ্বংস হতে দেয় না ওরা নিজেরাই পাহারা দেয় জঙ্গলকে। জানিস সেই যে পাহাড়টা যাকে ন্যাড়া বুড়ো বলতিস তা আজ সবুজের চাদরে ঢাকা দেখলে বিশ্বাস হবে না যে ওটা কখনো রুক্ষ টাঁড ছিল। তুই তো আমাকে শিখিয়েছিল- ” ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে”– তাইতো নিয়েছি! তোর জীবনের সুর টাই আত্মস্থ করেছি রে। ওই সুরেই বেঁধেছি জীবন গান।” মানবসেবাই মাধব সেবা”— তোর এই কথাটা কে আশ্রয় করে চলেছি সারা জীবন ভোর। এই প্রান্তিক মানুষদের নিষ্পাপ হাসিতে আমি তোকে খুঁজে পাই। বর্ষার গুরুগুরু মাদলে বৃষ্টিধারার তানে তোর গান ভেসে আসে— আমি হারিয়ে যাই ভালোলাগায়! বৃষ্টি ভেজা কদম কেয়ার সুবাস ভরা বাতাস যখন আমায় ছুঁয়ে যায় আমি তোর স্পর্শ পাই। যেনো আদর করে বলছে–” আমি আছি তো!” এভাবেই তুই প্রকৃতির রঙে রূপে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছিস- আর আমাকে ঘিরে দেখেছিস তোর ভালোবাসার বলয়ে। আমার জীবন “–রু”ময়! ফাগুনের রাঙা পলাশে, রিমঝিম বৃষ্টির ফোঁটায়, কদম কেয়ার শিহরণে তুই মিশে আছিস! কালবৈশাখীর ঘনিমায় তোর রুদ্ররূপ। শরৎমেঘের সাদা ভেলাতে ,কাশের হাসিতে, আগমনীর ঢাকের বোলে, হেমন্তের ঝরা পাতার মর্মরে, পরিযায়ী ডানার আন্দোলনে তুই আছিস প্রবলভাবে। শাওনের জল থৈ থৈ মাঠে কচুপাতা মাথায় কিশোরের আনন্দে আমি তোকে খুঁজে পাই। তোর ভালোবাসার জাদুর ছোঁয়ায় আমি জীবনবৃত্তে এত সফল। প্রকৃতির জাদুকরী মায়াতে মিলে গেছিস তুই। তোর অনিমেষ দৃষ্টির ঘেরে বন্দি আছি চিরকালই। মনে আছে তোর— একদিন এক আঁজলা পলাশ ফুল দিয়ে বলেছিলি- ” নে মন, তোকে পলাশ রঙে রাঙিয়ে দিলাম! যখন পলাশ ফুটবে তোর মনে পড়বে আমার কথা! তোর “রু”আর পলাশ একাকার হয়ে গেল আজ থেকে!” আচ্ছা তুই কি বুঝতে পেরেছিলি যে তুই থাকবি না, তাই ও কথাগুলো বলেছিলি? দেখ, তোর শেখানো জীবনগানই বেজে চলেছে তোর “মনের” যাপন জুড়ে!
কে বলে –মৃত্যুতেই সব শেষ?
“ফুরায় যা তা ফুরায় শুধু চোখে,
অন্ধকারের পেরিয়ে দুয়ার যায় চলে আলোকে!”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *