স্বার্থপর
প্রীতম বিয়ে করেছে বছর দুই হল। দিয়া ওর স্ত্রী এখনো পড়াশোনা করছে। প্রীতমের মা বাবা ছাড়াও ওর দিদি জামাইবাবু রয়েছে। দিয়ার বাপের বাড়ি বেলঘড়িয়া। বাবা ব্যাংকে চাকরি করেন, মা গৃহবধূ। প্রীতমের বাবা অবসর নিয়েছেন। যা কিছু টাকা-পয়সা পেয়েছিলেন একটা বাড়ি তৈরি করেছেন। সামান্য কিছু রেখেছেন নিজেদের খাওয়ার জন্য। প্রীতম একটা মোবাইলের দোকান চালায়। ভালো রোজগার। সেদিন প্রীতমের মা মেয়ের বাড়ি যাবে , প্রীতমের কাছে সামান্য কিছু টাকা চেয়েছিল।দিয়া আগে সকলকে ভালোবাসত। ইদানিং ও একটু যেন আলাদা হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে গুটিয়ে রাখা, শ্বশুর শাশুড়ির সাথে কম কথা বলা। প্রীতমের মায়ের একটু কষ্ট হয়। ওর বাবাকে এ নিয়ে কয়েকবার বলেছে। উনি বললেন এত কিছু ভেবোনা, ও তোমার মনের ভুল। তুমি আমাকে আপন করে নাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। খুব সহজ-সরল মানুষ ছিলেন দিয়ার শাশুড়ি মা। সেদিনও সামান্য টাকা জমিয়ে দিয়ার জন্য একটা চুড়িদার কিনে এনেছিলেন। খুব খুশি হয়ে দেয়ার কাছে গিয়ে বলেছিল তুই এটা পরে আয় আমি দেখি তোকে কেমন লাগছে। দিয়া উত্তর দিল রেখে দাও পরড়ে পরবো। একটু মন খারাপ হয়ে গেছিল প্রীতমের মায়ের। এইভাবে চলছিল কোনরকমে ওদের জীবন। হঠাৎ সেদিন প্রীতমের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রীতম ব্যাঙ্গালোরে গিয়েছিল নিজের একটা কাজে। দিয়া বাপের বাড়িতেই থাকে প্রীতম না থাকলে। আজকাল নিজেকে একটু সরিয়ে রাখে। আগে এমন ছিলনা। অসহায় অবস্থায় দিয়াকে কয়েকবার ফোন করেন শাশুড়ি মা। ফোনটা বেজে গেলেও কেউ ধরেনি। ছেলেকে অত রাতে বলতে চায়নি। সারারাত অসুস্থ মানুষটাকে নিয়ে চিন্তা করেছেন। ভোর হলে ছেলেকে ফোন করেন। হসপিটালে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে ছেলে ফোনটা কেটে দেয়। অসহায় মা তার প্রিয় জন স্বামী কে নিয়ে হসপিটালের চারিদিকে ছুটাছুটি করতে থাকেন। একা, কী ভয়ঙ্কর সে সময়। দুদিন ভর্তি থাকার পর বাবা মারা যান। প্রীতমের মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। কি করে হসপিটাল থেকে মৃতদেহ আনবেন কিভাবে কি করবেন ভেবে পাচ্ছেননা। যাইহোক মেয়ে-জামাইয়ের সাহায্যে সমস্ত কাজ উদ্ধার হল। ছেলে আরো কয়েকদিন পর বাড়ি এলো। দেখা করে শ্বশুর বাড়িতে কয়েকদিন থাকলো। কাজ মেটার অপেক্ষায়। ওরা দুজনে দিয়া দের বাড়িতে রয়ে গেল। স্বার্থপর ছেলে মেয়ে। মা-বাবার অসহায় অবস্থার কথা একবারও ভাবলো না।