স্বামী না আসামি
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর দারিদ্র্যের কারণে আর লেখাপড়া করেনি বাণী। ফেসবুকের মাধ্যমেই রাজেশের সঙ্গে পরিচয় । সে পুলিশে বেহারার চাকরি করে, বাড়ি রাজশাহী শহরে। বাণী তার সঙ্গে দুইবার দেখা করেছে। সে বিয়ে করবে বলেছিল। বিয়ের তারিখ ঠিক হওয়ার পর রাজেশের আইডি কার্ড হারিয়ে যাওয়ায় রাজেশ তার মাইনার টাকা তুলতে পারছিল না। তাই বাণীর পরিবারের কাছে বিয়ের খরচের জন্য একলাখ টাকা চেয়েছিল। গ্রামের দরিদ্র আলু ব্যবসায়ী মাণিক চৌধুরি মেয়ে বাণীর বিয়ের জন্য নিজের একবিঘা জমি বিক্রি করে একলাখ পেয়েছিল। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে রাজেশের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাকে ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল । বাকি টাকা দিয়ে বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল।
বিয়ের পর থেকেই তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত স্বামী রাজেশ । ততদিনে একটি কন্যা সন্তান হয়ে গেছে তাদের। মেয়ের মুখ চেয়ে বাণী সব অত্যাচার মেনে নেয় । বাণীকে পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গেও মিশতে দিত না। বাপেরবাড়ি যেতে দিত না। মোবাইল ফোন ব্যবহার করা পছন্দ করত না রাজেশ।বাণীর পুরনো মোবাইলটাও কেড়ে নিয়েছিল।
শেষে নিজের জমানো টাকা থেকেই লুকিয়ে স্মার্টফোন কিনেছিল সে। তাই রাজেশের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখত ফোনটি। একদিন রাজেশ তাকে ফোন ব্যবহার করতে দেখে খুব অশান্তি করে । তখন থেকেই তার সন্দেহ হয় স্ত্রী পরকীয়া করে।
এই সন্দেহের বশেই একদিন নিজেই বাণীকে গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করে,ব্যর্থ হয়। ভাড়াটে খুনি দিয়ে তারপর তাকে মারার পরিকল্পনা করে। বাণী তা বুঝতে পারেনি। রাতে তার স্বামী রোজই গেটে তালা লাগিয়ে ঘরে ঢোকে। সেদিন গেটে তালা লাগিয়ে ঘরে ঢুকতে দেরি হচ্ছে দেখে বাণী জানলায় এসে দাঁড়ায়। উঁকি দিয়ে দেখতে পায়, রাজেশ গেটে দাঁড়িয়ে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা একটা লোকের সাথে কথা বলছে।তখনই তার সন্দেহ হয়।সে দেখল গেট পেরিয়ে বাড়ির ভিতর মুখ ঢাকা লোকটা এগিয়ে আসছে।আর রাজেশ তখনও গেটে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছিল। বাণী ভয়ে ঘরের জানলায় দাঁড়িয়ে বুঝতে পারছিল না রাজেশকে। বাণী ভেজানো দরজায় ছিটকিনি তোলার আগেই দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পড়ে মুখ ঢাকা লোকটা। তারপর বাণীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে খাটে চিৎ করে ফেলে দেয়।
বাণী চিৎকার করে বলে কে তুমি?
তখনই বাণীর মুখ চেপে ধরে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। বাণী লোকটার হাতটাতে কামড় দিতেই লোকটা হাত সরিয়ে নেয় আর বাণী সেই সুযোগে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে। তার চিৎকার শুনে মেয়েও কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। তাদের চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে রাজেশ পালিয়ে যায় কিন্তু প্রতিবেশিরা ছুটে এসে লোকটিকে ধরে ফেলে পুলিশে খবর দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশের জেরার মুখে লোকটি স্বীকার করে রাজেশ তাকে দশহাজার টাকার বিনিময়ে খুনের সুপারিশ দিয়েছিল। বাণী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, রাজেশ কে তুমি? স্বামী না আসামি!