Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বটকৃষ্ণবাবুর চিঠি

কর্নেল জিপে উঠেই রহমতকে বললেন, নিউ টাউনশিপে পাটোয়ারিজির কোম্পানির অফিসে যাব। তুমি কি অফিসটা চেনো রহমত?

রহমত হাসল। চিনি কর্নিয়ালসাব। এখানে সুন্দর সিং পাটোয়ারিজিকে চেনে না এমন লোক নেই। বহৎ কড়া আদমি। মিনিস্টাররাও ওঁকে খুব খাতির করেন। সে জিপ স্টার্ট দিয়ে ফের বলল, পুরানা বাজারে ওঁর ভাতিজা মোহন সিং পাটোয়ারিজিকেও চিনি। খুব দেমাগি লোক। সুন্দর সিং পাটোয়ারি তাকে বিশ্বাস করেন বটে, কিন্তু আমার মনে হয়, একদিন ওই ভাতিজাই ওঁকে পথে বসাবে।

কেন একথা তোমার মনে হয়?

মোহনজির হাতে অনেক গুণ্ডা-বদমাইস আছে। সুন্দরজিও ওকে ভয় করে চলেন। ভাতিজা মোহনজির বেনামে দুসরা কারবার আছে, সুন্দরজি তা জেনেও চুপ করে আছেন।

তুমি বটকৃষ্ণবাবুকে চেনো? আগে পোস্টম্যান ছিলেন। এখন মোহনজির গদিতে কাজ করেন।

রহমত বাকামুখে বলল, চোট্টামি করে বেড়ায়। নেশাখোর। মোহনজির লোক বলে তাকে কেউ কিছু বলতে পারে না। জেলখাটা লোক।

কর্নেল সারা পথ রহমতের সঙ্গে এইসব কথাবার্তা চালিয়ে গেলেন। নিউ টাউনশিপ এলাকায় তখন আলো ঝলমল করছে। ছিমছাম সুদৃশ্য পরিবেশ। রহমত একখানে জিপ থামিয়ে বলল, সুন্দরজির অফিস বন্ধ দেখছি। তবে পাশেই ওঁর বাড়ি। আমি দেখে আসি উনি আছে কি না।

সে জিপ থেকে নেমে বাঁদিকে একটু বিরাট দোতলা বাড়ির গেটে গেল। গেটে দারোয়ান ছিল। তার সঙ্গে কথা বলে ফিরে এল রহমত। বলল, সুন্দর আছেন। আমি দাবোয়ানকে বলে এলাম, কলকাতা থেকে কনিয়ালসাব দেখা করতে এসেছে।

কর্নেল জিপ থেকে নামলেন। ওঁকে অনুসরণ করলাম। বুঝতে পারছিলাম না কেন কর্নেল এই ব্যবসায়ী ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন।

দারোয়ান কর্নেলকে দেখে সেলাম ঠুকে গেটের একটা অংশ খুলে দিল। সাজানোলন এবং ফুলবাগিচা দেখে বুঝলাম সুন্দরজি সেকেলে ব্যবসায়ী নন। পোর্টিকোর সামনে স্মার্ট চেহারা এবং প্যান্ট-শার্ট পরা একজন মধ্যবয়সী লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। ইংরেজিতে বললেন, আপনারা কলকাতা থেকে আসছে?

কর্নেল বললেন, হ্যাঁ। তারপর পকেট থেকে একটা নেমকার্ড দিলেন। সুন্দরজির সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। আপনিই কি–

ভদ্রলোক কার্ডটা দেখছিলেন। বললেন, আমি সুন্দরজির কোম্পানির ম্যানেজার। আমার নাম রাকেশ শর্মা। আপনারা ভেতরে এসে বসুন। আমি ওঁকে খবর দিচ্ছি।

বসার ঘরটা সুন্দরভাবে সাজানো। মেঝেয় দামি কার্পেট। একদিকের দেয়াল। ঘেঁষে সার সার গদিআটা চেয়ার। অন্যদিকে সোফাসেট। আলমারিতে দেশ বিদেশের পুতুল, ইতস্তত সাজিয়ে রাখা ভাস্কর্য, শেলফে কিছু ঝকঝকে মলাটের বই। দেয়ালে কয়েকটা চিত্রকলা। দেবদেবীর মূর্তিও চোখে পড়ল এবং সেগুলি উৎকৃষ্ট শিল্প নিদর্শন। সুন্দরজি আধুনিক রুচির মানুষ, তাতে সন্দেহ নেই।

রাকেশ শর্মা আমাদের বসিয়ে পর্দা তুলে ভেতরে গিয়েছিলেন, একটু পরে ফিরে এসে বললেন, সুন্দরজি আসছেন, আপনারা বসুন।

বলে উনি বাইরে চলে গেলেন। মিনিট কয়েক পরে ধুতি-পাঞ্জাবি পরা এক শক্তসমর্থ গড়নের বৃদ্ধ ঘরে ঢুকে নমস্কার করে অমায়িক কণ্ঠস্বরে ইংরেজিতে বললেন, বলুন কর্নেল সরকার। আপনার জন্য কি করতে পারি?

তার হাতে কর্নেলের কার্ড এবং একটা ছড়ি ছিল। তিনি কর্নেলের দিকে তাকিয়ে কথা বললেন, একটু অবাক হলাম, তা ঠিকই। তবে আমাদের দুজনের মধ্যে কার কর্নেল হওয়া সম্ভব, সেটা হয়তো চেহারা ও ব্যক্তিত্ব দেখেই জানা সম্ভব।

কর্নেল বললেন, আলাপ করিয়ে দিই। কলকাতার বিখ্যাত দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার সাংবাদিক জয়ন্ত চৌধুরী।

সুন্দরজি আমাকে দেখি নিয়ে সহাস্যে বললেন, আমি কি সংবাদ হওয়ার মতো কিছু কাজ করেছি?

কর্নেল হাসলেন। নাহ্ সুন্দরজি। জয়ন্ত আমার সঙ্গে এখানে বেড়াতে এসেছে।

আপনি রিটায়ার্ড সামরিক অফিসার। সরকারের পক্ষ থেকে কোনও কাজে এসেছেন কি? ঠিক আছে। বলুন কি কাজ?

সরকারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই সুন্দরজি। আমি এখানে বেড়াতেই এসেছি। তো শুনলাম, আপনি এখানকার পুরনো বাসিন্দা। তাই একটা কথা জানতে এলাম।

বলুন কি জানতে চান?

এখানে একটা কেল্লাবাড়ির মালিক ছিলেন বাঙালি জমিদার। তারা দুই ভাই। প্রশান্ত রায় এবং প্রসন্ন রায়। তাদের নিশ্চয় চিনতেন?

সুন্দরজি ভুরু কুঁচকে বললেন, চিনতাম। প্রশান্ত বছর পঁচিশ আগে সন্ন্যাসী হয়ে চলে যায়। আমার বন্ধু ছিল সে। ছোটবেলা থেকেই ধর্মকর্ম নিয়ে থাকত। প্রসন্ন উল্টো স্বভাবের লোক। ভীমগড়ের বাঙালিবাজারে আমার মতোই এক কারবারি বাঙালি পরিবার আছে। তাদের সঙ্গে প্রসন্নের জমিজায়গা নিয়ে মামলা বেধেছিল। প্রসন্নও এখান থেকে চলে যায়। সে-ও প্রায় বিশ বছর আগের কথা।

কোন্ জমি নিয়ে মামলা হয়েছিল জানেন নিশ্চয়?

কেল্লাবাড়ির একটা জমি নিয়ে। জমিটা একর তিনেক হবে। প্রশান্ত নাকি সন্ন্যাসী হওয়ার আগে জমিটা ওই কারবারি ফ্যামিলির বড়কর্তা সত্যকুমার সাঁতরাকে বেচেছিল। সত্যরাবু মারা গেছেন। তাঁর ছোট ভাই নবকুমার ঝানু লোক। আমি তাকে পছন্দ করি না। না, কারবারি প্রতিযোগিতার প্রশ্ন নয়। লোকটা কুচুটে স্বভাবের। নিজের ছেলের সঙ্গেই বনিবনা হয় না। ছেলে অনিল তাই চাকরি করছে। পোস্টমাস্টার হয়েছে।

বটকৃষ্ণবাবু নামে এক ভদ্রলোক আপনার গদিতে কাজ করেন শুনলাম। তিনি নাকি পোস্টম্যান ছিলেন?

সুন্দরজির মুখে সন্দিগ্ধ ভাব ফুটে উঠল। নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকার পর বললেন, আপনার এসব কথাবার্তা বলতে আসার উদ্দেশ্য কি? কে আপনি?

কর্নেল হাসলেন, কার্ডেই আমার পরিচয় লেখা আছে। তবে বটকৃষ্ণবাবু আমাকে–

সুন্দরজি ওঁর কথার উপর বললেন, চিট করেছে? কিভাবে ওর পাল্লায় পড়লেন?

যেভাবে আপনি ওর পাল্লায় পড়েছেন।

তার মানে? কি বলতে চান আপনি?

কর্নেল জ্যাকেটের ভেতর পকেট থেকে ভঁজকরা সেই শব্দছক আঁকা পুরনো কাগজটা বের করে খুললেন। বললেন, দেখুন তো, এটা চিনতে পারেন কি না?

সুদরজির মুখের ভাব মুহূর্তে বদলে গেল। প্রায় খেঁকিয়ে উঠলেন, কে আপনি?

কর্নেল উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আমার পরামর্শ সুন্দরজি, আপনি যেন এই ফাঁদে পা দেবেন না। আপনার এই ঘরে সাজানো ভাস্কর্যগুলো দেখেই বুঝতে পেরেছি, আপনি প্রাচীন ভারতীয় শিল্পনিদর্শনের সমঝদার। কিন্তু আপনাকে সাবধান করে দেওয়া উচিত, বটকৃষ্ণবাবুর নির্বুদ্ধিতায় আপনার বিপদ ঘটতে পারে। তিনি আপনাকে লোভ দেখিয়ে চাকরি আদায় করেছেন। আমি বলছি না। বেচারাকে বরখাস্ত করুন। শুধু বলছি বটকৃষ্ণবাবুর কথায় চলবেন না।

বলে কর্নেল দ্রুত ঘর থেকে বেরুলেন। সুন্দরজি রুষ্ট মুখে বসে রইলেন। জিপে উঠে বললাম, আপনি যেন সুন্দরজিকে হুমকি দিতেই গিয়েছিলেন। ব্যাপারটা কি?

কর্নেল আমার কথার উত্তর না দিয়ে রহমতকে বললেন, রহমত। তুমি নবকুমার সাঁতরার বাড়ি চেনো?

রহমত বলল, ওঁর বাড়ি নদীর ধারে বাঙালি বাজারের শেষ দিকে। পাশেই একটা খণ্ডহর আছে কর্নিলসাব। জমিদারবাবুদের কেল্লাবাড়ি। ওঁরাও বাঙালি ছিলেন।

জানি। নবকুমারবাবুর বাড়ি পর্যন্ত জিপ যাবে তো?

যাবে কর্নিলসাব। বাবুজি নতুন বাড়ি বানিয়েছেন পুরনো বাড়ির পাশে। পুরনো বাড়িতে ওঁর ছেলে থাকে। পোস্টমাস্টার অনিলবাবু।

অনিলবাবুর ভাই নেই?

আছে। সুনীলবাবু বড়। অনিলবাবু ছোট। ওঁর বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। সুনীলবাবু বাবার সঙ্গে কারবার দেখাশোনা করেন।

প্রায় কুড়ি মিনিট পর আলো-আঁধারি পরিবেশে জনহীন নিঝুম একটা এলাকায় পৌঁছলাম। রহমত একটা সংকীর্ণ পিচের রাস্তায় জিপ ঘোরালো। রাস্তার দুধারে ঘন গাছপালা এবং অসমতল মাটিতে পুরনো নতুন একটা করে বাড়ি জিপের আলোয় দেখা যাচ্ছিল। রাস্তার ধারে কিছুদূর অন্তর একটা করে কাঠের ল্যাম্পপোস্ট আছে বটে, কিন্তু বাতিগুলো ম্লান এবং কোনও কোনও বাতি গাছের পাতার আড়ালে ঢাকা পড়েছে। এই সন্ধ্যারাত্রে রাস্তাটা এমন জনহীন যে একা পায়ে হেঁটে গেলে গা ছমছম করতেই পারে। বৃষ্টি বন্ধ এবং বাতাস বইছে না। তাই গুমোট গরম। একখানে জিপ আবার ঘুরল এবং কিছুটা এগিয়ে থামল। রহমত জিপ থেকে নেমে বলল, এই বাড়ি কর্নিলসাব। আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি খবর দিয়ে আসি।

ডানদিকে একটা নতুন দোতলা বাড়ি। তবে পাটোয়ারিজির বাড়ির মতো ছিমছাম নয়। বাড়িটা সদ্য তৈরি হয়েছে মনে হচ্ছিল। একটু পরে কুকুরের হাঁকডাক শোনা গেল। তারপর হেঁড়ে গলায় দোতলা থেকে কেউ বললেন, কে? কি চাই?

রহমত বলল, বাবুজি। কলকাতা থেকে কর্নিলসাব এসেছেন। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।

কর্নেলের সঙ্গে আমি নামলাম জিপ থেকে। গেটের ভেতর থেকে একঝলক টর্চের আলো এসে আমাদের মুখে পড়ল। সেই সঙ্গে কুকুরের হাঁকডাক। দেখলাম, বন্ধ গেটের ভেতরে একজন পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। তার একহাতে প্রকাণ্ড অ্যালসেশিয়ানের গলার চেন। কুকুরটা গেটের গরাদে দুই ঠ্যাং তুলে গর্জন করছে।

কর্নেল বললেন, আমি নবকুমারবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাই।

বাবা তো নেই। দুদিন আগে কলকাতা গেছেন। আজ ফেরার কথা ছিল। রাতের ট্রেনে ফিরতেও পারেন।

আপনি কি সুনীলবাবু?

হ্যাঁ। তো অনিল–আমার ভাই জানিয়ে গেছে, জেঠিমা আমাদের পেছনে পুলিশ লাগিয়েছেন। দেখুন স্যার, আমরা জেঠিমার কোনও সাতেপাঁচে নেই।

সুনীলবাবু। আমরা পুলিশ নই। অনিলবাবুকে বলেছি– অনিল একটা গবেট। সুনীলবাবু খাপ্পা মেজাজে বললেন, ওর বোকামির জন্যই বাবা ওকে পছন্দ করেন না। ঘরের শত্রু বিভীষণ। আজ আবার ভালমানুষি করে বলতে এসেছিল, জেঠিমা কলকাতা থেকে সি আই ডি অফিসার পাঠিয়েছেন।

কর্নেল বললেন, উনি বটকৃষ্ণবাবুর কথা বলেননি?

সুনীলবাবু অ্যালসেশিয়ানটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গর্জন করলেন, বটোকেষ্টকে গুলি করে মারা উচিত। ঠগ। জোচ্চোর। ধান্দাবাজ। সেই আমাদের বিরুদ্ধে জেঠিমার কান ভারি করত। এখনও কলকাতা গিয়ে তাই করছে। করুক না। ভেবেছে, পাটোয়ারির গুণ্ডারা ওর পিঠ বাঁচাবে? চামড়া খুলে নেব।

নিশ্চয় নেবেন। তা সুনীলবাবু, জমিদার রায়বাবুদের সঙ্গে আপনাদের মামলার কি অবস্থা?

সুনীলবাবু একটু দমে গেলেন যেন। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বললেন, দেখুন স্যার, এসব ব্যাপারে যা বলার বাবা বলবেন। তবে জেঠিমা যখন আপনাদের হেল্প নিয়েছেন, তখন জেঠিমার কাছেই জানতে পারতেন মামলার কি অবস্থা। প্লিজ, আপনারা পরে খোঁজ নেবেন! বাবা ফিরে আসুন।

এই সময় টিপ টিপ করে বৃষ্টি শুরু হল। আমরা জিপে উঠলাম। কর্নেল রহমতকে বললেন, সোজা ফরেস্ট বাংলো।

ফরেস্ট বাংলোয় পৌঁছনোর আগেই তুমুল বৃষ্টি নামল। জিপের সামনে কর্নেলের বাঁদিকে এবং রহমতের ডানদিকে ঠাসবন্দি অবস্থায় বসার ফলে আমি তত ভিজলাম না। কিন্তু বৃষ্টিরোধী জ্যাকেট পরা সত্ত্বেও কর্নেল যথেষ্ট ভিজলেন। পর্দাটা ছেঁড়া। আটকাতে পারলেন না। ওঁর সাদা দাড়ি থেকে ঝরনা ঝরতে থাকল। টুপিতে অবশ্য টাক বাঁচল।

বাংলোয় আমাদের পৌঁছে দিয়ে রহমত চলে গেল জিপ নিয়ে। কৃপানাথ দৌড়ে এল। কর্নেল তাকে কড়া কফির হুকুম দিলেন। সেইসময় কৃপানাথ পকেট থেকে একটা ভাঁজকরা কাগজ কর্নেলকে দিয়ে বলল, এক বাঙালিবাবু কিছুক্ষণ আগে চিঠিটা দিয়ে গেলেন। চেনা-চেনা মনে হচ্ছিল।

তাকে থামিয়ে কর্নেল বললেন, জলদি কফি।

কৃপানাথ চলে গেলে চিঠিটা খুলে কর্নেল পড়লেন। তারপর নির্বিকার মুখে। আমার হাতে দিলেন। পড়ে দেখি, লেখা আছে–

মহামান্য কর্নেল নীলাদ্রি সরকার মহাশয়
সমীপেষু,

যাহা ভাবিয়াছিলাম, তাহাই ঘটিয়াছে। পুরানা বাজারে যখন আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, তখন পাটোয়ারিজির গুণ্ডারা আশেপাশে ছিল। আপনার সহিত কথাবার্তা বলিলে তাহাদের সন্দেহ হইবে ভাবিয়া শীঘ্রই সরিয়া পড়ি। এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। তবে বিশেষ ঘটনা, অদ্য বৈকালে কেল্লাবাড়ির একটি ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপ-চাপ রক্ত এবং একটি পামসু জুতা আবিষ্কার করিয়াছি। পামসু পাটি চিনিতে পারিয়াছি। উহা শ্রীনবকুমার সাঁতরার। আপনি অনুগ্রহপূর্বক তদন্ত করুন, সাঁতরাবাবুকে কে হত্যা করিয়াছে। আমি আড়ালে থাকিয়া এইরূপে আপনাকে সহযোগিতা করিব।

প্রণাম জানিবেন।
ইতি শ্ৰীবটকৃষ্ণ গুঁই……

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *