Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

পিয়ালীর সেদিন একটু সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গে যায়,ঘুম ভেঙে সে সৌরভকে পাশে দেখতে না পেয়ে একটু অবাক হয় প্রথমে তারপর সোজা বাথরুমে গিয়ে স্নান সেরে ছাদে যায়, গিয়ে দেখে সীমা আর সৌরভ কিছু একটা নিয়ে বেশ তর্ক করছে। সৌরভের জামার কলার ধরে সীমা বার বার জানতে চাইছে কেনো সে কাল রাতে ওই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেনি? কেনো বার বার বারণ করার পরেও সে রাতে ওই ঘরে ছিল। সৌরভ খুব করে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল কিন্তু সীমা কিছুই শুনতে রাজি না। তার এখন একটাই কথা পিয়ালীর বাড়ি থেকে ওদের নিতে এলে পিয়ালী যাবে কিন্তু সৌরভের যাওয়া চলবে না।
…… পিয়ালী ডেকে ওঠে সৌরভ।
…… পিয়ালীকে দেখে ওরা দুজনেই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে!!! সীমা ওখানে আর না দাঁড়িয়ে দৌড়ে নিচে নেমে যায়। সৌরভ চলে যাবার জন্যে এগিয়া গেলে পিছন থেকে পিয়ালী বলে ওঠে কি হয়েছে সৌরভ? কাল রাত থেকে দেখছি ও যেনো তোমাকে আমার থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে!!! কিন্তু কেনো বলতো? কি হয়েছে? বলো আমাকে।
—- তুমি ভুল বুঝছো, তেমন কিছু না। তোমাকে তো আমি আগেই বলেছিলাম ও এবাড়ির সবাইকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবে বিশেষ করে আমাকে নিয়ে।
_ ও তোমাকে নিয়ে এতটাই ভাবে যে ফুলসজ্জার রাতে তুমি তোমার বউয়ের সাথে থাকবে ও সেটাও মানতে পারছে না।
——- পিয়লী ভুল বুঝছো তুমি।
—— বেশ তো ঠিকটা বোঝাও আমাকে।।
পিয়ালী পিয়ালী, সৌরভ কোথায় তোরা? পিয়ালী তোমার বাপের বাড়ি থেকে সবাই এসে গেছেন তোমাকে নিতে। নিচ থেকে ডাক দেয় সৌরভের মা।
ওরা আমাকে না সৌরভ আমাদের নিতে এসেছে, নাকি এখনো তোমাকে তোমার বোনের পারমিশন নিতে হবে?
——— না না, তুমি গিয়ে ওনাদের সাথে কথা বলো আমি স্নান সেরেই নিচে আসছি। পিয়ালী চলে যেতে সৌরভ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
——— সৌরভ স্নান সেরে তৈরী হয়ে নিচে নামতেই ওর মা বলে উঠলো, সৌরভ আমরা মানে আমি আর তোমার বাবা আমরা ঠিক করেছি যে সীমা আজ তোমাদের সাথেই যাবে, তোমার তো বাড়ি ছেড়ে থাকার অভ্যেস নেই!!! নতুন জাগা, ওনারা সব জানে না তোমার কি ভালো লাগে না লাগে পিয়ালীর ও সব জেনে নিতে সময় লাগবে, তাই তোমার যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেই জন্যই আর কি। তা বলেছিলাম যে আপনাদের এতে কোনো আপত্তি নেই তো?
—— সেদিন পিয়ালী মামা ওদের নিতে গেছিল, উনি বললেন না না এতো খুব ভালো কথা আপত্তি কোনো থাকবে? তুমি তৈরী হয়ে নাও মা।
—– তৈরী হয়ে সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলো সীমা পিয়ালীকে সরিয়ে সৌরভের পাশে গিয়ে বসলো। পিয়ালীর ব্যাপারটা ভালো না লাগলেও ও মুখে কিছু বলল না।
সেখানে পৌঁছে ও সীমা একফোঁটা সৌরভকে কাছ ছাড়া করছে না,ঘটনাটা বাড়ির কারো নজর এড়ালো না। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সীমার সওয়ার ব্যাবস্থা ওদের পাশের ঘরেই করা হলো,কিন্তু সীমা সেখানেও নাছোড়বান্দা সে ওই ঘরে একা শোবে না!!!! অগত্যা পিয়ালী আর সৌরভের ঘরেই জাগা হলো সীমার ও। পিয়ালীর উপরেও যেনো সীমার সদা সতর্ক দৃষ্টি, কথায় যাচ্ছে? কি করছে? কাকে কি বলছে সব কিছু যেনো ও খেয়ালে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সৌরভকে একথা জানাতে গেলে সে বলে তুমি আসলে সীমাকে পছন্দ করছো না তাই ওর সব কিছুতেই তোমার এমনটা মনে হচ্ছে। অগত্যা পিয়ালী আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম আগে ঘুম ভেঙে যেতে পিয়ালী দেখে সোফার উপরে সীমা আর সৌরভ ঘুমিয়ে আছে। পিয়ালী ওদের ডাকে কি হলো সীমা তুমি তো রাতে আমার সাথে শুয়েছিলে তুমি এখানে এলে কেনো?
—- না আসলে আমার খাটে অসুবিধা হচ্ছিলো তাই আমি দাদাভাইয়ের কাছে এসে শুয়েছি।
——- তুমি তাহলে কেনো খাটে এসে শুলে না সৌরভ। আমি প্রথম থেকে খেয়াল করছি তোমরা কেমন একটা অদ্ভুত আচরণ করছো। আমি কিছু বুঝতে পারছি না সৌরভ, তোমরা এখানে যে ভাবে শুয়ে ছিলে এটা বাড়ির অন্য কারো চোখে পড়লে কি ভাবত? সেটা একবার ও ভেবে দেখেছো?
——- এতে ভাবার কি আছে? বৌদি!! আমি আমার দাদাভাইয়ের, সাথে শুয়েছি। কারো কিছু ভাববার কারণ তো বুজলাম না।
—– তুমি বা তোমার দাদাভাই কেউ আর ছোটো নেই সীমা সেটা তোমার মনে রাখা উচিত।
—— তুমি আমাকে নিজের বাড়িতে ডেকে এনে ইনসাল্ট করছো এটা তুমি ঠিক করছো না। শোনো দাদাভাই এই বাড়িতে আমি আর একমুহুর্ত ও থাকবনা। তুমি যাবে আমার সাথে নাকি আমি একাই চলে যাবো?
——- তুমি গেলে যাও সীমা, সৌরভ এখান থেকে এখন কোথাও যাবে না।
——– আমি যাবো পিয়ালী!!!! তুমি আর তোমার বাড়ির বাড়ির লোক আমাকে আর আমার বোনকে অপমান করেছো!! এরপর ও তুমি আশা করছো যে আমি এবাড়িতে থাকবো?
——- তুমি কি বলতে চাও সৌরভ? অপমান আমি বা আমরা করলাম নাকি তোমার বোন আমাকে করছে? প্রথমদিন থেকে দেখছি আমার ধারে কাছেও তোমাকে দেখলে ও রেগে যাচ্ছে!!! এমনকি ফুলসজ্জার দিনও ও বার বার তোমাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছে। কেনো? তোমার বোন কি এতটাই ছোটো যে সে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মানেটাই বুঝতে পারছে না?
—— শোনো পিয়ালী তোমাকে একটা কথা পরিষ্কার জানাতে চাই আমার সাথে আমার বাড়িতে থাকতে হলে তোমাকে সীমাকে মেনে নিয়েই থাকতে হবে!!! কারণ তোমাকে আমি বার বার বলেছি আমাদের বাড়ির সবাই ওকে খুব ভালোবাসে ওর একটা আলাদা জাগা সেখানে!! তুমি ২দিন এসেই যদি সে জাগা চাও সেটা হবার নয়। চলে আয় সীমা, আমরা এখুনি এখান থেকে চলে যাবো।
—– এতক্ষনে ওদের চেঁচামেচিতে সবাই ছুটে আসে। কি হলো সৌরভ? কি হয়েছে পিয়ালী? বিয়ের এখনও রেশ কাটলো না তোমাদের অশান্তি!!! কি হোয়েছে? কেউ বলবে তোমারা? ও কি সীমা কাঁদছে কেনো?
— কথাগুলো আপনাদের মেয়েকে জিজ্ঞাসা করুন। এখানে আর এক মুহুর্ত ও সম্ভব না থাকা। আমি আমার বোনকে নিয়ে এখুনি চলে যাবো।
—— পিয়ালীর মা বলে উঠল দাঁড়াও সৌরভ মাথা ঠান্ডা করো ছেলেমানুষ কি বলতে কি বলেছে তুমি রাগ করো না!!! তুমি মাথাটা ঠান্ডা রাখো। এভাবে চলে যেও না। আমি আমার মেয়ের হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।
—– না মা ক্ষমা তুমি চাইবে না!! আমি ভুল তো কিছু বলিনি। কেনো ক্ষমা চাইছো তুমি?
—– আহ্, থাম পিয়ালী!!! আমি তো কথা বলছি।
—– আপনাদের ছেলেমানুষ মেয়েকে ভালো করে বুঝিয়ে আমাদের বাড়ি পাঠাবেন, ওখানে থাকতে হলে সবার সাথে মানিয়ে নিয়েই চলতে হবে। সীমার সাথেও। ২দিন যেতে না যেতেই সব কিছু ওর কথা মতো হবে এটা যেনো ও না ভাবে। সীমা চল, এখানে আর এক মুহুর্ত ও না।
—— সৌরভ সেদিন কারো কোনো কথার তোয়াক্কা না করে সীমাকে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
——- মেয়ের কথা ভেবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে রমা দেবী। এটা তুই কি করলি মা? এরপর ও বাড়িতে গিয়ে তুই কি করে সংসার করবি? মেয়েটা তো অন্য কেউ ছিল না ওর বোন ছিল তুই কি বলেছিস ওদের যে সৌরভ এভাবে বেরিয়ে গেলো? এখন কি বলবো? ওদের কাছে গিয়ে? আর তোমাকে ও বলছি শুধু বোবার মতো সব দাঁড়িয়ে দেখে গেলে? একবার আটকালে না মেয়েকে তো কোনোদিনই কিছু বলো না। এখন কি হবে? কি করবে? কিছু ভেবে দেখেছ?
——- বৌভাতের ঘটনা গুলো সব একের পর এক মনে পড়ে যাচ্ছে বিকাশ বাবুর!!! কোনো কথাই উনি স্ত্রী কে এসে জানাননি এটা ভেবে যে এগুলো শুনলে রমা দেবী কষ্ট পাবে।
—— এরমধ্যে লোপা ( বিকাশ বাবুর বোন) বলে উঠলো তুমি একটু দাঁড়াও বৌদি!!! খালি খালি মেয়েটাকে দোষারোপ না করে আগে তো জানা দরকার কি হোয়েছিল? আমরা কেউ তো এখানে শুরু থেকে উপস্থিত ছিলাম না। তুই বলতো মা কি হয়েছিল? পিয়ালী কোনো কথার উত্তর না দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
—– তুমি দেখলে তো লোপা? এবার ও বলবে সবটা আগে জানা দরকার?
——- পিয়ালীর পিছন পিছন লোপা দেবী ওর কাছে যায়!! তুই আমাকে বল মা, কি হয়েছিল? কেনো সৌরভ এভাবে চলে গেলো?
—- কি হবে বলে? কেউ বিশ্বাস করবে তোমরা?
কেউ না করুক আমি করবো! তুই বল আমাকে। পিয়ালী ওর পিসিকে সবটা খুলে বলে। লোপা দেবী ওকে বুঝিয়ে চলে আসে সেখান থেকে।
—– দাদা বৌদি তোমরা দুজনেই আছো ভালো হয়েছে কথা গুলো তোমাদের দুজনেরই জানা উচিত।
বিকাশ বাবু ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে থাক লোপা, এখন থাক এই কথা গুলো!!! আমি নিজে যাবো, সেখানে গিয়ে সব ঠিক করে আসবো।
——- আর কোনোদিন কিছু ঠিক হবে কিনা আমার জানা নেই দাদা, কিন্তু বৌদির সব কথা জানা উচিত এবার!!! তোমার কথা রাখতে আমি সেদিন ওখান থেকে ফিরে কোনো কথা বৌদিকে জানাইনি, কিন্তু এবার আর না জানলেই নয়!!! বৌদি মা ওর সবটা জানা উচিত। লোপা দেবী সব কথা জানায় তার বৌদিকে অর্থাৎ পিয়ালীর মাকে!! বৌদি আমি জানি না আমি কতটা ঠিক বা ভুল তবে আমি সিওর এই দাদাভাই এর আড়ালের গল্পটা অন্য কিছু। তোমারা ঠিক মতো খোঁজ খবর না নিয়েই শুধু ডাক্তার দেখে মেয়েটার জীবনের এতো বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে। তোমরা গেলেও কি মেয়েটা ও বাড়িতে গিয়ে সংসার করতে পারবে?
৪র্থ পর্ব
নানান দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও সেদিন মেয়ের সংসার বাঁচানোর সার্থে রমা দেবী আর বিকাশ বাবু ছুটে যায় সৌরভের বাড়িতে।
—- ও আপনারা তাহলে এসে গেছেন? জানতাম একবার যখন অমন মেয়েকে ঘাড় থেকে নামতে পেরেছেন আর কি ঘরে রাখবেন? খুব কর্কশ ভাবে বলে উঠলো সৌরভের বাবা।
—– এসব আপনি কি বলছেন? আমার মেয়ে কোনোদিনই আমাদের বোঝা ছিল না। বরং সে আমাদের অহংকার।
——- থামুন মসাই কিসের অহংকার? যে মেয়ে তার সদ্য বিবাহিত স্বামী, ননদকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাকে নিয়ে আপনার অহংকার থাকতেই পারে কিন্তু সে কথা এখানে ফোলাও করে বলার কোনো দরকার নেই।
—– বেঁয়ান নিজের মেয়ে মনে করে ক্ষমা করে দিন। ওদের ২জনেরই বয়স কম মাথা গরম, আমাদের বড়দের সেখানে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করা উচিত। এটা ওদের ২জনেরই ভবিষ্যতের প্রশ্ন!!!
——- সৌরভের বাবা আবার বলে ওঠে দরকার হলে ছেলের আবার বিয়ে দেবো। ভবিষ্যতের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই বিকাশ বাবু।
—– রমা দেবী এতক্ষনে বলে উঠলেন বিয়ে দেবো বললেই কি বিয়ে দিয়ে দেওয়া যায়? আর যদি তা যায় ও তাহলে একবার কি ঠিক ভুলটা বিচার করার দরকার নেই? সৌরভকে ডাকুন ওর সাথে কথা বলার দরকার আছে!!!
—– সৌরভ ও কি বলবে? আর তাছাড়া ওরা বাড়িতে নেই।
আপনিও তো মেয়ের মা বেঁয়ান মেয়ে হিসেবে মা হিসেবে এটুকু আপনার বোঝা উচিত একটা মেয়ে যখন এমন কিছু করে তার কিছুতো কারণ থাকে।
——- পিয়ালীর শাশুড়ি মা বলে: আপনি বলতে কি চাইছেন? আপনি আমার ছেলে কন্যাসম সীমার দিকে যে আঙ্গুল তুলছেন? তার কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে?
—— বিকাশ বাবু বলেন এবার আমার মনে হচ্ছে আপনারা সব কিছু জেনে শুনে আড়াল করছেন। যা কিছু এই দুদিনে আমাদের চোখ এড়ালো না তার কিছুই আপনারা বুঝতে পারলেন না? ডাকুন সৌরভকে আমাদের কথা আছে ওর সাথে।
——– আপনাদের তো বলাই হলো সৌরভ বাড়ি নেই।
——- বিকাশ বাবু বললেন হ্যাঁ, ও ওর বোনকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছে এই তো? যার নাকি নতুন বিবাহিত জীবন টা ভেঙ্গে যেতে চলেছে সে তার মাসতুতো বোনকে নিয়ে ঘুরতে বেরিছে?!!! বাহ্, দারুন ব্যাপার।মানুষ নিজের বোনকে ছেড়ে মাসতুতো বোনকে নিয়ে এত ভাবতে পারে? যে রাতে নববিবাহিত বৌকে ছেড়ে বোনকে জড়িয়ে ঘুমোয়, ছি ছি আপনাদের তো দেখছি শুধুই উপরটাই ঝাঁ চকচকে ভিতরে তো কিছুই নেই মশাই। আপনাদের নামে আমি পুলিশ এ কমপ্লেইন করবো!!!! আমার অমন সোনার প্রতিমা মেয়ের সাথে আপনারা যা করেছেন তার কোনো ক্ষমা হয় না। আমি ছাড়বো না আপনাদের।
——– বহু তর্ক বিতর্কের পর সেদিন বিকাশ বাবু বাড়ি এসে মেয়েকে সব বলেন রমা দেবী বললেন মা তুই আমাদের ক্ষমা করে দে। কিন্তু এরপরে আর আমরা তোকে ও বাড়ি পাঠাবো না!!! তুই যেমন আমাদের কাছে ছলিল তেমনি থাক, ওরা তোর যোগ্য না।
——- সব শুনে পিয়ালীর দু চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে এলো!!! তোমাদের কাছেই যদি থাকবো তাহলে আমার বিয়ে কেনো দিলে বাবা? আমি সংসার করতে পারি বা না পারি আমার সাথে ওরা কেন এমনটা করলো? সে জবাব ওদের দিতে হবে বাবা। কাল সকালেই আমি যাবো সেখানে।
——– বিকাশ বাবু আঁৎকে উঠে বললেন তুই সেখানে গিয়ে কি করবি মা? ওরা যে তোকে আরো অপমান করবে। না তুই আর সেখানে যাবি না।
——— না বাবা যেতে তো আমাকে হবেই আমার সাথে এটা করার কি দরকার ছিল সেটা তো আমারও জানা দরকার, সম্পর্কই যদি ছিল তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করতে গেলো? এর উত্তর তো ওদের দিতেই হবে।
শেষ পর্ব
——- পরেরদিন সকালে বাড়িতে কেউ ঘুম থেকে ওঠার আগেই পিয়ালী বেরিয়ে যায়। !!!!! সকাল সকাল বেল বাজাতে পিয়ালীর শশুর মশাই এসে দরজা খোলে।
—– কি ব্যাপার, তুমি এখানে? এতো সকাল সকাল!!!! কি কারণে?
—- কেনো? আমার বুঝি এখানে আসতে নেই? আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন যে, আমি এখনো, সৌরভের আইনত স্ত্রী। ওর সাথে আমার কথা আছে আমাকে যেতে দিন।
—— পিয়ালীর গলার আওয়াজ শুনে সৌরভের মা ছুটে এসে বলে এ বাড়িতে তোমার কোনো জাগা নেই।তুমি এখুনি এখান থেকে চলে যাও।
——- চলে তো আমি যাবোই কিন্তু সেটা সৌরভের সাথে দেখা না করে নয়। সরুন আমাকে যেতে দিন। একপ্রকার ঠেলে ঢুকতে হলো পিয়ালীকে। ওরা পাড়ার লোকের জানা জানির ভয় বেশি কিছু বলতে পারেনি। পিয়ালী ভিতরে ঢুকে সোজা উপরে চলে যায় ওদের বেডরুম এর দিকে। ওর শাশুড়ি চেঁচিয়ে বলতে থাকে দাঁড়াও তুমি যাবে না বাবুর ঘরে ও ঘরে তোমার যাওয়ার কোনো অধিকার নেই। পিয়ালী কোনো কথার কোনো তোয়াক্কা না করে দরজায় ধাক্কা মারে। ওতো জোরে শব্দ হওয়ায় সৌরভ এসে দরজা খোলায় পিয়ালী সৌরভকে ধাক্কা মেরে ভিতরে ঢোকে। বিছানায় প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় সীমা। পিয়ালী হয়তো এতটার জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টার পর সে সৌরভ এর দিকে তাকিয়ে শুধু এটুকুই বলে যে সে তার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে। এতক্ষনে সীমার ও ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে পিয়ালীকে দেখে প্রায় ভূত দেখার মতো কেঁপে ওঠে।
—– তোমার ভয় নেই সীমা, আমার যা জানার ছিল জানা হয়ে গেছে!!!! তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ একটা মেয়ে, আর একটা মেয়ের এতখানি ক্ষতি করার জন্য।
—— ও দিকে সকালে উঠে পিয়ালীকে দেখতে না পেয়ে বাড়িতে শোরগোল পরে যায়। সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করে। লোপা দেবী বলে অন্য কোথাও না তোমারা সৌরভ এর বাড়ি যাও পেলে ওকে ওখানেই পাবে ।
——- আর এদিকে পিয়ালী ততক্ষনে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার দিকে পা বাড়াতেই একজন বয়স্কো ভদ্রমহিলা এসে বলেন: তুমি সৌরভের স্ত্রী তাই তো? কোনো পিয়ালী কোনো উত্তর না দিয়ে ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মহিলা আবার বলে ওঠে আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা কি, ঠিক যেমনটা সেদিন হয়েছিল বিদিশার। বিদিশা সৌরভের আগের পক্ষের স্ত্রী। ঠিক এক বছর আগে ওদের বিয়ে হয় আর ঠিক এই ভাবেই ওকেও এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়। তোমাদের বিয়ের কথা বার্তা হওয়ার সময়ই আমি কথা গুলো তোমার বাবাকে জানতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু উনি আমার কথা গুলো সম্ভবত সেদিন বিশ্বাস করেননি।
——– পিয়ালী কোনো কথা বলার অবস্থায় ছিল না , শুধু দুচোখ বেয়ে ক্রমাগত জলের ধারা ওর দুচোখ ঝাপসা করে দিয়েছিল। অন্যমনস্ক ভাবে চলতে গিয়ে সেদিন পিয়ালী একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। ওর বাড়ির লোক যতক্ষণে খবরটা পায় ততক্ষনে পিয়ালী একটা হসপিটালে জীবন মৃত্যুর লড়াই করছে। বাড়ির লোক আসায় ডাক্তার জানায়, তারা কোনো ভরসা দিতে পারছে না।
——- আজও সমাজে পিয়ালীর মতো কতশত মেয়ের আশা স্বপ্ন প্রতিদিন এই ভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, কত বাবা মায়ের কোল খালি হয়ে যাচ্ছে। কত কত সৌরভ, সীমা অপরাধ করেও সমাজের বুকে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সমাজের পরিবর্তন হোক। এটাই প্রার্থনা। কোনো পিয়ালীকে যেনো এভাবে শেষ হতে না হয়, কোনো বাবা মায়ের কোল যেনো এভাবে খালি হয়ে না যায়।
(গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক, বাস্তব বা কোনো গল্পের সাথে কোনো মিল থাকলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনীয়)

Pages: 1 2 3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *