Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 9

স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen

দক্ষের কন্যা অদিতি, তাকে কশ্যপ বিয়ে করেন। অদিতির গর্ভে বারোজন পুত্রের জন্ম হয়, তাদের মধ্যে একজন সূর্য, তিনি বিবাহ করেন বিশ্বকর্মার কন্যা সংজ্ঞাকে। সংজ্ঞার গর্ভে সূর্যের প্রথম পুত্র বৈবস্বত মনু। তারপরে জন্মাল যম, শেষে একটি কন্যা, নাম যমুনা।

সূর্যকে সংজ্ঞা বিয়ে করেছেন কিন্তু তিনি সূর্যের তেজ সহ্য করতে পারতেন না। দূরে দূরে থাকতেন।

কিন্তু কতক্ষণ দুরে থাকবেন একই গৃহবাসের মধ্যে? একদিন সংজ্ঞা চিন্তা করলেন আর এখানে নয়, স্বর্গের বাড়িতে গিয়ে থাকব, কিন্তু সূর্য কি রাজী হবেন? তিনি বড় বিপদে পড়লেন। ভাবতে লাগলেন। কি করবেন? তারপর স্থির করলেন, অবিকল নিজের মত দেখতে এক নারী সৃষ্টি করে রেখে যাবেন সূর্যের কাছে। সূর্য তাকে দেখে আর সন্দেহ করবেন না।

তিনি নিজের মতো দেখতে আর এক নারীকে তৈরি করলেন। তার নাম দিলেন ছায়া। ছায়াকে বললেন– তুমি সূর্যের স্ত্রী হয়ে থাকবে। তোমার পরিচয় কখনও কাউকে বলবে না। ছায়া বলল– আমি নকল সংজ্ঞা, কখনও যদি ধরা পড়ে যাই শাপগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে সত্য প্রকাশ করব। এরপর সংজ্ঞা কোনো কথা না বলে, বাপের বাড়ি চলে যান বিশ্বকর্মার কাছে। বাবার পায়ে প্রণাম করে সংজ্ঞা বললেন– বাবা আমি তোমার জামাই-এর তেজ সহ্য করতে পারছি না। এতোদিন বহু কষ্টে সহ্য করেছি আর পারছি না। তাই তোমার ঘরে থাকব বলে চলে এলাম।

কন্যার কথা শুনে বিশ্বকর্মা তাকে ভর্ৎসনা করলেন–না সংজ্ঞা এটা তুমি ভালো করোনি। তুমি তোমার স্বামীর কাছে ফিরে যাও।

তখন সংজ্ঞা চিন্তায় পড়লেন–স্ত্রীলোকের জীবন ধিক্‌! নারী জন্মই বৃথা! প্রথম জীবনে পিতার আশ্রিত, দ্বিতীয় জীবনে স্বামীর আশ্রিত, আর তৃতীয় জীবনে পুত্রের আশ্রিত হতে হয়। এখন আমি কি করি? যেতে পারব না সেখানে, আমার স্বর্ণা ছায়াকে রেখে এসেছি। গেলেই ধরা পড়তে হবে। আর সেই ছায়া ছাড়বে কেন? এখানে থাকলেও রোজ রোজ পিতার ভর্ৎসনা শুনতে হবে, তাহলে এখন আমার মঙ্গল হবে কেমন করে?

অতএব সংজ্ঞা তপস্যা করবেন বলে ঠিক করলেন, তিনি বরফের রূপ ধরে উত্তর মেরুতে গেলেন। সেখানে সর্বলোকের অজ্ঞানতা দূর করবেন। স্বামীর তেজ সহ্য করবার উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র লতাপাতা খেয়ে কঠোর তপস্যা করতে শুরু করলেন।

সূর্যেদেব ছায়াকেই পত্নী মনে করলেন। ছায়ার গর্ভে শনি নামে পুত্র ও তপতী নামে কন্যাকে সৃষ্টি করেন।

এখন ছায়া সংজ্ঞার তিন ছেলে মেয়ে ও নিজের তিন ছেলে মেয়ে মোট ছয় জনকেই দেখাশোনা করছেন। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই নিজের সন্তানদের বেশি স্নেহ করেন। বৈবস্বত মায়ের আচরণ সহ্য করে নিতেন।

কিন্তু যম, খাদ্য সামগ্রী, অলংকারাদি আর লালন পালনাদি ব্যাপারে উত্তম শনি ও তপতীর প্রতি মায়ের বেশ অনুরাগ দেখে সহ্য করতে না পেরে বাল্যাবস্থায় ক্রোধবশে পা তুলে মায়ের প্রতি তর্জন করতে থাকেন।

তখন ছায়া যমকে শাপ দেয়, ওহে তুমি আমাকে আঘাত করবার জন্য যে পা তুলেছিলে, সেই পা তোমার খসে পড়বে।

শাপ শুনে যমের ভয় হল। ছুটে গেলেন বাবার কাছে, বললেন–বাবা মা আমাকে শাপ দিয়েছেন, মা তো সব ছেলেমেয়েকে সমান চোখে দেখবেন। কিন্তু তিনি তা না করে উত্তম শনি ও তপতীর প্রতি বেশি স্নেহ দেখান। তাই আমি রেগে গিয়ে পা তুলেছিলাম, পদাঘাত করিনি। তাতেই মা শাপ দিলেন। বাবা মায়ের শাপে আমার পা যাতে খসে না পড়ে ব্যবস্থা করুন।

সূর্য বললেন, ছেলে অপরাধ করলেও মা কখনো পুত্রকে শাপ দেন না। আমার মনে হয় তিনি যে তোমাকে শাপ দিয়েছেন, নিশ্চয় তার কোন কারণ থাকবে। কৃমিতে দংশন করবে তোমার ওই। পায়ে। সে জন্য পুঁজ হবে।

তারপর সূর্য অন্তঃপুরে পত্নীকে বললেন– হে ভামিনি, পুত্রেরা সকলেই সমান, তবুও তোমার স্নেহ কনিষ্ঠদের প্রতি বেশি কেন?

ছায়া কোন উত্তর দিলেন না, তখন সূর্য ধ্যানযোগে সবকিছু জেনে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলেন, তখন ছায়া সব কথা তাকে জানান।

ছায়া সত্য বলায় সূর্য তাকে অভিশাপ দিলেন না, ক্রোধ ভরে সংজ্ঞার সঙ্গে দেখা করতে বিশ্বকর্মার বাড়িতে গেলেন। সূর্যকে বিশ্বকর্মা নানাভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেন–হে সূর্য, তোমার তেজ সহ্য করতে না পেরে সংজ্ঞা উত্তর মেরুতে অশ্বিনী রূপে তপস্যা করছে। তার উদ্দেশ্য যাতে তোমার তেজ সে সহ্য করতে পারে। তারপর বিশ্বকর্মা সূর্যের অনুমতিক্রমে তাকে বুকে জড়িয়ে চেপে দিলেন, তাতে সূর্যের তেজ কম হল।

সূর্য উত্তর কুমেরুতে গিয়ে তপস্যারত এক ঘোটকীকে দেখতে পেলেন। সংজ্ঞাই ঘোটকী তা চিনতে পারলেন সূর্য, তখন তিনি এক সুন্দর ঘোটকের রূপ ধরে তার সঙ্গে সুখে সঙ্গম করলেন। অশ্বিনীরূপিণী সংজ্ঞা পরপুরুষের সঙ্গে মিলন জনিত পাপের আশঙ্কায় যেই সূর্যবীর্য নাসার দ্বারা বমন করলেন। তাতে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের জন্ম হল। পরে এই অশ্বিনীকুমার দুজন স্বর্গবৈদ্য রূপে খ্যাতি লাভ করেন।

সংজ্ঞাকে তার নিজস্ব রূপে দেখতে পেয়ে সূর্য তখন আপন রূপে প্রকাশিত হলেন। সংজ্ঞা তখন সূর্যের কমনীয় রূপ দেখে আনন্দিত হলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *