Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 8

স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen

প্রজাপতি দক্ষের চৌষট্টিজন কন্যা, কশ্যপ তার মধ্যে তেরোজনকে বিয়ে করলেন। তাদের মধ্যে ক ও বিনতা দুইজন। কর একশো ছেলে সকলেই সাপ, বিনতার দুই ছেলে, অরুণ ও গরুড়। যার পুত্র সংখ্যায় বেশি তার জোর বেশি, অহঙ্কারও বেশি। কিন্তু বিনতার ছেলে গরুড় মহাশক্তিধর। কদ্রুর শতপুত্রের বলের থেকেও গরুড়ের শক্তি বেশি। গরুড়ের বড় ভাই অরুণ সূর্যের সারথি।

তাই কদ্রু মনে মনে চিন্তা করল, বিনতাকে যদি দাসী বানানো যায় তাহলে তার ছেলেদের দ্বারা বহু কাজ হাসিল হয়ে যাবে।

সে সুযোগ খুঁজছে। তারপর একদিন সুযোগ এল। দেবতা ও অসুররা সমুদ্র মন্থন করছেন। বহুপ্রকার দ্রব্য তাতে উঠল, তার মধ্যে একটি সুন্দর অশ্বও উঠল। নাম তার উচ্চৈঃশ্রবা। কশ্যপের পত্নী অদিতির পুত্র ইন্দ্র, যিনি দেবরাজ, নিয়ে এলেন সেই অশ্বটি।

কদ্রু যুক্তি করে বিনতাকে ডেকে বলল, বলতো ইন্দ্রের ওই ঘোড়ার রং কি?

ঘোড়াটা অনেকটা দূরেই ছিল, বিনতা ভাল করে দেখে বলল—দুধের মত সাদা।

কদ্রু বলল, না, না তোর চোখ কানা, আমি তো ভালই দেখতে পাচ্ছি, ঘোড়াটা কালো। আমার মনে হয় তুই চোখের মাথা খেয়েছিস। কালোকে সাদা দেখছিস।

কদ্রুর কথায় বিনতা অবাক হয়ে বলল– না, দিদি, আমি বেশ ভালই দেখতে পাচ্ছি, ঘোড়াটা সাদা। তখন কদ্রু রেগে গিয়ে বলল– আচ্ছা বাজি ধর। যদি ঘোড়াটা সাদা হয় আমি তোর দাসী হব। আর যদি কালো হয়, তুই আমার দাসী হবি।

বিনতার ইচ্ছা নেই ঝগড়া করতে, তবু সতীনের পীড়াপীড়িতে বাধ্য হল বাজি ধরতে।

এবার কদ্রু গোপনে তার ছেলেদের ডেকে বলল, তোরা সকলে শোন আমার কথা। আমি একটা বাজি ধরেছি। ইন্দ্রের উচ্চৈশ্রবা ঘোড়াটাকে কালো করে দিতে হবে।

সাপেরা বলল- কেন মা? এমন করলে কি হবে?

কদ্রু তখন সব ব্যাপার খুলে বলল।

সাপেরা বলল–না মা, এ অন্যায়। অন্যায় করবে তুমি আর দোষী হবে গরুড়ের মা, এমন করা উচিত নয়।

ছেলেদের কথায় কদ্রু খুব রেগে গিয়ে বলল– আমার আদেশ যে পালন করবি না, সে হবে বিষহীন। নিজেদের ছেলেদের ধরে ধরে খাবি, যে আমার হুকুম অমান্য করবে তাকে গরুড়ে খাবে। এই কথা শুনে সাপেদের বড় ভয় হল। সাপেরা বাধ্য হয়েই বলল– বল মা, আমাদের এখন কি করতে হবে?

কদ্রু বলল, এই ঘোড়ার সর্বাঙ্গ তোরা ঢেকে রাখবি। তোদের রঙ কালো, দূর থেকে ঘোড়াটা কালো দেখাবে। আমি বাজি জিতে যাব। বিনতা আমার দাসী হবে।

অগত্যা সাপেরা মায়ের কথামত তেমনি করল। কদ্রু বিনতাকে ডেকে বলল- দেখ, ঘোড়া কালো না সাদা।

বিনতা দেখল সত্য সত্যই ঘোড়া কালো। অবাক হল, কিন্তু বাজির কথামত তাকে কদ্রুর দাসী হতে হল। মনের আনন্দে কদ্রু নানা কাজের হুকুম করে, বিনতা সব আদেশ পালন করে।

একদিন কদ্রু তার ছেলেদের নিয়ে বিনতার পিঠে বহু দুর দেশে যেতে বলল, বিনতা বহু কষ্টে উড়তে লাগল, যত উপরে উঠে সুর্যের তাপ তত লাগে।

বিনতাকে কদ্রু বলল– গরম সহ্য করতে পারছি না, কোনো ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে চল। কিন্তু বিনতা তখন মহাসাগরের উপরে ঠান্ডা জায়গা পাবে কোথায়? সাপেরা আর যাই হোক নিজের বোনপো তো বটে। তাদের সুখের জন্য বিনতা তখন সূর্যদেবের কাছে প্রার্থনা জানালো যাতে তাপ কম হয়।

তখন কোথা থেকে এক বিশাল মেঘ এসে সূর্যকে আড়াল করল। তাপ কমে গেল, সবাই স্বস্তি পেল।

বিনতা এভাবে রোজ রোজ বহু কষ্ট সয়ে যাচ্ছে। মুখে কিছু বলতে পারছে না। মনিবের আদেশ মানতে বাধ্য। একদিন গরুড় মা বিনতার কাছে জানতে চাইল, কেন সে কদ্রু আর তার ছেলেদের নিয়ে এত কষ্ট করে ঘুরে বেড়ায়।

বিনতা তখন সেই বাজির কথা বলল। গরুড় বলল, মা এর কি কোন প্রতিকার নেই? তুমি জিজ্ঞাসা কর, কি পেলে ওরা তোমাকে দাসীত্ব থেকে মুক্তি দেবে।

তখন বিনতা একদিন কদ্রুকে বলল। কদ্রু তার ছেলেদের সঙ্গে পরামর্শ করে বলল– একটি মাত্র শর্তে দাসীত্ব হতে মুক্ত হতে পারবে। সেটা হল– স্বর্গ থেকে অমৃত এনে দিতে হবে।

বিনতা বুঝল তাকে সারাজীবন দাসীরূপেই থাকতে হবে। কারণ স্বর্গ থেকে অমৃত আনা সে কি এখনও সম্ভব হতে পারে? এ তো অসম্ভব ব্যাপার, দেবতারা কত কষ্টে অমৃত পেয়েছে, অসুরদেরকে তার ভাগ দেয়নি, যা খেলে মৃত্যু হবে না। সেই দুর্লভ অমৃতকে তো যেখানে সেখানে রাখবে না। কত যত্ন কত পাহারার মধ্যে রেখেছে, কার সাধ্য সেই সুধায় হাত দেয়।

দুঃখে শুধু চোখের জলের ভাসে বিনতা, গরুড় জিজ্ঞাসা করে, কেন কাঁদছ মা? তোমার দাসীত্ব মোচনের কি কোনো উপায় নেই?

বিনতা কাঁদতে কাঁদতে বলল– আছে বাবা কিন্তু তা অসম্ভব।

গরুড় বলল, কি এমন কাজ যা আমি পারব না, তুমি বল মা, আমি নিশ্চয় পারব।

বিনতা বলল, অমৃতের কথা। গরুড় শুনে বলল মা তুমি চিন্তা করো না, আমাকে আশীর্বাদ কর। আমি নিশ্চয় অমৃত এনে তোমার দাসত্ব মোচন করব।

এই বলে গরুড় মায়ের পায়ে প্রণাম করে দুটো বিশাল ডানা মেলে দেবলোকের দিকে উড়ল।

দেবতারা বুঝতে পারলেন, গরুড় আসছে অমৃত কলসের জন্য। যেমন করেই হোক তাকে রুখতেই হবে। প্রত্যেকেই যে যার অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। এক জায়গায় সবাই মিলিত হলেন। গরুড়কে কিছুতেই স্বর্গলোকে প্রবেশ করতেই দেব না। মহা বলবান দানবেরা যা পারল না, তা কিনা একটা পাখি চায়? তা কখনই সম্ভব নয়। প্রত্যেককেই শক্তি দিয়েই রুখে দাঁড়াতে হবে।

গরুড় উড়তে উড়তে আসছে, তাই দেখে দেবতারা যে যার অস্ত্রশস্ত্র ছুঁড়তে লাগলেন, আর গরুড়ের কেবলমাত্র সম্বল দুটো বিশাল ডানা। সেই ডানা দুটো দিয়েই রক্ষা করতে লাগল নিজেকে। মাকে স্মরণ করে ক্রমে ক্রমে এগিয়ে গেল গরুড়। আর ক্রমশঃ পিছোতে লাগলেন দেবতারা, গরুড়ের ডানার ঝাঁপটায় দেবতাদের সব অস্ত্র ব্যর্থ হতে লাগল। অগত্যা দেবতারা রণে ভঙ্গ দিলেন।

.

দেবলোকে পৌঁছল গরুড়, যে ঘরে অমৃতের কলস আছে, সেখানে গিয়ে দেখল– দুজন ড্রাগন কলসটিকে রক্ষা করছে, তাদের চোখমুখ দিয়ে আগুনের ঝলকা বেরোচ্ছে। আর তাদের বাইরে ঘুরছে। এক ধারালো চক্র। যে কেউ সেখানে যাবে, তো সঙ্গে সঙ্গেই ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তার বাইরে রাখা আছে এক জ্বলন্ত মালা। তারও বাইরে রয়েছে মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রধারী যক্ষের দল। কারও সাধ্য নেই সেই অমৃতের কাছে যেতে। তাহলে এখন উপায়।

মনে মনে মাকে স্মরণ করে এগিয়ে গেল। তাই দেখে যক্ষের দল আক্রমণ করল তাকে যার কাছে সমস্ত, দেবতাদের মিলিত শক্তি ব্যর্থ সেখানে যক্ষের দল আর কি করবে? অল্পক্ষণের মধ্যেই তাদেরকে নিরস্ত্র করে গরুড় এগিয়ে গেল। জ্বলন্ত মালাকে দুই বিশাল পক্ষ চাপা দিয়ে তারপর কৌশলে ঘুরন্ত চক্রটিকে নিষ্ক্রিয় করে ড্রাগনদের চোখে ধুলো দিয়ে অমৃতের কলস নিয়ে বেরিয়ে এল।

গরুড়ের শক্তি আর বুদ্ধি দেখে দেবতারা অবাক। স্বর্গলোক থেকে অমৃতের কলস চলে যাবে মর্তে। সবাই চললেন বিষ্ণুর কাছে। তারপর তাকে নিয়ে আবার সকলেই আক্রমণ করলেন গরুড়কে। গরুড়ের একটাই অস্ত্র আছে তা হল তার মায়ের আশীর্বাদ। তাই মাকে স্মরণ করে। ডানা দুটো দিয়ে। তাদের আক্রমণ থামাবার চেষ্টা করল। কিন্তু মাতৃভক্ত গরুড়ের কাছে সব অস্ত্র ব্যর্থ হতে লাগল। স্বয়ং বিষ্ণু পরাজিত হলেন। এখন উপায়? স্বর্গের অমৃত চলে যাবে মর্ত্যে?

তখন সকল দেবতা বিষ্ণুকে পাঠিয়ে দিলেন গরুড়ের কাছে। একটা কিছু বিহিত করবার জন্য একটা আপোস না করলেই নয়। সাপেরা যদি অমৃত খেয়ে শক্তিশালী হয়, তাহলে স্বৰ্গকে তছনছ করে ছাড়বে। তাই বিষ্ণু এগিয়ে গেলেন গরুড়ের কাছে। যুদ্ধ থেমে গেল।

বিষ্ণু বললেন, গরুড় তুমি একটি পাখি হয়ে কেবল ডানার সাহায্যে বীরত্বের সঙ্গে সব দেবতাদের জয় করলে, এতে আমি তাই সন্তুষ্ট, তাই আমি তোমাকে বর দিতে চাই, বল কি বর চাই তোমার? বিষ্ণুর কথা শুনে গরুড় বলল, হে বিষ্ণু, আমিও তোমার বীরত্ব দেখে খুব খুশি। আমি তোমাকে দুটো বর দিতে চাই, বল তোমার কী চাই।

চতুর বিষ্ণু বললেন– গরুড়, আমার প্রার্থনা তুমি আমার বাহন হও।

গরুড় বিষ্ণুকে জানত, সকল দেবতার অধিপতি তিনি। কাজেই তার বাহন হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, তাই সে রাজী হয়ে গেল।

বিষ্ণু বললেন, গরুড়, তুমি অমৃতের কলস দেখিয়ে তোমার মাকে মুক্ত করে নাও, কিন্তু সাপেদের অমৃত খেতে দেওয়া যাবে না।

বিষ্ণুর কথায় গরুড় চিন্তা করে বলল– তাই হবে কিন্তু সাপেরা যাতে অমৃত খাওয়ার সাহস না পায়, সে ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে।

বিষ্ণু গরুড়ের কথায় রাজী হলেন। গরুড় চলল অমৃতের কলস নিয়ে, সেটা রেখে দিল সমুদ্রের তীরে একটা বিশাল কলাবনের মধ্যে। খবর দিল সাপেদের, তোমারা যা চেয়েছিলে সেই অমৃত আমি দেবলোক থেকে নিয়ে এসেছি। এখন তোমরা অমৃত খেয়ে অমর হও আর আমার মাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে দাও।

কদ্রু ও তার ছেলেরা আনন্দে নেচে উঠল, তোমার মা মুক্ত, এই কথা বলে তারা কলসের দিকে যেতে লাগল।

গরুড় বলল– পবিত্র জিনিস পবিত্র হয়ে পান কর।

গরুড়ের কথায় সাপেরা ভাবল গরুড় কথাটা খারাপ বলেনি। তাহলে আগে সমুদ্রে স্নান করে আসি।

তারা স্নান করতে ছুটল। গরুড় মাকে পিঠে বসিয়ে উঠল আকাশে। বিষ্ণু সেই সুযোগে অমৃতের কলস নিয়ে সবার অলক্ষ্যে চলে গেলেন স্বর্গে।

এদিকে স্নান সেরে সাপের দল ছুটে এল অমৃতের কলসের কাছে, কিন্তু কলস কোথায়? দেখতে পাচ্ছি গরুড় আকাশে উঠে গেল, সে তো নিয়ে যায়নি তাহলে কে নিয়ে পালাল? হায় হায় করতে লাগল সকলে তাদের বহু আশা ছিল অমর হবে কিন্তু সে আসায় কে বাদ সাধল। যেখানে অমৃতের কলস ছিল, একটুকুও কি পড়ে যায়নি? দেখি চেটে; সকলে চাটতে লাগল কলাবন। কলাপাতার ধারে চিরে গেল তাদের জিভ, জোড়া আর কখনও লাগল না। আজও সকল সাপের তাই দুটো করে জিভ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *