Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 15

স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen

বিন্ধ্য পর্বত খুব বিশাল ও মনোরম। সেখানে নানা ধরনের বৃক্ষ, লতা ও মণিমানিক্যে ভরা। একদিন সেই পবর্তকে দেখতে গেলেন দেবর্ষি নারদ। তিনি দেখে খুব আনন্দিত হলেন।

বিন্ধ্যের মনে মনে খুব গর্ব। তার কারণ, তার মত সুন্দর পর্বত পৃথিবীতে নেই। এতো সম্পদ আর কোন পর্বতের নেই। কিন্তু পর্বতরাজ রূপে তার সম্মান নেই। এটাই তার একমাত্র দুঃখ।

এই প্রথম নারদের পদধূলি তার বুকে পড়ল। তাই বিন্ধ্য পর্বত খুব খুশি হল এবং দিব্যরূপ ধারণ করল। তারপর সে দেবর্ষিকে পূজ্য-অর্ঘ্য দিয়ে পূজা করল। বসতে আসন দিল। তারপর বলল আমার পরম সৌভাগ্য যে আপনার পদধূলি আজ আমার বুকে পড়ল, সত্যিই ধন্য আমি। আপনি অন্ততঃ আমাকে পর্বতরাজরূপে সম্মান দিলেন। তাই আজ আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এইভাবে বিন্ধ্যগিরি নিজেই নিজের প্রশংসা করে গেলেন। দেবর্ষি চুপ করে থাকলেন। আবার তিনি ভাবছেন এমন ঔদ্ধত্য সহ্যও করা যায় না। তাই তিনি হাসতে হাসতে বললেন– হে বিন্ধ্য, তুমি যা বলছ তা অনেকটাই ঠিক। হিমালয়, শ্রীশৈল, উদয়গিরি, মন্দার, হেমকূট, এরা মনে হয় না তোমার মতো হবে। আমার মনে হয় তোমার প্রতিদন্দ্বী হতে পারে একমাত্র সুমেরু।

বিন্ধ্য নারদ মুনির ইঙ্গিত বুঝতে পারল। সে বলল আমার প্রতিদ্বন্দ্বী সুমেরু কোন দিক দিয়ে? সুমেরুর প্রচুর সোনা আছে। এবং তার উচ্চতাও অনেক বেশি। তাই নাকি ঋষিবর?

সেই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন দেবর্ষি।

দেবর্ষির কথা শুনে বিন্ধ্যের মাথা ঘুরতে লাগল। সুমেরু হবে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, তা আমি কখনই সহ্য করব না। যেমন করেই হোক, সুমেরুকে সরিয়ে আমাকে শ্রেষ্ঠ হতেই হবে। কিন্তু কেমন করে? তারপর সে এই নিয়ে অনেক চিন্তা করতে লাগল। অনেক ভেবে সে স্থির করল পৃথিবীতে যত পর্বত আছে, সবার চেয়ে আমি মাথাটা উঁচু করে দাঁড়াব। এতে সূর্যের গতিপথ বন্ধ হয়ে যাবে। যেমন চিন্তা সেই কাজ। সে তার মাথা উঁচু করল, আকাশে ঠেকল তার মাথা।

সূর্য প্রতিদিন পূর্বদিকে ওঠে আর সন্ধ্যার সময় পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। তার কাজ হল প্রতিদিন একবার সুমেরু পর্বতকে পরিক্রমা করা। নিত্য দিনের মতো সূর্য উঠল। কিন্তু পথ বন্ধ কেন? থমকে দাঁড়াল, সাত চাকার রথ থেমে গেল। সূর্য তার নিজের পথে যেতে পারছে না। এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। যেখানে সূর্য দাঁড়ালেন সেখানকার সবই তাপে জ্বলে পুড়ে যেতে লাগল। আর বিন্ধ্য পর্বতের পশ্চিমদিকে রাত পোহাচ্ছে না। সূর্য না যাওয়ার কারণে অন্ধকার থেকেই যাচ্ছে। কাজেই বিপদে পড়ল সবাই। একদিকে সবসময় সূর্যের অসহ্য তাপ আর অন্যদিকে সব অন্ধকার। পশুপাখি থেকে আরম্ভ করে মানুষ পর্যন্ত সবাই ভয় পেয়ে গেল। স্বর্গলোক থেকে দেবতারা সব লক্ষ্য করলেন। মর্ত্যলোকে দিনরাত্রি হচ্ছে না, সূর্যের যাতায়াত বন্ধ, কিন্তু এখন উপায় কি?

এর একটা সমাধান বার করতে দেবতারা গেলেন ব্রহ্মার কাছে। জগতে কোথায় কি হচ্ছে সবই তার জানা। মুখ খুলে কিছু বলতে হল না। দেবতাদের দেখেই তিনি বললেন– এর সমাধান আমার কাছে নেই। তোমরা অগস্ত্য মুনির কাছে যাও। তিনি বিন্ধ্যের গুরু। তিনি যদি কোনো কৌশল করে বিন্ধ্যকে নিরস্ত করতে পারেন। দেবতারা ব্রহ্মাকে প্রণাম জানিয়ে কাশীতে ফিরে এলেন। দেবগুরু বৃহস্পতিকে অগ্রবর্তী করে চললেন অগস্ত্য মুনির আশ্রমে। মুনিবর তাঁর পত্নী লোপামুদ্রার সঙ্গে তপোবনে বসে আছেন। দেবতারা তাঁদের প্রণাম জানালেন। মুনিবর আনন্দে উঠে তাঁদের সাদর অভ্যর্থনা জানালেন। বললেন–কি করতে হবে বলুন? আমার পরম সৌভাগ্য যে আপনারা আমার আশ্রমে এসেছেন।

দেবতাদের প্রতিনিধি বৃহস্পতি বললেন– বিন্ধ্য পর্বতের কাণ্ড আপনার নিশ্চয় অজানা নেই, এখন সমগ্র পৃথিবীতে বিপদ, একমাত্র আপনিই এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন। আপনিই এই বিন্ধ্যের দম্ভ ভাঙতে পারেন। এবং সৃষ্টিকে রক্ষা করতে পারেন।

কাশীধামের এমন সুন্দর আশ্রম ছেড়ে অন্য জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা নেই অগস্ত্য মুনির। কিন্তু দেবতারা অনুরোধ করছেন। আবার সৃষ্টিকে রক্ষা করার ব্যাপার! তাই না গেলেই নয়, তাই অগত্যা তিনি রাজী হলেন। দেবতারা তাঁর কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

লোপামুদ্রাকে নিয়ে আকাশরথে চড়ে অগস্ত্য মুনি চললেন বিন্ধ্য পর্বতের কাছে। দূর থেকে মুনিবরকে দেখে বিন্ধ্য ভয়ে জড়সড়। মুনি খুব রাগী, তাই কি আদেশ করেন? কাছাকাছি আসতেই বিন্ধ্য মাথা নিচু করে প্রণাম জানাল। বলল গুরুদেব। আমি আপনার একজন সামান্য দাস। এই দাসের প্রতি এখন আপনার কি আজ্ঞা বলুন। বিন্ধ্য যেই মাথা নিচু করেছে, তখনই সূর্য যাওয়ার পথ পেয়ে যাওয়ায়, সাত ঘোড়ার রথ চালিয়ে চলে গেলেন। পৃথিবীতে আবার সব স্বাভাবিক হল। দিন রাত্রি যেমন হয় তেমনি চলতে থাকল।

বিন্ধ্যের নত শির দেখে অগস্ত্য মুনি মনে মনে খুব খুশি হলেন। তিনি শিষ্যকে একটা কথাই বললেন– শোন বিন্ধ্য, তুমি নিচু হওয়ায় আমার যাতায়াতের খুব সুবিধা হল, আমি দক্ষিণদেশে যাচ্ছি। খুব শীঘ্রই ফিরব, তুমি ততক্ষণ এইভাবে নত হয়ে থাক।

আর কিছু না বলেই মুনি দক্ষিণদিকে চলে গেলেন। বিন্ধ্যও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ভাবল গুরুদেব রেগে গিয়ে যে শাপ দেননি, সেটাই বড় কথা।

অগস্ত্য মুনি সেই যে গেলেন, আর ফিরলেন না। গুরুর আদেশ অমান্য করার সাহস নেই বিন্ধ্যের। সে সেইভাবে চিরকাল মাথা নিচু করে রাখল, পর্বতরাজ হওয়ার বাসনা তার ধুলায় মিশে গেল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *