Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 13

স্কন্দ পুরাণ || Prithviraj Sen

কাশীক্ষেত্র হলো মহাপুণ্যধাম। মহাদেব এখান থেকেই জগৎ শাসন করছেন। তার বহু অনুচর এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন। তাঁদের মধ্যে সবার শ্রেষ্ঠ ছিলেন দণ্ডপানি। কাশীতে আগে দণ্ডপানির পূজা করা হয়। তারপরে বিশ্বেশ্বরের পূজা হয়। হরিকেশ বহু সাধনার পর এই দণ্ডপানিত্ব লাভ করেন। শিবের হয়েই তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন। তাই শিবপূজা করার আগে তাকে সম্মান জানান উচিত।

রত্নভদ্র নামে এক যক্ষ গন্ধমাদন পর্বতে বাস করতেন। তাঁর পুত্র পূর্ণভদ্র পিতার অবর্তমানে যক্ষরাজ হলেন। পূর্ণভদ্র যক্ষরাজ হওয়ার ফলে তার প্রচুর অর্থ হয়, ঐশ্বর্য হয় এবং তাঁর অসংখ্য স্ত্রীও হয়। তারা সবসময় পূর্ণভদ্রের সেবাতেই ব্যস্ত থাকে। তবু পূর্ণভদ্রের মনে শান্তি নেই। যাঁরা পুত্রহীন হন, তাঁদের দুঃখের সীমা থাকে না। একদিন যক্ষিণী কনককুণ্ডলাকে নিজের মনের দুঃখের কথা বললেন। তখন তিনি উপদেশ দেন কাশী গিয়ে শিবের উপাসনা করতে।

পূর্ণভদ্র খুব খুশি হলেন। কাশীতেও শুরু করলেন শিবপূজা, ধ্যান ও নাম জপ। বহুদিন পরে তুষ্ট শিব তাকে বর দিলেন। তাঁর পুত্রলাভ হবে। তখন মনের আনন্দে পূর্ণভদ্র বাড়ি ফিরে এলেন। যথাসময়ে এক পুত্র হল তাঁর। নাম রাখলেন তিনি হরিকেশ। হরিকেশ খুব আদরে বড় হতে থাকে। তার স্বভাব অন্য ছেলেদের মতো ছিল না। ছোটবেলায় সবাই খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সে নির্জন জায়গায় চুপ করে বসে থাকে যেন সে কারোর চিন্তা করছে, কখনওবা সে মাটি দিয়ে শিবলিঙ্গ তৈরি করে তাতে ফুল-বেলপাতা দিয়ে পূজা করছে। ছেলের ব্যবহার দেখে বাবা-মাও খুশি হতে পারলেন না। তাঁদের মনে হল এত কষ্ট করে ছেলেকে পেলাম, ছেলে যদি বিবাগী হয়ে যায়? এই হরিকেশ আবার ঘুমতে ঘুমতে শিব নাম জপ করে।

পূর্ণভদ্র একদিন আদর করে ছেলেকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল–সবসময় ‘শিব শিব’ করিস কেন? এখন তো তুই ছোট, দেখ এই বয়সে তো পড়াশোনা করতে হয়। তারপর বিয়ে করে সংসারী হতে হয়। তারপরে তো ধর্মকর্ম করে। আমার কত ঐশ্বর্য তুমি জানো? এই সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী তুমিই। কাজেই এগুলো তুমি আগে ভোগ কর, তারপর না হয় ধর্মপথে যাবে। হরিকেশ পিতার কথায় কোন উত্তর দিল না। তার শিবভক্তি আরো বেড়ে চলল। একদিন পূর্ণভদ্র তাকে বকাবকি করলেন। সেই দিনেই রাত্রিবেলা যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন, তখন হরিকেশ প্রাসাদ ছেড়ে চলে গেল। পরের দিন সকালে বাড়ির লোকেরা জানতে পারল। বহু লোকজন পাঠিয়ে তাকে খোঁজার চেষ্টা করা হল। কিন্তু লাভ হল না। মার আক্ষেপের শেষ থাকল না। যদি না বকতাম তাহলে হয়তো শিবভক্ত হয়ে সে ঘরেই থাকত। কিন্তু এখন দুঃখ করে কী হবে?

হরিকেশ ঘর ছেড়ে চলে এল বারাণসীতে। আনন্দকাননে বসে সে শিবের ধ্যান করে। শিব তখন পার্বতীকে নিয়ে এসেছেন আনন্দকাননে। সেই স্থানটি ছিল অতি মনোরম। মহাদেব পার্বতীকে সব ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন। হঠাই পার্বতীর চোখে পড়ল এক উই ঢিপি।

পার্বতী জিজ্ঞাসা করলেন –এই সুন্দর কাননে উই ঢিপি কেন?

শিব কোন উত্তর দিলেন না। এমন ভাব করলেন তিনি যেন পার্বতীর কথা শুনতেই পান নি। পার্বতী বুঝলেন নিশ্চয় এর মধ্যে কোন রহস্য আছে। তাই তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন –প্রভু, এখানে উই ঢিপি কেন?

শিব বললেন–আমার এক ভক্ত বাল্যকাল থেকে আমার ধ্যান করছে। তাই তার গায়ে উই টিপি হয়ে গেছে। পার্বতী অবাক হয়ে বললেন, বাল্যকাল থেকে তপস্যা করতে করতে তার গায়ে উই পোকা বাসা করেছে, সে নিশ্চয় কোন বরের জন্য এটা করেছে। তাহলে তুমি ওকে বর দিচ্ছো না কেন?

তখন শিব টিপিতে স্পর্শ করলেন, সঙ্গে সঙ্গে সেই ঢিপি উধাও হল। সেখানে থেকে এক সুন্দর যুবক উঠে এলো, সে সামনে হর-পার্বতীকে দেখে উৎফুল্ল হল। তাঁদের স্তবস্তুতি করল।

শিব তাকে বর দিলেন। বললেন– বাল্যকাল থেকে তুমি আমার তপস্যা করছ। তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি। তাই তোমাকে এমন বর দেব যা আজ পর্যন্ত কাউকে দিইনি। কাশীধাম আমার খুব প্রিয় স্থান। সেই কাশীর শাসনভার তোমাকে দিলাম। এখানে আমার কোন অনুচর খারাপ কাজ করলে, অন্যায় করলে তুমি তাদের শাসন করবে। আমার প্রতিনিধিরূপে তুমি হলে কাশীর দণ্ডপানি।

এই তপস্যার ফলে হরিকেশ কাশীর দণ্ডপানি হয়ে বিশ্বেশ্বরের আগে পূজা পাচ্ছেন আজও।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *