Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সোঁদামাটি – নোনাজল || Manisha Palmal

সোঁদামাটি – নোনাজল || Manisha Palmal

ওড়িশা তালসারি লাগোয়া এক প্রান্তিক গ্রামের ভোর। জাল কাঁধে জেলেরা চলেছে সমুদ্রে, নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে। তালসারি সৈকতের কটা দোকান— যেখানে হাতের কাজের জিনিস পাওয়া যায়, সেখানেই একটা ছোট দোকান লক্ষীপ্রিয়া দের! লক্ষীপ্রিয়া দাদু ঠাকুমা এই তাদের পরিবার! চন্দনেশ্বরের প্রান্তিকে তাদের ভদ্রাসন! ভোরবেলায় তারা দোকানে চলে আসে আর সাঁঝ বেলায় ফিরে যায়। এই তাদের বিহান সাঁঝের কথকতা। এই কাহিনী মাত্র দু’বছরের। দু’বছর আগে লক্ষীপ্রিয়ারা ছিল ছোট্ট সুখী চাষীপরিবার। বাবাও দাদু চাষ করতো মা ও ঠাকুরমা বিভিন্ন হাতের কাজের জিনিস তৈরি করত যেমন নারকেল কাঠি, বেতের জিনিস, ঝিনুক শঙ্খের জিনিস। একমাত্র সন্তান বলে ওর আদর কম ছিলনা। ও তখন দশম শ্রেনীর ছাত্রী। বাবা ও মা নতুন দিঘাতে হাতের কাজের জিনিস বিক্রি করতে এসেছিল। ফেরার পথেই মাতাল পর্যটকদের গাড়ির সঙ্গে ভ্যান রিক্সার সংঘর্ষে মা ও বাবা দুজনেই মারা যায়। একমুহূর্তেই ওদের সুখের সংসার টা ছারখার হয়ে যায়। সন্তান হারানোর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে আগলে রেখেছে ছোট্ট মেয়েটা। প্রাইভেটের দ্বাদশ পাস করেছে। এখন সারাদিন এই তালসারি র দোকান চালায় ও দাদু ঠাকুমার দেখাশোনা করে। জমি ভাগ চাষ করতে দিয়েছে এ ছাড়া তো আর কোন উপায় নেই। খুব পরিশ্রমী শিল্পী মেয়েটা। ওর হাতে শিল্পকলা দেখলে তাক লেগে যায়। তালপাতা দিয়ে সুন্দর ফুল তৈরি করে ,পাখা তৈরি করে , নারকেল কাঠির ঝুড়ি , সাজি ট্রে খুব চাহিদা ও শিল্পকর্মের!
ওরা তিনজন এই তালসারি সৈকতের দোকানে রান্নাবান্না করে! অনেক সময় পর্যটকরাও ওকে রান্না করে দিতে বলেন ,সে থেকেও ভালোই আমদানি হয়!

সেদিন খুব ভোরে চন্দনেশ্বর মন্দির এর সামনের বাজারে নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে বসেছে! সেদিন ছিল চন্দন যাত্রা! লক্ষীর পরনে সবুজ লাল সম্বল্ পুরী শাড়ি। হাতে কানে গলায় পায়ের রূপার গহনা—- ওর ঠাকুমার ইচ্ছায় পরা। ও নিজের মনে হাতের সাজিটা এটা তৈরী করতে থাকে। হঠাৎ একটা গলায় চমকে মুখ তোলে—- দেখে এক পর্যটক হাতে ক্যামেরা নিয়ে ওর ফটো তুলে চলেছে! বিভিন্ন এংগেলে —-ওকে বলছে মুখটা বামে ঘোরাও— ডানে ঘোরাও—- দেখতে দেখতে লোক জমে যায় বাজারে। সবাই রে রে করে ওঠে। পর্যটক টি বছর 28 এর এক তরুন– এক মাথা ঝাঁকড়া চুল উজ্জ্বল 2 স্বপ্ন মাখা চোখ। সে হাতজোড় করে বারবার সবার কাছে মাফ চায়—– বলে ও একজন শিল্পী, ছবি আঁকে! এইযে লক্ষ্মীর ছবি তুলল তা-ও রংতুলিতে আঁকবে! ছবি তোলার জন্য ও লক্ষী কে টাকা দিতে চায়! ইতিমধ্যে লক্ষীর দাদু ঠাকুমা এসেউপস্থিত! সব শুনে ওর দাদু বলে— টাকা দিতে হবে না আপনি অতিথি অতিথির কাছে অর্থ দিতে নেই!
চিত্রকর ধীরে ধীরে আলাপ জমায় লক্ষ্মী র দাদু ঠাকুমার সাথে। লক্ষ্মী রা সব জিনিসপত্র নিয়ে তালসারি সৈকতের দিকে যায়। দেখে যে ওই ছেলেটি ওদের অনুসরণ করছে। ছেলেটি লক্ষী র দাদু কে বলে—- দাদু এক মাসের জন্য একটা ঘরভাড়া দেখে দাও না গ্রামে! দুবেলা-দুমুঠো খেতে দিও যা খরচা হবে আমি দেবো! এই একমাস আমি আমার মাতৃভূমি র
সব ছবি ক্যামেরাবন্দি করব পরে আঁকার জন্য।
অবাক হয়ে লক্ষ্মীর দাদু বলেন— মাতৃভূমি? এখানকার ছেলে? ছেলেটি বলে শুনুন তাহলে— আমি মৈনাক দাস! আমার মামা বাড়ি ছিল উদয়পুরে! আমার বাবা খুবই বড় ব্যবসায়ী ছিলেন! সারা পূর্বাঞ্চল জুড়ে তার ব্যবসা ছিল! আমার মায়ের রূপ ,আর দাদুর টাকার জন্যই এই বিয়েটা হয়। আমার জন্মের সময় মা মারা যায়। বাবা আবার বিয়ে করে। আমার ঠাঁই হয় হোস্টেলে।তবে আমার জন্য যে সম্পত্তি মা রেখে গেছে তাতে বাবা বাবা বা সত্ ভাইদের কোন ভাগ নেই। আমি আর্টকলেজ থেকে পাশ করে এই করে বেড়াচ্ছি।
এখানে লক্ষ্মী কে দেখে আমি চমকে গেছি কেন জানেন—- ও পুরো আমার মায়ের মত দেখতে! এই বলে মানিব্যাগ থেকে একটা সাদা কালো ছবি দেখায়—- সবাই বাকরুদ্ধ —-সত্যিই যেনো লক্ষীরই ছবি।
শুরু হয় এক অদ্ভুত প্রেম কাহিনীর। মৈনাকের শিল্পীসত্তা লক্ষ্মীর ভেতরে তার হারানো মায়ের ছবি কে খুঁজে পায়। তালসারি- উদয়পুর, জুনপুট, চন্দনেশ্বর এইভাবে বিভিন্ন জানা-অজানা সৈকতের ছবি তুলে মৈনাক। আস্তে আস্তে দুজনের মনের তারে ওঠে অনুরণন । একে অপরের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। দাদু ঠাকুমা কে বলে কোলকাতা ফিরে গিয়ে সব কাজ গুছিয়ে আবার ফিরে আসবে। তিনটে ফোন নাম্বার দেয় আর ঠিকানাও।আসে বিদায়লগ্ন। মৈনাক ফিরে যায় প্রতীক্ষায় থাকে লক্ষী। প্রথম প্রথম খুবই কথাবার্তা হতো। আস্তে আস্তে যোগাযোগ কমতে থাকে। শেষে একেবারেই বন্ধ। লক্ষ্মী অনেক চেষ্টা করে কিন্তু কোনো খোঁজ সে পায় না। দেখতে দেখতে বছর গড়িয়ে গেছে। লক্ষীর মন পাথর। দাদু ঠাকুমা তবু আশা করে ছেলেটা ঠিকই আসবে দেখিস। লক্ষী বলে—- মিছে স্বপ্ন দেখনা তোমরা !যে গেছে সে চিরদিনের জন্যই গেছে ফিরবে না! অভিমানে দুচোখের কোল উপচে আসে জলে। সেদিন
ভোর থেকেই তালসারি সৈকতে পর্যটকদের মেলা।
খুবই ব্যস্ত লক্ষ্মীরা। একটা কাজের লোক রেখেছেও। বছর 18 কানু– লক্ষীর পাড়ার ছেলে– দিদি বলে! দোকানে লোকজন সামলাতে ব্যস্ত লক্ষী– কানু হঠাৎ দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বলে—- দিদি, একজন লোক তোমাকে খুঁজছে— বিরাট গাড়ি নিয়ে এসেছে। বলতে বলতে গাড়ি ট। এসে দাঁড়ায় দোকানের সামনে। গাড়ি থেকে নামে মৈনাক—-হাতে ওয়াকিং স্টিক— কোনরকমে আস্তে আস্তে দোকানে ঢোকে। লক্ষ্মী স্তব্ধ। মৈনাক দাদু কে বলে—— আমি প্রতারক নই দাদু! অ্যাক্সিডেন্ট করে হসপিটালে পড়ে ছিলাম এতদিন! পা টা টুকরো হয়ে গেছে— স্টিল রড পোরা হয়েছে। তাই কোন খবরা-খবর বা যোগাযোগ করতে পারিনি। সব কাজ গুছিয়ে এবার এসেছি—- দেখো খোঁডা ছেলের সাথে তোমার নাতনীর বিয়ে দেবে কিনা। আমি আর কলকাতা ফিরবো না এখানেই বাড়ি কিনে বসবাস করবো।
এক পর্যটক এর অ্যাক্সিডেন্টে লক্ষ্মীর জীবন ছারখার হয়ে গিয়েছিল—- আবার আরেক পর্যটক এর সাহায্যে তার জীবন সফল সফল হতে চলেছে—- সোঁদা মাটি নোনা জলে বসন্তরাগ বাজতে থাকে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress