একজন কিশোরীকে চিনি যার চুল খাটো,
ঠোঁটে খেলা করে মধুর হাসি; মুখে সৌন্দর্যের আভা।
প্রজাপতির মতো সে ঘুরে বেড়ায়
এ-ঘর থেকে ও-ঘর। ওকে দেখলেই
মমতার ঢেউ জাগে মনে, ইচ্ছে হয়, ওর
মাথায় হাত রেখে কোনো কল্যাণময় বাণী উচ্চারণ করি।
বৃদ্ধি তার তীক্ষ্ম; পড়ার পাট চুকলেই
সেই কিশোরী প্রায় সেঁটে থাকে টিভি সেটে। আচার
খেতে খেতে দ্যাখে নানা অনুষ্ঠান। কবিতার প্রতি
তার কোনো টান নেই, অথচ তার ঘরে
চটকিলা গানের টেপ বাজে প্রত্যহ। কিশোরীর
অজান্তেই তার সত্তা ক্রমে ক্রমে
হাত বাড়াচ্ছে
যৌবনের বসন্ত বাহারের দিকে।
কয়েক মাস আগে কিশোরী মেতে উঠেছিল
ত্র্যাকুরিয়ামের মাছ নিয়ে। বালিকা বয়সে তার
শখ ছিল সারা দিনমান
খরগোশের সঙ্গে খেলা করবার এখন সে
খাঁচায় পোষে রঙ বেরঙের পাখি। পাখির খাঁচার পাশে
শুয়ে ব’সে সে চুপ ক’রে মুগ্ধাবেশে দ্যাখে
পাখিগুলোর রূপ, শোনে
ওদের ঐকতান। জানি না সে তার মায়ের মতো
ঘন ঘন আকাশ, বৃষ্টি জ্যোৎস্না দ্যাখে কিনা অথবা
নক্ষত্র চেনার উৎসাহ ওর কতটুকু।
এখন সে পাখিদের যত্নে বিভোর,
নিয়মিত খাবার দেয় ওদের। পাখিদের
ওড়া উড়ির সাধ মেটাবার জন্যে নীলাকাশকে
পুরে দিতে চায় খাঁচায়। যখন তখন সে
সস্নেহেহ তদারক করে পাখিদের, কথা বলে
ওদের সঙ্গে। কী কথা সেসব, কে জানে। কিশোরী কি ভাবে
কোনো নিষাদ আড়ালে লুকিয়ে আছে
পাখিদের বধ করার মতলবে? না কোনো শিকারী
খাঁচাবন্দী পাখি শিকার করে না। পাখি মারার লালসা ওরা
চরিতার্থ করে খালে বিলে, নদীতে, ঝিলে জঙ্গলে। তবে
অদৃশ্য অশুভ জীব তো থাকতে পারে ওঁৎ পেতে। কোনো
ভর সন্ধেবেলা কিশোরী যদি দ্যাখে খাঁচাময় পাখিদের
সব পালক ছেঁড়া, তছনছ, তাহলে তার সন্ত্রস্ত
বুকের ভেতরে বইবে কোন্ ঝড়?