শফিকের বাবা জয়নাল সাহেব
শফিকের বাবা নান্দিনা স্কুলের এ্যাসিসটেন্ট হেড মাস্টার জয়নাল সাহেবকে তাঁর ছাত্ররা ডাকত ডিকশনারি স্যার। কোনো বিচিত্র কারণে তিনি ইংরেজি ডিকশনারি মুখস্থ করে ফেলেছিলেন। ক্লাসে ঢোকার সময় তার হাতে একটা ডিকশনারি থাকত। রোল কলের আগে ডিকশনারিটা কোনো একজনের দিকে বাড়িয়ে বলতেন— একটা কিছু ধর। দেখি আমি পারি কি না। কঠিন কোনো শব্দ খুঁজে বের করবি। এই খেলা কিছুক্ষণ চলার পর তিনি হষ্টচিত্তে রেল কল করতেন। যথারীতি ক্লাস শুরু হতো।
ডিকশনারি মুখস্থের পরীক্ষা তিনি শুধু যে ছাত্রদের দিতেন তা না, মাঝে মাঝে বিশিষ্টজনদের কাছেও দিতে হতো। স্কুল ইন্সপেকশনে একবার শিক্ষা অফিসার একরামুদ্দিন সাহেব এসেছিলেন। তিনি হঠাৎ জয়নাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, শুনলাম আপনাকে সবাই ডিকশনারি স্যার ডাকে। সত্যি সত্যি ডিকশনারি মুখস্থ করে ফেলেছেন নাকি?
তিনি কিছু বললেন না। লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে থাকলেন। হেড মাস্টার সাহেব (বাৰু হরগোপাল রায়, এমএ বিটি গোল্ড মেডাল) বললেন, কথা সত্যি। আপনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ডিকশনারি এনে দেই?
একরামুদ্দিন সাহেব গম্ভীর মুখে বললেন, ডিকশনারি লাগবে না। দেখি Canter শব্দের মানে বলুন।
জয়নাল সাহেব নিচু গলায় বললেন, Canter হলো ঘোড়ার চলা। খুব দ্রুতও না আবার খুব হালকা চালেও না। মাঝামাঝি।
হয়েছে। এখন বলুন Squint কী?
জয়নাল সাহেব অতি বিনীত ভঙ্গিতে বললেন, টেরা চোখ।
হয়েছে। Z দিয়ে একটা জিজ্ঞেস করি— Zither কী? স্যা
র এটা একটা বাদ্যযন্ত্র।
একরামুদ্দিন সাহেব আর কিছু বললেন না। গম্ভীর হয়ে গেলেন। স্কুল ইন্সপেকশন শেষ করে ঢাকায় ফিরে গেলেন। কিছুদিন পর জয়নাল সাহেব তার কাছ থেকে একটা পার্সেল পেলেন। সেখানে একটা চিঠি এবং চিঠির সঙ্গে চামড়ায় বাঁধাই করা একটা ডিকশনারি।
সেই চিঠি এবং ডিকশনারি জয়নাল সাহেবের সঙ্গে এখনো আছে। আগে প্রায়ই চিঠি বের করে পড়তেন। কাগজটা ন্যাতা ন্যাতা হয়ে গেছে বলে এখন আর পড়েন না। ডিকশনারির ভেতর কাজ করে রেখে দিয়েছেন। অবশ্যি পড়ার প্রয়োজনও বোধ করেন না। চিঠির পুরোটাই তার মুখস্থ। চিঠিতে একরামুদ্দিন লিখেছেন–
জনাব ডিকশনারি,
আরজ গুজার। আশা করি আল্লাহপাকের অসীম অনুগ্রহে মঙ্গল মতো আছেন। অনেক বিচিত্র কর্মকাণ্ডের জন্য মনুষ্য সমাজ খ্যাত। আপনার ডিকশনারি মুখস্থ তার মধ্যে পড়ে। আপনি জটিল কর্ম সমাধা করিয়াছেন। আপনাকে অভিনন্দন। আপনাকে দেখিয়া আপনার ছাত্ররাও মুখস্থ বিদ্যায় আগ্রহী হইবে ইহা অনুমান করিতে পারি। এর ভালো দিক অবশ্যই আছে। আপনাকে উপহার স্বরূপ একটি ডিকশনারি পাঠাইলাম। ডিকশনারিটা পুরাতন। পুরাতন হইলেও আপনার পছন্দ হইবে।
আল্লাহপাক আপনাকে ভালো রাখিবেন ইহাই আপনার প্রতি আমার শুভ কামনা।
ইতি
একরামুদ্দিন খান।
চামড়ায় বাঁধানো এই ডিকশনারি জয়নাল সাহেবের অতি প্রিয়বস্তুর একটি। তিনি প্রতিদিন কিছু সময় ডিকশনারি নিয়ে বসেন। পাতা উল্টান। শব্দগুলো দ্রুত পড়েন। সব সময় চর্চায় থাকেন। মুখস্থ বিদ্যা চর্চার জিনিস। কোরানে যারা হাফেজ তাদেরকেও প্রতিদিন কিছু সময় কোরান পাঠ করতে হয়।
জয়নাল সাহেব বর্তমানে বাস করেন খিলগাঁয়ের এক হোটেলের (বেঙ্গল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট) দুই তলা ২৩ নাম্বার ঘরে। এখানে থাকার জন্যে তাকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না; কারণ বেঙ্গল হোটেলের মালিক মনসুর তাঁর এক সময়ের ছাত্র। হোটেলে থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে তিনি মনসুরের চার ছেলেমেয়েকে দুই বেলা ইংরেজি পড়ান। মনসুর তাকে যথেষ্টই ভক্তি-শ্রদ্ধা করে। যতবারই দেখা হয় ততবারই বলে, টাকা-পয়সা লাগলে বলবেন। লজ্জা করবেন না। ছাত্র এবং পুত্রের মধ্যে বেশকম কিছু নাই। এটা আপনারই কথা। আমার কথা না। এত জ্ঞানের কথা আমি জানি না।
তিনি টাকা-পয়সার ভয়াবহ টানাটানির মধ্যে থাকেন তারপরও মনসুরের কাছে এখন পর্যন্ত কিছু চাননি। আজ মনে হয় চাইতে হবে। তাঁর হাতে কোন টাকা-পয়সা নাই। সকাল থেকে ইচ্ছা করছে ছেলেকে দেখতে। ছেলে থাকে কলাবাগানের গলির ভেতর। খিলগাঁ থেকে হেঁটে হেঁটে ছেলের কাছে যাওয়া সম্ভব না। গত রাতে তিনি ছেলেকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। একটা খাটের ওপর ছেলে, ছেলের বউ মীরা আর তাদের মেয়ে নিশো বসে আছে। তিনজনই ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে। কান্নার শব্দ শুনে তিনি তাদের কাছে গেলেন। অবাক হয়ে বললেন, কী হয়েছে?
মীরা বলল, বাবা ও ইংরেজি পরীক্ষায় ফেল করেছে। এখন কী হবে বাবা? তিনি বললেন, সে তো ইংরেজিতেই পাস করেছে, ইংরেজিতে এমএ ডিগ্রি পেয়েছে। এমএ ডিগ্রি তো সহজ ব্যাপার না।
মীরা চোখ মুছতে মুছতে বলল, তাকে দশটা শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করেছে। একটাও পারে নাই।
তিনি ছেলের পিঠে হাত রেখে বললেন, কি কি শব্দ জিজ্ঞেস করেছে আমাকে বল দেখি। কান্নার সময় পাওয়া যাবে। শব্দগুলো বল।
শফিক ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, Carp.
Carp পারিস নাই? Carp হলে একটা ভার্ব। নাউন না। এর মানে–Complain continually about unimportant matters সহজ বাংলা হল–ঘ্যানঘ্যান করা। আর কি পারিস নাই বল দেখি—
স্বপ্নের এই পর্যায়ে তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। বালিশের নিচ থেকে ঘড়ি এনে দেখেন রাত বাজে দুটা। বাকি রাত তার আর ঘুম হয়নি। তিনি কিছুক্ষণ শুয়ে, কিছুক্ষণ বসে, কিছুক্ষণ হোটেলের বারান্দায় হাঁটাহাটি করে সময় পার করেছেন। ছেলের জন্যে খুবই মন খারাপ লেগেছে। তার কোনো বিপদ হয়নি তো? আল্লাহপাক বিপদ-আপদের খবর মানুষের কাছে ইশারার মাধ্যমে পৌঁছান। একবার তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন লাল রঙের একটা সাপ কামড় দিয়ে তার ডান পায়ের বুড়ো আঙুল কামড়ে ধরেছে। তিনি অনেক ঝাকাঝাকি করেও সাপটা ছাড়াতে পারছেন না। এই স্বপ্ন দেখার কিছুদিন পরই স্কুলের বারান্দায় পিছলে পড়ে তার ডান পা ভেঙে যায়। স্বপ্নের অর্থ তো অবশ্যই আছে। সবাই সব অর্থ ধরতে পারে না।
শফিক তার বড় আদরের ছেলে। ছেলে আশপাশে থাকলে তার এতই ভালো লাগে যে গলা ভার ভার লাগে। মনে হয় কেঁদে ফেলবেন। ছেলের দিকে এই জন্যেই তিনি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকেন না। তিনি নিশ্চিত বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে অবশ্যই তাঁর চোখে পানি আসবে। ছেলে তখন অতি ব্যস্ত হয়ে বলবে, বাবা কী হয়েছে? ছেলেকে তখন মিথ্যা করে বলতে হবে কিছু হয় নাই। চোখে কি যেন পড়েছে। ছাত্র এবং পুত্র এই দুই শ্রেণীর কাছে মিথ্যা বলা গুরুতর অন্যায়।
তাঁর এখন উচিত ছেলের সংসারে বাস করা। নিজের জন্যে না, নাতনীটার জন্যে। তিনি তাদের সঙ্গে থাকলে নিশোকে ভালমতো ইংরেজিটা ধরিয়ে দিতে পারতেন। বিদেশী ভাষা অল্প বয়সেই ধরিয়ে দিতে হয়। মগজ নরম থাকতেই কাজটা করতে হয়। মগজ একবার শক্ত হয়ে গেলে বিরাট সমস্যা।
ছেলের সংসারে বাস করা তার কাছে কোনো ব্যাপার না। ব্যাগ-স্যুটকেস নিয়ে চলে গেলেই হয়। ছেলে খুবই খুশি হবে। সে অনেকবারই তাকে বলেছে। ব্যাগ-স্যুটকেস নিয়ে টানাটানি পর্যন্ত করেছে। নানা কারণেই ছেলের সঙ্গে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের একটামাত্র শোবার ঘর। একটাই বাথরুম। সেই বাথরুম শোবার ঘরের সঙ্গে। তাঁকে রাতে কয়েকবার বাথরুমে যেতে হয়। বাথরুম পেলে তিনি কী করবেন? ছেলে এবং ছেলের বউকে ঘুম থেকে তুলে তারপর বাথরুমে যাবেন? এক রাতে তাদের কয়বার ঘুম থেকে তুলবেন?
ধরা যাক তারপরেও তিনি থাকতে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে এই খবর ছেলের মার কানে যাবে। এই মহিলা বাস করেন তাঁর বড় মেয়ের সঙ্গে। মহিলার আছে Carp সমস্যা। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করা। তিনি শুরু করবেন ঘ্যানঘ্যান, তুমি ছেলের সংসারে সুখে থাকবে আমি কেন মেয়ে জামাই-এর সঙ্গে থাকব? তুমি যেখানে থাকবে আমি থাকব সেখানে। মেয়ে জামাই-এর সংসারে আমি আর থাকব না। প্রয়োজনে আমি তোমার হোটেলে এসে উঠব। এই মহিলার মাথায় সামান্য ছিট আছে। বিছানা-বালিশ নিয়ে হোটলে চলে আসতে পারে। যদি আসে বিরাট সমস্যা হবে।
স্বামী-স্ত্রী দুজন একসঙ্গে ছেলের কাছে থাকতে যাবেন সেটা এই মুহূর্তে অসম্ভব। ছেলে খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। তার নিজেরই দিন চলে না। কোনো চাকরিতে সে স্থির হতে পারছে না। তার সংসারে বিরাট অভাব। বিয়ের সময় বউমাকে তার মা সামান্য কিছু গয়না দিয়েছিলেন। সোনার চুড়ি, চেইন, কানের দুল। এখন বউমার শরীরে কোন সোনাদানা নেই। বিবাহিত মেয়েরা সব সময় গায়ে কিছু না কিছু সোনা রাখে। এই মেয়ের গায়ে কিছুই নাই কেন তা কি তিনি জানেন না? ঠিকই জানেন। এমন যাদের সংসারের অবস্থা তাদের ঘাড়ে দুই বুড়োবুড়ি সিন্দাবাদের ভূতের মধ্যে চেপে বসতে পারেন না। সিন্দাবাদকে মাত্র একজন বুড়ো কাঁধে নিতে হয়েছে এখানে তারা দুই জন।
আজ শুক্রবার। জয়নাল সাহেবের ছুটির দিন। ছাত্র পড়াতে যেতে হবে না। তারপরেও তিনি ঠিক করলেন যাবেন। মনসুরের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করবেন। ছেলের বাড়িতে খালি হাতে উপস্থিত হওয়া ঠিক না। বাচ্চা একটা মেয়ে আছে। তার জন্যে কিছু না কিছু নিয়ে যাওয়া উচিত। শিশু কন্যাকে উপহার দেবার বিষয়ে নবিজির হাদিসও আছে— যে ব্যক্তি তার শিশু কন্যার জন্যে উপহার নিয়ে যায় সে দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলে খাদ্যদানের পুণ্য সঞ্চয় করে।
জয়নাল সাহেব সকাল আটটায় মনসুরের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে শুনলেন কিছুক্ষণ আগেই মনসুর তার ছেলেমেয়ে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গেছে। আজ আর ফিরবে না। তিনি হোটেলে ফিরে এলেন। অনেক চিন্তাভাবনা করে হোটেলের ম্যানেজার কায়েস মিয়ার কাছে গেলেন। ধার হিসাবে একশ টাকা পাওয়া যায় কিনা। কায়েস মিয়া গম্ভীর গলায় বলল, স্যারের হুকুম ছাড়া টাকা পয়সার লেনদেন আমার জন্যে নিষেধ আছে। তিনি নিজের ঘরে এসে এখন কি করা উচিত ভাবতে বসলেন। হেঁটে হেঁটে রওনা দেবেন? যতক্ষণ পারবেন হাঁটবেন। তারপর রিকশা নিয়ে নেবেন। ছেলের বাসায় পৌঁছে মীরাকে বলবেন রিকশা ভাড়াটা দিয়ে দিতে। সমস্যা হবে যদি মীরার কাছে রিকশা ভাড়া না থাকে। থাকবে নিশ্চয়ই। মেয়েদের কাছে গোপন কিছু টাকা সব সময়ই থাকে। তবে তিনি চেষ্টা করবেন হেঁটে হেঁটে যেতে। বিশ্রাম করতে করতে যাবেন, সমস্যা কী? সঙ্গে ছাতা থাকতে হবে। বৃষ্টি-বাদলার দিন, কখন বৃষ্টি নামে তার নেই ঠিক। ছাতা একটা জোগাড় করতে হবে। তাঁর নিজের ছাতা গত বৎসর বর্ষার সময় হারিয়ে ফেলেছিলেন আর কেনা হয়নি। ম্যানেজার কায়েস মিয়ার কাছে ছাতা চাইলে সে কি ছাতা জোগাড় করে দেবে নাকি সে বলবে— স্যারের হুকুম ছাড়া ছাতা দিতে পারব না।
দরজায় টুক টুক করে টোকা পড়ছে। শফিক এই ভঙ্গিতেই দরজায় টোকা দেয়। সে কি এসেছে? জয়নাল সাহেবের বুকে ছলাৎ করে একটা শব্দ করল। তিনি মনের উত্তেজনা গোপন করে কোলের ওপর ডিকশনারি নিতে নিতে বললেন, দরজা খোলা। কোলে ডিকশনারি নেয়ার পেছনে কারণ হলো যদি শফিক হয় তাহলে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন ডিকশনারির পাতা উল্টাতে উল্টাতে। যেন ছেলে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। সে দেখা করতে এলেও কিছু না। না এলেও কিছু না।
বাবা কেমন আছ?
ভালো। বোস।
তিনি আড়চোখে ছেলের দিকে তাকাচ্ছেন। ছেলে কোথায় বসে এটা দেখার বিষয় আছে। সে চেয়ারে বসতে পারে, তাহলে বাবার কাছ থেকে অনেকটা দূরে বসা হয়। আবার বাবার কাছে খাটে বসতে পারে। তার ধারণা ছেলে বাবার কাছাকাছি বসবে। দেখা যাক অনুমান সত্যি হয় কিনা।
শফিক খাটে এসে বসল।
তিনি ডিকশনারির পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললেন, বৌমার শরীর কেমন?
ভালো।
নিশো?
সেও ভালো।
টিফিন ক্যারিয়ারে করে কী এনেছিস?
মীরা সকাল বেলা খিচুড়ি মাংস রান্না করেছিল। তোমার জন্যে নিয়ে এসেছি। বাবা তুমি নস্তিা করে ফেলেছ?
এতবেলা পর্যন্ত না খেয়ে থাকব নাকি?
দুপুরে খেও। কাউকে বললে গরম করে দেবে না?
দেবে। বাসি খাবার খেয়ে কোনো আরাম নেই। দেখ তো টেবিলের ওপর একটা চামচ আছে কি না। গরম গরম খাই।
জয়নাল সাহেব খুবই আরাম করে খাচ্ছেন। ঘরের রান্নার স্বাদ তুলনাবিহীন। খেতে খেতেই তিনি লক্ষ্য করলেন শফিক বালিশের নিচে কিছু রাখল। এটা শফিকের স্বভাব, যতবারই আসে বালিশের নিচে টাকা-পয়সা রেখে যায়। গোপনে রাখে। সরাসরি বাবার হাতে তার টাকা দিতে লজ্জা লাগে। বালিশের নিচে শফিক যখন টাকা রাখে তখন তিনি নিজেও এমন ভাব করেন যেন দেখতে পাননি।
তোর মার কোনো খবর আছে?
মা ভালো আছেন। বাবা শোনে আমি নতুন একটা চাকরি পেয়েছি।
কী চাকরি?
একজন বিশাল বড়লোকের পার্সোনাল ম্যানেজার।
কাজটা কী?
মাত্র তো জয়েন করেছি— এখনো বুঝতে পারছি না কাজটা কি।
যে কাজই করবি মন দিয়ে করবি।
কাজটা টিকবে কিনা বুঝতে পারছি না। যদি টেকে বড় একটা বাসা ভাড়া করব। তোমাকে আর মাকে আমার সঙ্গে রাখব।
আমাদের জন্যে চিন্তা করিস না। আগে ঋণমুক্ত হ। ঋণ আছে না?
আছে।
পারলে তোর মার হাতে কিছু টাকা-পয়সা দিস। আমারই দেয়া উচিত। আমি তো আর পারছি না। টাকা হাতে থাকলে ঐ মহিলার মেজাজ খুব ভালো থাকে। এমনিতে ঘ্যানঘ্যান স্বভাব, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করার ইংরেজি কী বল দেখি?
জানি না বাবা।
বলিস কী? তুই না ইংরেজির ছাত্র? তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করার ইংরেজি হলো সিএআরপি।
তুমি কি এখনো ডিকশনারি মুখস্থ করেই যাচ্ছ।
অসুবিধা কী?
শুধু শুধু ভারি একটা বই মাথায় নিয়ে বসে থাকা। বাবা তুমি আর খেও না। সকালে নাস্তা খেয়ে এতটা খিচুড়ি খাওয়া ঠিক না। শরীর খারাপ করবে।
বৌমার রান্নার হাত ভালো। তোর মার চেয়েও ভালো। খেয়ে মজা পেয়েছি। তোর মা আসলে রান্নাবান্না কিছু জানে না। ঘ্যানঘ্যান করে কূল পায় না রাধৰে কখন? বৌমাকে মনে করে বলিস খেয়ে খুব তৃপ্তি পেয়েছি।
বলব।
বৌমাকে সুখে রাখার চেষ্টা করবি। যে ব্যক্তি মাতি, স্ত্রী এবং কন্যা এই তিন শ্রেণীকে সুখী রাখে আল্লাহপাক তার জন্যে তিনটা রহমতের দরজা খুলে দেন।
নারায়ণগঞ্জ কী জন্যে?
স্যার একটা কাজে পাঠাচ্ছেন। একজনকে কিছু ফলমূল দিয়ে আসতে হবে।
একটু অপেক্ষা কর টিফিন কেরিয়ার ধুয়ে দেই।
খিচুড়ি সব খেয়ে ফেলছ?
হুঁ।
তোমাকে ধুতে হবে না। বাসায় নিয়ে ধুলেই হবে।
ছেলে চলে যাচ্ছে জয়নাল সাহেবের খুবই খারাপ লাগছে। ছেলের সঙ্গে আজ গল্পই হয়নি। কিছুক্ষণ থাকতে বললে অবশ্যই থাকবে। থাকতে বলা ঠিক হবে না। সে একটা কাজে যাচ্ছে। সবচে ভালো হয় ছেলের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ চলে যাওয়া। এক সঙ্গে কিছুক্ষণ ঘুরবেন। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ ভঁর দেখাও হয়নি। নারায়ণগঞ্জ যা-তা শহর না। বাংলার ডান্ডি।
বাবুল।
জি বাবা।
নারায়ণগঞ্জ যাবি কীভাবে? বাসে?
অফিস থেকে আমাকে একটা গাড়ি দিয়েছে।
চিন্তা করছি তোর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘুরে আসব কিনা। নারায়ণগঞ্জ কখনো যাইনি। তুই তোর কাজ করলি আমি গাড়িতে বসে থাকলাম।
শফিক বলল, চলো। রেডি হয়ে নাও।
রেডি তো আছিই।
তিনি ডিকশনারি হাতে উঠে দাঁড়ালেন। শফিক বলল, তুমি ডিকশনারি নিচ্ছ কেন?
তিনি বললেন, হাতের কাছে থাকল। অসুবিধা কী? সময়ে-অসময়ে চোখ বুলালাম। সব সময় চর্চার ওপর থাকা দরকার।
গাড়িতে উঠে তাঁর খুব ভালো লাগছে। তাঁর মনে হচ্ছে জীবনটা আসলেই সুন্দর এবং তিনি একজন সুখী মানুষ। রাস্তা ভর্তি মানুষজন। তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে। সবাই কেমন সুখী সুখী। বিশেষ করে ফুলওয়ালি মেয়েগুলোকে। তারা বেলি ফুল নিয়ে ছোটাছুটি করছে। কী সুন্দর করেই না বলছে— ফুল নিবেন? ফুল? একটা বেলি ফুলের মালা কিনলে খারাপ হয় না। শফিককে কি বলবেন একটা মালা কিনে দিতে? তাঁর হাত খালি। বালিশের নিচ থেকে টাকাটা আনা হয়নি। শফিকের সামনে টাকা আনতে লজ্জা লাগল বলে আনেননি। এখন মনে হচ্ছে টাকাটা খাকলে ভালো হতো। শূন্য পকেটে ঢাকার বাইরে যাওয়া হচ্ছে এটা ঠিক না। অবশ্যি ছেলে সঙ্গে আছে। ছেলে সঙ্গে থাকা অনেক বড় ব্যাপার। ছেলে পাশে থাকলে বুকে হাতির বল থাকে।
বাবুল।
জি বাবা।
পুলিশ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবি।
শফিক অবাক হয়ে বলল, পুলিশ সংক্রান্ত সমস্যা হলে তোমাকে বলব কেন? পুলিশের সঙ্গে তোমার কী?
ঢাকা সাউথের পুলিশ কমিশনার আমার ছাত্র।
তাই নাকি?
জয়নাল সাহেব অনিন্দিত গলায় বললেন, মজার ইতিহাস। গত পরশুদিন বিকাল বেলা সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ আমার সামনে ঘাস করে একটা পুলিশের গাড়ি থামল। তাকিয়ে দেখি একজন পুলিশ অফিসার নামছেন। আশপাশের সবাই তটস্থ। আমিও তাকিয়ে আছি। দেখি পুলিশ অফিসার এসে আমার সামনে দাঁড়াল। তারপর কিছু বুঝার আগেই ঝুপ করে আমার পা ছুঁয়ে সালাম। সালাম করতে করতেই বলল, স্যার আমি আপনার ছাত্র। আমি বললাম, কেমন আছ বাবা? সে বলল, স্যার গাড়িতে ওঠেন। আমি আপনাকে বাসায় নিয়ে যাব। আমার স্ত্রীকে আমি আপনার কথা বলেছি। সে বিশ্বাসই করে না কেউ পুরো ডিকশনারি মুখস্থ করতে পারে। আজ প্রমাণ হয়ে যাবে।
গিয়েছিলে বাসায়?
হ্যাঁ। তার স্ত্রীর নাম কেয়া। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে জিওগ্রাফিতে মাস্টার্স করেছে। তাদের একটাই ছেলে। ছেলের নাম টগর। সানবিম নামে একটা ইংরেজি স্কুলে থার্ড গ্রেড়ে পড়ে। খুবই ভালো ছাত্র। প্রতিবার ফার্স্ট হয়। শুধু এইবার থার্ড হয়েছে। পরীক্ষার আগে আগে জ্বর হয়েছে বলে রেজাল্ট ভালো হয়নি।
তুমি দেখি বাড়ির সব খবর নিয়ে চলে এসেছ।
অনেকক্ষণ ছিলাম। রাতে খেয়ে এসেছি। কেয়ার রান্নার হাত ভালো। বেশ ভালো।
ইংরেজি পরীক্ষা দাওনি? দিয়েছি।
কেয়া আর তার স্বামী দুজনেই ডিকশনারি নিয়ে বসেছিল।
কোনো শব্দ মিস করেছ?
আরে না। মিস করব কেন? এর মধ্যে টগরও একটা শব্দ জিজ্ঞেস করল–Violet, আমি ভাব করলাম যে এই শব্দটার মানে জানি না। টগর খুবই খুশি যে আমাকে আটকাতে পেরেছে।
শফিক হাসতে হাসতে বলল, বাবা তুমি সুখেই আছ।
জয়নাল সাহেব আনন্দিত গলায় বললেন, পথে যদি গাড়ি ট্রাফিক সিগন্যালে থামে আর কোন ফুলওয়ালি পাওয়া যায় তাহলে একটা বেলি ফুলের মালা কিনে দিস তো।
মালা দিয়ে কি করবে?
কিনলাম অরি কি? নবীজির হাদিস মনে আছে না—
জোটে যদি শুধু একটি পয়সা
খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি।
দুইটি পয়সা জোটে যদি কভু
ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী।
শফিক গাড়ি থামিয়ে চারটা ফুলের মালা কিনল।
একতলা বাড়ি। বাড়ির সামনে ফুলের বাগান। বাগানে যত্ন নেয়া হয় এটা বোঝা যাচ্ছে। বাড়ির সামনে গোল বারান্দার মতো আছে। সেখানে সিলিং থেকে ফুলের টব ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। বারান্দায় বেতের চেয়ার পাতা। সব মিলিয়ে কেমন সুখী সুখী ভাব।
যে মহিলা দরজা খুললেন তার মুখও সুখী সুখী। মোটাসোটা একজন মহিলা। মাথার চুল লালচে। মনে হয় মেন্দি দিয়ে রঙ করেছেন। মুখ ভর্তি পান। এই বয়সেও ভদ্রমহিলা যথেষ্টই রূপবতী। পাতলা ঠোঁট। বড় বড় চোখ-মুখ গোলাকার যেন কম্পাস দিয়ে মুখ আঁকা হয়েছে।
শফিক বলল, ম্যাডাম আমার নাম শফিক। শফিকুল করিম। আমি মবিনুর রহমান সাহেবের পিএ। স্যার আপনার জন্যে কিছু ফল পাঠিয়েছেন।
আমার জন্যই পাঠিয়েছেন এটা এত নিশ্চিত হয়ে বলছেন কীভাবে? আপনি তো আমাকে চেনেন না। আমার ছবি দেখার কথাও না। আপনি আমার কোনো ছবি দেখেননি। আপনার স্যারের কাছে আমার কোনো ছবি নেই। আসুন ভেতরে আসুন।
শফিক বসার ঘরে ঢুকল।
জুতা খুলে আসুন। কাউকে জুতা খুলে ঘরে ঢুকতে বলা খুবই অভদ্রতা। এই অভদ্রতা বাধ্য হয়ে করছি।
শফিক বসার ঘরে ঢুকে মুগ্ধ হয়ে গেল। কি সুন্দর করেই না ঘরটা সাজানো। মেঝেতে শীতল পাটি বিছানো। সোফা নেই, কুশনের ওপর বসার ব্যবস্থা। প্রতিটি কুশন সাদা ওয়ার দেয়া। সেখানে সূচির কাজ আছে। নীল সুতায় করা নকশা। দেয়ালে বাঁশের ফ্রেমে জলরঙের সুন্দর ছবি।
ভদ্রমহিলা শফিকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ঘরে ঢুকলেই শান্তি শান্তি ভাব হয় না?
জি হয়।
আমার কিন্তু হয় না। ঘর সাজানোর শখ আমার মেয়ের, আমার না। বসুন। আমি ছাত্র পড়িয়ে কূল পাই না ঘর সাজাব কী?
শফিক বসল। ভদ্রমহিলা শফিকের সামনে বসতে বসতে বললেন, আমাকে ফল পাঠানো খুবই হাস্যকর ব্যাপার। আমি ফল খাই না। যে কোনো ফল খেলেই আমার এসিডিটি হয়। আমার মেয়েও খায় না। কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যে পাঠাব সেটাও সম্ভব না। আমার লোকবল নেই। একটা মেয়ে নিয়ে সংসার।
আপনি যদি ঠিকানা লিখে দেন আমি আপনার আত্মীয়স্বজনের বাসায় পৌঁছে দেব। আমার সঙ্গে গাড়ি আছে।
আপনাকে ফল নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে না।
ম্যাডাম আমার কোনো অসুবিধা নেই।
আপনার অসুবিধা না থাকতে পারে। আমার আছে।
ম্যাডাম আমাকে তুমি করে বলবেন।
তুমি করে বলব কেন?
লায়লা প্রশ্নটা এমনই কঠিন করে করলেন যে শফিক হকচকিয়ে গেল। মহিলা তাকিয়ে আছেন একদৃষ্টিতে যেন প্রশ্নের জবাব না দেয়া পর্যন্ত দৃষ্টি ফেরাবেন না।
আপনার নাম শফিক তাই না?
জি ম্যাডাম।
আপনি আমার প্রতি অতি বিনয় দেখাচ্ছেন তার কারণ আপনার স্যার আপনাকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন। এই থেকে আপনার ধারণা হয়েছে আমি বিশেষ কেউ। আসলে কিন্তু তা না। কাজেই প্রতি সেকেন্ডে একবার করে ম্যাডাম ডাকা বন্ধ।
জি আচ্ছা। কী ডাকব?
কিছু কি ডাকতেই হবে?
মহিলা আবারো আগের মতো কঠিন চোখে তাকিয়ে আছেন। শফিক অস্বস্তি বোধ করছে। হঠাৎ করেই ভদ্রমহিলার চোখের দৃষ্টি কোমল হলো। তিনি বললেন, গাড়িতে একজন বুড়ো মতো ভদ্রলোক বসে আছেন, উনি কে?
আমার বাবা। আমার সঙ্গে এসেছেন।
তাঁকে গাড়িতে বসিয়ে রেখেছেন কেন। নিয়ে আসুন। আমি চা বানাচ্ছি–চা খাবেন।
ম্যাডাম আমি চা খাব না।
চা না খেলে অন্য কিছু খাবেন।
আপনি কি জানেন আপনার স্যারের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল?
জানি।
সবচে ক্ষণস্থায়ী বিয়ে। গিনেস বুকে ওঠার মতো ব্যাপার। আমার বিবাহিত জীবন ছিল দেড় ঘণ্টার।
স্যরি কিন্তু বলেছেন সাত ঘণ্টা।
উনি তাই বলেছেন?
জি। রাত একটা দশে বিয়ে হয়েছিল ভোর আটটা দশে বিয়ে ভেঙে যায়।
তাহলে তো বেশ দীর্ঘস্থায়ী বিয়ে। গিনেস বুকে ওঠার মতো না।
ভদ্রমহিলা হাসছেন। হাসলে সব মানুষকেই সুন্দর লাগে, এই মহিলাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে এই মহিলা দূরের কেউ না। কাছের একজন। শফিক বলল, ম্যাডাম আমি কি আমার বাবাকে নিয়ে আসব?
অবশ্যই। এখন বাজে দুপুর দেড়টা। দুপুর বেলার অতিথিকে আমি শুধু চাঁ খাইয়ে বিদায় করব এটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। দুপুর বেলা আপনারা দুজন আমার সঙ্গে খাবেন। আয়োজন খুবই সামান্য তাতে কী?
ফেরার পথে জয়নাল সাহেব ছেলের পাশে বসলেন না। ড্রাইভারের পাশে বসলেন। ড্রাইভারের পাশের সিটটা বসার জন্যে সবচে ভালো। পা ছড়িয়ে বসা যায়। সামনের দৃশ্য দেখা যায়। ছেলের সঙ্গে না বসার পিছনে আরেকটি কারণও আছে, ছেলে হয়তো সিগারেট খাবে। বাবার পাশে বসলে সেটা সম্ভব না। সিগারেট টানতে টানতে ভ্রমণের আলাদা মজা, সেই মজা থেকে ছেলেকে বঞ্চিত করা ঠিক না। একজন আদর্শ পিতার উচিত তাঁর ছেলে-মেয়েদের প্রতিটি খুঁটিনাটির দিকে লক্ষ্য রাখী। তিনি তা পারছেন না। কারণ তিনি কোনো আদর্শ পিতা না। আদর্শ পুত্র হওয়া সহজ। আদর্শ পিতা হওয়া সহজ না। তিনি ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ড্রাইভার সাহেব আপনার নাম কী?
ড্রাইভার বলল, স্যার আমার নাম রঞ্জু।
দুপুরের খাওয়া ঠিকমতো করেছেন?
জি স্যার।
খাওয়া ভালো ছিল না?
জি ছিল।
বেগুন ভাজি ভালো ছিল না?
জি।
বেগুনের ইংরেজি হলো Bringal. বাচ্চাকাচ্চারা সজির ইংরেজি কম জানে। আলুর ইংরেজি সবাই বলতে পারবে Potato কারণ আলু তার খায়। শব্জি খায় না এই জন্যে শব্জির ইংরেজি জানে না। বেগুলের ইংরেজি বলতে পারবে না, পটলের ইংরেজিও না। বুঝতে পারছেন?
জি স্যার।
ঢেড়সের ইংরেজি বাচ্চারা বলবে Ladies Finger মেয়েমানুষের আঙ্গুল।
এটাও ঠিক না। তেঁড়সের ইংরেজি হলো OKRA. আপনার ছেলেমেয়ে আছে?
স্যার একটা ছেলে।
ইংরেজি কেমন জানে?
জানি না স্যার। আমি মুখ মানুষ কিভাবে জানব।
একদিন নিয়ে আসবেন আমার কাছে। আমি টেস্ট করে দেখব।
স্যার আপনার অনেক মেহেরবানী।
আপনার গাড়িতে গান-বাজনার ব্যবস্থা আছে?
জি স্যার আছে।
গান দিয়ে দেন। গান শুনতে শুনতে যাই।
কি গান দিব স্যার?
আপনার যেটা ইচ্ছা দেন।
ড্রাইভার গান ছেড়ে দিল। জয়নাল সাহেব গানের তালে তালে মাথা দুলাতে লাগলেন। তাঁর কাছে মনে হচ্ছে এই জগতে তাঁর মতো সুখী মানুষ আর কেউ নেই। গানের কথাগুলোও তাঁর কাছে ভালো লাগছে। কী সুন্দর কথা—
একটা ছিল সোনার কন্যা মেঘবরন কেশ।
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ ॥
জয়নাল সাহেবের মনে হলো তিনি চোখের সামনে ভাটি অঞ্চলের সোনার কন্যাকে দেখতে পারছেন, যার কেশ মেঘবরন। সোনার কন্যার সঙ্গে তিনি তাঁর পুত্রবধূ মীরার আশ্চর্য সাদৃশ্যও লক্ষ্য করলেন।